Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

রাশিয়ার চিরকুট

পর্ব ১

দাড়ি

আমাদের স্কুল বা কলেজ জীবনে দাড়ির তেমন কদর ছিল না, তবে গোঁফ রাখত প্রায় সবাই। সেটা ছিল পুরুষত্বের প্রতীক। বড়দের মধ্যেও দাড়ির খুব একটা প্রচলন ছিল না। সাধুসন্ন্যাসী বা পীরহুজুররা দাড়ি রাখতেন। যদি সাধুসন্ন্যাসীদের দাড়ি আর গোঁফ গজাত যুগপৎভাবে, পীরহুজুররা গোঁফ রাখতেন না। আমাদের বাড়িতে অবশ্য দাড়ির ব্যাপারে বিভিন্ন ধারা চালু ছিল। ছোটকাকা ছিলেন ক্লিন সেভড। বাবা শুধু গোঁফ রাখতেন। প্রতি সপ্তাহে মণীন্দ্রদা এসে এদের সেভ করে দিতেন। মেজো জ্যাঠামশাই চুল-দাড়ি কোনও কিছুই কাটাতেন না। জ্যাঠামশাইকে দেখতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত লাগত তাই আমরা পেছন থেকে তাঁকে রবি ঠাকুর বলতাম। আমাদের বাড়িতে তখন প্রচুর লোকজন। নিজেরা বাদেও আত্মীয়স্বজন ছিল, ছিল কাজের লোকজন আর দূরের পরিচিত বন্ধুদের অনেকের ছেলেরা যারা মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজে পড়ত আমাদের বাড়ি থেকে। থাকা-খাওয়ার অভাব ছিল না। আত্মীয়স্বজনদের একজন ছিলেন দৌলতপুরের দাদু। উনি ছোট কাকার শ্বশুর, ব্যবসার হিসাবের খাতা লিখতেন। মাঝেমধ্যে দিদিমা আসতেন। জিজ্ঞেস করতেন,

—তোর দাড়ি কোথায়?

—কৌটায় ভরে রেখেছি। কৌটা আলমারিতে। বড় হলে পরব।

পরে কলেজে পড়ার সময় যখন জামাত আর ছাত্র শিবির দেশের রাজনীতিতে একটু একটু করে ফিরতে শুরু করে তখন দাড়ি ছিল মৌলবাদী রাজনীতির প্রতীক, মানে ধারণা করা হত এ ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত যারা তারাই দাড়ি রাখে।

মস্কোয় এসে দেখলাম বাঙালিরা প্রায় সবাই গোঁফ কামিয়ে ফেলেছে। দাড়ি রাখার তো প্রশ্নই আসে না, ভয় দেখাত শীতে সেখানে বরফ জমবে। কিন্তু গোঁফ না রাখার কারণ বুঝতাম না। কেউ কেউ বলত তাতে নাকি চুমু খেতে অসুবিধা হয়, ভাবখানা এই যেন চুমু খাওয়া ছাড়া কারও আর কোনও কাজ নেই। তবে সবার মত আমিও একসময় গোঁফকে বিদায় জানালাম। প্রথম প্রথম আয়নায় দেখে নিজেই নিজেকে চিনতে পারতাম না।

আমাদের এক বড়ভাই দাড়ি-গোঁফ ঠিক রাখতেন না, তবে তার জুলফি ছিল প্রায় থুতনি পর্যন্ত, মানে দুই গালভরা— যা আসলে দাড়িই। সাত্তার ভাই তাই দাড়ি রাখত থুতনির ওখানটায়। একে বলতাম ছাগল দাড়ি। আর বোনাস হিসেবে রাখত গোঁফ। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলত,

—বড়ভাই এই জায়গাটা চাষ করেনি তাই আমি শূন্যস্থান পূরণ করছি।

নারুদা নামে আমাদের আর-এক বড়ভাই ছিল। বলত,

—দাড়ি রাখা হল গরীবের ফ্যাশন, আজ একটু রাখ, কাল কাট। বিনে পয়সায় হরেক রকমের ফ্যাশন করা যায়।

তবে সোভিয়েত আমলে আমরা না ছিলাম গরীব, না ছিলাম ধনী। আমরা বন্ধুরা চলতাম স্টাইপেন্ডের টাকায়, তাই সবাই ছিলাম যাত্রী একই তরণীর।

আজকাল অনেক মেয়েকে দেখি মাথার অর্ধেকটা ক্লিন সেভ করে, বাকিটা ফ্যাশন করে চুল রাখে। ভাগ্যিস ওদের দাড়ি নেই, তাহলে একগাল দাড়ি আর একগাল ক্লিন সেভের সুযোগ থাকত। অবশ্য ছেলেরাও সেটা করে দেখতে পারে। অনেকে মাথায় বিভিন্ন রকমের ছবি আঁকে, দাড়িতেও সেটা করা যেত। যদিও এদেশে মেয়েরা নানা রঙে চুল রাঙায়, ছেলেদের মধ্যে সেটার চল তেমন নেই। এমনকি ওরা কলপ পর্যন্ত দেয় না। অন্য দিকে আমাদের দেশে অনেকেই চুলদাড়িতে কলপ বা মেহেদি লাগায়। নীল, হলুদ, সবুজ, গোলাপি এসব রঙেও দাড়িকে রাঙানো যায়। জানি না দেশে এ নিয়ে কেউ ভাবে কিনা।

আমাদের দেশে দাড়ি কেন যেন দেবদাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মানুষের ধারণা, দাড়ি রাখার সঙ্গে প্রেমে ছ্যাঁক খাওয়ার একটা নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। আমি জীবনে দাড়ি রেখেছি বেশ কয়েক বার। তবে একবারও প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল না। আসলে এ জন্যে দাড়ি রাখলে আমি জীবনে দাড়িই কামাতে পারতাম না। আমি তো সব সময় প্রেমে পড়েই থাকি। জীবনের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে। কীসের প্রেমে না পড়ি। রাস্তায় একটা ফুল বা পাতা দেখে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি, ছবি তুলতে যেতে পারি। বই পড়ে কারও প্রেমে পড়ে যাই। মনে আছে দস্তইয়েফস্কির ‘সাদা রাত’ পড়ে লেনিনগ্রাদে সাদা রাতে নাস্তিয়ার অপেক্ষায় সারা রাত বসে ছিলাম, আসেনি। যখন মস্কোয় অত্রাদনায়া মেট্রো স্টেশন চালু হল ওখানে গিয়ে ঘুরেছিলাম নাতাশা রস্তোভার খোঁজে। যুদ্ধ ও শান্তির নায়িকা নাতাশার বাবার বাড়ি ছিল ওখানেই। দেখা পাইনি। এই আমি যদি প্রেমের জন্য দাড়ি রাখতাম তাহলে এত দিন তা আজানুলম্বিত হয়ে দুবনার রাস্তাঘাট ঝাড়ু দিত।

দাড়ি নিয়ে বিভিন্ন রকমের আনেকডোট আছে রাশিয়ায়। এখানে একটা পুরনো আনেকডোট অপ্রাসঙ্গিক হবে না। এটা একটা দাড়িওয়ালা বুড়ো আনেকডোট।

অনেক আগে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এক প্রফেসর ছিলেন। খুব নামকরা আর বদমেজাজি বলে পরিচিত। ওঁর ছিল ডাকসাইটে দাড়ি। সবাই তাঁকে সমীহ করে চলত। তো একদিন এক ছাত্র তাঁকে জিজ্ঞেস করল,

—প্রফেসর, আপনি যখন ঘুমান তখন দাড়ি কম্বলের বাইরে রাখেন, না ভেতরে?

—সেটা তো বলতে পারব না। কোনওদিন খেয়াল করিনি।

—আমরা ভাবতাম আপনি সব জানেন। এখন দেখছি কীভাবে ঘুমান সেটাই জানেন না।

প্রফেসর কোনও উত্তর না দিয়ে নিজের কাজে চলে গেলেন। রাতে ঘুমাতে গিয়ে ছেলেটার কথা মনে পড়ল। ভাবলেন এখন জেনে আগামীকাল ছেলেটার প্রশ্নের উত্তর দেবেন। কিন্তু এ কী কাণ্ড। ঘুম আসছে না। দাড়ি কম্বলের নীচে রাখেন— অস্বস্তি লাগে। কম্বলের বাইরে রাখেন, তাতেও অস্বস্তি। সারা রাত তিনি দুচোখ বন্ধ করতে পারলেন না। ক্লাসে এসে প্রথমেই তিনি সেই ছেলেকে ডেকে পাঠালেন,

—শয়তান, ইয়ার্কি করার জায়গা পাও না? কীভাবে ঘুমাই? দাড়ি কম্বলের বাইরে না ভেতরে? আমি ঘুমাই না, বুঝলে, ঘুমাই না।

এক সময় প্রতিদিন শেভ করতাম, পরে সেটা সপ্তাহে সাড়ে তিন বারে গিয়ে ঠেকে। করোনা কালে অবশ্য সেটা কমে দাঁড়ায় সপ্তাহে দু’বার। এখন আর তেমন কোনও হিসেব নেই। মন চাইলে শেভ করি, না চাইলে না। আমার দাড়ি রাখা আসলে আলসেমিতে অথবা গালে ব্রণের কারণে। তবে এবার ঘটল ভিন্ন ঘটনা। সেদিন সেলুনে গেলাম চুল কাটাতে। মেয়েটা জিজ্ঞেস করল (এখানে মেয়েরাই সাধারণত চুল কাটে, ছেলেরা যে কাটে না তা নয়, তবে কালেভদ্রে),

—কীভাবে কাটব?

—কান খোলা, যতদূর সম্ভব ছোট তবে চুলগুলো যেন সজারুর কাঁটার মত দাঁড়িয়ে না থাকে।

এক্ষেত্রে আমি ভাঙা রেকর্ড, সবাইকে এই একই উত্তর দিই বিগত প্রায় দুই যুগ ধরে। আসলে আমার চুল খুব শক্ত, আমার মতই ঘাড়ত্যাড়া। কিছুতেই কথা শোনে না।

মেয়েটা চুল অনেকটা ছোট করে জিজ্ঞেস করল,

—এতে চলবে?

—আর-্একটু ছোট করতে পারেন।

কিছুক্ষণ পরে টের পেলাম যে খুব বেশি রকম ছোট হয়ে গেছে।

—একটু বেশি ছোট হয়ে গেল না?

—আপনিই তো বললেন।

কী আর করা। উপায় বের করলাম সঙ্গে সঙ্গেই। যতদিন চুল ছোট থাকবে দাড়ি দিয়ে সেটা মেকআপ করব। তারপর কয়েক দিন পাল্লা দিয়ে চুলের সঙ্গে দাড়ি বড় হতে শুরু করল। একদিন ডাক্তারের কাছে গেলে বললেন,

—এটা কি আপনার নতুন ইমেজ?

—না, চুলের কম্পেনসেশন। সাথিও বলতে পারেন।

—খারাপ না। মানিয়েছে কিন্তু।

মঙ্গলবার যখন ফটো ক্লাবে গেলাম সবাই অবাক। আমার সত্তর বয়সী বন্ধু ইউরা বলল,

—দাড়ি। তা বেশ ভাল। কিন্তু তুমি কি ভেবে দেখেছ, এখন প্লেট চাটবে কীভাবে?

—আমার জিহ্বা খুব লম্বা।

—বা, বেশ ভাল উত্তর তো।

—মানে?

—আমার এক আত্মীয়কে জিজ্ঞেস করলে খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। এখনও ভাবছে।

—জানোই তো আমি পদার্থবিদ। একা একা ভাবব কেন? ভাবলাম তোমাকেও ভাবাই।

—সে আবার কী?

—দেখো তুমি আমাকে ভাবনায় ফেললে কীভাবে প্লেট চাটব। কিন্তু তুমিও এখন ভাববে বিজনের জিহ্বা কত লম্বা।

—যাই বলো, আমি কিন্তু প্লেট চাটি।

—আমিও চাটি।

—তাই নাকি? তবে আমি চাটি লুকিয়ে। কেউ ঘরে না থাকলে।

—আমি বাসায় এসব নিয়ে ভাবি না। বিশেষ করে চাটনি থাকলে। তুমি যদি দেখতে কুকুরেরা তখন কীভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি যেন যাকে বলে গণশত্রু।

—ওদের খেতে দাও না?

—ওদের প্লেটে সব সময় খাবার থেকে। তবে ওদের ধারণা আমার খাবার বেশি টেস্টি। মাঝেমধ্যে ওদের খাবার দেখে আমারও লোভ হয়। দেশের চানাচুরের কথা মনে পড়ে যায়।

আমাদের গল্প জমতে থাকে। স্লাভা বলে,

—বিজন, এবার পোজ দাও। কিছু ছবি তুলব।

দেমিদের হাতে ক্যামেরা দিয়ে লাইট ঠিক করতে শুরু করে। পরপর দুসপ্তাহ ছবি তোলা হয়। শেষের দিন স্লাভা বলল,

—ভাবছি তোমার সাথে রাস্তায় কিছু ছবি তুলব দাড়ি থাকতে থাকতে।

—দেখি।

পাশ থেকে ইউরা বলল,

—কি, প্লেট চাটতে পারছ?

—এ নিয়ে ভাবিনি।

—সেদিন যে বললে ভাববে।

—না ভাবার জন্য আমার কাছে প্রতিষেধক আছে।

—সেটা আবার কী?

এই সুযোগে আমি ওকে সেই বুড়ো প্রফেসরের গল্প শুনিয়ে দিলাম।

যাহোক, স্লাভা বলেছে দাড়ি সহ ছবি তুলবে। দাড়ি কি রেখেই দেব? কিন্তু চাইলেই তো আর রাখা যায় না। বাসার কুকুরগুলো আমাকে দেখে প্রায়ই তেড়ে আসে। কে জানে চোর মনে করে কিনা। বিশেষ করে রাতের বেলায়। বউ বলে,

—তোমার দাড়ির স্পর্শে আমার সুড়সুড়ি লাগে।

আমি মনে মনে ভাবি, কি ভালই না হয়েছে যে বউদের দাড়ি নেই (অবশ্য এটা আর ইউনিভার্সাল সত্য নয়, আজকাল অনেকেই ছেলেদের বউ হিসেবে বিয়ে করে)। এদিকে বাইরে গরম। বিকেলে ঘুরতে গেলে দাড়ির ভেতর মশারা লুকিয়ে থাকে। কী করা? আচ্ছা দাড়িরা মিটিং-মিছিল করতে পারলে নিশ্চয়ই ওদের জেনোসাইডের বিরুদ্ধে গর্জে উঠত। ওদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে দিলাম ওদের খতম করে।

পরের দিন স্লাভার মেসেজ,

—বিজন আজকে পোজ দিতে আসবে তো!

—আসব। তবে আমি কিন্তু দাড়িগুলোকে কচুকাটা করেছি।

—খুবই দুঃখজনক।

আধ ঘণ্টা পরে আবার মেসেজ,

—ঠিক আছে, শেভ যখন করেই ফেলেছ কী আর করা! তাহলে এমনিতেই চলে এসো।

মনে পড়ে গেল ইয়েলৎসিনের সময়ের এক চুটকি।

বিজ্ঞানীদের অবস্থা তখন যারপরনাই খারাপ। খাবারের টাকা নেই, গবেষণার টাকা নেই। একদিন তাদের এক ডেলিগেশন গেল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে। তবে প্রেসিডেন্টের অবস্থাও খারাপ। তিনিও চলেন অন্যের মানে এরকম প্রজাদের দানদক্ষিণায় মানে ঘুষের টাকায়। তাঁর দেহরক্ষী বিজ্ঞানীদের কিছুতেই ঢুকতে দেবে না। বাগবিতণ্ডা শুনে ইয়েলৎসিন বেরিয়ে এলেন,

—কী হল আপনাদের?

—বরিস নিকোলায়েভিচ, আমাদের খাবার টাকা নেই, গবেষণার টাকা নেই। কোনও পয়সা নেই।

—কি আর করা। ঠিক আছে, ওনাদের এমনিতেই ঢুকতে দাও।

বলা বাহুল্য, বিজ্ঞানীরা আর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে ভেতরে ঢোকেননি। তাঁরা বিজ্ঞ মানুষ। এতেই বুঝে গেছেন চেয়ে লাভ নেই, দিতে পারবেন না।

হ্যাঁ, আমি বিজ্ঞানী নই, তাই দাড়ি না থাকা সত্ত্বেও গেলাম ছবি তুলতে। দাড়ি ছাড়া ছবি দেখে এক বন্ধু লিখল,

—দাড়ি ছাড়া তোমাকে একেবারেই অরডিনারি লাগছে। দাড়িতেই ভাল ছিল।

—কাক যতই ময়ুরের পেখম লাগাক সে কাকই থাকে। আমি অরডিনারি মানুষ। দাড়ি রেখে যতই অসাধারণ হবার চেষ্টা করি না কেন, দিনের শেষে সাধারণই থেকে যাই।

দুবনা, ১৭ জুলাই ২০২২

চিত্র: দেমিদ সেরমিয়াগিন

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ১

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ২

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৩

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৪

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৫

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৬

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৭

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৮

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ৯

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ১০

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ১২

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ১৩

রাশিয়ার চিরকুট পর্ব ১৪

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »