Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

বল্লরী সেনের কবিতাগুচ্ছ

আরণ্যক ঐতরেয়

এক।

দিদিমা বলতেন, এতবার ঢাকনি খুলো না মেয়ে
হাঁসের পশম ধরে যাবে

চামড়ার গায়ে মোড়ানো চীনাংশুক                  স্নেহটম্বুর হয়ে ফুটে ফুটে
অল্প আঁচে হাঁড়ির ভেতরে নিভু নিভু            বাষ্প তার ঘ্রাণ হয়ে হাতায়

চামচে ও রকমারি বয়ামের কাছে পৌঁছয়
শব্দ নেই, ধোঁওয়ার গুন্ঠনে বাস ওঠে

তিন ভাগে জল আর মশলা মাখানো।                   তারও পূর্বে মরিচ ফোড়ন, দারচিনি
এলাচ ফাটিয়ে ফেলা হাতজল সেও গুলে                        তৈয়ের হবে শিলের কবলে তার

রসুন খোওয়ানো এক পুরুষ তৎপর
কুঁজো হয়ে শুয়ে থাকা যোনির ডানাতে চাপা

ঘুমন্ত শিম ক্রমশ আবিল হয়, পক্ষীমাতার মতো ওম দিই, রুক্ষতা দিই, মাছের
কানকো আর আঁশ দিয়ে রোজ তাকে ধার দিয়ে লঘার মাপে রভস জাগাই

বড়ির খাটের কাছে তুলতুল্ ডালবাটা
মেখে হাতছানি দিয়ে ডাকি কুমড়োফালির লাল রোশনাই ॥

 

দুই।

লিকলিকে সজনে ডাঁটার জন্মানো অনেকটা কিশোরীর বুক ওঠার মতো
নির্জ্ঞানের রাজত্ব যেখানে ছাই হয়, সেখানেই অবমানবীর রোঁয়া গজায় :
রোগা নদীর জল বন্ধক দিয়ে রজস্বলা কন্যা বিক্রি করে পিতৃধন্য গোটা
পরিবার জমিয়ে মাছ মুর্গি খায় এবেলা।

ধড় মুণ্ড অক্ষত রেখে মেয়েটা জানোয়ারকে চায়। গঙ্গাফড়িঙের মতো
জানুওয়ালি এখন মেধাবী লীলার ছলে মরদের পিঠে উঠে বসে, দোল
দোল দুলুনির বোলে মেয়ে বিক্রির নোট তছরুপের ফিকির কষে দুশমনের
গাঁ শেষের স্টেশন, তারপর মেয়ে দানোর ঠেক। তারপর হিজড়েদের ক্লাব
আটঘাট বেঁধে নিয়ে কাগজের দপ্তরে কত কী না বন্ধক চলে! মেয়ে মহাজন
দিদি, সুপারির দিব্বি— আমি রেডি

 

তিন।

ওলো বিবাহযোগ্য পুরুষ,
দুরন্ত খিদের তলায় অমলতাস বীজ লুকিয়ে দেখেছি একদিন
দুব্বো রঙের কালি,
দোয়াত ডুবিয়ে তোমার নাক, মুখের ছাঁই আঁকছি
যা একান্ত আমার, একটা দুঃশাসনীয় মেয়ের।
রোমার্দ্র বিকেলে তির্যক ভেঙে ফের ঘন করি জাফরান শরীর
ভেজানো বাহুডোর, ভিতর তহবিলে জিভ ঘুমিয়েছে

২৫ বছরের

 

চার।

পরপুরুষের গায়ে বাকলের গন্ধরাজ পাঠিয়েছিলে
আমি তাকে স্পর্শ ভেবে শরীরে ধুনেছি ঐতরেয়
হলুদ রাধাচূড়া যতদূর রাস্তায় ঝরেছে, তার চিহ্ন খতরনাক
কালো অবিকল
লাঙলের ফলায় জমেছে যত ক্রোধ, মেয়েমানুষের—
জরায়ুর আধখানা ধান লুফে যে এল পৃথিবীর হয়ে
তার রামচন্দ্রের মতো বর?
বাধ্যতামূলক

 

পাঁচ।

ঈশানের মেঘ ছিনে নাগকেশর, পায়ে পরবো বলে।
সিঁদুর ত্যাগ করেছি হলফ করা বয়সে, যখন চাল বেছে চাল টিপে
নিজের আঙুলের মেহনরীতি বুঝি, নিজেকে সুযোগ করে দিই।

অটোতে ওঠা আর নামার মধ্যে যতগুলো উল্লসিত শ্বাস
বহুব্রীহি, তেলো হাত, যে হাতে মা রোজ উনুন ধরান
আমি সেই। সে-হাত ক্রমশ সহস্রচক্ষু হবে
কেবল হাতের তৈরি মণ্ডা মেঠাই ছানা, যদ্দিন দুধের মাঠায়
ঠোঁট রেখে আমি ভাবি, যা হবার তা হোক
‘মা ফলেষু কদাচন’ আসলে একটা ডাহা মিথ্যে বুজরুকি
আসলে এই খেলাটুকু চালিয়ে যাওয়া
খেলার চাতুরি— পরিসংখ্যানহীন

