Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

রাশিয়ার চিরকুট

পর্ব ১৫

মা

অনেক দিন থেকেই ভাবছি মাকে নিয়ে লিখব। যদিও ফেসবুকে অনেকেই মাতৃদিবসে মাকে নিয়ে লেখেন, আমার কখনওই সেটা হয়ে ওঠেনি। তাই একটা অজুহাত খুঁজছিলাম।

আমাদের বাবা-মায়েদের যখন জন্ম তখন জন্ম নিবন্ধন বলে কিছু ছিল না। এমনকি আমাদের জন্মের সময়ও ওসব ছিল না। শহরে বা হাসপাতালে যারা জন্ম নিয়েছে, তাদের একটা বার্থ সার্টিফিকেট হয়তো দেওয়া হত, হয়তো বা নামকরা পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্মতারিখও সযত্নে লিখে রাখা হত। অনেক পরিবারে কুষ্ঠি করার প্রচলন ছিল, যেখানে জ্যোতিষী জন্মলগ্নে গ্রহনক্ষত্রের অবস্থানের ভিত্তিতে নবজাতকের ভাগ্যরেখা আঁকত। কিন্তু অনেক সময়ই প্রাইমারি স্কুল শেষ করে হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য যে সার্টিফিকেট দেওয়া হত তাতে সরকারি চাকরির বয়স ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে অতি উৎসাহী শিক্ষকগণ জন্মতারিখ বদলে দিতেন যেটা আমার নিজের সঙ্গেই ঘটেছে। যেহেতু এসব হত বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে আর পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের এ নিয়ে তেমন কোনও ধারণা ছিল না তাই ঘটনাটা ঘটে যেত অনেকটা অগোচরেই। আমি জানতাম আমার জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর। ছোট মাস্টারমশাই যখন সেটাকে ২ জানুয়ারি লিখলেন, আমি তাঁকে সঠিক তারিখ বলার পরেও তিনি শুধু বললেন, এ নিয়ে এত ভাবার কিছু নেই। হয়তো বা বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে বললে এর একটা সুরাহা হত, তবে নিজে এ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করিনি। হাইস্কুলে ভর্তি হবার সময় আবার যখন জন্মের সঠিক তারিখ বললাম সেখানে বলা হল আপাতত কিছুই করার নেই। অষ্টম শ্রেণি বা মেট্রিকুলেশনের ফর্ম ফিলআপ করার সময় সঠিক তারিখ লিখলেই হবে। পরে বুঝলাম এটা ছিল একান্তই সান্ত্বনা। কলমের কালি একবার ডকুমেন্টে লেগে গেলে সেটা সারা জীবনের জন্য থেকে যায়। কিন্তু সরকারি জন্মদিন পালন করি বা নাই করি অফিসিয়াল কাজকর্ম ওটা ধরেই হয়।‌ তাই এ নিয়ে খেদ করে লাভ নেই।

রাশিয়ায় (মনে হয় উন্নত বিশ্বের সব দেশেই) নো বার্থ সার্টিফিকেট নো ম্যান, বার্থ সার্টিফিকেট না থাকলে কোনও ডকুমেন্ট পাওয়া যায় না, ফলে না পাওয়া যায় চিকিৎসা, না হওয়া যায় স্কুলে ভর্তি। সে অর্থে আমরা এক রকম বানের জলে ভেসে আসা আর এটাই আমাদের খড়কুটো। সেই অর্থে ফেসবুক বন্ধুদের অনেকের জন্মদিন আজ এই নববর্ষের দিনে। নতুন প্রজন্মের অনেকের সঠিক হলেও পুরানোদের অধিকাংশের জন্য এটা নিতান্তই সরকারি জন্মদিন। ফলে আমার জন্ম ২৫ ডিসেম্বর হলেও খাতাকলমে ২ জানুয়ারি। মনিকা ঠিক বুঝতে পারল না এটা কীভাবে সম্ভব। আমি বললাম, সমস্যা হবে নরকের দারোয়ানদের। অফিসিয়াল ডকুমেন্টে আমার যখন ৬০, বাস্তবে হবে ৫৯ বছর ৭ দিন। তাহলে আমার আয়ু কোন হিসেবে হবে? আর যদি ভুল করে আমাকে অফিসিয়াল ডকুমেন্ট দেখে মেরে ফেলে আর আমি যদি মামলা করি তাহলে কি আমাকে পৃথিবীতে ফেরত পাঠাবে নাকি নরকের গেটে হাজতে রাখবে? ভগবান হওয়া এত সহজ নয়। বিশেষ করে স্কুলের মাস্টারমশাইরা যখন ছাত্রদের জন্মদিন ভুলভাল লেখে। মোদ্দা কথা, আমাদের দেশে ঢালাওভাবে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার আগে অধিকাংশ মানুষের অফিসিয়াল জন্মতারিখের সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমাদের ভাইবোনদের সবার কুষ্ঠি ছিল, যদিও যুদ্ধের সময় সব নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বাবা-মায়ের কুষ্ঠি ছিল কিনা জানি না। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে মৃত্যুদিবসই একমাত্র সত্য। আর এজন্যেই মায়ের মৃত্যুদিবসে এই লেখার অবতারণা।

বেশ কয়েক বছর আগে ক্রিস্টিনা আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে জানতে চায়। ভেবেছিলাম ভাইবোনদের কাছে জিজ্ঞেস করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু দেখা গেল ওরাও বাবা-মায়ের শৈশব, কৈশোর, যৌবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু একটা জানে না। ইতিমধ্যে এসব ব্যাপারে যারা কিছু একটা বলতে পারতেন তারাও অজানার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন অনেক আগেই। তাই কিছু কিছু পুরানো দলিলপত্র, কিছু স্মৃতিচারণ— এটাই একমাত্র সম্বল। বড় মামা এক্ষেত্রে মায়ের সম্পর্কে অনেক তথ্য দিতে পারলেও বাবার ছোটবেলা সম্পর্কে খুব বেশি জানতে পারিনি। আমি তাঁদের শেষ সন্তান। তারা যখন বেঁচেছিলেন তখন মনে হত বাবা-মা চন্দ্র-সূর্যের মতই সনাতন। তাই কখনওই তাঁদের বাল্যকাল সম্পর্কে তেমন প্রশ্ন করা হয়নি, যদিও বাবা মাঝেমধ্যে তাঁর কোলকাতার কলেজজীবন সম্পর্কে বলতেন। ইতিমধ্যে মামার মুখ থেকে মায়ের সম্পর্কে যেটুকু জানা হয়েছে সেটার উপর ভিত্তি করেই তাঁকে নিয়ে লিখব। সঙ্গে থাকবে আমার নিজের দেখা মায়ের ছবি।

ব্রিটিশ-শাসিত ভারতের বঙ্গদেশের ময়মনসিংহ জেলার এক মহকুমা টাঙ্গাইল। মহকুমা শহরের কাছাকাছি এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম পাথারাইল। তাঁতবস্ত্রের দক্ষ শিল্পীদের বয়ন-উৎকর্ষে সেই গ্রামের সুনাম ও প্রসিদ্ধি ছিল ভারতজোড়া। এই তন্তুবায় সম্প্রদায়ের আর্থিক উৎকর্ষ থাকলেও ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে বৈশ্য সাহা সম্প্রদায়ই ছিল অগ্রণী। গ্রামের এক ব্যবসায়ী শ্রীমাধবচন্দ্র সাহা ছিলেন সম্পদশালী ও শিক্ষাদীক্ষার অনুরাগী। চার পুত্রের পিতা শ্রীসাহা পুত্রদের যথাযথ শিক্ষাদানে সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর তৃতীয় পুত্র শ্রীঅশ্বিনীকুমার সাহা ১৯১৬ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্টসে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর আর শিক্ষালাভের সুযোগ হয়নি। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রীললিতমোহন সাহা ও দ্বিতীয় পুত্র শ্রীমনমোহন সাহা গ্রাম সন্নিহিত টাঙ্গাইল হাইস্কুলে পড়াশুনা করে ম্যাট্রিক পাশ করেন। চতুর্থ পুত্র শ্রীলালমোহন সাহা স্কুলের ছাত্রাবস্থায় স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দিয়ে সরকারি রোষে পড়েন। কঠোরচিত্ত পিতা ব্যবসায়িক কারণে এসব ঝামেলায় যেতে চাননি। ফলে তিনি লালমোহন সাহাকে ত্যাজ্যপুত্র করেন। তিনি গৃহত্যাগ করে কোলকাতায় চলে যান। পড়াশুনা চালিয়ে যেতে না পারলেও তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন প্রখ্যাত নেতাদের সঙ্গে কারাবাস করেন। জেলজীবনের এক পর্যায়ে তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে ছয় মাস বহরমপুর জেলে ছিলেন। কবির কাছ থেকে তিনি নজরুল সঙ্গীতে বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করেন। স্বাধীন ভারতে তিনি সরকারি সম্মান পেয়েছিলেন। একটি সুদৃশ্য তাম্রপত্র তাঁদের পরিবারে এখনও শোভা পাচ্ছে। ১৯৬৯ আর ১৯৭২ সালে যখন মায়ের সঙ্গে ইন্ডিয়া যাই, আমাদের একটা অন্যতম ঘাঁটি ছিল কোতরঙ্গে ছোটদাদুর বাড়ি।

পরবর্তীতে আমার দাদু, মানে অশ্বিনীকুমার সাহাও বলতে গেলে গৃহত্যাগ করেন। কথাটা আমি জানতে পারি কিছুদিন আগে ঠাট্টাচ্ছলে। আমার বড় মামি বামুনের মেয়ে। একদিন মামাতো বোন বুড়াইকে এ নিয়ে ঠাট্টা করায় ও বলে, তোমার শরীরেও বামুনের রক্ত আছে। এ কথাটা বড় মামা ছাড়া কেউ জানতেন না, এমনকি মা, মাসিমা বা অন্যান্য মামারাও। আমার দাদু প্রেম করে বামুনের মেয়ে বিয়ে করেন। জাতপাতে বিভক্ত সমাজ সেটা মেনে নিতে পারেনি। তাই দাদু চাকরি নিয়ে বাইরে চলে যান। তিনি কাজ করতেন র‌্যালি ব্রাদার্স জুট কোম্পানি লিমিটেডে। চাকরির কারণে দাদুকে প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় যেতে হত, সঙ্গে যেত স্ত্রী আর সন্তানেরা। বিভিন্ন স্টেশনে কাজ করতে করতে দাদু একসময় সিরাজগঞ্জে স্থিত হন। দাদু ছিলেন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব। নিয়মিত নাটক করে বেড়াতেন। সিরাজগঞ্জ জায়গাটা তাঁর পছন্দ হয়, তিনি সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই আমলে ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাড়িও ক্রয় করেন। মামার লেখা থেকে বোঝা যায় ঘটনা সেভাবে বইলেও বয়সের ব্যাপারে একটা প্রচ্ছন্নতা আছে। উনি লিখছেন, “১৯৪২ সালে আমি ক্লাস ফোরে পড়ি, বয়স ৮ বা ৯। ওই সময় আমার ছোড়দি সিরাজগঞ্জের সালেহা-ইসাহাক গার্লস হাই ইংলিশ স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। দিদি আমার চেয়ে আনুমানিক ৫/৬ বছরের বড়, মানে তখন তার বয়স ১৩/১৪ বা বড়জোর ১৫/১৬। ওই বছর আগস্ট মাসে ছোট ভাই অশোকের জন্ম। ফলে ঘরের সব কাজকর্ম ছোড়দিকেই করতে হত। ৪২-এর আন্দোলনের পর স্কুলে যাতায়াত নিরাপদ ছিল না। স্কুল ছিল বাড়ি থেকে প্রায় এক মাইল দূরে।”

মামার মুখেই শুনেছি মায়ের ক্লাসমেট ছিলেন বিখ্যাত শিল্পী বাপী লাহিড়ীর মা। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে এক বখাটে ছেলে মাকে উত্ত্যক্ত করলে মা সেই ছেলেকে অপমান করেন। ১৯৪৩ সালে দাদু তাঁর ছোটমেয়েকে পাঠিয়ে দেন এলাসিন বড়বোনের কাছে। সেখানে মা নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। বড়মেসোর বাবা কোকারাম সাহা ছিলেন প্রখ্যাত ব্যবসায়ী। আমার জ্যাঠামহাশয় জয়কৃষ্ণ সাহা ব্যবসাসূত্রে প্রায়ই সেখানে যেতেন। আমার বাবা এর আগে ঝিটকা জমিদার বাড়িতে বিয়ে করেন। সেই বিয়েতে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। ইনি আমাদের বড়দাদা সুবোধ সাহা। সুবোধদার বয়স যখন দুই বা তিন তখন বাবার পত্নীবিয়োগ ঘটে। জ্যাঠামহাশয় তখন তাঁর ভাইয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছিলেন। মাসিমা তাঁর বোনের জন্য ঘটকালি করেন। জ্যাঠামহাশয়ের পাত্রী পছন্দ হয়, দাদুও মত দেন। ১৯৪৩ সালে এলাসিনেই বাবা-মায়ের বিয়ে হয়। সুবোধদাকে মা নিজের সন্তানের মতই লালনপালন করেন। পরবর্তীকালে সুবোধদা তাঁর মামার ওখানে চলে যান পড়াশুনা করতে। কিন্তু মা যখনই ইন্ডিয়া যেতেন শত অসুবিধা থাকলেও সুবোধদার কাছে দুদিনের জন্য হলেও বেড়াতে যেতেন। স্বপ্না বউদি মানে সুবোধদার বউ আমাদের সব সময়ই নিজের সন্তানের মত যত্ন করতেন। এটা আমাদের বাড়ির বউদের অন্যতম প্রধান গুণ। বাড়ির বউরা সবাই বাড়ির মেয়ে হয়ে যেত। সেটাও মনে হয় মায়ের নিজের গুণে। মামার ভাষায়, বাবা ও মায়ের মধ্যে বয়সের পার্থক্য ১৫/১৬ বছর। তবে মিতু বউদিকে বাবা বলেছিলেন, আমার যখন জন্ম তখন তাঁর বয়স ৫৬, তার মানে বাবার জন্ম ১৯০৮ সালে, আর মায়ের ১৯২৬ বা ১৯২৭ সালে। এ হিসেবে বাবা-মায়ের বয়সের পার্থক্য প্রায় ২০। যাহোক, মামার কথায় বাবাকে তিনি প্রথম দেখেন ১৯৪৬ সালে বাবা সিরাজগঞ্জ বেড়াতে গেলে। শুনে অবাক হই, কারণ বাবা কখনওই কোথাও বেড়াতে যেতে পছন্দ করতেন না। এর মধ্যে ১৯৪৭ সালের আগস্টে দেশভাগ হয়। সে বছর নভেম্বর মাসে দাদু মারা যান। মনে হয় তখন তাঁর বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। বাবা ও মেসোর হাতে বাড়ি দেখাশুনা করার দায়িত্ব দিতে দিদিমা চার ছেলেকে নিয়ে ইন্ডিয়া চলে যান। বাড়িটি অচিরেই সরকার দখল করে নেয় এবং সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি বসানো হয়। দিদিমা ছেলেদের নিয়ে হাওড়া জেলার আমতা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। সেখানে প্রায়ই মা আর মাসিমা বেড়াতে যেতেন। সেখানেই ১৯৪৮ সালে সুধীরদার জন্ম। প্রায় একই সময় জন্ম নেয় আমার মেসতুতো ভাই, দিলীপদা। মামার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলতে গেলে এখানেই শেষ।

পরবর্তী গল্পের শুরু ১৯৬৮-৬৯ থেকে, আমার দেখা মায়ের গল্প। এখানে উল্লেখ্য যে, মামার কাছেই প্রথম জানি যে বাবা-মায়ের বিয়ে হয়েছিল জ্যাঠামহাশয়ের উদ্যোগে। জ্যাঠামহাশয় ছিলেন খুবই কট্টর। মাছ-মাংস খেতেন না, বাড়িতে মাংস রান্না হচ্ছে জানলে সবাইকে বকাবকি করতেন। তারপরও মা আমাদের জন্য মাংস রান্না করাতেন, প্রায়ই রাখালদের ওখানে। মায়ের হাত ধরেই বাড়িতে আসে গানবাজনা আর নারীশিক্ষার ধারা। কিন্তু জ্যাঠামহাশয় কখনওই মাকে বকতেন না আর মাও কোনও কিছু প্রয়োজন হলে সরাসরি জ্যাঠামহাশয়ের কাছেই বলতেন, যদিও হিন্দু বাড়িতে ভাসুরদের সঙ্গে কথা বলার রেওয়াজ ছিল না। এরপর এক এক করে জন্ম নেয় স্বপনদা, তপনদা, দিদি (বন্যা), কল্যাণদা, রতন আর সব শেষে আমি। শুনেছি এরা ছাড়াও আরও একাধিক সন্তান জন্ম দেন মা, তবে তাদের কেউই দীর্ঘজীবী হয়নি।

মায়ের মুখেই শুনেছি আমার যখন জন্ম তখন এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সম্ভাবনা দেখা দেয়, ফলে গ্রামের লোকজন পালিয়ে যায়। এক রকম নির্জন পরিবেশে আমার জন্ম। তাই নাম রাখা হয় বিজন। আমার জন্মের পরে মা বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হন। তাই আমার শিশুকাল কাটে বড়দা (ভানু সাহা) ও বউদির কাছে। আমার খাওয়াদাওয়া সবই হত ওখানেই, তবে রাতের বেলা আমি দৌড়ে চলে আসতাম মায়ের কাছে। দেশে তখন মায়ের নিকটাত্মীয় বলতে মির্জাপুরের বড়মামা (মনোরঞ্জন সাহা)। আর ছিলেন বাগজানের যোগমায়া মাসি আর তরার মহামায়া মাসি। মায়ের সঙ্গে আমরা কালেভদ্রে সেখানে বেড়াতে যেতাম। আর প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় মহা মাসির ওখানে যেতাম খেতে। মা আমার জন্য সেখানে খাবার ব্যবস্থা করতেন। কিছুদিন আগেও আমার ধারণা ছিল এরা মায়ের শুভাকাঙ্ক্ষী। মামার মুখে শুনলাম এরা তাদের মামাতো ও পিসতুতো বোন। কত নতুন তথ্য যে জানা হল বাবা-মায়ের ছোটবেলা খুঁজতে গিয়ে!

মায়ের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় মনে হয় ১৯৬৮-র দিকে। মানে এর পর থেকে কমবেশি সবই মনে আছে। আমাদের পাশের বাড়ি ছিল পাগলা সন্তোষদের। ওদের আরও ছোট ভাই ছিল, মায়ের দুধ খেত। আমারও ভীষণ ইচ্ছে করত মার দুধ খেতে। বায়না ধরতাম। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মা আমাকে কোলে বসিয়ে মাথায় হাত বুলাতেন। আসলে আমার সারা জীবন দুধের কাজ করেছে চা। এখনও দুধ খেলেই বমির ভাব হয়। ওই সময় আমরা মাঝেমধ্যে যেতাম ফরিদপুর শ্রী অঙ্গনে। আর ১৯৬৯ মায়ের সঙ্গে প্রথম গেলাম ইন্ডিয়া। এর আগে মায়ের সঙ্গে মির্জাপুর যেতাম মামাবাড়ি। কোলকাতা যাওয়ার আগেও গেছিলাম। তখন মির্জাপুর যাওয়া মানে সারাদিনের জার্নি। তরা, নয়ারহাট, আমিন বাজারে তিন তিনটে ফেরি আর ততগুলো বাস বদলিয়ে ঢাকা আর সেখান থেকে মির্জাপুর। সেবার মা গেলেন সুধীরদার জন্য পাত্রী দেখতে। সুধীরদার পছন্দের পাত্রী। মা দেখা করলেন আর পি সাহার সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। মেয়ে কুমুদিনী হোমসের ছাত্রী। পরিবার ভাল। সব মিলিয়ে কথা মোটামুটি পাকা। এরপর আমাদের ভারত-ভ্রমণ। মায়ের সঙ্গে আমি আর রতন। সেবার সময় কাটে বেহালায়, কোতরং দাদুর বাড়ি, বোকারোয় সুবোধদার ওখানে আর বহরমপুরে মাসিমা আর বড়মামার ওখানে। আমাদের বহরমপুর জার্নি ছিল চক্রাকার। শিয়ালদহ থেকে গেলে সরাসরি বহরমপুর চলে যেতাম। রিটার্ন জার্নি ছিল খাগ্রা স্টেশন থেকে গুপ্তিপাড়া আর-এক দাদুর ওখানে দুদিন থেকে তারপর হাওড়া চলে আসা। অনেক সময় উল্টোটাও ঘটত। সেবার আমাদের জন্য অবিস্মরণীয় ঘটনা ছিল পুরীযাত্রা। আমার জেদের কারণে ট্রেন ফেল করি, আর ওই ট্রেনটাই মাঝপথে উল্টে যায়।

কোলকাতা থেকে ফিরে শুনলাম সুধীরদা অন্য মেয়েকে পছন্দ করেছে। বাড়িতে অশান্তি। মা বলেন, “ছেলে আমার, আমার মতামত অনুযায়ী বিয়ে হবে। ওর যে মেয়েকে পছন্দ তাকেই বিয়ে করবে।” বিয়ে হল। বাবা এসব আনুষ্ঠানিকতা কখনওই পছন্দ করতেন না। সাধারণত জ্যাঠামহাশয় আর ছোটকাকা এসব দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরা গেলেন না। বরপক্ষের মাথা হলেন বড়দা। মেয়ে সাধারণ পরিবারের, তাই যদি ভুল না করি বিয়ের সমস্ত খরচ বাড়ি থেকেই দেওয়া হয়। আমাদের সাত ভাইয়ের কারওরই বিয়েতে যৌতুকের প্রশ্ন আসেনি। এটাকে বাবা-মা দুজনেই লজ্জাজনক বলে মনে করতেন। বউদি আমাদের ঘরে এলেন স্কুল শেষ করে। আমাদের বাড়িতে যদিও কয়েক পুরুষ কমবেশি শিক্ষিত, এক দাদু ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার, বড় জ্যাঠামহাশয় (ওঁকে আমি দেখিনি, আমার জন্মের আগেই মারা গেছেন) নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তার, বাবাও নীলরতনে পড়ার সময় নিরুদ্দেশ হয়ে যান আর আমাদের জেনারেশনের সবাই উচ্চশিক্ষিত, কিন্তু মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে উদার ছিলেন না। আমার বড়দির বিয়ে হয় পড়াশুনা শেষ না করেই বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার ভাইপোর সঙ্গে। ছোটকাকার তিন মেয়ে সন্ধ্যাদি, আরতিদি আর চন্দনাও স্কুলের গণ্ডি পেরুনোর আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে। কিন্তু মা বউদি আর দিদির শিক্ষার ব্যাপারে অনড়। ‘আমার বউ, আমার মেয়ে— আমিই ভাল বুঝব তারা কী করবে।’ মায়ের দৃঢ়চেতার কারণে বউদি মাস্টার্স শেষ করে শিক্ষকতা শুরু করেন। এখানেও সমস্যা— ‘আমাদের কি টাকার অভাব যে বাড়ির বউ চাকরি করবে?’ ‘“যদি বেতন নিতে আপত্তি থাকে, বেতন নেবে না, তবে বউমা শিক্ষকতা করবে।’ বাবা সাধারণত এসব জটিলতা এড়িয়ে যেতেন, তবে মায়ের প্রতি বাবার ছিল প্রচণ্ড আস্থা। দিদিও মাস্টার্স শেষ করে শিক্ষকতা শুরু করে। দিদি কখনওই বিয়ে বসতে চায়নি। এ নিয়ে মা-বাবার মনে একটু কষ্ট ছিল বটে, তবে কখনওই নিজেদের মতামত ওর ওপর চাপিয়ে দেননি। আসলে আমরা সবাই বড় হয়েছি নিজেদের মত করে।

এরপর আসে একাত্তর। আমার সময় কাটে মায়ের আঁচল ধরে। তখন আসলে করার তেমন কিছুই ছিল না। মা খুব ভাল গল্প জানতেন, আমরা বলতাম শাস্তর (শাস্ত্র)। মায়ের মুখে গল্প আর গান শুনে সময় কাটে। আমি বরাবরই খাবার ব্যাপারে টালবাহানা করতাম। এক সময় যুদ্ধ শেষ হল, সবাই বাড়ি ফিরলাম, কিন্তু মায়ের শুরু হল নতুন যুদ্ধ। জানা গেল, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র আমার স্বপনদা নিরুদ্দেশ। নকশাল আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ১৯৭২ সালে মা আমাকে নিয়ে গেলেন স্বপনদার খোঁজে। সেবার আমরা গয়া, বুদ্ধ গয়া, কাশী, তারকেশ্বর সহ কত জায়গায় যে গেছি। সেবারের পশ্চিমবঙ্গ একেবারে ভিন্ন দেশ। এমনকি একাত্তরের যুদ্ধের সময় আমরা যেসব জায়গায় থাকতাম সেখানেও এত থমথমে ভাব ছিল না। এখন এখানে নকশালের দেয়াললিখন দিকে দিকে। আজ এখানে এ মরে তো কাল ওখানে সে। বাড়ি থেকে বেরুতেই ভয় লাগে। যদি কেউ স্বপনদার সম্পর্কে কোনও খোঁজ দিত, মা দৌড়ে চলে যেতেন সেখানে। কত দূরদূরান্তের গ্রামে যে গেছি সেবার মায়ের সঙ্গে! শুধু স্বপনদাই নয়, আমার মেসতুতো দাদাও নকশালে যোগ দিয়ে নিরুদ্দেশ। দুই বোনের শুধু একই কথা, একই গল্প।

তিন মাস ইন্ডিয়া ঘুরে নিরাশ হয়ে ফিরে এলাম আমরা। কিন্তু খোঁজ শেষ হয়নি। কত যে চিঠি আসত তখন স্বপনদার কলেজের বন্ধুদের কাজ থেকে। আমাদের তখন একান্নবর্তী পরিবার। কাকাতো, জ্যাঠাতো ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন, রাখাল-চাকর সব মিলিয়ে বিশাল সংসার। প্রতিদিন ৩০–৪০ জন লোকের খাবার ব্যবস্থা করা। সে সময় মেজমা, মা, খুড়িমা তিন মাস করে হেঁশেলের প্রধান। নিজের পালি শেষ হলেই চলে যেতেন ইন্ডিয়ায় ছেলেমেয়েদের কাছে। ১৯৭২-এর পর আমি আর মার সঙ্গে যাইনি। একবার মা তিন মাসের জায়গায় ৬ মাস কাটালেন। সেবার আমি এমন অভিমান করেছিলাম মায়ের ওপরে যে, মাকে মা বলে ডাকা বাদ দিলাম। দু’তিন দিনের মধ্যেই সেটা টের পেয়ে মা বলেন, ‘কীরে তুই আমাকে মা বলে ডাকিস না কেন?’ এরপর থেকে শুরু হল মায়ের ঘন ঘন ইন্ডিয়া যাত্রা। মামারা টিকেট কেটে দিতেন, মা কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত একের পর এক তীর্থ ঘুরে বেড়াতেন। ধন্না দিতেন সাধুসন্তুদের কাছে। যদি কেউ কোনও খবর দিতে পারে। এরপর এক সময় খবর এল চারু মজুমদারের সঙ্গে স্বপনদা ধরা পড়ে আলীপুর জেলে বন্দি। একদিকে জেল, অন্যদিকে বেঁচে আছে, সেই খবর। এরপর থেকে শুরু হল জেলের ঠিকানায় চিঠি লেখা, সেখান থেকে উত্তর পাওয়া। তারপর একদিন ওরা জেল ভেঙে পালাল। শুরু হল আবার অনিশ্চিত জীবন। শুধু ইন্ডিয়া নয় দেশেও কত জ্যোতিষী, ব্রহ্মাদিত্য কত কী? কত লোক যে সে সময় মাকে আশ্বাস দিয়ে টাকাপয়সা নিয়ে ভেগেছে। বাবা রাগ করেননি। আমাদের বলতেন, কিছু একটা নিয়ে থাকতে দাও। ইতিমধ্যে আমরা ভিন্ন হয়ে গেছি। আগের সেই জৌলুস আর নেই। ব্যবসায়ের সমস্ত বাকি বাবার কাঁধে। স্বপনদা শেষ পর্যন্ত আবার ধরা পড়ল। জেল হল। তখন বামফ্রন্ট ক্ষমতায়। সিপিবি-র মধ্যস্থতায় স্বপনদাকে বের করে আনা হয়। ও আবার মেডিক্যাল কলেজে যোগ দেয়। সমস্ত দুঃখকষ্ট পেছনে ফেলে নতুন করে জীবন গড়ার পালা। এল নতুন বিপদ। লাঙলবন্ধ থেকে আসার পথে বাস স্ট্যান্ডে মার স্ট্রোক করল। আমরা বিকেলে ফুটবল খেলছিলাম। দাদারা গিয়ে মাকে বাড়ি নিয়ে এল। বাবা ছিলেন মোকামে। রাতে মনে হয় বাথরুমে যাবেন বলে বা আমাদের ডেকেছিলেন। কেউ শুনতে পাইনি। পড়ে গিয়ে মার অর্ধাঙ্গ অবশ হয়ে গেল।

বাবা প্রতিদিন একটু একটু করে মাকে নতুন করে হাঁটতে শেখালেন। আমরাও হাত লাগালাম। মা আবার লাঠি ভর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। তারপর আমি চলে এলাম মস্কো। ১৯৮৯ সালে মাকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম ধামরাই প্রতিমা দেখতে। ইতিমধ্যে মা আবার নতুন করে লিখতে শুরু করেছেন। মায়ের চিঠি ছিল দাঁড়িকমাবিহীন, একটার পর একটা শব্দ দিয়ে সাজানো। কোনও শুরু নেই, কোনও শেষ নেই। ১৯৯১ সালে যখন দেশে যাই বাবা মারা গেছেন। মা কেমন যেন বদমেজাজি। হয়তো ছোটবেলায় অসুস্থতার কারণে আমাকে খুব বেশি সময় দিতে পারেননি বলে পরে প্রায়ই একটু পক্ষপাতিত্ব দেখাতেন আমার প্রতি। আমার ভাল লাগত না। যেদিন মস্কো ফিরি এক বন্ধু আসে আমার সঙ্গে দেখা করতে। মা ওকে সব সময়ই আদর করতেন, তবে সেদিন হঠাৎ দুটো কথা বলেন যা আমরা কেউই আশা করিনি।

বাবার মৃত্যুর পরে দেশ আমাকে আর টানত না। আমার নিজের চেয়েও বাবারই বেশি আগ্রহ ছিল যেন আমি পিএইচ.ডি করি। ১৯৯৩ সালে ডিফেন্ড করলাম। জানতাম মা প্রচণ্ড অসুস্থ। দিদি আর রতন দুজনে মিলে মাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এরমধ্যে মনিকা তার উপস্থিতি জানান দিল। কীভাবে দেশে জানাই। এভাবেই চলে গেল কিছুদিন। পরে খবর পেলাম ১৯৯৪ সালের ১২ জানুয়ারি মা চলে গেলেন। আমি দেশে যাই আরও চার বছর পরে। আমাদের হিন্দু নিয়ম অনুযায়ী পুত্রসন্তান বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে মাথা ন্যাড়া করে। আমি না বাবার ক্ষেত্রে না মার ক্ষেত্রে— কখনওই সেটা করিনি। তপনদা কোত্থেকে এক ব্রাহ্মণ ডেকে রায় দেওয়াল যে, ক্ষেত্রবিশেষে মাথা ন্যাড়া না করলেও চলে।

মা খুব ভাল রাঁধতেন। সেলাইয়ের হাত ছিল অপূর্ব। রুই মাছের আঁশটে দিয়ে মার সেলাই ছিল আমাদের গর্ব। প্রতিদিন ফুল দিয়ে বানাতেন বিনি সুতোর মালা। কত রকমের মিষ্টি যে তৈরি করতেন! আমরা যখন বড় হয়ে গেছি, অনেকেই যখন বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করেছে তখনও জোর গলায় ‘মা, ও মা…’ পাড়া কাঁপিয়ে তুলত। আর যতদিন মা ছিলেন, খাওয়ার শেষে আমরা কেউই গামছা দিয়ে মুখ মুছতাম না। আমি তো নাইই।

মা ছিলেন সব সময়ই ফিটফাট। বিকেলে স্নান করে ধোয়া শাড়ি পরে পরিপাটি করে মাথা আঁচড়িয়ে শাঁখা-সিঁদুর পরা, পায়ে আলতা দেওয়া। দিদি গল্প করত এমনকি যখন মায়ের জ্ঞান এই আছে তো এই নেই, তখনও অপেক্ষা করতেন চুল আঁচড়ানোর জন্য, আলতা দেওয়ার জন্য। বিগত বছর দশেক হল প্রতি বছর ১২ জানুয়ারি দিদি আমাকে ফোন করত অথবা আমি দিদিকে। গত দুই বছর হল দিদি নেই, এখন আর ১২ জানুয়ারি কেউ ফোন করে না। গত ১২ জানুয়ারি, বার বার মনে হল মায়ের কথা। মায়েরা মরে না।

দুবনা, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩

চিত্র: লেখক

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ১

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ২

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৩

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৪

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৫

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৬

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৭

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৮

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৯

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ১০

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ১১

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ১২

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ১৩

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ১৪

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ১৬

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

সুজিত বসু

সুজিত বসুর দুটি কবিতা

তারার আলো লাগে না ভাল, বিজলীবাতি ঘরে/ জ্বালাই তাই অন্তহীন, একলা দিন কাটে/ চেতনা সব হয় নীরব, বেদনা ঝরে পড়ে/ যজ্ঞবেদী সাজানো থাকে, জ্বলে না তাতে ধূপ/ রাখে না পদচিহ্ন কেউ ঘরের চৌকাঠে/ শরীরে ভয়, নারীরা নয় এখন অপরূপ/ তারারা সব নিঝুম ঘুমে, চাঁদের নেই দেখা/ অর্ধমৃত, কাটাই শীত ও গ্রীষ্ম একা একা

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বিশ্বকর্মার ব্রতকথা

বিশ্বকর্মা পুজোতেও কেউ কেউ বিশ্বকর্মার ব্রত পালন করে থাকেন। এমনিতে বিশ্বকর্মা যেহেতু স্থাপত্য ও কারিগরির দেবতা, তাই কলকারখানাতেই এই দেবতার পুজো হয়ে থাকে। সেখানে ব্রতকথার স্থান নেই। আবার কোন অলৌকিক কারণে এবং কবে থেকে যে এদিন ঘুড়িখেলার চল হয়েছে জানা নেই। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন শহর ও গ্রামের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ও নানা আকৃতির ঘুড়িতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার কখনও বাংলাদেশে পা রাখেননি!

ভাবতে অবাক লাগে, ‘৭১-পরবর্তী বাংলাদেশ উত্তমকুমারকে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। টালিগঞ্জের কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেছিলেন সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে। অন্যদিকে ববিতা, অলিভিয়া ও আরও কেউ কেউ টলিউডের ছবিতে কাজ করেছেন। ঋত্বিক ঘটক, রাজেন তরফদার ও পরে গৌতম ঘোষ ছবি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশে এসে, কিন্তু উত্তমকুমারকে আহ্বান করার অবকাশ হয়নি এখানকার ছবি-করিয়েদের।

Read More »
নন্দিনী কর চন্দ

স্মৃতি-বিস্মৃতির অন্দরমহলে: কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি

বিস্মৃতির অতলে প্রায় তলিয়ে যাওয়া এমন কয়েকজন মহিলা কবির কথা আলোচনা করব, যাঁরা তাঁদের কাব্যপ্রতিভার দ্যুতিতে বাংলা কাব্যের ধারাকে উজ্জ্বল ও বেগবান করে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণকামিনী দাসী, মোক্ষদায়িনী দেবী, প্রসন্নময়ী দেবী, লজ্জাবতী বসু, জগন্মোহিনী দেবী, গিরিন্দ্রমোহিনী দাসী, হিরণ্ময়ী দেবী, অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত, সুরবালা ঘোষ প্রমুখ।

Read More »
মোহাম্মদ কাজী মামুন

বালকেরা অচেনা থাকে : এক অবিস্মরণীয় পাঠ অভিজ্ঞতা

ঘাসফুল নদী থেকে প্রকাশিত ‘বালকেরা অচেনা থাকে’ গল্পগ্রন্থটি যতই এগোনো হয়, একটা অনুতাপ ভর করতে থাকে পাঠকের মনে— কেন আগে সন্ধান পায়নি এই অমূল্য রত্নসম্ভারের! হ্যাঁ, রত্নসম্ভারই, কারণ একটা-দুটো নয়, প্রায় দশটি রত্ন, তাও নানা জাতের— লুকিয়ে ছিল গল্পগ্রন্থটির অনাবিষ্কৃত খনিতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাইশে শ্রাবণ ও বৃক্ষরোপণ উৎসবের শতবর্ষ

কবির প্রয়াণের পরের বছর থেকেই আশ্রমবাসী বাইশে শ্রাবণকে বৃক্ষরোপণ উৎসব বলে স্থির করেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই দিনটিই এ-উৎসবের স্থায়ী তারিখ। বাইশের ভোর থেকেই প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় উৎসব। সকালে কলাভবনের ছাত্রছাত্রীরা বিচিত্রভাবে একটি পালকি চিত্রিত করেন ছবি এঁকে, ফুল, লতাপাতায়। মঙ্গলধ্বনি দিতে দিতে এর পর পালকির ভিতরে টবের মধ্যে একটি চারাগাছকে স্থাপন করা হয়। অতঃপর শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গীত-পরিবেশন-সহ আশ্রম-পরিক্রমা।

Read More »