তাহার নামটি রঞ্জনা। উদ্ভিদের নাম রঞ্জনা। এই উদ্ভিদের অন্যান্য নাম রঞ্জন, রক্ত-কম্বল, চন্দন-দানা, চন্দন-গোটা, রাঙা চন্দন-দানা, রঞ্জক। ইংরেজি নাম False Red Sandalwood, Acacia Coral, Red Bead-tree, Coral Wood, Curly Bean, Jumbi Bead, Peacock Flower-fence, Red Lucky Seed, Saga Seed tree। সংস্কৃত নাম Ratangunja, Ratangunj, Kunchandana প্রভৃতি। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Adenanthera pavonina, সমনাম: Adenanthera gersenii Scheff। এটি Fabaceae পরিবারের বৃক্ষ।
এই উদ্ভিদের বহুমুখী উপকারিতা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অ্যান্টিসেপ্টিক হিসাবে, বাতের ব্যথা ও নানা প্রদাহে এর ব্যবহার দেখা যায়। ব্রাজিল, বাংলাদেশ, ভারত সহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে গাছটি পাওয়া যায়। রঞ্জনা মাঝারি আকারের পত্রমোচী উদ্ভিদ। এর পাতা দুই-পক্ষল, গাঢ়-সবুজ, পত্রিকা ২-৩ সেমি লম্বা, বসন্তে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মে লম্বা ছড়ায় ছোট ছোট, হালকা হলুদ ও সুগন্ধি ফুল ফোটে। এর শুঁটি ১৫-২২ সেমি লম্বা, পাকলে কুঁকড়ে যায় ও দুই খণ্ডে বিভক্ত হয়। বীজ গাঢ় লাল ও শক্ত। বীজ ও ডালের কাটিং থেকে নতুন চারা করা যায়। ফুল খুব ছোট হওয়ায় অনেকের চোখেই পড়ে না কিন্তু শুঁটি ফেটে যাওয়ার পর গাছের নিচে লাল বীজ ছড়িয়ে থাকে। অনেকেই এই বীজকে ভুল করে রক্তচন্দনের বীজ বলেন।
রঞ্জনা বেশ পরিচিত একটি গাছ। লাল বীজগুলো দেখতে খুব সুন্দর। চিনে একে বলা হয় xiang si dou অর্থাৎ mutual love bean। অনেকে এর বীজ দিয়ে আংটি, মালা, দুল ইত্যাদি বানায়। বিখ্যাত ইংরেজ ছত্রাকবিজ্ঞানী এবং উদ্ভিদবিদ এড্রেড জন হেনরি কর্নার (E. J. H. Corner) তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীনকালে স্বর্ণকারেরা সোনার ভর পরিমাপে রঞ্জনার বীজ ব্যবহার করতেন। এই গাছের কাঠ খুব শক্ত, তাই আসবাবপত্র, নৌকা প্রভৃতি তৈরিতে কাজে লাগে। কাঠ থেকে রঞ্জক সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া বীজ বিষাক্ত, শোধন ছাড়া ঔষধে ব্যবহার করা যায় না। কচি পাতা ও গাছের ছালের রস বা কাথ্ ডায়ারিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পাতার নির্যাসে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও বীজের নির্যাসে প্রদাহনাশক গুণাগুণ রয়েছে।
চিত্র : গুগল/ লেখক
প্রকৃতিপাঠ : বিলুপ্তপ্রায় কর্পূর গাছ
প্রকৃতিপাঠ: স্নিগ্ধ ছায়ার তমাল গাছ
প্রকৃতিপাঠ: দৃষ্টিনন্দন ও সুগন্ধী নাগলিঙ্গম
প্রকৃতিপাঠ: খইয়ে বাবলা ফলের গাছ
প্রকৃতিপাঠ: চিনেবাদাম চিনে নিন
প্রকৃতিপাঠ: বসন্তের শ্বেত শিমুল
প্রকৃতিপাঠ: পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় বৃক্ষ ছাতিম
দারুণ, অনেক কিছু জানতে পারছি।?