Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

প্রদীপ ঘোষের গুচ্ছ কবিতা

অ্যালগোরিদমিক দশে দিক

ডাঁসা কামরাঙা রঙের বেহেশতের হুর…
আহেলিদি নদীর মত চঞ্চলা, স্রোতস্বিনী,
পাড়ার তাবৎ যুবকবৃন্দ পাগলপারা
সময়ে কত কেতো-কে ল্যাজে খেলিয়ে
শেষতক অবিবাহিতাই রয়ে গেলেন
হায় বসুন্ধরা।

ঠাম্মা শীতের সুরমা রোদ্দুরে পিঠ পেতে রেখে
জাঁতিতে ফিনফিনে করে সুপুরি-সময় কাটছে
বউঠান সময় পুড়িয়েই কাজললতার কালি
আসলে আদি অন্তহীন সময়ের অরণ্যবাসরে
বহুপথগামী শুষ্ক জলাশয়, যথা বিধুর হেঁয়ালি।

অনন্তর প্রতিহারি? ডাক্তারটি যত না হ্যান্ডসাম
পীড়িতের ততোধিক র‌্যানসাম (!) এহেন—
চিত্র-কাঠামোয় একদিন অনুপলে ডাক্তার
নিজেই পীড়িত।
স্বাভাবিক কিংবা নিয়তির প্রহার

চক্রবৎ পরিবর্তন্তে
রোগী ডাক্তার,
ডাক্তারও রোগী, অন্তে।

অফিসে বিভিন্ন টেবিলের সমবেত কিচিরমিচিরের
মধ্যেই কানে এল…
স্যর চার মাস হয়ে গেল হাজবেন্ডের
এনডাউমেন্ট পলিসির ডিসবার্সমেন্টে এত সময়
লাগবার কথা নয়, আপনি একটু ইনিশিয়েটিভ
নিন না প্লিজ।

ঘাড় ফিরিয়ে সুললিত মহিলা কণ্ঠের অনুনয় দেখে
আমার পৌরুষ ভীষণই আহত। ইচ্ছে করছিল
পরিচিত ডেভেলপমেন্ট অফিসারকে বলে
সমাধা করে দিই দ্রুত।

বাধ সাধল ‘কমপ্যাশনেট অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ পাওয়া
ব্যাঙ্ক এমপ্লয়ি ভদ্রমহিলাটির নিজের অফিসে বসে
ক্লায়েন্টদের প্রতি একই রকম উন্নাসিক আচরণ।
ঘটনাবশত যা আমি লক্ষ্য করেছি।

শিক্ষা হোক।

আসলে অধিকাংশই ভুলেই যান যে, ক্ষমতা
শুধুমাত্র চেয়ারের। বসতে বসতে এরা আরূঢ় অনেকে
নিজেদেরই চেয়ার ভাবতে শুরু করেন।

তা বলে যথেচ্ছাচার,
শারীরিক অমিতব্যয়িতা, রউডিয়েস্টের সমর্থনে
এমনটা তো বলছি না!

লয়্যাল ডেইলিহান্টের ইনফরমেটিভ
ক্রেডেন্সিয়াল বুলেটিনানুযায়ী শরীর ফিট
রাখতে ভোরের সঙ্গম।

তা বাদে ধরো না কেন
সুস্থ সবল থাকতে সকালে দু’মাইল হাঁটা,
জগিং, ব্যায়াম, মেডিটেশন ইত্যাদি ইত্যাদি।

অথচ সংযমী, ট্রেডমিলে ঘাম ঝরাতে
ঝরাতেও তো গাঙ্গুলি নিজেই গুগলি খেয়ে গেলেন।
আসলে শরীরের নিজস্ব ব্যাকরণ মোতাবেক
যার যেমন তার তেমন।

দিন থাকলে রাত, ভালর যেমন মন্দ,
কালোর সাদা, সত্যের মিথ্যা, ইত্যাদি প্রভৃতি। প্রকৃতিগত।
যেমন গণতন্ত্রে শাসক থাকলে বিরোধী। মনুষ্য সম্পাদিত।
যদি বিরুদ্ধ স্বর বিলোপই হয়ে থাকে?
তাহলে উপায়?
শাসকদলের নিজের মধ্যেই বিরুদ্ধ স্বর উদ্ভূত। সত্য।
অন্তর্দ্বন্দ্ব বলছ তুমি তাকেই।

বৃদ্ধার দাহকার্যের নিমিত্ত শ্মশানযাত্রী
হরিধ্বনিতে স্বরগম বারোজন নাতিপুতি
উড়ো খইয়ে ছন্ন নিপাতনের—
সংবেদ কি বেশি ছিল? গাড়িচালকের ভুলেই
বড় দুর্ঘটনায় এখন দাহকার্যের নিমিত্ত আগত
নিজেরাই দাহ্য।

সকলেই লেলিহান আগুনের অপেক্ষায়।

পরাধীন ভারতে অবশ্যই কিন্তু
স্বাধীনতোত্তর কালে বিশেষত আটের দশকের
পরে রাজনীতি কোনওভাবেই আর
সমাজসেবা নয়, প্রফেশন। স্বোপার্জিত স্পর্ধা
প্রিসাইজলি
শিক্ষিত-অশিক্ষিতের সহজ ব্যবসা।

পাড়ায় পাড়ায় দড়ির নোলক পরে
খেলা দেখাতে আসে না কতকাল হয়ে গেল
কে দেবে লাল তাগায় তামার মাদুলিতে ভালুকের
লোম ভরে ডান হাতে বেঁধে?
আমার যে জ্বর সারছেই না গো!
উপায়? কখনও যদি তুমি শিয়রে দাঁড়িয়ে—

কপালে শুধু হাত রাখতে একবার…

১০

বসন্ত চলে গেছে চিরতরে
হা-অন্ন, হা-মধু। ধূ ধূ ধূ ধূ…
জীবন যাদের জলে ডুবে থাকা চড়কগাছ
ধর্মঠাকুরের গাজনে হবিষ্যির মালসায় সংক্রান্তির
অংশত মাধুকরী। অতএব…

বাবা তারকনাথের চরণে সেবা লাগে, মহাদেব।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

সুজিত বসু

সুজিত বসুর দুটি কবিতা

তারার আলো লাগে না ভাল, বিজলীবাতি ঘরে/ জ্বালাই তাই অন্তহীন, একলা দিন কাটে/ চেতনা সব হয় নীরব, বেদনা ঝরে পড়ে/ যজ্ঞবেদী সাজানো থাকে, জ্বলে না তাতে ধূপ/ রাখে না পদচিহ্ন কেউ ঘরের চৌকাঠে/ শরীরে ভয়, নারীরা নয় এখন অপরূপ/ তারারা সব নিঝুম ঘুমে, চাঁদের নেই দেখা/ অর্ধমৃত, কাটাই শীত ও গ্রীষ্ম একা একা

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বিশ্বকর্মার ব্রতকথা

বিশ্বকর্মা পুজোতেও কেউ কেউ বিশ্বকর্মার ব্রত পালন করে থাকেন। এমনিতে বিশ্বকর্মা যেহেতু স্থাপত্য ও কারিগরির দেবতা, তাই কলকারখানাতেই এই দেবতার পুজো হয়ে থাকে। সেখানে ব্রতকথার স্থান নেই। আবার কোন অলৌকিক কারণে এবং কবে থেকে যে এদিন ঘুড়িখেলার চল হয়েছে জানা নেই। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন শহর ও গ্রামের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ও নানা আকৃতির ঘুড়িতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার কখনও বাংলাদেশে পা রাখেননি!

ভাবতে অবাক লাগে, ‘৭১-পরবর্তী বাংলাদেশ উত্তমকুমারকে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। টালিগঞ্জের কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেছিলেন সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে। অন্যদিকে ববিতা, অলিভিয়া ও আরও কেউ কেউ টলিউডের ছবিতে কাজ করেছেন। ঋত্বিক ঘটক, রাজেন তরফদার ও পরে গৌতম ঘোষ ছবি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশে এসে, কিন্তু উত্তমকুমারকে আহ্বান করার অবকাশ হয়নি এখানকার ছবি-করিয়েদের।

Read More »
নন্দিনী কর চন্দ

স্মৃতি-বিস্মৃতির অন্দরমহলে: কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি

বিস্মৃতির অতলে প্রায় তলিয়ে যাওয়া এমন কয়েকজন মহিলা কবির কথা আলোচনা করব, যাঁরা তাঁদের কাব্যপ্রতিভার দ্যুতিতে বাংলা কাব্যের ধারাকে উজ্জ্বল ও বেগবান করে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণকামিনী দাসী, মোক্ষদায়িনী দেবী, প্রসন্নময়ী দেবী, লজ্জাবতী বসু, জগন্মোহিনী দেবী, গিরিন্দ্রমোহিনী দাসী, হিরণ্ময়ী দেবী, অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত, সুরবালা ঘোষ প্রমুখ।

Read More »
মোহাম্মদ কাজী মামুন

বালকেরা অচেনা থাকে : এক অবিস্মরণীয় পাঠ অভিজ্ঞতা

ঘাসফুল নদী থেকে প্রকাশিত ‘বালকেরা অচেনা থাকে’ গল্পগ্রন্থটি যতই এগোনো হয়, একটা অনুতাপ ভর করতে থাকে পাঠকের মনে— কেন আগে সন্ধান পায়নি এই অমূল্য রত্নসম্ভারের! হ্যাঁ, রত্নসম্ভারই, কারণ একটা-দুটো নয়, প্রায় দশটি রত্ন, তাও নানা জাতের— লুকিয়ে ছিল গল্পগ্রন্থটির অনাবিষ্কৃত খনিতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাইশে শ্রাবণ ও বৃক্ষরোপণ উৎসবের শতবর্ষ

কবির প্রয়াণের পরের বছর থেকেই আশ্রমবাসী বাইশে শ্রাবণকে বৃক্ষরোপণ উৎসব বলে স্থির করেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই দিনটিই এ-উৎসবের স্থায়ী তারিখ। বাইশের ভোর থেকেই প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় উৎসব। সকালে কলাভবনের ছাত্রছাত্রীরা বিচিত্রভাবে একটি পালকি চিত্রিত করেন ছবি এঁকে, ফুল, লতাপাতায়। মঙ্গলধ্বনি দিতে দিতে এর পর পালকির ভিতরে টবের মধ্যে একটি চারাগাছকে স্থাপন করা হয়। অতঃপর শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গীত-পরিবেশন-সহ আশ্রম-পরিক্রমা।

Read More »