আরণ্যক ঐতরেয়
এক।
দিদিমা বলতেন, এতবার ঢাকনি খুলো না মেয়ে
হাঁসের পশম ধরে যাবে
চামড়ার গায়ে মোড়ানো চীনাংশুক স্নেহটম্বুর হয়ে ফুটে ফুটে
অল্প আঁচে হাঁড়ির ভেতরে নিভু নিভু বাষ্প তার ঘ্রাণ হয়ে হাতায়
চামচে ও রকমারি বয়ামের কাছে পৌঁছয়
শব্দ নেই, ধোঁওয়ার গুন্ঠনে বাস ওঠে
তিন ভাগে জল আর মশলা মাখানো। তারও পূর্বে মরিচ ফোড়ন, দারচিনি
এলাচ ফাটিয়ে ফেলা হাতজল সেও গুলে তৈয়ের হবে শিলের কবলে তার
রসুন খোওয়ানো এক পুরুষ তৎপর
কুঁজো হয়ে শুয়ে থাকা যোনির ডানাতে চাপা
ঘুমন্ত শিম ক্রমশ আবিল হয়, পক্ষীমাতার মতো ওম দিই, রুক্ষতা দিই, মাছের
কানকো আর আঁশ দিয়ে রোজ তাকে ধার দিয়ে লঘার মাপে রভস জাগাই
বড়ির খাটের কাছে তুলতুল্ ডালবাটা
মেখে হাতছানি দিয়ে ডাকি কুমড়োফালির লাল রোশনাই ॥
দুই।
লিকলিকে সজনে ডাঁটার জন্মানো অনেকটা কিশোরীর বুক ওঠার মতো
নির্জ্ঞানের রাজত্ব যেখানে ছাই হয়, সেখানেই অবমানবীর রোঁয়া গজায় :
রোগা নদীর জল বন্ধক দিয়ে রজস্বলা কন্যা বিক্রি করে পিতৃধন্য গোটা
পরিবার জমিয়ে মাছ মুর্গি খায় এবেলা।
ধড় মুণ্ড অক্ষত রেখে মেয়েটা জানোয়ারকে চায়। গঙ্গাফড়িঙের মতো
জানুওয়ালি এখন মেধাবী লীলার ছলে মরদের পিঠে উঠে বসে, দোল
দোল দুলুনির বোলে মেয়ে বিক্রির নোট তছরুপের ফিকির কষে দুশমনের
গাঁ শেষের স্টেশন, তারপর মেয়ে দানোর ঠেক। তারপর হিজড়েদের ক্লাব
আটঘাট বেঁধে নিয়ে কাগজের দপ্তরে কত কী না বন্ধক চলে! মেয়ে মহাজন
দিদি, সুপারির দিব্বি— আমি রেডি
তিন।
ওলো বিবাহযোগ্য পুরুষ,
দুরন্ত খিদের তলায় অমলতাস বীজ লুকিয়ে দেখেছি একদিন
দুব্বো রঙের কালি,
দোয়াত ডুবিয়ে তোমার নাক, মুখের ছাঁই আঁকছি
যা একান্ত আমার, একটা দুঃশাসনীয় মেয়ের।
রোমার্দ্র বিকেলে তির্যক ভেঙে ফের ঘন করি জাফরান শরীর
ভেজানো বাহুডোর, ভিতর তহবিলে জিভ ঘুমিয়েছে
২৫ বছরের
চার।
পরপুরুষের গায়ে বাকলের গন্ধরাজ পাঠিয়েছিলে
আমি তাকে স্পর্শ ভেবে শরীরে ধুনেছি ঐতরেয়
হলুদ রাধাচূড়া যতদূর রাস্তায় ঝরেছে, তার চিহ্ন খতরনাক
কালো অবিকল
লাঙলের ফলায় জমেছে যত ক্রোধ, মেয়েমানুষের—
জরায়ুর আধখানা ধান লুফে যে এল পৃথিবীর হয়ে
তার রামচন্দ্রের মতো বর?
বাধ্যতামূলক
পাঁচ।
ঈশানের মেঘ ছিনে নাগকেশর, পায়ে পরবো বলে।
সিঁদুর ত্যাগ করেছি হলফ করা বয়সে, যখন চাল বেছে চাল টিপে
নিজের আঙুলের মেহনরীতি বুঝি, নিজেকে সুযোগ করে দিই।
অটোতে ওঠা আর নামার মধ্যে যতগুলো উল্লসিত শ্বাস
বহুব্রীহি, তেলো হাত, যে হাতে মা রোজ উনুন ধরান
আমি সেই। সে-হাত ক্রমশ সহস্রচক্ষু হবে
কেবল হাতের তৈরি মণ্ডা মেঠাই ছানা, যদ্দিন দুধের মাঠায়
ঠোঁট রেখে আমি ভাবি, যা হবার তা হোক
‘মা ফলেষু কদাচন’ আসলে একটা ডাহা মিথ্যে বুজরুকি
আসলে এই খেলাটুকু চালিয়ে যাওয়া
খেলার চাতুরি— পরিসংখ্যানহীন