Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

জুতো

দশ বছর আগে আমার সেই চেন কাটা ব্যাগ, মড়া সাহেবের কোট নিয়ে দার্জিলিং যাওয়া। পায়ে সেই বিখ্যাত পুঁতি বেল্ট জুতো!

নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার বিদ্যা ভাল জানা থাকে, যাদের কিছু নেই। সুতরাং বলতে লাগলাম বেশি শীত একদম করছে না। তাছাড়া গরমের দেশের লোকেদের বিশেষ শীতবস্ত্র থাকে না। কতক্ষণ আর নিজেকে কাঁচা নির্জলা মিথ্যে শোনানো যায়। প্রথমে একটু একটু কাঁপুনি, চড়াই রাস্তায় উঠতে হাঁটু কাঁপছে। বুকের মধ্যেটা মনে হচ্ছে ফাঁকা বালির চর। চড় চড় করে বালি উড়ছে। মুখে একটা হাসি বজায় রাখতে প্রাণান্ত হচ্ছে। হাত দুটো মনে হচ্ছে মচমচে বিস্কুট এখুনি ভেঙে যাবে। বেইজ্জত ঠান্ডাটা উঠছে জুতো থেকেই। জুতোর একটা ক্যালকুলেটিভ তাপ থাকে। সেটা জায়গা বুঝে চরম হয়। চিরকাল জুতো আমায় স্থানমাহাত্ম্য চাখিয়েছে।

পাড়ার কালু নামকরা জুতোচোর। মঠ মন্দিরের ছড়াছড়ি এলাকায়, বিকেল নাগাদ গিয়ে চোখ বুজে, গম্ভীর স্তোত্রপাঠের মাঝখানে বসে পড়লেই হল। মাঝে মাঝে বুকে হাত, যেন ভক্তি টন টন করছে। তারপর পিটপিট করে দেখে নেওয়া লোকজন বেশ মজে এসেছে। টুক করে উঠে, বাইরে ডাঁই জুতো থেকে পছন্দ করে নাও। এই জুতোর নাম হল ধর্ম বাটা। ভাল মত কালেকশান হতে সপ্তাখানেক। তারপর কামারহাটিতে ভ্যান নিয়ে বসে যেত কালু।

মোচার খোলার মত একটা শুটকো রোগা পাম শু এক বিহারিকে ৯০ টাকায় গছিয়ে, আমার দিকে ঢুলু ঢুলু হাসল। তলা থেকে ঝেড়েঝুড়ে শাঁসালো বের করল একটা। একেবারে চুমকি চামেলি দেখতে। দার্জিলিং পাহাড়ে জ্বলছে তারার কুচি, আমার জুতোও জ্বলছে।

কিছুক্ষণের মধ্যে শ্বাসকষ্ট। ১৩১.৯ নর্টিকাল মাইল দূরত্ব থেকে ব্লিজার্ডের ঝাপটা এসে লাগছে যেন। ফুসফুসে ফুটো হয়ে গেছে। নিশ্বাস কোন ছিদ্র পথে ভস ভস বেরিয়ে যাচ্ছে।

ভুটানি পশমউলি অচেনা ভাষায় হাত নেড়ে কী সব বলতে লাগল। আমার কানে বহুদূর জলস্তর পেরিয়ে বৃষ্টির ছাঁটের মত ঝাপসা কথার ধাক্কা লাগতে লাগল।

বন্ধুরা খিল্লি মারতে ব্যস্ত থাকায় আমার ভগ্নদশা বুঝতে পারেনি। শীত যেন রোগা লম্বাটে নাছোর গেছোব্যাঙ, আঁকড়ে আছে। আমি অনুভব করছি কান দুটো ক্রমশ লম্বা হয়ে অনন্তের দিকে উঠে যাচ্ছে। ঘাড়ের ওপর শুঁয়োপোকা, আর ডেয়ো পিঁপড়ে হাত ধরাধরি করে পরামর্শ করছে।

আমার তো বরাবরই শুকনো পেছনে আকন্দের আঠা। যা সয় না, তাই সওয়াতে যাওয়া। দু-একবার বলার চেষ্টা করলেও তারা পাত্তা দেয়নি। নাটুকে বলে গাল দিয়েছে। ড্রামাবাজ বলে নাম ছিল এককালে।

সিলের ছাল ছাড়িয়ে, শুকিয়ে নিয়ে ফ্রক বানা… না না বল্গা হরিণের লেজের লোম দিয়ে ম্যাঙ্কি ক্যাপ কর একটা… ইত্যাদি বিবিধ কুটকুটে খিল্লি ভুতুড়ে অন্ধকারে কুয়াশার চুল উড়িয়ে ১৭০ টাকার টিউশানি করা আমার দিকে বরফের ছিটের মত আসছেই।

কাঁধে আমার স্টাইলের লেসের ফঙ্গবেনে মাফলার। মুখ হাঁ, চোখে ম্যালের টুনি, আর পপকর্নের ফোয়ারার ছায়া। চন্দননগরের লাইটিং মারা কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল আমি। আলোর হাসি একটু করে চওড়া হচ্ছে, আবার নিভে যাচ্ছে। আমি অভ্যস্ত হচ্ছি, মানিয়ে নিচ্ছি, আরও গভীর বাস্তববিগর্হিত সুড়ঙ্গপথে ঢুকে মানিয়ে নিচ্ছি। মাঝে মাঝে জুতো ঠুকছি অবাধ্য ঘোড়ার মত।

ওরা যাচ্ছে জলা পাহাড়ের দিকে। আকাশে উজ্জ্বল স্ফটিক তরঙ্গমালা! নক্ষত্রের বর্ণময় ফ্লুরোসেন্ট ডানা থেকে নামছে বেদম নাছোড় বিশীর্ণ জলবিন্দু। টাউটেরা ছেঁকে ধরে, “হ্যালো ম্যাম, ভেরি চিপ, বেস্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ।’’

পাকদণ্ডি পথে বড় বড় কমলার ঝুড়ি নিয়ে তিনটে ভুটানি ওভারটেক করে যায়। মাথার ভেতর ফাঁপা সাড়হীন, বিষন্ন বরফপোকা লাফায়, চিৎকার করে। অবসাদজনিত অসুখ আর আত্মহত্যার রমরমা এখানে। জুনিপার কাঠের ধোঁয়ার মধ্যে বসে কে এক ঘোটকের লেজে ছড় টেনে সুর বাজায়, খামখেয়ালি উড়ন্ত হাওয়ায়।

কিছু না থাকলেও অনেক কিছু জুটে যায়। কেউ লক্ষ্য করেছিল, চড়চড়ে হলদে আলোর মধ্যে আমায় কাশফুলের মত সাদা দেখাচ্ছে।

মাথায় বিচিত্র টুপি-সজ্জার হুড়োহুড়ি দেখি। কখনও ইতিহাস বইয়ের আকবর কখনও শিবাজির পাগড়িশোভিত সে কী বিবাগী হাসিময় টুপি।

গলিঘুঁজি ঘুরে কম পয়সায় থুকপা, খাদের ধারে কেঠো গুমটিতে কোঁচকানো চোখ চ্যাপ্টা নাক নেপালি বুড়ির মোমো খাই। পর্ক বিফ কিছু বাদ নেই, চিকেন মাটনের চেয়ে সস্তা।

দশ বছর আগেও পাতলা ক্যাম্বিসের জুতো থেকে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে থাকত অনিশ্চত। আর আমার পায়ের বদনাম। আমার নাকি সহনশক্তিহীন, ব্যাঁকা, দুর্বল অনিচ্ছুক পা। হায় রে! জুতোগুলো যে ভয়ংকর খারাপ। নইলে আমার ইচ্ছার শেষ নেই।

জুতোর ইতিহাস বড়ই করুণ আমার। পৌষের শেষ ধানকাটা মাঠ খড়ের চুটকি উঠে আছে। সুন্দরবনের বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ শুলো সর্বত্র। আমার পায়ে পুঁতি বসানো ধর্মতলার ফুটপাতের ৬০ টাকা দামের চটি। পিছিয়ে পড়ছি। ঘ্রাম ঘ্রাম করে বুটপরা ছেলেগুলো এগোচ্ছে।

‘‘কী রে!’’ বলে হুঙ্কার… “এত ল্যাদালে টি সি লিখবি কখন তুই!”

পায়ে লাগছে ভীষণ। সৌখিন ধর্মতলার ফুটের চটি বিষ হয়ে ফুটছে তখন। ওই যার কিছু থাকে না কেউ এগিয়ে আসে,
“নে নে খোল, ফ্যাল ওটা আমারটা পর।”

আর তুই কি পরবি পুঁতিওলা চটি!?

আমার আর একটা আছে।

দুটো জুতো! কী বড়লোক রে বাবা!

দার্জিলিংয়ে মুদি দোকানে শুকনো লঙ্কা কিনতে গেছি। একা একা আলু ভাতে মেখে, কেরোসিনের গন্ধভরা সংকীর্ণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে গ্লিনারিজ-এর কন্টিনেন্টাল দেখছি। খারাপ জুতো, পা স্টোস্ট বিস্কুটের মত কড়মড় করছে।

ওলংদাজুর কফির দোকানে নিভন্ত কাঠের উনুনে ম্যাগিও সেদ্ধ করতে দিয়েছে। ববমার্লের বিরাট ছবির নিচে কাঁচা কাঠ, গাঁজার ধূমায়িত অন্ধকারে টোকো কমলালেবু, ফ্রিতে কফি খাই। নেপালি বুড়ি চুটা ধরিয়ে, উনুনের নিচ থেকে বের করে এনেছে অল্প সেঁকা বিফ। পর্ক সসেজকে জলে সেদ্ধ করা লাল ঝোল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মত মোটা কালো চশমা পরা একটা লোক সসেজ বানায়। তার আতিথ্যে আমি ডিমের ঝুড়ির মত পুবে-পশ্চিমে বিস্তৃত হয়ে গেছি। ঝলসানো মরুভূমির মত কী রুটিয়াল হাসি তার! আগুনের পাশে আমি ঠান্ডা হাত-পাগুলো নিয়ে বসি। চার্চ বেলের শব্দ আরও সাইলেন্ট করে তোলে বুড়ির দোকান। বুড়ির সাকরেদ টুম থাপা দোকান বন্ধ করার জন্য উসখুস করছে। আমি তো গেঁড়ে বসেছি। আগুন ছেড়ে ওঠার অবস্থা ইচ্ছে কোনওটাই নেই। বন্ধুরা সোমরসে মত্ত হয়ে আর্ট ফিল্ম আর কমার্সিয়াল ফিল্ম, সাহিত্য-ফাহিত্য নিয়ে বিশ্রীরকম চেঁচামেচি করে এখন ঝিমোচ্ছে। থাপা বলছিল, সাহেবরা যখন প্রথম আলুবাড়ি আর লেবংয়ে চা বাগান করল, তখন তার নানা-দাদারা নেপাল থেকে এসে ভিড় করেছিল। ঠান্ডায় কড়া পরিশ্রম আর কম খাবারের জন্য অনেকেই টিবি হত। মাথায় ফেট্টি বেঁধে ভারী মাল বইত পাহাড়ে। পায়ে জুতো থাকত না অনেকের। বাঙালিরা কোনও দিন সমতল ছেড়ে চা বাগানে কাজ করতে এল না কেন কে জানে। অবশ্য বাঙালি ম্যানেজার অনেক আছে, পরিবার নিয়ে হিমেল রুপোলি নির্জনে বছরের পর বছর রয়েছে। সিকিমের সেই গোর্খা গ্রামই আজ দার্জিলিং। দোরজে লিং নামে তিব্বতি গুম্ফা ছিল তার নামেই গ্রামটার নাম।

থাপার দাদুর তিব্বতি জুতো পরে রাত করে হাঁটতে থাকি ম্যালে। পুরো পাটাই চামড়া পশম দিয়ে মুড়ে দড়িদড়া দিয়ে বেঁধে দিয়েছে।

উথাল মথিত শীত শীত কুয়াশার গন্ধ, চিকচিক জরিদার পাহাড়ের মাঝখানে গির্জার বেল মেপল আর পাইনের গুঁড়ি বেয়ে আমায় নিচের গহীন খাদের দিকে গড়িয়ে দেয়।

ক্রিসমাস আসছে, তারাগুলো যেন আকাশ থেকে নেমে এসেছে। রাতের মায়াবী ছায়ায় রহস্যময় পাইন বনে পড়ে ফেলে দিয়েছি কালুর ধর্মবাটা অনিশ্চিত জুতো। গোলাপি স্ট্র্যাপ, সাদা পুঁতি। কত জায়গায় যে জুতো ফেলে আসতে হয়েছে আমায়। ভুটান রাজার রাজবাড়ির পেছনে খাদের নীচে আজও পড়ে আছে আমার ধর্মবাটার জুতো। শিমুলতলায় লাট্টু পাহাড়ের নিচে দিলীপের চায়ের দোকানে বেঞ্চির তলায় ছেঁড়া হাওয়াই কে জানে আকাশের দিকে মুখ করে তারা গুনছে কিনা!

কঠিন, শীতল অনাবৃত, অদম্য, নিরানন্দ একঘেয়ে ঠান্ডা। মোবাইল জানাচ্ছে, তাপমাত্রা দুয়ের নিচে নামব নামব করছে।

হিমালয়ের সাত হাজার ফুটের ওপর আবছা বিচ্ছিন্নতা আমার মুড়ে নেয়। নিঃসঙ্গতা বেদনার সমুদ্র থেকে রঙিন মাছের ঝাঁকের মত ওপরে উঠে আসি। আরও ওপরে ভিজে পাহাড়ের দেওয়াল থেকে হিম জলবিন্দুর ভেতর সবুজ ফুঁড়ে ওঠে। ভাঁজ খুলে দেয়।

নেপালি ব্যান্ড বাজছে। কোলকাতার বাবু তার স্ত্রীকে বলে,
দ্যাখো দ্যাখো পেছনে কী?

স্ত্রী ঘুরে তাকায়, তার দাঁত বিস্ময়ে ঝুলে পড়ে। যেন বরফে স্ট্যাচু অব লিবার্টি গজিয়েছে।

বিন্দু বিন্দু সব খুশি জুড়ে হয়ে যায় আনন্দ! জুতো আমায় জুতিয়ে লাট করেছে। বুঝিয়েছে আলেকবাজি!

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

কচুরি

সাধু

কারখানা বিরিয়ানি

লিটল বুদ্ধ

বাংলা আওয়াজ

শেরপা

সবুজ মিডাসের ছোঁয়া

ঘুষ

মাদারি কা খেল

সিঁড়ি

ইসবগুল

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »