বিদিশা
পূর্ণতা, শাশ্বত, সময়, শূন্যতা… বলে আর কোনও শব্দ নেই আধুনিক ভাষায় এখন। যেভাবে ঘাসের বন, আরণ্যক আমাদের গ্রাম চিরে এক গ্লোবায়ন স্বপ্ন চলে গেছে সন্ন্যাসের পথে। দীর্ঘদিন এ কথা বলেছে অনেক মনীষী যারা হতাশ পাগল হয়ে নিজের ছায়ার বিষে আত্মহনন করেছে।
আমি আরও একবার সে কথা আজ বলি— আমার গোপন ঘর নেই। কোনও খড়ের আশ্রমে পারি না ঘুমোতে। একাধিক গ্রাম আর শহরের পরিচয়ে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। বিভিন্ন বিচ্ছেদে, পরিচয়ে, একসাথে অনেক কালের মানুষ আমাকে বিভ্রান্ত করে— তাদের যাপনে, মেধায়, বন্ধনে। যার মন এখন নরম, তাকে প্রতিভূ বিজয়ী লাগে। যে সবল, মনে হয়, সে তো পরাজিত দলছুট সেনা।
আমি আজ কার কাছে যাব? যৌনতা মনতা সব জট লেগে থিতু পড়ে আছে। বুকের ভেতর থেকে নারী বেরিয়ে পড়েছে আমার। পুরুষও বেরিয়ে গেল ওই। কার কাছে যাব? সে কি নারী না কি লিঙ্গবিহীন দর্শন কোনও? যার কাছে যাব, সে কাকে করেছে মনোনীত? এআই, মেশিনে অর্ধেক মিশে যাওয়া অতিরিক্ত মন? পুরুষ শরীর? নারীত মেহন?
জীব, জড়, মৃত্যু, জীবন… বলেও আর কোনও কথা নেই। আমি কার কাছে যাব, বাস্তুসম্পর্কের জালে না কোনও বন্ধুর বুকে, যে আমাকে আশ্রয় ভাবে, ভাবে তার প্রক্ষিপ্ত বিম্বিত মন? কার কাছে যাব? সে কি সম্ভাবনাময় আমার ভবিষ্যে মেশাবে না সুদূর অতীত?
তবু, বিদিশা, তোমার কাছে আমি যাব। তোমাকে আমার মত হতাশ নিরাশ লাগে। এই গ্লোবায়িত আলো ছোঁয় প্রকট তোমার আভিজাত্য। অশোকের স্তূপে পুরোনো ফাটল গুনে দিন যায় তোমার। আমারও। নারী, পুরুষ, মানুষ নই আমরা। অতীতের স্মৃতি, কবির ভূগোল।
প্রেম, ভালবাসা, সহায়… এমন সত্য নেই। তবু, এ মুহূর্তে তুমি সদ্। প্রায়শ কান্নার কথা বলো। আমি এই মুহূর্তের কান্না। আকুলতা দিয়ে দুই সময় মিশিয়ে নিতে চাই। গভীরতা পারি, তথাপি, ব্যাপ্তিকে এড়িয়ে যাব না।
তুমি ছড়ানো অতীত আড়ম্বরের প্রশস্ত বর্তমান পরাঘটমান সম্ভাবনার ভবিষ্য। তুমি, বিদিশা, আমার ব্যাপ্তি হও
◊
আয়েশা আক্তার
আমার যে ঘুম ঘুমিয়েছে আর কেউ
আমি রাত জেগে পাহারা দিয়েছি তার আলো
অথচ বিভোর
সূর্যোদয়ই সেই চোখে আঁধার নামাল
এসেছ জলের ঢেউ, খোলা চুল প্রথা ভাঙে
ছুঁয়ে যাও গাছ আর আকাশের ছায়া
পথের দু’পাশে সংযোগে সংরাগে
ব্যর্থ মনে হয় স্বলাতের শেষ, যত স্মৃতির সন্তান
ক্রমানু মুখোশ বদলের নদে
মক্তবের মেয়ে চুল খোলা
আয়েশা আক্তার, তুমি,
হও রাতের তাহাজ্জুদে অনাহুত আমার আজান
◊
ভায়োলিন
আহা চাঁদ, তুমিও কি
কবেকার মেয়েটির মত নিশা আর দ্যুতি নিয়ে খেলো
পূর্ণ হৃদয়ের প্রতি রাতে জলের জোয়ার আসে মনে
চকিত গ্রামের নদী যায়
অমাবস্যায় থিতিয়ে অবমাননার গোপন সোহাগে
তবে চলো, চাঁদ, আজ তোমাকে বিশ্বাস করি
হাত ধরে নিয়ে চলো
নিয়ে চলো হিম কোনও দেশে,
সুমেরু কুমেরু নয়, আরও কোনও সন্ধ্যা-স্থিরতায়
সারাদিন যেখানে রাত, যেখানে সারা-রাত আলো