বৃষ্টি ঝরানোটাই আবশ্যিক নয়/ হিসেবের খাতা একটা রেখে দিয়ো/ নিত্যদিন যাওয়া-আসার পথ-পাশে।// সেই তোমার আবশ্যিক চাঁদ হবে/ আলো দেবে ফসলের খেতে।// দুর্যোগ শুধুই তোমার নয়/ আমারও খড়োচাল এলোমেলো করে যেতে পারে।/ সংকেত বোঝো/ কোন মেঘ বৃষ্টির, কোন মেঘ ঝড়ের নাচন আনে/ আনে, গড়ে তোলা সবকিছু/ ভেঙে দেওয়া ঢেউ।// গড়ে তোলো অথবা ভেঙে ফেলো/ দুটোকেই মনে রাখে ইতিহাস// আমি শুধু আলো দেখাই/ তোমার গড়ে তোলার সময়/ একান্ত আপন নিয়মে।
আমি আরও একবার সে কথা আজ বলি— আমার গোপন ঘর নেই। কোনও খড়ের আশ্রমে পারি না ঘুমোতে। একাধিক গ্রাম আর শহরের পরিচয়ে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। বিভিন্ন বিচ্ছেদে, পরিচয়ে, একসাথে অনেক কালের মানুষ আমাকে বিভ্রান্ত করে— তাদের যাপনে, মেধায়, বন্ধনে। যার মন এখন নরম, তাকে প্রতিভূ বিজয়ী লাগে। যে সবল, মনে হয়, সে তো পরাজিত দলছুট সেনা।
কুকুরের জিভ ফেটে লালচে চিৎকার গড়িয়ে পড়লে—/ ফৎফৎ করে নড়ে ওঠে পাগলের রাগ।/ সে রাগ তখন রুপোলি ঢিল হয়,/ মুঠো হাত আকাশে তুলে—/ আবারও নিচে নামালে,/ আমিও তো তেমনই নিচে নামিয়ে হাত।/ লিখছি, ভাঙছি, কাটাকুটি যা ইচ্ছে তাই করছি।/ বেহিসেবি খেলায় মুদ্রারাক্ষস।// রাস্তার কিনারে শুনি বাঁশী বেজে ওঠে।/ যে বেলুনওয়ালা বাঁশী বাজায় সে কি জানে না—/ এ ব্ল্যাকহোল সভ্যতায় তার কজন শ্রোতা ও ক্রেতা,/ তবু এমন জাদুকরী আয়োজন?/ তবু এমন ছড়িয়ে ঘরানা?/ ঘরানা ছড়িয়ে পড়ে ঘাসের আলো ছুঁয়ে,/ পরজন্ম নীল অজানায়।
মিশরীয় নারীদের বুক খোলা থাকলেই প্রাচীন অসুখ শিলালিপির গা বেয়ে অমৃত অক্ষরের মত নেমে আসে হেগেলীয় ভ্রূণ, রজনীগন্ধার গর্ভকেশরে সালোয়ার পরে দাঁড়িয়ে আছে তিন ভাগ অ্যাসাইক্লোভির ভাইরাস ওষুধের মত অন্য কেউ
আমার নিচে দাঁড়ানো লম্ব সমদ্বিখণ্ডক অমেরুদণ্ডীরা টানটান করে নেমে আসে আমার নারীর ক্লোরোফর্মের দাগ মুছে দেওয়ার জন্য
যারা এতকাল ভালবাসত পরস্পরকে, তাদের সন্তান এসেছে। দুধ ও কাপড়চোপড়ে বড় হয়ে তারাও মিশেছে নারী-পুরুষের সঙ্গে। আছে নাম, আছে গোত্র, আছে সম্বন্ধ লেখার ফিতে বাঁধা খাতা। কিন্তু পৃষ্ঠায় নেই শোক, জ্বলছে বিরাট নক্ষত্র, জড়িয়ে ধরার পরে দাবি মেটানোর সুখ, লোভের পাওনাটুকু আছে, পুকুর কেনার খতিয়ান, আছে মামলার কাগজপত্র, জন্ম-মৃত্যুর অসংখ্য বিভাজন, অস্তিত্বের বহু ফাঁক, আছে ভাসুর ও ভাই-বউয়ের মেলামেশার চালচিত্র।
তোমার কথা বলতে গেলে আরও শান্ত হয়ে যায় বেদনা// মানুষের এত বেশি আনন্দের ভিতরে কিছু অদ্ভুত দুঃখ থাকা ভাল// বিকেলে ছাদের উপরে লেবু গাছ জড়িয়ে থাকে গোটা শীতকাল// আমাদের দেবতার মন্দিরে পুজো শেষ হয়/ বেরিয়ে আসে কিশোর পুরোহিত// যারা নিঃশব্দে চলে যাওয়ার কথা বলে/ তাদের অনেক ভিতরে তোমার শরীর খুঁজে দেখি/ কেউ একজন ঝুঁকে রয়েছে// ঠান্ডা হাওয়ায় দেবতার চাতালে বসে আছি// ঘুম ভেঙে আবার তোমার কথা বলতে গেলে শান্ত হয়ে যায় সমস্ত ঘর।
মৃত্যু সেরে, কেউ কেউ ফিরে আসে আবারও ডেরায়/ চাহনি স্মরণ করে, জমিয়ে সঙ্গম, শেষে রাত/ ফুলকি দিতে-না-দিতে ঢোঁক গেলে, চিন্তামণি আলো/ প্রবল বিপত্তি ঠেলে কেন যে পাতায় এসে পড়ে/ মনে হয়, ছায়া দিয়ে ঢাকা ভাল আপাদমস্তক/ আরও যৌথ অসম্ভব, একই অঙ্গে কী এত বিস্ময়/ হায় লীলা রাধাকৃষ্ণ ছিল বটে কখনও টম্বুর/ আজি শঙ্কা জাগে কাল মরিতে যাইতে পারিব তো
এইসব নির্ভুল পথ চলে গেছে/ আত্মহত্যা ধরে কখনও নোনায়/ কখনও হাতঘড়িটা মাঠে রুপে দিয়ে/ মূলত সহজে মাতা ভ্রমণপনায়// মূলত সহজ এক পাখির শরীরে/ অল্পই পাখি থাকে, বাকিটা শিকার/ মূলত শিকার এক নোনা জলাভূমি/ আনন্দ-মাছের পথচারী পারাপার// মূলত পথচারীরা ভাঙা ভাঙা কাচ/ আলোর মাংস তারা বেচে ভাগা দিয়ে/ মূলত আঁধার এক সাদা স্তন্যপায়ী/ এক কোপে নেয়া যায় মাথাটা ছিনিয়ে
লেখারও বিষ আছে,/ লেখককে সে দংশায়৷/ ছটফট করতে থাকে লেখক,/ ভুলে ভুলে ছিন্ন হতে থাকে স্বাভাবিক যাপন।/ অন্তঃসত্ত্বা পশুর মত খুঁজতে থাকে গহ্বর,/ নির্জন পৃথিবীর কোণ, গাছের আড়াল৷/ ঝগড়াঝাটি, বকুনি, তিরস্কার শেষে,/ প্রসব শেষে বিষ জন্মায় অমৃত হয়ে৷/ অমৃত পান করে ঋদ্ধ হয় পাঠক,/ একমাথা খোলা আকাশ হয়ে ভেসে যায় লেখক৷/ এসো এসো, আরও আরও দংশন করো!/ আহা! লেখা এক অমৃত সর্প, অমৃত সর্প৷