Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

আদালত ও মান্টো

‘একদিন সাহিত্য, শিল্পকলা সব সেনসার্ড হয়ে যাবে।’

‘বাই দ্য গ্রেস অফ আল্লাহ’ নামের একটি প্রবন্ধে বহুদিন আগেই এই অনুমান করেছিলেন, এই দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা ছোটগল্পকার সাদাত হোসেন মান্টো। অথচ নিজের জীবনে তাঁর মত আর কোনও লেখককে এত বিতর্কের মধ্যে পড়তে হয়নি, এমনকি আদালতেও নিজেকে নিজের জন্যে লড়তে হয়েছে। মান্টোর জন্ম ১৯০২ সালের ১১ মে, এবং মৃত্যু ১৯৫৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। তাঁর পুর্বপুরুষেরা আদতে কাশ্মীরের বাসিন্দা হলেও তাঁর জন্ম পাঞ্জাবের লুধিয়ানাতে।

জীবনে অবশ্য কাশ্মীর নিয়ে তাঁর খুব গর্ব ছিল, এমনকি নেহরুকে একটি চিঠিতে লেখেন, ‘being beautiful was the second meaning of being Kashmiri.’ তাঁকে ভারত ও পাকিস্তানে মিলিয়ে মোট পাঁচবার আদালতে অশ্লীলতার জন্যে অভিযুক্ত হতে হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ ভারতে ২৯২ ধারায় তিনবার ও স্বাধীন হওয়া পাকিস্তানের আদালতে দুবার।

তাঁর যে সব গল্পগুলি বিতর্কিত হয়েছিল সেগুলি হল, ‘কালি সালোয়ার’, ‘ধুঁয়া’ ( ধোঁয়া), ‘বু’ ( গন্ধ), ‘ঠান্ডা গোস্ত’( শীতল মাংস), ‘টোবা টেক সিং’, ‘তামাশা’, ‘খালি বোতল’ এবং ‘উপর, নিচে, অউর দারমিয়ান’। ‘কালি সালোয়ার’ গল্পের জন্যে তাঁকে মোট তিনবার দিল্লি থেকে লাহোরের আদালতে যেতে হয়েছিল। ‘ধুঁয়া’ ও ‘বু’ গল্পের জন্যে সেই সময়কার বম্বে থেকে লাহোর আদালতে যেতে হয়েছিল। কিন্তু মান্টোর নিজের কথায়, ‘‘ঠান্ডা গোস্ত’ নিয়ে হয়রানি সবাইকে ছাড়িয়ে গেল।’’

যদিও সেই সময় তিনি নিজে পাকিস্তানেই ছিলেন। তিনি এরপর আরও লেখেন, আদালত এমন একটি জায়গা যেখানে সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়। উনি একদিকে যেমন পুলিশদের পছন্দ করতেন না তেমনি অন্য দিকে তিনি প্রার্থনা করেছিলেন, ‘কাউকেই যেন আদালতে যেতে না হয়।’

এই বিচার সংক্রান্ত ঘটনার সূত্রপাত বেশ অদ্ভুতভাবে হয়। করাচির, ‘পায়াম-ই-মাসরিক’ নামে একটি পত্রিকা মান্টোর বিনা অনুমতিতে ‘উপর, নিচে, অওর দারমিয়ান’ নামে একটি ছোটগল্প লাহোরের ‘এহসান’ নামে আর-একটি পত্রিকা থেকে নিয়ে প্রকাশ করে দেয়। তার পরেই করাচি সরকার মান্টোর নামে সমন জারি করে। এই গল্পের সূত্র ধরে মান্টোর ঘরে পুলিশি অত্যাচার হয়। তাঁর লাইব্রেরির বেশ কিছু বই এমনকি পাণ্ডুলিপি নষ্ট করে দিলেও এই রাগ জমে থাকে ‘ঠান্ডা গোস্ত’-এর জন্যে। লেখাটির বিষয় ছিল একটি মৃত শরীরের সঙ্গে যৌনাচার (necrophilia)। বলা হয়, এই বিষয়ের সঙ্গে বর্বরতা ও দাঙ্গা-পরবর্তী সমাজের ঘটনাপ্রবাহকে মান্টো তাঁর ছোটগল্পে নিয়ে এসে ছিলেন তা সেই সময়কার পাকিস্তানের মৌলবাদীদের এক্কেবারেই পছন্দ হয়নি।

অন্যদিকে প্রথম থেকেই মান্টো জিন্নার মুসলিম লিগের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন, যার ফলস্বরূপ পাকিস্তানে মান্টোই প্রথম লেখক যাঁর বিরুদ্ধে সেখানে অশ্লীলতার জন্যে অভিযোগ হয়। মান্টো নিজে অবশ্য বলতেন, ‘আমি পর্ণোগ্রাফার নই, ছোট গল্পকার।’ এবং, ‘আপনারা যদি গল্পগুলি সহ্য করতে না পারেন তার মানে এই সমাজ অসহ্য।’ তার পরেও ভারত ও পাকিস্তান মিলিয়ে তাঁর এতগুলি গল্প অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিল, এবং দুই দেশেই ২৯২ ধারাতে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এই মামলাতে মান্টোর জেল না হলেও ফাইন হয়, যদিও মান্টো নিজে এই মামলার রায়টিকে তাঁর নিজের mental imprisonment বা intellectual jailed ভাবেন। এই মামলার পরেই মান্টোর মানসিক রোগ দেখা দেয়, এবং পাঁচ মাসের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়।

