রহস্যময় এই পৃথিবীতে বহু রকমের ফল রয়েছে। এসব ফলের মধ্যে অনেক ফল রয়েছে যেগুলো বিচিত্রময়। এ রকম একটি বিচিত্র ফল এই খইয়ে বাবলা ফল। এই ফল দেখতে অনেকটা জিলাপির মতো পেঁচানো বলে একে জিলাপি ফল বলা হয়। কেউ কেউ আবার একে বলেন, খৈ ফল, আবার অঞ্চল ভেদে অনেকেই দখিনী বাবুলও বলে থাকেন। এর বীজ দেখতে শিমের বীজের মত এবং বীজের রং অনেকটা কালো। এর শাঁস পুরু, নরম, মিষ্টি ও কষাটে।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে আমার মামার বাড়ি। বাড়ির উত্তর পাশে ছিল বিশাল ফসলের মাঠ। মাঠের উত্তর পাশে দর্শা নদী। নদীর ধারে ছিল অনেক গারো উপজাতির মানুষের বসতি। পূর্ব দিকে যেখানে বসতির শেষ সেখানেই ছিল কয়েকটি খইয়ে বাবলা গাছ। ছোটবেলায় মামার বাড়ি গেলে পাড়ার ছোটরা মাঠে, নদীর ধারে ঘুরে বেড়াতাম আর খইয়ে বাবলার শাঁস খেয়ে খেয়ে মামার বাড়ি ফিরতাম।
এ গাছের দেহ সুন্দর পেঁচানো। গাছ কেটে ফেললেও এর গোড়া থেকে দ্রুত নতুন ডাল গজিয়ে যায়। চারটি উপপত্র পাতার গোড়ায় কাঁটা থাকে। পুরনো পাতা ঝরে দ্রুত নতুন পাতা গজায়। পাতা দেখতে অনেকটা কাঞ্চনের পাতার মত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Pithecellobium dulce, পরিবার Fabaceae। গ্রিক পিথেসেলোবিয়াম-এর অর্থ বানরের ফল আর লাতিন ডুলসি মানে মিষ্টি। এই ফল দুটি খোসার মধ্যে শাঁস ও বীজ গোলাকারভাবে মালার মত সাজানো থাকে। ফলে ৫-১০টি বীজ থাকে। প্রতিটি ফলে বীজদানা থাকে আট থেকে ১০টি। এই ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে কিন্তু পাকলে এর খোসা টকটকে লাল হয়ে ফেটে যায়। ভেতরের সাদা শাঁস বেশি পাকলে অনেক সময় তাতে লালচে দাগ পড়ে।
জিলাপি ফল গাছের কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখা লম্বা, এলোমেলো, বাকল ধূসর এবং চোখা কাঁটাযুক্ত। এর পাতা সবুজ এবং পাতা জোড়ায় জোড়ায় সংযুক্ত থাকে। এ গাছের ফুল আকৃতিতে বেশ ছোট। এর ফুল ফাল্গুনে ফোটে এবং চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এই ফল পাকে। জিলাপি ফলের বীজ থেকে সহজে চারা হয়। তবে নতুন গাছ সৃষ্টির জন্য এর শাখা কলমও ব্যবহার করা যায়।
আমেরিকা, মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা, ভারত ও বাংলাদেশে এ উদ্ভিদ দেখা যায়। ফিলিপাইনে এ গাছ প্রধানত ফলের জন্য আবাদ করা হয়। আমাদের দেশে এই ফল এমনিতেই হয়ে থাকে। তবে অনেকেই শখ করে বাড়ির চার দিকে, রাস্তার পাশে এ ফলের গাছ লাগিয়ে থাকেন। যশোর, খুলনা, বরিশাল, পুটয়াখালি ও ভোলায় যথেষ্ট পরিমাণ জিলাপি ফলের গাছ দেখা যায়।
এ গাছের ছাল আমাশয়, অবিরাম ডায়েরিয়া ও যক্ষ্মারোগের জন্য উপকারী। এর বীজ আলসারে আরাম দেয়। কফ নিঃসরণ ও পাতা পিত্তাশয়ের রোগে ব্যবহৃত হয়।
চিত্র : গুগল
প্রকৃতিপাঠ : বিলুপ্তপ্রায় কর্পূর গাছ
প্রকৃতিপাঠ: স্নিগ্ধ ছায়ার তমাল গাছ
প্রকৃতিপাঠ: দৃষ্টিনন্দন ও সুগন্ধী নাগলিঙ্গম
প্রকৃতিপাঠ: চিনেবাদাম চিনে নিন
প্রকৃতিপাঠ: তাহার নামটি রঞ্জনা
প্রকৃতিপাঠ: বসন্তের শ্বেত শিমুল
প্রকৃতিপাঠ: পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় বৃক্ষ ছাতিম