Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মাসুদ শাওনের গুচ্ছকবিতা

বিদিশা

পূর্ণতা, শাশ্বত, সময়, শূন্যতা… বলে আর কোনও শব্দ নেই আধুনিক ভাষায় এখন। যেভাবে ঘাসের বন, আরণ্যক আমাদের গ্রাম চিরে এক গ্লোবায়ন স্বপ্ন চলে গেছে সন্ন্যাসের পথে। দীর্ঘদিন এ কথা বলেছে অনেক মনীষী যারা হতাশ পাগল হয়ে নিজের ছায়ার বিষে আত্মহনন করেছে।

আমি আরও একবার সে কথা আজ বলি— আমার গোপন ঘর নেই। কোনও খড়ের আশ্রমে পারি না ঘুমোতে। একাধিক গ্রাম আর শহরের পরিচয়ে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। বিভিন্ন বিচ্ছেদে, পরিচয়ে, একসাথে অনেক কালের মানুষ আমাকে বিভ্রান্ত করে— তাদের যাপনে, মেধায়, বন্ধনে। যার মন এখন নরম, তাকে প্রতিভূ বিজয়ী লাগে। যে সবল, মনে হয়, সে তো পরাজিত দলছুট সেনা।

আমি আজ কার কাছে যাব? যৌনতা মনতা সব জট লেগে থিতু পড়ে আছে। বুকের ভেতর থেকে নারী বেরিয়ে পড়েছে আমার। পুরুষও বেরিয়ে গেল ওই। কার কাছে যাব? সে কি নারী না কি লিঙ্গবিহীন দর্শন কোনও? যার কাছে যাব, সে কাকে করেছে মনোনীত? এআই, মেশিনে অর্ধেক মিশে যাওয়া অতিরিক্ত মন? পুরুষ শরীর? নারীত মেহন?

জীব, জড়, মৃত্যু, জীবন… বলেও আর কোনও কথা নেই। আমি কার কাছে যাব, বাস্তুসম্পর্কের জালে না কোনও বন্ধুর বুকে, যে আমাকে আশ্রয় ভাবে, ভাবে তার প্রক্ষিপ্ত বিম্বিত মন? কার কাছে যাব? সে কি সম্ভাবনাময় আমার ভবিষ্যে মেশাবে না সুদূর অতীত?

তবু, বিদিশা, তোমার কাছে আমি যাব। তোমাকে আমার মত হতাশ নিরাশ লাগে। এই গ্লোবায়িত আলো ছোঁয় প্রকট তোমার আভিজাত্য। অশোকের স্তূপে পুরোনো ফাটল গুনে দিন যায় তোমার। আমারও। নারী, পুরুষ, মানুষ নই আমরা। অতীতের স্মৃতি, কবির ভূগোল।

প্রেম, ভালবাসা, সহায়… এমন সত্য নেই। তবু, এ মুহূর্তে তুমি সদ্। প্রায়শ কান্নার কথা বলো। আমি এই মুহূর্তের কান্না। আকুলতা দিয়ে দুই সময় মিশিয়ে নিতে চাই। গভীরতা পারি, তথাপি, ব্যাপ্তিকে এড়িয়ে যাব না।

তুমি ছড়ানো অতীত আড়ম্বরের প্রশস্ত বর্তমান পরাঘটমান সম্ভাবনার ভবিষ্য। তুমি, বিদিশা, আমার ব্যাপ্তি হও


আয়েশা আক্তার

আমার যে ঘুম ঘুমিয়েছে আর কেউ
আমি রাত জেগে পাহারা দিয়েছি তার আলো

অথচ বিভোর
সূর্যোদয়ই সেই চোখে আঁধার নামাল

এসেছ জলের ঢেউ, খোলা চুল প্রথা ভাঙে

ছুঁয়ে যাও গাছ আর আকাশের ছায়া
পথের দু’পাশে সংযোগে সংরাগে

ব্যর্থ মনে হয় স্বলাতের শেষ, যত স্মৃতির সন্তান
ক্রমানু মুখোশ বদলের নদে
মক্তবের মেয়ে চুল খোলা
আয়েশা আক্তার, তুমি,
হও রাতের তাহাজ্জুদে অনাহুত আমার আজান


ভায়োলিন

আহা চাঁদ, তুমিও কি
কবেকার মেয়েটির মত নিশা আর দ্যুতি নিয়ে খেলো
পূর্ণ হৃদয়ের প্রতি রাতে জলের জোয়ার আসে মনে

চকিত গ্রামের নদী যায়
অমাবস্যায় থিতিয়ে অবমাননার গোপন সোহাগে

তবে চলো, চাঁদ, আজ তোমাকে বিশ্বাস করি
হাত ধরে নিয়ে চলো
নিয়ে চলো হিম কোনও দেশে,
সুমেরু কুমেরু নয়, আরও কোনও সন্ধ্যা-স্থিরতায়

সারাদিন যেখানে রাত, যেখানে সারা-রাত আলো

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »
দীপক সাহা

বন্দুকের মুখে দাঁড়িয়ে ইতিহাসকে লেন্সবন্দি করেছেন সাইদা খানম

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে উপমহাদেশের বিখ্যাত প্রায় সকল ব্যক্তিত্ব— ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ইন্দিরা গান্ধী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী, বেগম সুফিয়া কামাল, মৈত্রেয়ী দেবী, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আশাপূর্ণা দেবী, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়— কার ছবি তোলেননি! সেই সঙ্গে রানি এলিজাবেথ, মাদার টেরেসা, মার্শাল টিটো, অড্রে হেপবার্নের মতো বিখ্যাত মানুষদের ছবিও তুলেছেন। এই বিশাল তালিকায় আরও তিনটি নাম যুক্ত করে না দিলে অন্যায় হবে। চন্দ্রবিজয়ী নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিনস, মাইকেল কলিন্সের ছবিও তুলেছেন তিনি।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

মামলায় জয়ী হয়ে থোড় কুঁচি দিয়ে কালীর আরাধনা করেন জমিদার-গিন্নি

দেবী কালিকার খড়ের মেড় দেখে মজুমদার গিন্নি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, মামলার রায় যদি তাঁদের পক্ষে যায় তাহলে কলাগাছের থোড় কুঁচো দিয়ে হলেও জগজ্জননী মা মহাকালীর পুজো করা হবে, আর যদি মামলার রায় তাঁদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে ওই খড়ের মেড় দামোদরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। যদিও সেদিন দুপুরের মধ্যেই আদালত থেকে মজুমদার জমিদার পক্ষের জয়লাভের খবর পৌঁছেছিল থলিয়ার মজুমদার বাড়িতে। মজুমদার-গিন্নিও অক্ষরে অক্ষরে তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। মামলায় জয়লাভের খবর পাওয়া মাত্রই জমিদার-গিন্নির নির্দেশে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দীপাবলি উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায়।

Read More »