‘…that which is otherwise not lawful is made by necessity.’ এটি হেনরি ক্যাপটনের একটি উদ্ধৃতি যা পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল গোলাম মহম্মদ ও সেডিয়াকেলের জুরি মান্টোর একটি লেখা প্রসঙ্গে ব্যবহার করেন। সুপ্রিম কোর্টের একটি মামলায় মান্টোর বিপক্ষে রায় দেওয়া হলে ১৯৫৪ প্রধান বিচারপতি মান্টোর হয়ে অশ্লীলতার বিপক্ষে দেওয়া রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রায় দেবার সময় এই উদ্ধৃতি ব্যবহার করেন। এই বিচারে মান্টোর জেল না হলেও জরিমানা হয়। যদিও শোনা যায়, বিচারপতি কোর্টের মধ্যেই মান্টোকে সরাসরি বলেন, ‘মিঃ মান্টো, আমি মনে করি আপনি আমাদের সময়ে সবচেয়ে বড় লেখক। আমি চাই না, আপনার প্রতি আমার কোনও সহানুভূতি নেই, এমন মনে করেন।’ শোনা যায় পরবর্তী কালে বিচারপতি নিজেই মান্টোর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করবার কথা বলেন, এবং একটি কফির দোকানে তাঁদের নিজেদের মধ্যে কথা হয়।

এবার আসা যাক ‘ঠান্ডা গোস্ত’ গল্পটির কথায়। এটি প্রথমে পাকিস্তানে মান্টোর পরিচিত ‘নাকোশ’ (naqoosh) ম্যাগাজিনের সম্পাদক আহমেদ নাদীম কাসমি প্রকাশ করতে অস্বীকার করলেও পরে এই গল্পটি প্রকাশের জন্য পাঞ্জাব সরকার ম্যাগাজিনটিকে ছয় মাসের জন্য ব্যান করে দেয়, এমনকি বিভিন্ন জায়গায় গল্পটির বিরুদ্ধে লেখাও হয়। অন্য আর-একটি ম্যাগাজিন Adb-i-Ltif, এখানেও গল্পটিকে প্রকাশ করানোর চেষ্টা করা হলেও প্রুফ রিডিংয়ের পর গল্প ফেরত পাঠানো হয়। Naya Dau নামে অন্য আর-একটি পত্রিকাতে মমতাজ সিরিন গল্পটি প্রকাশ করবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে প্রাথমিকভাবে মান্টো গল্পটি কোথাও না প্রকাশ করবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। পরবর্তীকালে সম্পাদক আরিফ আব্দুল মার্টিন একটি ম্যাগাজিনে এই গল্পটি প্রকাশ করেন ১৯৪৯ সালে। প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পত্রিকাটি পরিচিতি পায়, জনপ্রিয়তাও অর্জন করে, মান্টোর প্রাথমিক চিন্তা কাটে। ঘনিষ্ঠ মহলে বলে ফেলেন, ‘যাক আর কোনও চিন্তা নেই।’

এই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই পাকিস্তান সরকারের প্রেস ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে চৌধুরী মহম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় ওই ম্যাগাজিনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। বাজার থেকে জোর করে ম্যাগাজিনের সমস্ত সংখ্যা তুলে নেওয়া হয়। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই এই ম্যাগাজিন ও গল্পটি পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ পড়তে পারবেন কিনা সে বিষয়ে বোর্ড গঠিত হয়। বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক সেই বোর্ডে থাকেন, তবে কোনও রকম সিদ্ধান্ত না নিতে পারবার জন্য পুরো বিষয়টি আবার আদালতে যায়। খুব অল্পদিনের মধ্যেই পত্রিকা গোষ্ঠীর কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। কোর্টে এই মামলার সাক্ষী হিসাবে কাশ্মীরের শিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তন ডিরেক্টর খালিফা আব্দুল হাকিম, আহমেদ সাহিদ, লাহোরের ডয়াল সিং কলেজের মনোবিদ্যার প্রফেসর প্রমুখদের ডাকা হয়।

