Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

গোদার পরিচয়: প্রথম অধ্যায়

যদি গোদার কীভাবে কলকাতায় এলেন তা জানতে হয়, তবে অনেকেই বলবেন যে, সেই সোসাইটি সিনেমার সারারাতব্যাপী লাইন তাঁর রেট্রো দেখার জন্য। তা ১৯৮২ সাল। কিন্তু গোদার আমাদের কাছে সত্তর দশকেই এসেছিলেন রাজাধিরাজের মত। বস্তুত, বাঙালি যুবসমাজের কাছে তখন দুজনই ঈশ্বর, একজন পুবে ক্রুদ্ধ ঋত্বিক ঘটক, আর একজন পশ্চিমে আর্ত জঁ-লুক গোদার। কিন্তু এবার বলতে হবে, পঞ্চাশ বছর আগে এমন প্রেম আমাদের আচ্ছন্ন করেছিল কেন? আসলে যুগটা ছিল আগুনের, বারুদের, প্রতিবাদের। আর আমরা এ-দুজন মানুষের মধ্যে দিয়ে পেয়েছিলাম সেইসব দেবদূতেদের যাঁরা অন্তর্ঘাতের বীজ ফিসফিস করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন কান থেকে কানে অথচ দুজনেই কাজ করছেন সিনেমার মত পিচ্ছিল গণমাধ্যমে। এই মাধ্যম তো কবিতা নয়, নাটক নয়, এমনকি চিত্রকলাও নয়। এখানে সবাই সস্তা রমণীর মত ব্যবহার্য গল্প খোঁজে। আর প্রত্যেকেরই ধারণা, তারা নিঃসংকোচে বিনোদনের এই পল্লিতে হুল্লোড়বাজি করে যেতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে আমরা দেখেছিলাম গোদার ফরাসি দেশে সম্পূর্ণ একা, যদিও আপাতভাবে দলবদ্ধ, এক প্রতিরোধের জন্ম দিচ্ছেন। ঋত্বিকের কথাও বলা যেতে পারত। কিন্তু আজকের আলোচনা তাঁকে নিয়ে নয়।

বুঝতে পারছি, পাঠকরা বিব্রত হচ্ছেন। সুতরাং তুমুল আড্ডার মধ্যে হাত থেকে হাতে যেমন চায়ের ভাঁড় ঘুরতে থাকে তেমন স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই কথা বলা ভাল। আমরা মধ্য-পঞ্চাশের প্যারিসের কথা বলছি। এ সময় শতাব্দীর বৃক্ষসকল ম্লান। গাঢ় কুয়াশার মধ্যে আমরা ঈশ্বরের সমাধির কাছে চলে এসেছি। তারপর দেখছি শহরের সেইন নদীর ওপরে সেতুগুলি নিম্নগামী হয়েছে। স্থির পায়ে কতিপয় যুবাদলের সঙ্গে রাত হেঁটে যাচ্ছে নরকের দিকে। সেই প্যারিসের কোনও প্রতিকৃতি বিখ্যাত ল্যুভর চিত্রশালায় পাওয়া যাবে না। সুতরাং একদল তরুণ বিদ্রোহ করলেন। এবং তাঁদের আজকের খবরের কাগজের ভাষায় ‘নবতরঙ্গ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

ছোট করে গল্পটা বলি। আসলে হয়েছিল কী, একটা সিনেমার কাগজ— ‘লে কাইয়ে দু সিনেমা’ উঠে যাচ্ছিল। তার মালিকরা তখন একজন কৃশকায় ফিল্ম বুদ্ধিজীবীকে অনুরোধ করেন যদি কাগজটা চালানো যায়। সেই সূত্রেই পরবর্তীকালে যিনি আবিশ্বনন্দিত বাস্তববাদী হবেন সেই আঁদ্রে বাজাঁ, কাগজটির দায়িত্ব নিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠিত লেখকদের খোঁজ না করে বরং একদল আলুথালু এলোমেলো তরুণকে সিনেমা বিষয়ে লেখার অধিকার দিলেন। তাঁদের লেখা ও চলচ্চিত্রকর্ম প্রচলিত খবরের কাগজগুলোতে হঠাৎ একটা তকমা পেল— নবতরঙ্গ বা ন্যুভেল ভাগ। ফরাসি নবতরঙ্গ অর্থাৎ সেই ক’টি মানুষ যাঁদের হৃদয় সিনেমা-হলের মত শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ছিল না— অর্থাৎ ক্লোদ শ্যাব্রল, ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো, জাক রিভেত, এরিক রোমার, জাক দোনিওল, ভালক্রো ও আমাদের আলোচ্য জঁ-লুক গোদার। কী আশ্চর্য, মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যেই সমালোচনা ও সিনেমায়, যখন তাঁর পঁয়তল্লিশ বছর বয়স, তখনই তিনি কিংবদন্তি। খ্যাতির তুঙ্গে থেকেও, চলচ্চিত্র ভাষার ব্যাকরণ বদলে দেওয়ার পরেও সংস্কৃতির ভ্যাটিকান ওই প্যারিসে তিনি সর্বাধিকভাবে আক্রান্ত আবার সর্বাধিকভাবে আলোচিতও। গোদার বিরক্তিকর কিন্তু অনিবার্য। আর ব্যক্তিগতভাবে কলকাতা সম্পর্কে বলতে পারি, আমরা গোদার বিষয়ে যত উচ্ছ্বসিত হয়েছি তার তুলনায় ভদ্রলোকের শেষের দিকের ছবিগুলো আরও বেশি দেখবার সুযোগ পেলে আমাদের মুখরতা অন্তত স্থিতধী হত। বলতে চাইছি, গোদার ঈর্ষা পেয়েছেন, বেশ কিছুটা শ্রদ্ধাও। কিন্তু আমৃত্যু নির্ভেজাল প্রশংসা খুব কমই। সম্ভবত ১৯৬৫-তেই বিখ্যাত চলচ্চিত্রস্রষ্টা লুই বুনুয়েল বলেছিলেন, তাচ্ছিল্যভরে যে, গোদারের চলচ্চিত্র জীবনের আয়ু আর বড়জোর দুবছর। ফরাসি সাম্যবাদীদের কাগজ ‘লুমানিতে’ গোদারকে বিদ্রূপ করেছে— একজন ধোপদুরস্ত নাস্তিক্যবাদী বলে। ১৯৬৬ সালে ধর্মীয় সংস্থা তাঁর ছবি ‘ম্যাস্কুলাঁ ফেমিনাঁ’-কে দণ্ডিত করে। একজন বিখ্যাত সমালোচক তাঁর ‘লে কারাবিনিয়ার’ সম্বন্ধে লিখেছেন, ‘এটা এত নোংরা, এত তাৎপর্যপূর্ণ অপদার্থ একটা ছবি যে আলোচনা করলেও স্নানের প্রয়োজন হয় শুচিবোধ ফিরিয়ে আনার জন্য।’ এবং তারপরও গোদার আর কেউ নন, গোদারই। এবং আবারও বলি, সর্বাধিকভাবে অনুকৃত, তিনি আন্তর্জাতিক সিনেমায় সবচেয়ে জোরালো পাল্টা প্রস্তাব। এমনকি সত্যজিৎ রায়ও স্বীকার করেন, কাহিনি সিনেমার ক্ষেত্রে গ্রিফিথের যা অবদান, ‘অপর’ সিনেমার ক্ষেত্রে গোদারেরও তাই। তার প্রভাব ইউরোপ ছাড়িয়ে আফ্রিকা এশিয়া ল্যাটিন আমেরিকায় পড়েছে। হলিউডের বিরুদ্ধে তাঁর প্রবল প্রতিরোধ সত্ত্বেও তাঁকে অস্কার দেওয়া হয়েছে। এবং অবশেষে এক বিপুল সফলতা-অন্তে তিনি রহস্যজনকভাবে বেছে নিয়েছেন সহায়তাপ্রাপ্ত আত্মহনন। তাঁর বিশৃঙ্খলা, তাঁর স্বনির্বাচিত মাওপন্থা, ৬৮-র যুব বিদ্রোহে যোগদান, তাঁর ভাষাতত্ত্ব ও দর্শনপ্রীতি, অসংলগ্ন ও স্ববিরোধী কথাবার্তা হারিয়ে গেলে আমি দেখতে পাই স্নায়ুযন্ত্রণায় পরাভূত এক নিঃসঙ্গ বন্দিকে, যাঁকে আত্মহননের আগে অপেক্ষা করে যেতে হল প্রায় নব্বই বছর। আমাদের কি মনে পড়বে বিশ শতকের বিরাট গদ্যশিল্পী ফ্রানজ কাফকার কথা? অথবা উনিশ শতকের একেবারে শেষে চিত্রকর ভ্যান গখের কথা? ফ্রাঙ্ক কারমোদের রোমান্টিক শিল্পীকে কি আমাদের মনে পড়বে?: ‘লোনলি, হন্টেড, ভিক্টিমাইজড, ডিভোটেড টু সাফারিং, রাদার দ্যান অ্যাকশন’। এই গোদারই খুঁজে চলেন রাষ্ট্র বা ফ্রানজ কাফকার ঠিকানা।