চিত্র: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

সুজিত বসু

সুজিত বসুর দুটি কবিতা

তারার আলো লাগে না ভাল, বিজলীবাতি ঘরে/ জ্বালাই তাই অন্তহীন, একলা দিন কাটে/ চেতনা সব হয় নীরব, বেদনা ঝরে পড়ে/ যজ্ঞবেদী সাজানো থাকে, জ্বলে না তাতে ধূপ/ রাখে না পদচিহ্ন কেউ ঘরের চৌকাঠে/ শরীরে ভয়, নারীরা নয় এখন অপরূপ/ তারারা সব নিঝুম ঘুমে, চাঁদের নেই দেখা/ অর্ধমৃত, কাটাই শীত ও গ্রীষ্ম একা একা

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বিশ্বকর্মার ব্রতকথা

বিশ্বকর্মা পুজোতেও কেউ কেউ বিশ্বকর্মার ব্রত পালন করে থাকেন। এমনিতে বিশ্বকর্মা যেহেতু স্থাপত্য ও কারিগরির দেবতা, তাই কলকারখানাতেই এই দেবতার পুজো হয়ে থাকে। সেখানে ব্রতকথার স্থান নেই। আবার কোন অলৌকিক কারণে এবং কবে থেকে যে এদিন ঘুড়িখেলার চল হয়েছে জানা নেই। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন শহর ও গ্রামের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ও নানা আকৃতির ঘুড়িতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার কখনও বাংলাদেশে পা রাখেননি!

ভাবতে অবাক লাগে, ‘৭১-পরবর্তী বাংলাদেশ উত্তমকুমারকে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। টালিগঞ্জের কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেছিলেন সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে। অন্যদিকে ববিতা, অলিভিয়া ও আরও কেউ কেউ টলিউডের ছবিতে কাজ করেছেন। ঋত্বিক ঘটক, রাজেন তরফদার ও পরে গৌতম ঘোষ ছবি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশে এসে, কিন্তু উত্তমকুমারকে আহ্বান করার অবকাশ হয়নি এখানকার ছবি-করিয়েদের।

Read More »
নন্দিনী কর চন্দ

স্মৃতি-বিস্মৃতির অন্দরমহলে: কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি

বিস্মৃতির অতলে প্রায় তলিয়ে যাওয়া এমন কয়েকজন মহিলা কবির কথা আলোচনা করব, যাঁরা তাঁদের কাব্যপ্রতিভার দ্যুতিতে বাংলা কাব্যের ধারাকে উজ্জ্বল ও বেগবান করে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণকামিনী দাসী, মোক্ষদায়িনী দেবী, প্রসন্নময়ী দেবী, লজ্জাবতী বসু, জগন্মোহিনী দেবী, গিরিন্দ্রমোহিনী দাসী, হিরণ্ময়ী দেবী, অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত, সুরবালা ঘোষ প্রমুখ।

Read More »
মোহাম্মদ কাজী মামুন

বালকেরা অচেনা থাকে : এক অবিস্মরণীয় পাঠ অভিজ্ঞতা

ঘাসফুল নদী থেকে প্রকাশিত ‘বালকেরা অচেনা থাকে’ গল্পগ্রন্থটি যতই এগোনো হয়, একটা অনুতাপ ভর করতে থাকে পাঠকের মনে— কেন আগে সন্ধান পায়নি এই অমূল্য রত্নসম্ভারের! হ্যাঁ, রত্নসম্ভারই, কারণ একটা-দুটো নয়, প্রায় দশটি রত্ন, তাও নানা জাতের— লুকিয়ে ছিল গল্পগ্রন্থটির অনাবিষ্কৃত খনিতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাইশে শ্রাবণ ও বৃক্ষরোপণ উৎসবের শতবর্ষ

কবির প্রয়াণের পরের বছর থেকেই আশ্রমবাসী বাইশে শ্রাবণকে বৃক্ষরোপণ উৎসব বলে স্থির করেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই দিনটিই এ-উৎসবের স্থায়ী তারিখ। বাইশের ভোর থেকেই প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় উৎসব। সকালে কলাভবনের ছাত্রছাত্রীরা বিচিত্রভাবে একটি পালকি চিত্রিত করেন ছবি এঁকে, ফুল, লতাপাতায়। মঙ্গলধ্বনি দিতে দিতে এর পর পালকির ভিতরে টবের মধ্যে একটি চারাগাছকে স্থাপন করা হয়। অতঃপর শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গীত-পরিবেশন-সহ আশ্রম-পরিক্রমা।

Read More »