ধ্বংস
এ পাড়ায় প্রবল শব্দ হচ্ছে ক’দিন থেকে
কাকেরা ডাকছে, দিনভর ডাকছে
বাড়ির ছাদ ভাঙে, পুকুর ভরাট, গাছের পোড়াগন্ধ
ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় কটু চিৎকার,
ওই মাঠে দিগন্তে নীলঘুড়ি কেটে যায়,
ওরা কাঁদছে, বাড়ি ফিরে আসে…
সন্ধ্যা ঘনিয়ে তারপর
কত ধূমকেতু তারাদের আওয়াজ
রক্তের স্রোতে মিশে যায়
আজ হেমন্ত। শীতের রোদ্দুর এল না উঠোনে
বাতায়নে বসে মানুষের শব্দ খুঁজি কান পেতে
দ্বিতীয় জন্ম নয়
প্রথম জন্মেই
পাহাড় দেখার সাধে পাথর চাপালাম বুকে
মসৃণ নয় এই উলুখাগড়ার জীবন,
দুপা এগিয়ে চারপা পিছিয়ে
আবার দশপা হাঁটা,
সাঁতরে উঠেছি ডাঙায়
হাবুডুবুর নেশায় ঘর করি
সে ঘর ভাঙি, আরশির ভেতর ঢুকে যাই
প্রথম জন্মের ব্যর্থতা দেখেও
প্রথম জন্মেই
এসে বাঁচি
বাঁশ পাতায় নৌকা
উৎসবের কলকাতা থেকে দূরে
পাড়াগাঁর নীলচে জঙ্গলে
রাতবিরেতে শিয়াল… ঝিঁঝি… জোনাকি…
শুকনো পাতার খস্ খস্ অথবা কান পেতে
ট্রেনের শব্দ কত কী!
কত কী বাকি থেকে গেল, দেওয়াল বেয়ে জল,
সাঁতরে গিয়ে পদ্মপাতা
অথবা ওপারে দৌড়ে বাঁশ পাতায় নৌকা!
বারো মাস। তেরো মাস।
কত দুপুর কত ভোর মাসের পর মাস
চৌহদ্দির শ্যাওলায় কাটছে জীবন
চার দেওয়াল। ঘুলঘুলির মত মন!
সতেরো তলার জানালায় বসে মাপছি শহর
বয়স বাড়ছে। স্পিড পোস্ট এসে গ্যাছে দরজায়।
রোজ সন্ধ্যায়! চামচিকেরা আসে শরীর হামলায়!
কত কী বাকি থেকে গেল
অপার নিষিদ্ধের মত মাখছি ধুলো
বইছি… গন্ধ খাচ্ছি কলকাতার!
এবার
দশমীর জলে সাঁতরে যাই দিঘল নদীর ওই পার
পুরনো চাতাল
এসো! বেঁধে নিই হাত
কখন থাকি না থাকি
এসো! একটু সন্তানের সঙ্গে খেলি
মুঠোয় মুঠোয় ধরে থাকি হৃদয় আর গলার স্বর
উড়ে আসছে ওই দ্যাখো বাতাস…
বুকে ভরে নাও পৃথিবী, পৃথিবীর এই মানুষকে,
এই পুরনো কত পুরনো চাতাল
ক্রমশ একটা সুদীর্ঘ বাগান
এত গাছ এত গুল্ম এত দুর্বা
রাতের ছায়ায় ঘুমাতে যাবে এবার
দীঘল রাত্রির অনল দুর্বার…
পুড়ে তো বেঁচে উঠে শিখেছ অনেক!
এসো! বেঁধে নিই হাত
কখন থাকি না থাকি
মুঠোয় মুঠোয় ধরে থাকি হৃদয় আর গলার স্বর
শালিক
জানালার কাচে একটি শালিক এল ভোর ভোর
দেখছি
দেখছি
ছোট্ট আদর ঠোঁট কীভাবে! আহা কীভাবে!
নিজের গায়ে টোকা মারল ভালবেসে
ঠোঁট চুঁয়ে বুকের বাঁশি বাজল প্রচুর
ভাবছি
ভাবছি
এভাবে আরও একবার টোকা মারি নিজের গায়ে
কাচ হয়ে যাই আমি, তুমি বন্য অচিন
অপার বৃষ্টি আসুক দিনভর এখানে
‘ভালবাসি ভালবাসার ধারা
বলো তো নিভিয়েছি কি কোনওদিন’!
চলো!
ভোর ভোর শালিক হয়ে যাই দুজনে, এই জানালায়
এইখানে…