গোদারের শিল্পকর্মে সামান্য তদন্ত চালালেই বোঝা যায়, তাঁর মার্কসবাদ অনেকটাই আরোপিত। সঙ্গে সঙ্গে একথাও ভুলে যাওয়ার নয়, তিনি যেহেতু প্রকৃত শিল্পী সেহেতু দলদ্রোহী। অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয় না— এই জেনে পুঁজিবাদের শেষবিকেলে বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে নিজস্ব স্বীকারোক্তি রেখে যেতে চান। আজ যখন তিনি চলে গেছেন তখন বলা যায়, যুবরাজ হ্যামলেটের মতই সিনেমার মত একটি অনভিজাত মাধ্যমকে তিনি প্রশ্নের পর পর প্রশ্নে পরিণত করেছিলেন ভীষ্মের শরশয্যায়।

ইতিহাসে উদ্যত নখর নীরবতা। তেসরা ডিসেম্বর ১৯৩০। জন্ম নিলেন জঁ-লুক গোদার, এমন এক পরিবারে, যার বিত্তস্ফীতি রীতিমত চোখে ধাঁধা লাগায়। অথচ বাড়ির ভেতরে দাম্পত্য রক্তপাত। জঁ-লুকের বাবা ছিলেন চিকিৎসক, মা অভিজাত পরিবারের যথার্থ পরিশীলিত মহিলা। অশান্তির পরিণামে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হল। কিন্তু গোদার পরিবারের দ্বিতীয় সন্তানের প্রকৃত মনোবিপর্যয় শুরু হল যেদিন জননী স্কুটার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন। জঁ-লুকের বয়স তখন ২৪ এবং তিনি স্কুলজীবনের শেষে আবার সুইৎজারল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে ফিরে এসেছেন।

জঁ-লুক গোদার মায়ের প্রতি অত্যন্ত বেশি অনুরক্তি দেখিয়েছেন শৈশবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, অন্যান্য প্রায় সব বিষয়েই প্রয়োজনাতিরিক্তভাবে মুখর হয়েও, গোদার মায়ের সম্পর্কে একটি রহস্যজনক মৌনতার আড়ালে চলে যান। আমাদের মনে রাখা জরুরি যে, শৈশবের ঘটনা তাঁর কাছে স্থায়ী ক্ষতদেশ। আধুনিক পরিভাষায় ফাউন্ডিং ট্রমা। তাঁর ছবিতেও নারী-পুরুষের অন্তর্গত সম্পর্কে একটি না-বলা যামিনী রয়েই গেছে। দ্বিতীয়ত আমাদের খেয়াল করতে হবে, জন বার্জার পিকাসো প্রসঙ্গে যা ভেবেছিলেন, সেই ভার্টিকাল ইনভেডরের ভূমিকা। জীবনের প্রথম দিনগুলো বিদেশে কেটে যাওয়ায় প্যারিসে তাঁর নিজেকে আগন্তুক মনে হত। একজন বিদেশির প্রতি সাধারণ ফরাসির যা প্রতিক্রিয়া গোদার তা অনুভব করতেন শহরের পথে নিতান্ত অসতর্ক মুহূর্তে কোনও পথচারীর সঙ্গে সংঘর্ষে। ‘আমার পারিপার্শ্বিক স্বাক্ষর রেখে গেছে আমার ব্যক্তিসত্ত্বায়। পঞ্চদশ লুইয়ের ভার্সাই উদ্যানে একদা গুহাবাসী মানুষদের হঠাৎ ঢুকে পড়ার মত আমরাও সিনেমা জগতে জবরদস্তি ঢুকে পড়েছিলাম। সমস্তটাই একটা ক্লান্তিকর ব্যাপার ছিল।’— তাঁর আদি যৌবনের একটি সাক্ষাৎকার থেকে উদ্ধৃতি করলাম।

এরপর আমরা লক্ষ্য করব, ফরাসি বুদ্ধিজীবীদের যা সহজাত, সেই অবিন্যস্ততা পেয়ে বসেছে গোদারকে। সরবোনে এথনোগ্রাফি পড়ার চাইতে তিনি লাতিন কোয়ার্টারে সিনে ক্লাবে সময় কাটাতে বেশি ভালবাসেন। এখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হবে এরিক রোমার ও জাক রিভেতের। তাঁরা একটি একটি ছোট চলচ্চিত্র পত্রিকা প্রকাশও শুরু করবেন। মাত্র পাঁচটি সংখ্যার পরেই সেটি বন্ধ হয়ে যাবে। এইসময় গোদারের মানসিক অস্থিরতা সীমাহীন আর তারই একটি চমৎকার স্মৃতিচারণা করেছেন ত্রুফো: গোদার বিষয়ে যা আমাকে সবচেয়ে চমৎকৃত করত তা হচ্ছে তাঁর বই পড়ার তৎপরতা। যখন আমরা বন্ধুদের সঙ্গে থাকতাম সারা সন্ধ্যাবেলা ও অন্তত চল্লিশটা বই নাড়াচাড়া করত আর সবসময়ই প্রথম পাতা আর শেষ পাতাটা দেখত। তবু মনে রাখতে হবে গোদারের মেদ ও মজ্জায় নিহিত সমালোচনা প্রবৃত্তি। বস্তুত তার সূচনা এই গ্রন্থ পরিক্রমা সূত্রেই। আমার অকারণেই মনে পড়ে যাচ্ছে পলোনিয়াসের জিজ্ঞাসা: ‘কী পড়ছেন প্রভু?’ এবং হ্যামলেটের উত্তর: ‘শব্দ, শব্দ, শব্দ।’ গোদার নিজেও জানিয়েছেন, প্রথম জীবনে সিনেমাকে তিনি পৃথিবী বা জীবন বা ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে দেখেননি। শুধু সিনেমাই ছিল প্রেক্ষাপট। ইতিমধ্যে পড়াশোনায় অমনোযোগের জন্য বিরক্ত অভিভাবক আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে অর্থসংকটে প্রতিভাবান যুবকটিকে জনপ্রিয় ফিল্মি কাহিনি লিখতে হচ্ছে। এমনকি একবার চুরিও করলেন। একমাত্র স্বস্তির বিষয়, গোদার সর্বক্ষণ চলচ্চিত্র নিয়েই ভাবছেন এবং আর কিছু নিয়ে ভাবছেন না। তিনি জানাচ্ছেন— ‘All of us at the cahiers considerd ourselves to be future directors. Writing was already a way of participating in film making because between writing and shooting there is a quantitative, not a qualitative difference.’ সমালোচনার পাশাপাশি প্রায় ছ’বছর ব্যস্ত থাকলেন স্বল্পদৈর্ঘ্যের চিত্র নির্মাণে। ১৯৫৯: আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সসম্ভ্রম প্রণতি জানাল ফ্রান্সকে। ত্রুফো কান থেকে গ্রাঁ-প্রি জয় করলেন। আল্যাঁরেনে ও জঁ-লুক গোদার দুই বিপরীতমুখী প্রতিভা সম্ভব করলেন হিরোশিমা মন আমুর ও আবুদ সুফল (ব্রেথলেস)-এর মত স্থায়ী শিল্পের সৃজন নবতরঙ্গের অশ্বমেধের ঘোড়া পৃথিবী-জয়ে বেরিয়ে গেল।

আমরা ষাটের দশকের শেষের দিকে বা সত্তর দশকে গোদারকে এত কেন গুরুত্বপূর্ণ ভাবলাম। তার একটা কারণ নিশ্চয়ই এই, যে তিনি ধ্রুপদী সিনেমার নির্মাণ পারিপাট্য ভেঙে দিলেন। এই যে বহমানতার বদলে জাম্প কাট— আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত বিচ্ছেদ, এই যে শট-রিভার্স শট রীতি অস্বীকার করা, এই যে অন্তিমে ট্রাকিং শটটিকে দোলাচলে রাখা— এসমস্তই গোদারের দুর্জয় সাহস। কিন্তু গোদারের প্রথম দশটি ছবি থেকেই প্রমাণিত হয়ে যায় যে, তিনি আসলে বিশ শতকের ফরাসি আধুনিকতাবাদীদের মত চলচ্চিত্রকেও সন্দর্ভ করতে চেয়েছিলেন। পিকাসোর চিত্রমালা যেমন একটি প্রবন্ধের রেখাচিত্র, তেমনভাবেই গোদার যা কিছু দর্শনীয় ও শ্রাব্য তাকে চিন্তনীয় করে তুলেছেন। আজ যে তাঁর বিহনে সারা পৃথিবী বৈধব্যে আক্রান্ত তার মূল কারণ তিনি প্রমাণ করতে পেরেছিলেন সমস্ত বয়ানই শেষ পর্যন্ত প্রেমপত্র। দণ্ডিত বন্দির মত সিনেমার রুপোলি সাম্রাজ্যে আর কে এত জিজ্ঞাসাচিহ্ন থরে থরে জমা রাখবেন? আর কে অ্যাফ্লুয়েঞ্জা রুগণ প্রণয়িণীকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেবেন নশ্বরতার ওপারে আছে অমরতা? আর কে র‌্যাঁবো, ভ্যান গখের পথ অনুসরণ করে বিপন্ন সময়রেখা আঁকবেন যে এই বন্ধ্যা প্রতিরূপ নির্মাণ বস্তুত আত্মনাশের সামিল। সুতরাং চলে যাওয়াই ভাল। এই মৃত্যু সুতরাং জীবনাধিক। জঁ-লুক গোদার নিতান্ত চলচ্চিত্রস্রষ্টা নন, তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের ছলনায় একজন দার্শনিক ও ইতিহাসকার। এমনকি তিনি শুধুমাত্র মার্কস-কোকাকোলা প্রজন্মের ধারাভাষ্যকারও নন। তিনি সিনেমার নিয়তি-নির্ধারিত পরিত্রাতা।

চিত্র: গুগল
Advertisement
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Anindita Mandal
Anindita Mandal
2 years ago

পড়তে দেরি হলো। কিন্তু দাগ দিয়ে রেখেছিলাম। আশ্চর্য হলাম যে একটিও মন্তব্য নেই। কত যে জানা হলো! আরো জানার ইচ্ছে জানিয়ে দিল এই লেখা। আশা রাখছি ভবিষ্যতে লেখকের কাছ থেকে এবিষয়ে আরো জানতে পারব। তিনি সে ক্ষমতা রাখেন। 🙏

Recent Posts

রূপকুমার দাস

রূপকুমার দাসের কবিতাগুচ্ছ

পড়তি বিকেলে আলতা রং রৌদ্রের রক্তিম ইজেলে,/ লজ্জারাঙা মুখ হত তরতাজা বসরাই গোলাপ।/ এখন ঈশানের মেঘপুঞ্জ ঢেকে দেয় সব কারুকাজ।/ বারুদের কটু ঝাঁঝে গোলাপের গন্ধ উবে যায়।/ নক্ষত্রের আলো কিংবা জ্যোৎস্নার ঝর্নাধারা নয়,/ বজ্রের অগ্নিঝলকে ঝলসে যায় উদভ্রান্ত চোখের নজর।/ হৃদয়ের ক্যানভাসে এঁকে রাখা আরাধ্যার চিত্রলেখা,/ অজানা শংকায় ডুবে যায় অন্ধকার সমুদ্রের জলে।/ সে সমুদ্র তোলপাড় লবেজান আমি তার পাই না হদিস।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সোমেন চন্দ: এক বহ্নিময় কথাকার

মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি একটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যদিও তা অসমাপ্ত থাকে। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘বন্যা’। পরবর্তীকালে উপন্যাসটি অসমাপ্ত-ই থেকে যায়। আরও দুঃখের বিষয়, এর বৃহদংশ হারিয়েও গেছে। আজ যে সোমেন চন্দের লেখককৃতির জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করি, তা হল তাঁর বেশ কিছু অসামান্য ছোটগল্প। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, মাত্র চব্বিশটি। আরও কিছু গল্প লিখলেও তা কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। গল্পের সংখ্যা সামান্য, তবে অসামান্যতা রয়েছে সেগুলির রচনার পারিপাট্যে, বিষয়বস্তু চয়নে, শিল্পিত প্রকাশে ও লেখনীর মুনশিয়ানায়। এছাড়া তিনি দুটি নাটিকাও লেখেন, ‘বিপ্লব’ ও ‘প্রস্তাবনা’। লেখেন কিছু প্রবন্ধ। তাঁর ছোটগল্পগুলি এতটাই শিল্পোত্তীর্ণ ছিল যে, তাঁর জীবিতকালেই একাধিক ভাষায় তা অনূদিত হয়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »