Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

শুভদীপ রায়চৌধুরীর গুচ্ছ কবিতা

যত অনার্য স্বর, যত ঘ্রাণ শিউলি ফুলের, ঝরে যায়, ঝরে মিশে যায় স্বখাত সলিলে। সে তুমি জানো না প্রিয়, জানো না আহীর ভোর ভোর রেখেছে দুয়ার খুলে। আমাদের যত গান, দাগ লাগা অভিমান, লাল শালু গায়ে আছে শুয়ে। ভুলে আছে অভিযান, হিসাব নিকাশ আর রং মিলানো কড়ি খেলা। কৃষিকাজ শেষ করে চাষা বসে গোল হয়ে গানের বাক্স তার খুলে। সঙ্গীত, সঙ্গীত যদি, বয়ে যায় নিরবধি, বাকি সব হয়ে ওঠে হেলা। হেলায় ঠেকিয়ে রাখি, কোনওদিন ভেবেছি কি? এভাবেই তুমি আসো যদি। আমিও গহীনে যাব, চোখ নাক বেঁধে হব, একডুবে পার ভবনদী।

মাথা নীচু করে পেরিয়ে যাই সীমান্ত।
                      ওপারে গাছের শরীর মানুষ বলে ভ্রম হয়
এমন আবছা আজ সবকিছু
শরীর কেঁপে ওঠে, জলা-হাওয়ার ছোঁয়া পাই
মাঠ ঘাট এক করে তৎক্ষণাৎ
টিয়াপাখিদের শহরে বৃষ্টি আসে
কতদিন সাঁতার কাটি না
                        কতদিন গাই নাকো গান
কখনও কীর্তন ছিল বলে, রাধাভাবে মজে যেত প্রাণ
আজ দেখো, সরস তরমুজ নিয়ে বন্দরে যাই
জাহাজ আসবে বলে ঘোষণা হয়েছে
আদার ব্যাপারীরা কেউ এদিকে আসেনি
তরমুজ, শুধু তরমুজ আর
                   শুকনো মাছ পড়ে আছে রোদে

দিগন্ত-টিগন্ত মুছে দিয়ে বৃষ্টি নামছে আর—
কালো-কুলো, ন্যাংটো বাচ্চার দল
                    ছুটে যাচ্ছে দূরের মাঠে
‘আহারে, গরিব খুব, ভাল করে
খেতে পায় না বোধহয়…’
তুমি বলছ,
ঠোঁট কি সামান্য ফুলে যায়?
একথা বলার সময়? বিলি কাটো চুলে?
‘তুমি তা জানো না কিছু— না জানিলে,’
সময় ঝরে পড়ে যায়, অবিরাম বৃষ্টি ঝরে
‘আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে;’

কালো-কুলো, ন্যাংটো বাচ্চার দল নামছে
দূরের মাঠে আর
দিগন্ত-টিগন্ত মুছে দিয়ে বৃষ্টি যাচ্ছে ওদিকে ছুটে

মনে রেখো এই কথা, প্রিয়
শেষ শ্বাস ঘনাবার আগে
এইসব লেখাগুলি আমি
প্রকাশিত করে দিয়ে যাব
কাঁধে করে এশরীর যারা
বয়ে নিয়ে ছুটেপায়ে যাবে
আগুনের বিছানার ঘরে
যেন তুমি মনে করে বলো
হরিবোল হরিবোল নয়
কবি যেন কবিতায় যায়

মনে আছে তোমাকে বিভাময়, গরানহাটার দিকে বাড়ি ছিল তোমার, সকাল সকাল হাজির হতে এদিকে। কী হয়েছিল? খবর নেই কতদিন? সকালের কাগজ আর দুপুরের ডাক পেতে পেতে
                            বহুদিন ঝরে গেছে আমাদের
তুমি তো কই একটাও ফোন করোনি কোনওদিন, নিদেন চিঠি একখানা
হ্যাঁ, কী বলছ? অসুখ হয়েছিল খুব? বিছানায় শুয়ে এক প্রজন্ম?
বেশ তো আজ এসো সূর্যাস্তে হাটে যাব ঠিক আগেকার মত
ঘুড়ি ও জিলিপি কিনে ফেরার পথে শ্যাওলাঘাটায় বসে আমোদ করব খুব

এসো বিভাময়, আজ নিশ্চয় এসো
নেহাতই না আসতে পারলে একটা মাছরাঙা উড়িয়ে দিয়ো এই ঠিকানায়।

জ্বরে কাঁপি নাকি কামজ্বরেই কাঁপায়?
জল ঘেরে, জল আসে, জলে ভাসে মাছ
ঝাঁপাব ভেবেছি যেই, জল নয় কাচ
বঁধুয়া গিয়াছে দেখো কার আঙিনায়

নূপুর রেখেছ খুলে, খুলেছ পোশাক
অতিঘোর অসুখের কেটে যায় দিন
নূপুরের দোষ নেই বোতলের জিন
ইচ্ছেপূরণ হবে এই কথা থাক

কতদিন আমাদের দেখা হয় নাকো
অনেক ঝরেছে ফুল বাগানে তোমার?
বোতাম খুলবে তুমি পুরোনো জামার
এই জেনে আমি রোজ পার হই সাঁকো

কামজ্বর নাকি এক জ্বরেই কাঁপায়?
পাপ ঝেঁপে আসে বধূ চোখের দেখায়।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
প্রদীপ ঘোষ
প্রদীপ ঘোষ
2 years ago

অনবদ্য। ভালো লাগা বিশেষ ?

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »
শুভদীপ রায়চৌধুরী

শুভদীপ রায়চৌধুরীর দুটি কবিতা

অন্ধকারের তুমি,/ নরম পুঁইমাচার নিচে সবজেটে বহুরূপী/ তোমাকে আলোর কণার ভেতর গড়িয়ে যেতে দেখব বলে/ আমি এই পাগলের পৃথিবী ছেড়েছি/ টিলাপায়ে বাস করি/ নাম, সমুদ্রসম্ভব।/ পাতার ইমারত আছে, আছে/ কিছু দৈনন্দিন কাজ/ মাছ ধরার নাম করে/ বালসাভেলায় অনেকদূর যাওয়া/ যতদূর ভেসে গেলে ঢেউয়ের চুম্বন থেকে/ ছোবলটুকু আলাদা করাই যায় না

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | দ্বিতীয় পর্ব

সকালে চিড়ে নারকেল-কোরা আর গুড় খেয়ে আমি সাইকেলে চেপে ছুটিয়ে দিলাম— আট মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে যখন পৌঁছালাম— তখন গণগণে রোদ্দুর তেষ্টায় গলা কাঠ। ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে একটা বাড়ি দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়লাম যদি একটু জল খাওয়া যায়। বাড়ির বারান্দায় একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসেছিলেন— তার কাছে উদ্দিষ্ট ঠিকানার কথা প্রশ্ন করতেই তিনি উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা পাটি পেতে বসতে দিলেন। আমি আবার জল চাইলে বললেন, “দাদাঠাকুর ব্যস্ত হবেন না— ঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন।”

Read More »