বাংলা মায়ের বড় গর্বের সন্তান অক্ষয়কুমার দত্ত। আজ থেকে দুশো বছর আগে তিনি বাংলা মায়ের কোল আলো করে জন্মেছিলেন। ১২২৭ সালের ১লা শ্রাবণ (ইং, ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুলাই) তিনি নবদ্বীপের চুপী নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাংলা মায়ের আর-এক সুসন্তান ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (বিদ্যাসাগর)-এরও জন্মের পর দুশো বছর কেটে গেছে একই সঙ্গে। এই দুই বঙ্গসন্তান একসময়ে জন্মে শিক্ষা-দীক্ষায়, চিন্তাভাবনার স্বাতন্ত্র্যে এবং নিজেদের বিবিধ প্রতিভার স্ফুরণে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ বাঙালি সাড়ম্বরে পালন করেছে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সম্প্রতি। অক্ষয়কুমার দত্ত কিছুটা বিস্মৃতির আড়ালে রয়ে গেলেন বহুকাল ধরে এবং এবারও। তবু কি তাঁকে মনে না করে পারা যায়! আমরা তাই আজ তাঁর চিন্তাভাবনা, বিদ্যার্জনের বিশালতা এবং মনুষ্যজীবন সার্থক করে তোলা নামক সফলতার কথা কিছু আলোচনা করব।
অক্ষয়কুমার দত্তের বাবার নাম পীতাম্বর দত্ত এবং মায়ের নাম দয়াময়ী। স্বল্প বেতনভোগী পীতাম্বর তাঁর অর্জিত বেতনের সামান্য অংশ পরিবারের জন্য রেখে দরিদ্র মানুষদের জন্য দান করতেন। তিনি জাতপাতের বিচার কখনও মেনে চলেননি, নিজে নিষ্ঠাবান হিন্দু হয়েও। দয়াময়ী দয়া-দাক্ষিণ্য, বিচক্ষণতা ও বিবেচনাবোধে তাঁর স্বামীর যোগ্য সহধর্মিণী ছিলেন। দয়াময়ীর বড় আদরের একমাত্র সন্তান ছিলেন অক্ষয়কুমার। তাঁর মায়ের আগের সন্তানগুলি বাঁচেনি। মাতৃহৃদয়ের নিখাদ ভালবাসা, যত্ন-আদর ইত্যাদি তিনি তাই একাই ভোগ করতে পেরেছিলেন। বাল্যবয়স থেকেই তিনি শান্ত ও নির্বিরোধী স্বভাববিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর কৌতূহলী স্বভাবটিকে আমৃত্যু লালন করেছিলেন। শিশুবয়সেই তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছিল— পৃথিবী কয় কাঠা? এবং এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য তাঁর মনে দুর্নিবার কৌতূহল জাগে এবং পরে তিনি একটি প্রবন্ধ লেখেন এই শিরোনামে— ‘ব্রহ্মাণ্ড কি প্রকাণ্ড!’ তিনি লিখেছিলেন— ‘অখিল বিশ্বের তুলনায় পৃথিবীকে একটু বিন্দু বলিলে বলা যায়। কিন্তু এই ভূ-মণ্ডলও যে প্রকার প্রকাণ্ড পদার্থ, তাহা অনুভব করা সুকঠিন।’ তিনি তাঁর এই বক্তব্য বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছিলেন উপরেল্লিখিত প্রবন্ধটিতে।
গ্রামের পাঠশালায় বছর পাঁচেক পাঠগ্রহণের পর তিনি দশ বছর বয়সে কলকাতায় পড়তে আসনে। এক সাহেবের বাংলা ভাষায় লেখা ভূগোল পড়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে তিনি প্রবল আগ্রহী হয়ে পড়েন এবং এই বয়সেই তিনি ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন। সেই লক্ষ্য সাধনের জন্য তিনি এক মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন অভিভাবকদের পূর্ণ সম্মতি না থাকা সত্ত্বেও। তিনি মেধাবলে শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক ক্লাস উঁচুতে প্রমোশন পেলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই সময় তাঁর জন্মদাতার মৃত্যু ঘটল। অক্ষয়কুমারকে রোজগারের জন্য বিদ্যালয়ের পাঠ ছাড়তে হল। ইতিপূর্বে মাত্র তেরো বছর বয়সে আগড়পাড়ার শ্যামাসুন্দরীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ফলে সংসার চালানোর দায়িত্বভার তাঁকে কাঁধে নিতে হল। স্কুলজীবনে পাঠলাভের আনন্দ তাঁর ফুরাল। স্কুলশিক্ষা বন্ধ হলেও তাই বলে বিদ্যাচর্চা তিনি ছাড়লেন না। নিজের চেষ্টায় তিনি গণিত, জ্যোতিষ, বিজ্ঞান এবং জার্মান ভাষা প্রভৃতি শিক্ষালাভ করেন। এই সময় বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে।
১২৪৬ সালে বিশ্বকবির পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি সভা গঠন করেন এবং পরের বছর এই সভার উদ্যোগে ‘তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা’ তৈরি হয়। এই পাঠশালায় অক্ষয়কুমারকে ভূগোল ও পদার্থবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। মাসিক বেতন আট টাকা। মহর্ষির স্থাপিত সভার অর্থসাহায্য পেয়ে অক্ষয়কুমার বাংলা ভাষায় ‘ভূগোল’ নামক একটি সহজবোধ্য বই লেখেন। ‘বিদ্যাদর্শন’ নামে একটি পত্রিকাও তিনি বের করেন। কিছুদিন পরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
তত্ত্ববোধিনী সভা এরপর ১২৫০ সালে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে ‘তত্ত্ববোধিনী’ নামে এবং অক্ষয়কুমারকে এই পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। তাঁর সম্পাদনায় পত্রিকাটি দেশে অল্পদিনের মধ্যেই সুখ্যাত হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষায় রচিত এই পত্রিকা ইংরেজ শাসক-প্রভাবিত শিক্ষিত, বাংলা ভাষার প্রতি বীতস্পৃহ শিক্ষিত মহলেও আলোড়ন তোলে। বিদ্যাসাগর এই সময় মাসিক দেড়শো টাকা বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন তাঁকে। অক্ষয়কুমার প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি ‘তত্ত্ববোধিনী’-র সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারলে দেশে সুশিক্ষার প্রসার ঘটাতে পারবেন, এমন আশা মনে রেখে অধিক অর্থলাভের সুযোগ হেলায় ছেড়ে দিলেন। তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে লেখার কাজে একটুও বিশ্রাম নিতেন না। ফলে তাঁর শরীর ভেঙে পড়ল। নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হল তাঁর দেহ। শেষে ‘শিরোরোগ’ নামক দুরারোগ্য ব্যাধিতে তিনি আক্রান্ত হলেন। ‘তত্ত্ববোধিনী’ ছাড়তে হল। কিছু বৃত্তি তবুও তিনি পেতে থাকলেন সভা থেকে। বই লেখার কাজে তিনি নিরলস ছিলেন। ফলে বই বিক্রির অর্থলাভে সংসারে বিশেষ অসুবিধা আর রইল না। তিনি সেই কারণ লিখে জানিয়ে তত্ত্ববোধিনী সভার বৃত্তি নেওয়া বন্ধ করে দিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি আর তত্ত্ববোধিনী সভাকে ক্ষতিগ্রস্ত করিব না।’
তাঁর সময়ে বাংলা ভাষা সুবোধ্য ছিল না, বহুলাংশে সংস্কৃত-নির্ভর ছিল এবং সর্বস্তরের শিক্ষার্থীর জন্য সহজবোধ্য ছিল না। এমন বহু বিষয় ছিল যেগুলি বাংলা ভাষায় প্রকাশযোগ্য হয়ে উঠত না ভাষার দুর্বলতার জন্য। অক্ষয়কুমার দত্তের অবদান এইসমস্ত দিক থেকেই চিরকালের জন্য স্মরণযোগ্য। তিনি আমৃত্যু বাংলা গদ্যের সংস্কার-কর্ম এবং সেই সঙ্গে সমাজ-সংস্কারমূলক চিন্তাভাবনা প্রসারের জন্য প্রাণপাত পরিশ্রম সাধন করেছিলেন। আমরা সংক্ষেপে তাঁর মহত্তর অবদানের কথা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করব।
অক্ষয়কুমারের জ্ঞানাকুলতার মতো জ্ঞানানুরাগ সচরাচর আমাদের দেশে দেখা যায় না। তিনি পণ করেছিলেন, দেশবাসীকে সত্যিকার শিক্ষিত মানুষ করে গড়ে তোলার জন্য। তিনি জীবনের মূলমন্ত্র গ্রহণ করেছিলেন— ‘শিখিব ও শিখাইব’। তাঁর বিবিধ রচনাদির এই একটিই উদ্দেশ্য ছিল।
তিনি অপরিণত শিশু ও তরুণ মনের পরিপুষ্টি সাধনের জন্য রচনা করেন— ‘চারুপাঠ’। এটি কেবলমাত্র স্কুলপাঠ্য বই নয়। বাংলা ভাষায় রচিত ‘চারুপাঠ’ বিজ্ঞানপ্রেমিক লেখকের হাতে এক অনবদ্য সৃষ্টি হয়ে রয়েছে। সাহিত্যসৃষ্টির মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করার লক্ষ্য নিয়ে অক্ষয়কুমার দত্ত কখনও কিছু রচনা করেননি। তিনি প্রথমে ‘অনঙ্গমোহন’ নামে একটি কবিতার বই লেখেন। একুশ বছর বয়সে তিনি ‘ভূগোল’ লেখেন এবং গদ্যরচনার ছন্দ, সৌন্দর্য, লালিত্য ইত্যাদি কীভাবে সৃষ্টি করা যায়, সেসব বিষয়ে তিনি দৃঢ় মনোযোগ নিবদ্ধ করেন। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে যেমন ‘ছন্দ যতি বা তাল’ লক্ষ্য করা যায়, গদ্যের মধ্যেও সেসব রক্ষা করা যায়— এ সত্য তিনি বিশ্বাস করেছিলেন এবং তাঁর রচনাদির মাধ্যমে তার সাক্ষ্য রেখে গেছেন।
‘ভূগোল’ গ্রন্থের পর তিনি লেখেন ১৭৭৩ সালে ‘বাহ্যবস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার’ (প্রথম ভাগ) এবং ১৭৭৪ সালে এই বইটির দ্বিতীয় ভাগ। প্রথমটিতে তিনি আমিষ খাদ্য গ্রহণের বিরুদ্ধে এবং দ্বিতীয় ভাগটিতে মদ্যপান করার বিপক্ষে লেখেন এবং দুটি উদ্দেশ্য তাঁর অনেকাংশে সফল হয়েছিল। ‘চারুপাঠ’ বইখানিরও প্রথম (১৭৭৪), দ্বিতীয় (১৭৭৬) এবং তৃতীয় (১৭৮১) ভাগ তিনি লেখেন। ১৭৭৭ ও ১৭৭৮ সালে যথাক্রমে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘ধর্মনীতি’ ও ‘পদার্থবিদ্যা’ নামক বই দুখানি। এগুলি ছাড়াও আরও পাঁচখানি বই তিনি রচনা করেন। বহু পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর প্রবন্ধগুলি সংগৃহীত হলে আরও অন্তত তিনটি বই প্রকাশ পেতে পারত। দুঃখের বিষয়, তাঁর নিজের চিকিৎসা-বহির্ভূত ব্যাধি এবং শেষ বয়সের কর্মক্ষমতাহীনতা এ-কাজে বাধা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশবাসী শিক্ষা, সাহিত্য ও সমাজকল্যাণকামী মানুষের উপেক্ষা ও অমনোযোগ এ ব্যাপারে বিশেষ ক্ষতিসাধক হয়েছে, একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
তাঁর পরমাত্মীয় ‘ছন্দের যাদুকর’ হিসেবে খ্যাতনামা কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর অবদানের কথা অক্ষয়কুমারের অতি সংক্ষিপ্ত জীবনকথাতে লিখে গেছেন। তিনি লিখেছেন— ক. ‘অক্ষয়কুমারের প্রবর্তিত রচনা-প্রণালী বহুদিন পর্যন্ত বঙ্গদেশে আদর্শ রচনা-প্রণালী রূপে প্রচলিত ছিল।’ খ. ‘বঙ্গভাষার ব্যাকরণকে কোন কোন বিষয়ে সংস্কৃত-নিরপেক্ষ করিবার চেষ্টাও তিনি করিয়াছিলেন।’ গ. বিজ্ঞান বিষয়ক বহু প্রবন্ধ রচনাতে তিনি ‘বৈজ্ঞানিক পরিভাষাকেও অনেক পরিমাণে সমৃদ্ধ করিয়া গিয়াছেন।’ বাংলার প্রিয়তম কবি মন্তব্য করেছেন, বাংলা ভাষা ‘তাঁহার নিকট প্রভূত-পরিমাণে ঋণী…।’
তাঁর জ্ঞানের পরিধির কথা ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। ‘ভূগোল, প্রাকৃতিক ভূগোল, ভূতত্ত্ব, জ্যোতিষ, পদার্থবিদ্যা, উদ্ভিদ-বিদ্যা, প্রাণী-বিদ্যা, নীতিবিদ্যা, শারীর বিধান, তাড়িত-বিজ্ঞান প্রভৃতি বিজ্ঞানের অন্তর্গত’ বিবিধ বিষয়ে তিনি প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন।
কেমন ছিল অক্ষয়কুমার দত্তের ব্যক্তিজীবন? তাঁর এক কর্মচারী তাঁর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। সেই ব্যক্তি বিধবা-বিয়ে করেছিলেন বলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিনি ক্ষমাশীল মনের মানুষ। সারাজীবনে এমন প্রকার বহু ক্ষমা করার ঘটনা তিনি ঘটিয়েছিলেন। তিনি অতি সাদা-সিধে পোশাক-পরিচ্ছদ ও ঘরের আসবাবপত্র ব্যবহার করতেন। কিন্তু অসহায়, দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াতে এবং প্রার্থীর চাহিদার অতিরিক্ত দানে তিনি কখনও কার্পণ্য করেননি। বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছে তিনি প্রতিদিন কিছু কাককে নিজের খাদ্য থেকে দিয়ে খুশি থাকতেন অসুস্থ অবস্থাতেও। তাঁর মানব-দরদী হৃদয়ের দরজা তিনি সর্বক্ষণ খোলা রাখতেন নিঃসহায় মানুষ ও প্রাণীদের জন্য। তাঁর নানারকমের তরুলতাপ্রীতিও ছিল উল্লেখযোগ্য। বিচিত্র রকমের তরুলতা সংগ্রহ করে তিনি তাঁর বাড়ির বাগান সাজিয়েছিলেন।
এই মানুষটি কীভাবে জাতীয় উন্নতি সাধন করা সম্ভব?— সে বিষয়ে সর্বক্ষণ ভাবিত থাকতেন এবং তিনি তাঁর বিবিধ রচনাদিতে তাঁর পরামর্শ উপস্থাপন করে গেছেন। সেসব থেকে স্বল্প পরিসরের এই নিবন্ধে কিছু উল্লেখ করা যাক।
প্রকৃত শিক্ষা সম্পর্কে তিনি বলেন,
১. মানুষের শারীরিক, মানসিক, সাংসারিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন’ করাই হল শিক্ষার মূল লক্ষ্য।
২. এইপ্রকারে প্রকৃত শিক্ষালাভ করা ছাড়া জাতির উন্নতি সাধন করা সম্ভব নয়।
৩. শিক্ষক কেবল পাঠ্যবিষয়ের ‘ব্যাখ্যাতা মাত্র’ এবং শিক্ষার্থী কেবল সেসবের ‘শ্রোতা মাত্র’ হলে প্রকৃত শিক্ষা ব্যর্থ হয়।
৪. শারীরিক উন্নতি সাধনের শিক্ষা ব্যতীত যথার্থ শিক্ষালাভ হয় না।
৫. ‘অর্থকরী ও লোকোপকারী’ শিক্ষাদান শিক্ষাপ্রণালীতে থাকা একান্ত আবশ্যক।
বিদেশি রাজতন্ত্র দ্বারা প্রকৃত বিদ্বান দেশবাসী গড়ে তোলার সম্ভাবনা তিনি নস্যাৎ করেছিলেন নির্ভীক কলমে। দেশীয় ভাষায় বিদ্যাভ্যাস বিষয়ে তিনি বলেন,
১. দেশীয় ভাষায় শিক্ষালাভ ব্যতীত জাতির উন্নয়ন চিন্তা ও কর্মসাধন সম্ভব নয়।
২. স্বদেশীয় ভাষায় বিদ্যার্জন করার সুযোগ না পেলে সাধারণভাবে দেশবাসীকে শিক্ষিত করে তোলা কিছুতেই সম্ভব নয়।
৩. বিদেশি ভাষায় শিক্ষালাভ করে কেবল নিজের সৌভাগ্য নির্ধারণ করা যেতে পারে, জাতীয় উন্নতি নয়।
অক্ষয়কুমার দত্ত এভাবে তাঁর প্রকৃত শিক্ষানুরাগ ও স্বদেশপ্রেমের নিদর্শন রেখে গেছেন তাঁর সৃজনকর্মে। খ্যাতি তিনি চাননি। বস্তুত, তাঁর জীবনে সেটি মেলেওনি। তিনি দেশবাসীর মনুষ্যজীবন সার্থক হবে কীসে সে ভাবনা ভেবেছিলেন। দেশীয় সমাজব্যবস্থাকে কুসংস্কার ও আচার-বিচারের আবর্জনামুক্ত করতে চেয়েছিলেন। অজ্ঞতামুক্ত জাতি-জাগরণ ঘটাতে চেয়েছিলেন নিজদেশে তিনি সর্বান্তঃকরণে এবং সেভাবে অমরত্ব লাভ করেছেন।
বঙ্গদেশে আধুনিক চিন্তার আদিপুরুষ অক্ষয়কুমার দত্ত ১২৯৩ সালের ১৪ জ্যৈষ্ঠ (২৭ মে, ১৮৮৬) ইহলোক ত্যাগ করেন।
ঋণ: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অক্ষয়কুমার দত্ত দ্বিশতবর্ষ স্মারক গ্রন্থ, অশোক মুখোপাধ্যায় (সম্পা.), সেস্টাস, কলকাতা।
চিত্র: গুগল

ঋদ্ধ হলাম। তথ্যসমৃদ্ধ রচনা।