Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

পূর্ণেন্দু মিশ্রর কবিতাগুচ্ছ

আলোকবৃত্ত

আলো থেকে অন্ধকার
নাকি অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ফিরছি,
ছায়া, ছায়া ঘুরছে মাথার ভেতর,
মাথার ভেতর আরেক মাথার জন্ম হতে দেখি,
কাম, ক্রোধ, বরফ, অক্ষর, প্রেত ও প্রসাদ,
কে যেন কখন ভর করে,
আশ্চর্য এইসব ছায়া মেখে ঘুরি আজকাল,
এইসব মাথাপিছু দিন।

 

অন্ধ বিকেলের দিকে

অন্ধ বিকেলের দিকে রোদ গড়ালে—
কৃষ্ণনীল বাঁশী হয়ে বাজে চাঁপা গাছের শরীর।
তখন ঊর্বশী ছন্দে কটা সমুদ্রচোখ,
রংমানবীরা, মেঘমানবীর মত ভাসতে ভাসতে—
ভাসতে ভাসতে জাদু দেখালে,
মুখে পড়ে আলো।
আর আলো মুখে পড়লে কার না তখন নক্ষত্র ইচ্ছে হয়।
এখন যেমন মধুমাটিতে ছড়ানো আপেল রঙের খিদে,
কে কামড় দেয় না তাতে।
জানি খিদে পেটে পাপ বলে কিছু নেই,
যেভাবে রক্ত শুষবে বলে মশার ঝাঁক,
কখন যুদ্ধমাটিতে হেরে পিঁপড়ে পাহাড়ের কাছে বন্ধক,
এবার শীতে প্রায় ফিস্টি করবে ওরা।

ব্ল্যাকহোল সভ্যতায়

কুকুরের জিভ ফেটে লালচে চিৎকার গড়িয়ে পড়লে—
ফৎফৎ করে নড়ে ওঠে পাগলের রাগ।
সে রাগ তখন রুপোলি ঢিল হয়,
মুঠো হাত আকাশে তুলে—
আবারও নিচে নামালে,
আমিও তো তেমনই নিচে নামিয়ে হাত।
লিখছি, ভাঙছি, কাটাকুটি যা ইচ্ছে তাই করছি।
বেহিসেবি খেলায় মুদ্রারাক্ষস।

রাস্তার কিনারে শুনি বাঁশী বেজে ওঠে।
যে বেলুনওয়ালা বাঁশী বাজায় সে কি জানে না—
এ ব্ল্যাকহোল সভ্যতায় তার ক’জন শ্রোতা ও ক্রেতা,
তবু এমন জাদুকরী আয়োজন?
তবু এমন ছড়িয়ে ঘরানা?
ঘরানা ছড়িয়ে পড়ে ঘাসের আলো ছুঁয়ে,
পরজন্ম নীল অজানায়।

খিদে 

এখন গোলাপ উপমা নয়,
এখন ঝলসানো আগুন সেতার।
হাত চায় ভাত, ভাত চায় ডাল,
একপেট খাবার।

ছুটে চলা এ ঘূর্ণি নাগরদোলা,
ধুলো ওড়ায় বিষুব মেলা প্রাঙ্গণ।
হে পৃথিবী, যতদূর বিপ্লবে হাঁটো,
আমাদের এক স্বপ্ন গমখেত প্রয়োজন।

নুন আনতে পান্তা ফুরোলে আজও—
স্বপ্ন হাজার মাটিতে ঘষে যায়।
ছটফট, ছটফট ঘষে শরীর,
ভোটরাষ্ট্র যদিও দলছাপ চেনায়।

চিনতে চিনতে, জানতে জানতে
ভুলে যায় কখন, কোথায় খুলে পড়ে চোখ।
চোখ নেই, চোখ নেই, দেখি না কিছুই,
আমাদের চাওয়া শুধু, অন্নসংস্থান হোক।

বাদামি অ্যাসট্রেতে ছাই

বাদামি অ্যাসট্রেতে ছাই পড়ে আছে,
গরম রাগের মত ছাই পড়ে আছে,
দেশপোড়া ছাই, হাড়পোড়া ছাই।
গাছ-পাথর পোড়া ছাই পড়ে আছে।
মুখে মুখে কারা আগুন ছড়াল,
আর কারা তত আগুন বুকে নিয়ে মশাল জাদুকর,
বদলে রইল পড়ে হিম বরফের চাদর,
যেন ঠান্ডা সভ্যতার ঘুরে দাঁড়াবার নেই কোনও দায়,
ছাই, ছাই, সেই ছাই পড়ে আছে প্রচণ্ড অহমিকায়।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 4 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »
দীপক সাহা

বন্দুকের মুখে দাঁড়িয়ে ইতিহাসকে লেন্সবন্দি করেছেন সাইদা খানম

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে উপমহাদেশের বিখ্যাত প্রায় সকল ব্যক্তিত্ব— ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ইন্দিরা গান্ধী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী, বেগম সুফিয়া কামাল, মৈত্রেয়ী দেবী, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আশাপূর্ণা দেবী, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়— কার ছবি তোলেননি! সেই সঙ্গে রানি এলিজাবেথ, মাদার টেরেসা, মার্শাল টিটো, অড্রে হেপবার্নের মতো বিখ্যাত মানুষদের ছবিও তুলেছেন। এই বিশাল তালিকায় আরও তিনটি নাম যুক্ত করে না দিলে অন্যায় হবে। চন্দ্রবিজয়ী নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিনস, মাইকেল কলিন্সের ছবিও তুলেছেন তিনি।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

মামলায় জয়ী হয়ে থোড় কুঁচি দিয়ে কালীর আরাধনা করেন জমিদার-গিন্নি

দেবী কালিকার খড়ের মেড় দেখে মজুমদার গিন্নি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, মামলার রায় যদি তাঁদের পক্ষে যায় তাহলে কলাগাছের থোড় কুঁচো দিয়ে হলেও জগজ্জননী মা মহাকালীর পুজো করা হবে, আর যদি মামলার রায় তাঁদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে ওই খড়ের মেড় দামোদরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। যদিও সেদিন দুপুরের মধ্যেই আদালত থেকে মজুমদার জমিদার পক্ষের জয়লাভের খবর পৌঁছেছিল থলিয়ার মজুমদার বাড়িতে। মজুমদার-গিন্নিও অক্ষরে অক্ষরে তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। মামলায় জয়লাভের খবর পাওয়া মাত্রই জমিদার-গিন্নির নির্দেশে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দীপাবলি উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায়।

Read More »