Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

প্রকৃতিপাঠ: রসময়ী খেজুর গাছ

খেজুর ভূমি-বান্ধব ও স্থানসাশ্রয়ী একটি বৃক্ষ। এটি দুর্যোগ প্রতিরোধী, বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। বাংলার মাটি ও কোমল প্রকৃতি খেজুর গাছ বেড়ে ওঠার জন্য বেশ উপযোগী। রাস্তা, বাঁধ, পুকুর পাড়, খেতের আল এবং আবাদি জমিতে এ বৃক্ষ বেশ ভাল জন্মে। তবে নদীর তীর, আংশিক লবণাক্ত এলাকা, বরেন্দ্র এলাকাসহ চরাঞ্চলেও জন্মে। বাংলাদেশের সব জেলা বিশেষ করে বৃহত্তর যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও নাটোর অঞ্চলে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে খেজুর গাছের চাষ হয় এবং যশোর ও ফরিদপুর সর্বাধিক খেজুর রস ও খেজুর গুড় উৎপন্ন অঞ্চল।

খেজুর বৃক্ষ একবীজপত্রী আবৃতবীজী উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম Wild Date Palm, Silver Date Palm, Indian Wild Palm ইত্যাদি। খেজুরের আঞ্চলিক নাম খাজুর, খেজুর, খাইজুর ইত্যাদি। সংস্কৃত নাম খর্জুরম্। এর বৈজ্ঞানিক নাম Phoenix sylvestris (Roxb.) এবং এটি Arecaceae বা তাল গোত্রের সদস্য। খেজুরের বহুল ব্যবহার নিয়ে বর্ণনার শেষ নেই। খেজুর রস ও গুড় বিক্রি করে খামারির আর্থিক লাভ ও স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত বেশ সুপ্রাচীন।

খেজুরের ঝুরি।

শীত ঋতুতে উদ্ভিদ জগতে যখন নেমে আসে এক প্রাণহীন রসহীন বিবর্ণতার ছায়া, তখন খেজুর গাছ রসের বার্তা নিয়ে আসে। রস আহরণের জন্য খেজুর গাছ বছরে ন্যূনতম একবার কাটা এবং গোলগাল রাখা প্রয়োজন হয়। গ্রামীণ অর্থনীতি এবং মৌসুমি কর্মসংস্থানে রসময়ী খেজুর গাছের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। খেজুরের রস দিয়ে নানারকম গুড়, পিঠা, পায়েস প্রভৃতি তৈরি হয়। বাঙালি খাদ্যসংস্কৃতির ঐতিহ্যের পাশাপাশি যা একটি লাভজনক কুটির শিল্প হিসেবেও উল্লেখযোগ্য।

খেজুর শাখা-প্রশাখাবিহীন একক কাণ্ডযুক্ত বৃক্ষ। কাণ্ড সরল ও গোলাকার। একটি কাণ্ডই একাকী বেড়ে ওঠে এমন দৃশ্য বৃক্ষের ক্ষেত্রে খুব কম দেখা যায়। গাছের ট্রাংক বেশ মজবুত ও গোলগাল। কাণ্ডের শীর্ষভাগ যা সদা পত্রশোভিত লাবণী মাথি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ফাগুনে প্রকৃতিতে খেজুর ফুল ফোটে। এর ফুলের বিন্যাস মানুষকে আকৃষ্ট করে।

কুয়াশার চাদরে ঢাকা শীতঋতুতে খেজুর মাথিতে মুচি (পুষ্পমঞ্জরী) আসে। খেজুর ফুল ভিন্নবাসী, পুষ্পমঞ্জরী দেখে পুরুষ ও স্ত্রী গাছ চিহ্নিত করা যায়। শুধু স্ত্রী গাছে ফুল ও ফল ধরে, পুং গাছে নয়। পুং পুষ্পমঞ্জরী খাটো, স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরী লম্বা ও ফুলের বর্ণ সাদা। খেজুর ফুল শক্ত মোচা থেকে বের হয়। মোচা থেকে ফুল ফোটার অপার সৌন্দর্য দেখে মনে হয়, কোথা থেকে কোনও ফুলপরি এসে যেন কণ্টকাকীর্ণ গাছের মাথায় মন্ত্র দিয়ে ফুল ফুটিয়েছে।

চিত্র : গুগল

প্রকৃতিপাঠ : বিলুপ্তপ্রায় কর্পূর গাছ

প্রকৃতিপাঠ: স্নিগ্ধ ছায়ার তমাল গাছ

প্রকৃতিপাঠ: দৃষ্টিনন্দন ও সুগন্ধী নাগলিঙ্গম

প্রকৃতিপাঠ: খইয়ে বাবলা ফলের গাছ

প্রকৃতিপাঠ: চিনেবাদাম চিনে নিন

প্রকৃতিপাঠ: তাহার নামটি রঞ্জনা

প্রকৃতিপাঠ: উপকারী সোনাপাতা

প্রকৃতিপাঠ: বসন্তের শ্বেত শিমুল

প্রকৃতিপাঠ: পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় বৃক্ষ ছাতিম

প্রকৃতিপাঠ: এখন অশোক ফোটার দিন

প্রকৃতিপাঠ: ফলসার বহুবিধ গুণ

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

কাজী তানভীর হোসেন

ধানমন্ডিতে পলাশী, ৫-ই আগস্ট ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কয়েকদিন ধরে যা ঘটেছিল, তা শুরু থেকেই গণআন্দোলনের চরিত্র হারিয়ে একটা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পরিণত হয়েছিল। আজ আমরা কার্যক্রম দেখেই চিনে যাই ঘটনাটি কারা ঘটাচ্ছে। আগুন আর অস্ত্র নিয়ে রাজনীতি করার স্বভাব রয়েছে বিএনপি-জামাত ও রোহিঙ্গাদের। তারা যুক্তিবুদ্ধির তোয়াক্কা করে না।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য: কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

আমরা বিধানচন্দ্র রায়ের মতো মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছিলাম, যাঁকে খুব সঙ্গত কারণেই ‘পশ্চিমবঙ্গের রূপকার’ বলা হয়। পেয়েছি প্রফুল্লচন্দ্র সেন ও অজয় মুখোপাধ্যায়ের মতো স্বার্থত্যাগী মুখ্যমন্ত্রী। এবং জ্যোতি বসুর মতো সম্ভ্রান্ত, বিজ্ঞ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখর কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ। কিন্তু তাঁদের সকলের চেয়ে অধিক ছিলেন বুদ্ধদেব। কেননা তাঁর মতো সংস্কৃতিমনা, দেশবিদেশের শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্র নাটক সম্পর্কে সর্বদা অবহিত, এককথায় এক আধুনিক বিশ্বনাগরিক মানুষ পাইনি। এখানেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনন্যতা।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর দুটি কবিতা

তারার আলো লাগে না ভাল, বিজলীবাতি ঘরে/ জ্বালাই তাই অন্তহীন, একলা দিন কাটে/ চেতনা সব হয় নীরব, বেদনা ঝরে পড়ে/ যজ্ঞবেদী সাজানো থাকে, জ্বলে না তাতে ধূপ/ রাখে না পদচিহ্ন কেউ ঘরের চৌকাঠে/ শরীরে ভয়, নারীরা নয় এখন অপরূপ/ তারারা সব নিঝুম ঘুমে, চাঁদের নেই দেখা/ অর্ধমৃত, কাটাই শীত ও গ্রীষ্ম একা একা

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বিশ্বকর্মার ব্রতকথা

বিশ্বকর্মা পুজোতেও কেউ কেউ বিশ্বকর্মার ব্রত পালন করে থাকেন। এমনিতে বিশ্বকর্মা যেহেতু স্থাপত্য ও কারিগরির দেবতা, তাই কলকারখানাতেই এই দেবতার পুজো হয়ে থাকে। সেখানে ব্রতকথার স্থান নেই। আবার কোন অলৌকিক কারণে এবং কবে থেকে যে এদিন ঘুড়িখেলার চল হয়েছে জানা নেই। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন শহর ও গ্রামের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ও নানা আকৃতির ঘুড়িতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার কখনও বাংলাদেশে পা রাখেননি!

ভাবতে অবাক লাগে, ‘৭১-পরবর্তী বাংলাদেশ উত্তমকুমারকে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। টালিগঞ্জের কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেছিলেন সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে। অন্যদিকে ববিতা, অলিভিয়া ও আরও কেউ কেউ টলিউডের ছবিতে কাজ করেছেন। ঋত্বিক ঘটক, রাজেন তরফদার ও পরে গৌতম ঘোষ ছবি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশে এসে, কিন্তু উত্তমকুমারকে আহ্বান করার অবকাশ হয়নি এখানকার ছবি-করিয়েদের।

Read More »
নন্দিনী কর চন্দ

স্মৃতি-বিস্মৃতির অন্দরমহলে: কবিতার সঙ্গে গেরস্থালি

বিস্মৃতির অতলে প্রায় তলিয়ে যাওয়া এমন কয়েকজন মহিলা কবির কথা আলোচনা করব, যাঁরা তাঁদের কাব্যপ্রতিভার দ্যুতিতে বাংলা কাব্যের ধারাকে উজ্জ্বল ও বেগবান করে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণকামিনী দাসী, মোক্ষদায়িনী দেবী, প্রসন্নময়ী দেবী, লজ্জাবতী বসু, জগন্মোহিনী দেবী, গিরিন্দ্রমোহিনী দাসী, হিরণ্ময়ী দেবী, অম্বুজাসুন্দরী দাশগুপ্ত, সুরবালা ঘোষ প্রমুখ।

Read More »