এই কেস চলবার সময় একদিন একটা ভারি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। মান্টোর উকিল তাসাদ্দাক হোসেন উপস্থিত না থাকবার জন্যে মান্টো নিজেই একদিন সওয়াল করেন। আসলে মান্টোর গল্পের বিরুদ্ধে প্রধান যে অভিযোগ ছিল তা হল, গল্পে অপবিত্রতার অতিরিক্ত ব্যবহার। যদিও এক উকিল ডক্টর সিজাউদ্দীন মান্টোকে ‘জীবনের চিত্রকর’ বলেন। এমনকি একদিন কোর্টে মান্টোর হয়ে কোনও উকিল উপস্থিত হতে না পারলেও পরবর্তী কালে একদিনে চার জন জুনিয়র উকিল মান্টোর হয়ে কোর্টে দাঁড়ান। সবচেয়ে ভাল কথা, এতসবের পরেও মান্টোর জেল না হয়ে জরিমানা হয় ও অনাদায়ে আরও একুশ দিনের জেলের সাজা পান। বাকি দুজন প্রকাশক ও সম্পাদকের জরিমানা হয়। ১৯৫০ সালে এনায়েতুল্লা খান মান্টোর দেওয়া ফাইন ফিরিয়ে দেবার কথা বলেন। এই ট্রায়ালের ওপর মান্টোর নিজেরও লেখা বই আছে। যদিও মান্টোকে মুক্তি দেবার কিছু দিন পরেই পাঞ্জাবের সরকার আবার আপিল করে।

দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক মান্টোকে কোনও দেশের কোনও সরকারই সেই অর্থে কোনও সম্মান দেয়নি। শুধুমাত্র তাঁর পঞ্চাশতম মৃত্যু বছরে একটা ডাক টিকিট প্রকাশ করে লেখা হয়, ‘পাকিস্তানের লেখক।’ আমাদের কাছে দুঃখের কথা হল, আমরা কেউই মান্টোর মূল্যায়ন করতে পারিনি। মান্টোকে একবার প্রশ্ন করা হয়, ‘এই যে ভারত পাকিস্তান ভাগ হল, এত হিন্দু, এত মুসলমান মারা গেল আপনি কীভাবে দেখছেন?’ উত্তরে মান্টো বলেন, ‘আমি দেখলাম এতজন মানুষ মারা গেল।’ আজকের এই অস্থির যুগে আমাদের বার বার করে মান্টোকে স্মরণ করতে হবে।

ঋণ: মান্টো ও অশ্লীলতা- ঋভু চট্টোপাধ্যায়, দুর্বাসা পত্রিকা শীত ও বইমেলা সংখ্যা, ২০২০। এবং আরও বেশ কিছু পত্রপত্রিকা ও ই’ম্যাগাজিন।

চিত্র: গুগল
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

আষাঢ়স্য প্রথম দিবস ও কালিদাস

পণ্ডিতেরা তর্ক তুলেছেন, কালিদাস ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবস’ লেখেননি৷ কেননা একেবারে পয়লা আষাঢ়েই যে মেঘ নেমে বৃষ্টি আসবে, তা হয় না। তাঁদের মতে, ওটা আষাঢ়ের শেষদিন, ‘আষাঢ়স্য প্রশম দিবস’ হবে। কিন্তু প্রথম দিবস-ই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। এবং তা এতটাই যে, কালিদাসকে নিয়ে ভারত সরকার যে ডাকটিকিট বের করেছে, সেখানে ‘আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে’ শ্লোকটি উৎকীর্ণ।

Read More »
রূপকুমার দাস

রূপকুমার দাসের কবিতাগুচ্ছ

পড়তি বিকেলে আলতা রং রৌদ্রের রক্তিম ইজেলে,/ লজ্জারাঙা মুখ হত তরতাজা বসরাই গোলাপ।/ এখন ঈশানের মেঘপুঞ্জ ঢেকে দেয় সব কারুকাজ।/ বারুদের কটু ঝাঁঝে গোলাপের গন্ধ উবে যায়।/ নক্ষত্রের আলো কিংবা জ্যোৎস্নার ঝর্নাধারা নয়,/ বজ্রের অগ্নিঝলকে ঝলসে যায় উদভ্রান্ত চোখের নজর।/ হৃদয়ের ক্যানভাসে এঁকে রাখা আরাধ্যার চিত্রলেখা,/ অজানা শংকায় ডুবে যায় অন্ধকার সমুদ্রের জলে।/ সে সমুদ্র তোলপাড় লবেজান আমি তার পাই না হদিস।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সোমেন চন্দ: এক বহ্নিময় কথাকার

মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি একটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যদিও তা অসমাপ্ত থাকে। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘বন্যা’। পরবর্তীকালে উপন্যাসটি অসমাপ্ত-ই থেকে যায়। আরও দুঃখের বিষয়, এর বৃহদংশ হারিয়েও গেছে। আজ যে সোমেন চন্দের লেখককৃতির জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করি, তা হল তাঁর বেশ কিছু অসামান্য ছোটগল্প। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, মাত্র চব্বিশটি। আরও কিছু গল্প লিখলেও তা কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। গল্পের সংখ্যা সামান্য, তবে অসামান্যতা রয়েছে সেগুলির রচনার পারিপাট্যে, বিষয়বস্তু চয়নে, শিল্পিত প্রকাশে ও লেখনীর মুনশিয়ানায়। এছাড়া তিনি দুটি নাটিকাও লেখেন, ‘বিপ্লব’ ও ‘প্রস্তাবনা’। লেখেন কিছু প্রবন্ধ। তাঁর ছোটগল্পগুলি এতটাই শিল্পোত্তীর্ণ ছিল যে, তাঁর জীবিতকালেই একাধিক ভাষায় তা অনূদিত হয়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »