মী রা তু ন না হা র
শেখ আনওয়ার উদ্দীনকে শেখ আন্দু বলে সকলে। তিনি ভাগলপুর শহরের বিশিষ্ট আইনজীবী চৌধুরী সাহেবের মোটর গাড়ির চালক। অনিন্দ্যকান্তি এবং অনন্য মানসিকতার অধিকারী এই যুবক। জ্ঞানতৃষ্ণা মেটানোর সুগভীর আকাঙ্ক্ষায় অধ্যয়নে নিমগ্ন থাকতে দেখা যায় তাকে। শুদ্ধ কর্ম ও চিন্তায় নিজেকে ব্যাপৃত রেখে জীবন যাপন করে চলেন তিনি। বিচিত্র বিষয়ের প্রতি তার অধ্যয়ন-পিপাসা প্রতিদিন বেড়ে চলে। তার মস্ত বড় গুণ তিনি পরিচ্ছন্ন মনন এবং জাগ্রত বিবেক দিয়ে জীবনের করণীয় কর্ম বেছে নিতে পারেন। তাই প্রভুকন্যার পক্ষ থেকে আত্মনিবেদনের মধ্য দিয়ে বর্ণময় যৌবনের তরল আহ্বান এলেও প্রবল পৌরুষ দিয়ে তাকে প্রতিহত করতে পারেন তিনি। অন্যদিকে নাগালের অতীত এক নারীর প্রতি স্বপ্নময় ভালবাসায় তিনি ক্রমশ বিষাদময়তায় ডুবে যেতে থাকেন। পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের ভারও তিনি বহন করেন নিঃস্বার্থ পরোপকার সাধনের এবং নিঃশর্ত দেহশ্রম দানের মাধ্যমে। আত্মানুসন্ধানী মানুষটি বারংবার স্থান বদল করতে করতে যেন শিকড় ছাড়াতে ছাড়াতে জীবনের গ্রন্থি মোচনের লক্ষ্য স্থির করে নেন। প্রিয়তমা নারীর সান্নিধ্য থেকে তারই মঙ্গলের জন্য নিজেকে ছিন্ন করে তিনি পবিত্র মক্কার পথে পাড়ি দেন। শেখ আন্দু, পবিত্র হৃদয়ের আধার মানুষটি, আসলে এ সংসারে চির প্রবাসী।
১৩২২ সালে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘শেখ আন্দু’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র এই ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব শেখ আনওয়ার উদ্দীন।
এবার আর একটি গল্পের চরিত্রের কথা বলা যাক। একটি কন্যার কাহিনি। কন্যাটির নাম দীপ্তি। শ্যামবর্ণ, একহারা, লম্বা চেহারা। প্রখর বুদ্ধির ছাপ মুখমণ্ডলে। উজ্জ্বল ‘কৌতুক চঞ্চল’ দুটি চোখ। সাধারণ শাড়ি-সেমিজ পরনে, চশমা চোখে, সোনার চুড়ি হাতে, সোনার হার গলায়, পায়ে জুতো, দীর্ঘকেশী, অনাবৃত মাথা, সাদা সিঁথি-ওয়ালা মেয়েটি প্রথম দর্শনেই পাঠকসাধারণের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এইপ্রকার সাজসজ্জা বাহ্যরূপ প্রকাশক মাত্র। তার প্রখর প্রতিবাদী চরিত্র ধরা পড়ে দর্শন দেওয়ার পর মুহূর্তেই।
‘টাকা ধার দেনেওয়ালা’ মশাইকে দেখেই সে বুঝে ফেলল, ‘শিকার’ খুঁজতে এসেছে পাড়ার সকলের ‘বড়দি’-র ঘরে। দীপ্তি সুযোগ বুঝে তাকে উচিত শিক্ষা দিতে দেরি করল না। স্পষ্ট উচ্চারণে বলে ফেলল, দুজন নিঃসহায় ভ্রাতৃবধূর সম্পত্তি অন্যায়ভাবে আত্মস্যাৎ করে তিনি রেহাই পাবেন না। দীপ্তি তার বাবা, জ্যাঠামশাই, দাদামণি সকলকে বলে দিয়ে তাঁর শাস্তির ব্যবস্থা করবে শিগগির। তার দাদামণি, সরকার বাবুর কর্তা, যদি তাঁর অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন তাহলে দীপ্তি নির্দ্বিধায় জানিয়ে দিল, ‘আমি তাঁকে পুলিশে দেব।’ পরিবারসূত্রে ‘আইনের মজা’ সে জানে। সরকার মশাই তার কথা শুনে ভয় পেলেন। দীপ্তি তখন তাঁকে ঘরের বাইরে যাওয়ার দরজা দেখিয়ে দিল দৃপ্ত ভঙ্গিতে। সে তারপর মোক্ষম কাণ্ড করে বসল।
সে ‘বড়দি’-র মুখোমুখি হয়ে মনুর শ্লোক শুনিয়ে জানাল, স্ত্রীলোকদের কোনও মন্ত্রেও অধিকার নেই। প্রশ্ন শুনতে পেল সে, ‘কেন বলতে পারিস?’ সম্ভবত সেদিন মনুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর রাগারাগি হয়েছিল। তাই শাস্ত্র লিখতে বসে শ্লোকটা এভাবে লিখে ফেলেন— উত্তর দিল সপাটে কিন্তু সরসতা মিশিয়ে সবলা কন্যা দীপ্তি।
তার এমন সব কথাবার্তা শুনে ‘বড়দি’ বলেন, ‘…এসব, দেখে শুনে, তোরা যে বিবাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করিস তাতে আশ্চর্য্য হই নে।’ তিনি দীপ্তির কাছে জানতে চান সে বিয়ে করবে কিনা। দীপ্তি সদর্থক উত্তর দেয় এবং সেইসঙ্গে জানিয়ে দেয়, ‘আমি বিয়ে করব এমন সুস্থ সচ্চরিত্র লোককে, যার মগজে ভাববার ক্ষমতা আছে, হৃদয়ে বোঝবার ক্ষমতা আছে, কব্জিতে খেটে খাবার ক্ষমতা আছে।’
বিস্ময়কর আধুনিকতার ধারক-বাহক সদ্য কৈশোর ছাড়ানো এই তরুণী সেকালে লেখা একটি গল্পের প্রধান চরিত্র— যেমন সপ্রতিভ তেমন স্পষ্টভাষী! গল্পটির নাম— ‘দীপ্তি’। এই গল্পটি ১৩৪০ সালে ‘জয়শ্রী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আর চরিত্রটির স্রষ্টা? এবার তাঁর কীর্তি-কথায় আসা যাক।
শেখ আন্দু এবং দীপ্তি নামক চরিত্রদুটির স্রষ্টা হলেন সেকালের খ্যাতনামা লেখিকা শৈলবালা ঘোষজায়া। ‘শেখ আন্দু’ নামেই তিনি উপন্যাস লেখেন এবং ‘দীপ্তি’ নামে তিনি একটি গল্প লেখেন। বাংলা মায়ের সন্তানদের মধ্যে বহুযুগ ধরে অবহেলিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত সন্তানদের প্রতিনিধি হয়েও শৈলবালা অসামান্যা নারীসন্তান হিসেবে অবিশ্বাস্য অবদান রেখে গেছেন জীবনের লড়াই ও কর্মক্ষেত্রে। জীবনে প্রতিকূলতা তাঁকে যেমন পরাজয় মানতে বাধ্য করতে পারেনি তেমন সাহিত্যজগতে নিজ প্রতিভাবলে তিনি চিরকালের জন্য স্বাক্ষর রেখে গেছেন। ১৮৯৪ সালের দোসরা মার্চ (ফাল্গুন ১৯, ১৩০০ সাল) কক্সবাজারে তাঁর জন্ম হয় পিতা কুঞ্জবিহারী নন্দী ও মাতা হেমাঙ্গিনী দেবীর সন্তান রূপে। পিতা অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন হিসাবে চাকরি করতেন। তাঁর আদি বাড়ি ছিল বর্ধমান জেলায়। তিনি সরকারি কাজের সূত্রে কক্সবাজারে থাকা কালে এই প্রতিভাময়ী কন্যাসন্তান লাভ করেন। শৈলবালার মাতার আদি বাড়ি ছিল কোন্নগরে। শ্রী অরবিন্দ তাঁর মাতার জ্ঞাতিভ্রাতা ছিলেন।
১৩১৪ সালে মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে বর্ধমান জেলার মেমারি গ্রামে শৈলবালার বিয়ে হয় সেই সময়ে ইউনান সাহেবের হোমিওপ্যাথি কলেজে পাঠরত নরেন্দ্রমোহন ঘোষের সঙ্গে। তিনি পড়তি জমিদার পরিবারের সন্তান তখন। হোমিওপ্যাথি কলেজ থেকে পাশ করার মাত্র আড়াই বছর (মতভেদে তিন বছর) পরই তিনি চিত্ত বিভ্রমের শিকার হন এবং দশ বছর ধরে ভুগবার পর মারা যান।
শৈলবালা বর্ধমান রাজ বালিকা বিদ্যালয়ের মেধাবী ও কৃতী ছাত্রী ছিলেন বালিকা বয়স পর্যন্ত। তারপর পিতা ও জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অশ্বিনীকুমার নন্দী, যিনি যুদ্ধ বিভাগে চিকিৎসক ছিলেন— উভয়ের কাছে শিক্ষাপ্রাপ্ত হন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি সাহিত্য চর্চা শুরু করেন বিশেষ মনোযোগ সহকারে। অনুকূল পারিবারিক পরিবেশ না পেলেও তিনি রাত জেগে লুকিয়ে লিখতেন। তিনি এভাবে ‘শেখ আন্দু’ লেখেন এবং স্বামীর হাত দিয়ে ‘প্রবাসী’ পত্রিকা অফিসে পাঠান ১৩২১ সালে। বেশ কিছু সম্মান দক্ষিণা তিনি উপন্যাসটির জন্য পান পত্রিকা থেকে। পরের বছর সেটি প্রকাশিত হয়। তখনও তাঁর স্বামী সুস্থ ছিলেন এবং তাঁর ছাত্রাবস্থা কাটেনি। বই লেখার এইপ্রকার দুঃসাহস দেখানোর ফলে কেউ তাঁর উপর খুশি হননি সে সময়ে। সে কারণে তাঁর উদ্যম তাই বলে প্রতিহত হয়নি কোনওমতে। তাঁর জয়যাত্রা অব্যাহত থাকে।
কবিকঙ্কণ চণ্ডীর ওপর গবেষণামূলক নিবন্ধ লিখে তিনি ‘সরস্বতী’ উপাধি অর্জন করেন। নদীয়ার মানদ মণ্ডলী তাঁর সাহিত্যসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে ‘সাহিত্য ভারতী’ ও ‘রত্ন প্রভা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ‘সরস্বতী’ খেতাব পান ব্যারিস্টার চন্দ্রমোহন সেন প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য সংস্থা থেকে। কিন্তু এইপ্রকার অভাবনীয় প্রাপ্তি-সুখ তাঁর জীবনে চরম বিড়ম্বনার মুখোমুখি হল। তাঁর স্বামী উন্মাদ রোগে আক্রান্ত হলেন। তারপর দীর্ঘ রোগ-ভোগ শেষে ১৩৩৬ সালে তাঁর মৃত্যু ঘটে। বস্তুত লেখিকা শৈলবালার জীবনে ১৩২৬ সাল থেকেই কঠিন সংগ্রাম শুরু হয় যা তাঁর জীবনকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। নিজেও তিনি আকস্মিক আক্রমণের শিকার হয়ে একটি চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেন। তাঁর ব্যক্তিজীবনে নানাধরনের বিপণ্নতা দেখা দেয় এবং চলতে থাকে। ‘সে ইতিহাস যেমন করুণ তেমনি মর্মস্পর্শী!’
ভয়াবহ প্রতিকূলতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে তিনি হার মানেননি সৃজনশীলতাকে অপ্রতিহত রাখার লড়াই-এ জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। উপন্যাস ও ছোট গল্প রচনার ক্ষেত্রে তাঁর স্বকীয়তার স্বীকৃতি মিলেছে সাহিত্য-ভুবনে। তাঁর রচনাদির সম্পূর্ণ তালিকা মেলে না। কম-বেশি বাহান্ন-তিপ্পান্নটি গ্রন্থ তিনি লিখেছিলেন। কয়েকটি উপন্যাস ও গল্প-গ্রন্থ সেগুলি প্রধানত। অন্যান্য রচনাদির নাম জানা গেলেও সেসবের হদিশ মেলেনি।
তাঁর রচিত গ্রন্থগুলির নাম যেমন জান যায়: শেখ আন্দু (উপন্যাস), চৌকো চোয়াল (ডিটেকটিভ উপন্যাস), জয়পতাকা (ছোটদের ডিটেকটিভ উপন্যাস), নমিতা (উপন্যাস), জন্ম অপরাধী (উপন্যাস), জন্ম অভিশপ্তা, ইমানদার, মুচি (ছোটগল্প), বিনির্ণয়, গঙ্গাজল, তেজস্বতী, স্মৃতিচিহ্ন, অনন্তের পথে, তরু, করুণাদেবীর আশ্রম, মিষ্টি সরবৎ (উপন্যাস) অবাক, মঙ্গলমঠ, আড়াইচাল (উপন্যাস ও ছোটগলপ) প্রভৃতি।
তাঁর রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘শেখ আন্দু’-র মতো প্রসিদ্ধি আর কোনও উপন্যাস বা গল্প পায়নি। কুড়ি বছর বয়সে যখন শৈলবালা এই উপন্যাসটি লেখেন তখন সেটি প্রবাসী-তে প্রকাশ কালে পাঠকমহলে প্রবল ঝড় তুলেছিল! মুসলিম দরিদ্র নায়কের সঙ্গে ধনী ঘরের হিন্দু নায়িকার প্রেমকে সেদিনের অনেক উদারপন্থীও সহজে মেনে নিতে পারেননি। তবে একথা সত্য যে, শৈলবালার দুঃসাহসিকতা তৎকালে কারও কারও ভাললাগারও হেতু ঘটিয়েছিল। তাঁর সৌভাগ্য যে, ১৯৬৫ সাল থেকে তিনি লেখিকা হিসেবে সরকারি বৃত্তি পান।
শেষ বয়সে রক্তচাপজনিত ক্লেশ ও অন্যান্য ব্যাধিতে তাঁর শরীর জীর্ণদশাপ্রাপ্ত হয়। তথাপি সেই শরীর নিয়েই তিনি ম্যাগনিফাইং গ্লাস ধরেও চশমার সাহায্যে পড়াশুনা ও লেখালেখি চালিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে অতঃপর তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
সাহিত্যমহলে উল্লেখযোগ্য বা নজর কাড়ার মতো সাড়া ফেলতে না পারলেও শৈলবালা ঘোষজায়া অনাদৃত বলে গণ্য হননি কখনও। ‘প্রবাসী’-তে নবীনা বয়সেও ধারাবাহিক উপন্যাস প্রকাশ করে যে সাড়া তিনি সেদিন জাগাতে পেরেছিলেন তা সেদিনের লেখক-লেখিকা মহলে তো বটেই একালেও অনেকের কাছে নিবিড় কামনার বিষয়। বাংলা ১৩২১–১৩৩৭ সাল পর্যন্ত তাঁর প্রধান গ্রন্থগুলির রচনাকাল, যেসময়ে তাঁর জীবনে দুরন্ত দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দিয়েছিল। তাঁর বয়স যখন মাত্র ছত্রিশ, তাঁর স্বামী মারা যান। লেখালেখি তাতে তাঁর বন্ধ হয়নি। তিনি লিখে গেছেন অক্লান্ত মনোবল সম্বল করে। তারই প্রতিদানে যেন তাঁর মানসপুত্র আন্দুকে তাঁর অগ্রজ অশ্বিনীকুমার নন্দী ‘আদরের ভাগিনেয়’ বলে গ্রহণ করেছিলেন। শৈলবালা ‘পুণ্যের জয় এবং পাপের ক্ষয় অবশ্যম্ভাবী’— এইপ্রকার বিশ্বাস প্রাণে ধারণ করে তাঁর কাহিনির চরিত্রগুলি সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর সেই আন্তরিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ বৃথা যায়নি। অনেকাংশেই তিনি সফল হয়েছেন, বলা চলে নিঃসংশয়ে।
তিনি ঈশ্বরকে মঙ্গলময় বলে বিশ্বাস করে, তিনি যে অন্যায়ের প্রতিবিধান অবশ্যই করবেন মেনেও, মানুষকে তাদের কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করার গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছেন। নিজ প্রচেষ্টায় তারা যেন সৎকর্ম পালনে এবং অসৎ কর্ম বর্জনে অভ্যস্ত হয়— তেমন সদিচ্ছা তিনি জাগাতে চেয়েছেন। তাঁর এইপ্রকার মহৎ ভাবনা তিনি নানা ধরনের চরিত্র-চিত্রণের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে চেয়েছেন পাঠক-হৃদয়ে।
তিনি তাঁর রচনাদিতে বিবিধ ধর্ম, বর্ণ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানকে তুলে ধরেছেন জগতের অনন্য বৈচিত্র্যকে বোঝাবার জন্য। পিতার বদলির চাকরিসূত্রে লব্ধ অভিজ্ঞতাকে তিনি তাঁর সৃজনকর্মে অতি দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপন করতে পেরেছিলেন। তাঁর অপ্রকাশিত স্মৃতিকথা অথবা আত্মজীবনী থেকে আরও কত মূল্যবান সম্পদ মিলতে পারত— ভাবলে আক্ষেপ অবধারিত হয়ে পড়ে!
সেকালের শৈলবালা সমকালের সমস্যাদি কীভাবে ধরতে পেরে আজকের সমাজজীবনে দিশারী হওয়ার মতো আলো দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন— ভাবলে অকপট বিস্ময় বাধা মানে না। তিনি আমাদের সাহিত্যমহলের সক্ষম পূর্বসূরি— এ সত্য যেমন বিস্ময়কর তেমনই অবিশ্বাস্য মনে হয়! সাহসিকা তিনি অতিশয় সাহসভরে যা আমাদের জন্য রেখে গেছেন বা দিয়ে গেছেন সেই পূর্বসূরিতার যোগ্য উত্তরসূরি হওয়ার দায় বর্তায় আজ একালের লেখক-লেখিকার ওপর। ব্যক্তিজীবনের বিপণ্নতা তাঁর সতত প্রবহমান সৃজনশীলতার গতি রোধ কখনও করতে পারেনি। অন্তত সেই শিক্ষাটুকু আমরা তাঁর অনবদ্য জীবনচর্যা থেকে গ্রহণ করে নিজ নিজ জীবনধারাকে সার্থক করে তুলতে পারলে যে, তাঁর প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হবে— এই বিশ্বাসকে যেন আমরা না হারাই!
আমরা যেন ‘তাঁর অবাধ চিত্তের চলিষ্ণুতাকে আদর্শ বলে গ্রহণ করে উপস্থিত কর্তব্যপালনে অকুণ্ঠ থাকতে পারি’!
তথ্যসূত্র:
১. প্রচারপত্র, ‘সুরাহা-সম্প্রীতি’-র বার্ষিক অনুষ্ঠান, ১৯৯৩ (২৫ জানুয়ারি)
২. ‘সাহিত্যিকা’, মহাশ্বেতা দেবী, ১৯৭২
৩. সুরাহা-সম্প্রীতি আয়োজিত রোকেয়া স্মারক বক্তৃতা: শৈলবালা ঘোষজায়া (১৮৯৪-১৯৭৩), মানসী দাশগুপ্ত, ১৯৯৩