Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

হে মহাজীবন, আর এ তত্ত্ব নয়

‘জন্মভূমি আর মাতৃভাষা— যে কোনো মানুষের এই দুটি পরিচয় তার জীবনের সঙ্গে শক্ত গাঁটে বাঁধা, কোনোভাবেই সে গাঁট খোলা যায় না। মানুষ ধর্ম পাল্টাতে পারে, নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশের নাগরিক হতে পারে, পোশাক-আশাক, হাঁটাচলার ধরনধারণ সব বদলে ফেলতে পারে, এমনকি আদালতে গিয়ে নাম-পদবিও পাল্টাতে পারে। আগের মানুষটিকে তার ফলে আর চেনাই যাবে না। কিন্তু বদলানো যায় না ঐ দুটি ব্যাপার: জন্মভূমি আর মাতৃভাষা।’

‘জন্মভূমি আর মাতৃভাষা নিয়ে যে আবেগ দেখা যায় সেটি সর্বদাই সৎ ও শুদ্ধ— যদি না অন্য কারুর জন্মভূমি বা মাতৃভাষা নিয়ে কোনো ব্যঙ্গ বা হিংসের ভাব তার মধ্যে থাকে। প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে নিজের জন্মভূমি আর মাতৃভাষা নিয়ে গৌরব বোধ করার।… অন্য লোকের জন্মভূমি আর মাতৃভাষাকে অশ্রদ্ধা করলে নিজের জন্মভূমি আর মাতৃভাষাকেই অপমান করা হয়।’

‘গত কয়েক দশকে মাঝে মাঝেই দেখা গেছে…, কিছু লোক ভীষণ উত্তেজিত হয়ে বিলাপ করছেন এই বলে যে, পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতে বাংলাভাষার অবস্থা নাকি নিদারুণ খারাপ, তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।… এইসব বিলাপবিলাসীদের দেখে মায়া হয়।’

[কারণ এখনও কুড়ি কোটির ওপর লোক বাংলা ভাষায় কথা বলেন, বাংলায় লেখেন। বাংলায় অজস্র বই-পত্রিকা নিয়মিত লেখা হয়। সামাজিক মাধ্যমে বাংলাও খুব চলে।]

কথাগুলি রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যর। যে প্রবন্ধে কথাগুলি লেখা হয়েছে তার নাম, ‘২১শে ফেব্রুয়ারির চিন্তা’। প্রবন্ধটি সংকলিত হয়েছে তাঁর বই, ‘খোলা চোখে খোলা মনে’-তে। বিভিন্ন বিষয়ে রামকৃষ্ণবাবুর লেখা উনিশটি ছোট প্রবন্ধর সংকলন এই বইটি। সবক’টিই স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। তবু কতগুলি আলাদা উল্লেখের দাবি রাখে।

যেমন টেরি ইগলটন-এর বই ‘আফটার থিওরি’ নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত মূল্যবান প্রবন্ধ, ‘হে মহাজীবন, আর এ তত্ত্ব নয়’। আধুনিকোত্তর বা পোস্ট-মর্ডানিস্ট তত্ত্বগুলিকে আসলে পুঁজিবাদ নিজেদের স্বার্থে চমৎকার ব্যবহার করেছে। এই তত্ত্বগুলি মূল অর্থনৈতিক প্রশ্নগুলিকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যেহেতু পোস্টমর্ডানিস্টরা আর্থিক প্রশ্নগুলোকে ততটা গুরুত্ব দেন না তাই পুঁজিবাদ এঁদের স্বাগতই জানিয়েছে। আর সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন একদল বামপন্থীও। শুধু আর্থিক সমস্যা নয়, জাতীয়তাবাদকেও লঘু করে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে।

‘জাতীয়তাবাদের মধ্যে তাঁরা দেখতে পান শুধুই উগ্র স্বাজাত্যবোধ বা জনগোষ্ঠীগত আধিপত্যবাদ। শ্রেণী ও জাতির জায়গায় এখন এসেছে এথনিসিটি, প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। এর ফলেই উপনিবেশ-উত্তর জগতের প্রশ্ন কার্যত রাজনীতিবিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এথনিসিটি তো অনেকটাই সংস্কৃতির বিষয় তাই ফোকাসটাও সরে গেছে রাজনীতি থেকে সংস্কৃতিতে। আর্থিক বৈষম্য, শ্রমিকদের সংগ্রাম— এগুলো আর কোনো সমস্যা নয়। অথচ তথাকথিত ভুবনায়নের যুগেও বড়লোকরাই গ্লোবাল, যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারে; গরিবরাই লোকাল, নিজের দেশ ছেড়ে নড়ার সুযোগ নেই।’

ইগলটন কিন্তু দেখিয়েছেন, ‘কমিউনিজমই ছিল প্রথম ও একমাত্র রাজনৈতিক কর্মসূচি যাতে নানা ধরণের প্রভুত্ব ও শোষণ (শ্রেণী, লিঙ্গ ও উপনিবেশবাদ)-এর পারস্পরিক সম্পর্ক লক্ষ্য করা হয়েছিল; এগুলির অবলোপ না করতে পারলে কোনোটির থেকেই মুক্তি সম্ভব নয়— এও জানা ছিল। লুই আলতুসে, রলাঁ বার্ত, জুলিয়া ক্রিস্তেভা, জাক দেরিদা— এঁরা সবাই ছিলেন বামপন্থী শিবিরের লোক। মার্কসবাদের সঙ্গে তাঁদের গ্রহণ-বর্জন মেলানো একটা সম্পর্ক ছিল। পরে সকলেই অল্পবিস্তর ঘুরে গেলেন।’

আর-একটি খুব কাজের প্রবন্ধ, ‘উনিশ শতকের বাংলায় যুক্তিবাদ…, নানা ধারা’। এই প্রবন্ধের দেড়খানা লাইন দাগিয়ে দিতে চাই, ‘যুক্তিবাদ কোনো স্বয়ংসম্পূর্ণ দর্শনতন্ত্র নয়। বিচারমূলক চিন্তার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক মাত্র।’ অত্যন্ত দামি কথা। শুধু যুক্তিবাদী হলে কিছুই হয় না, কোনও চিন্তা বা কাজে সেই যুক্তিবাদকে ব্যবহার করা হচ্ছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুব প্রতিক্রিয়াশীল মানুষও যুক্তিবাদী, কুসংস্কারমুক্ত, নাস্তিক হতে পারেন। এই লেখায় যুক্তির জন্যে যুক্তি বা তর্ককৈবল্য নিয়ে মজার গল্প আছে, ‘বৈষ্ণবদের মধ্যে তর্ক ছিল: স্বকীয়া ভালো না পরকীয়া ভালো। কোনো এক তর্কসভায় নাকি পরকীয়াপন্থীদেরও জয় হয়েছিল। স্বকীয়াপন্থীরা হেরে গিয়ে জয়পত্র লিখে দিয়েছিলেন।’

উনিশ শতক যখন, তখন তো বিদ্যাসাগর, রামমোহন, বঙ্কিমচন্দ্রর কথা আসবেই। রামমোহন এবং বিদ্যাসাগর যখন যথাক্রমে সতীদাহ বন্ধ আর বিধবা-বিবাহ চালু করার জন্যে লড়েছিলেন তখন কিন্তু ‘মানবতা, স্বাভাবিক ন্যায়বিচার, স্ত্রী ও পুরুষের ক্ষেত্রে একই বিধিবিধান’ এইসব শাশ্বত যুক্তির ধারবাড় দিয়ে যাননি। তাঁরা ছিলেন কাজের মানুষ, জানতেন কাজ হাসিল করতে গেলে সে-সময় ধর্মের রেফারেন্সই শেষকথা। তাই রামমোহন ‘মনুসংহিতা’-য় সতীদাহর কথা নেই, ‘মনুসংহিতা’-ই শ্রেষ্ঠ তাই সতীদাহ রদ করার আইন হোক— এই পথে চলেছিলেন। আর বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, ‘পরাশর-সংহিতা’ হল কলিকালের ধর্মশাস্ত্র। সেখানে বিধবাদের বিবাহের বিধান আছে তাই তার আইন প্রণয়ন হোক। এই প্রবন্ধে রামমোহনের ফার্সি রচনা, ‘তুহফত্‌-উল-মুওয়াহিদ্দিন’ (একেশ্বরবিশ্বাসীদিগকে উপহার) নিয়ে কিছু কথা আছে। রামকৃষ্ণবাবু লিখছেন,

‘‘এই বইতে রামমোহন অনেক মৌলিক বক্তব্য রেখেছিলেন। যেমন: ‘কোনো বিষয়ে পার্থক্য না করে বলা যায় যে সকল ধর্ম্মে সাধারণভাবে কিছু কিছু ভ্রান্তি রয়েছে’ অলৌকিক-এর আড়ালে অসত্য ও অন্যায়ের প্রচার চলে; ধর্মর নামে নির্যাতন ও নরহত্যা পার পেয়ে যায়, ইত্যাদি। যুক্তিবাদ-এর সার্থকতা, সম্ভব ও অসম্ভব তর্ক, অতীতকালের ঐতিহ্য ও আধুনিক প্রমাণ আর ধর্মগ্রন্থর কিংবদন্তী আর ঐতিহাসিক সমালোচনার উপযোগিতা দিয়ে সন্দর্ভটি শেষ হয়।”

এবং বঙ্কিমচন্দ্র। যতই নিজের অবস্থান বদল করুন না কেন বঙ্কিমচন্দ্র যৌবনে ছিলেন পজিটিভিস্ট। পরে চরম ভাববাদী লেখা লিখতে গিয়ে সেই চিন্তাকাঠামোর বাইরে বেরোতে পারেননি। বঙ্কিমচন্দ্রর ভাববাদী লেখাগুলো তাই খুঁটিয়ে পড়লে ভাববাদ বিরোধিতার অনেক অস্ত্র পাওয়া যায়। শুধু শিক্ষিত শিরোমণি মানুষরা নন, উনিশ শতকে সাধারণ অনেক মানুষের মধ্যেও যুক্তিবাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই প্রবন্ধে বাড়তি পাওনা উনিশ শতকের এমন তিন যুক্তিবাদী গোকুলচন্দ্র কারফরমা, দুর্গাপ্রসাদ মিত্র ও গুরুদাস সরকারদের নিয়ে আলোচনা।

অক্ষয়কুমার দত্তর ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ রয়েছে বইতে। অক্ষয়কুমার দত্ত ধর্মবিশ্বাসকে মানসিক রোগ বলে মনে করতেন। আর সম্ভবত এই মানসিক রোগের কারণ খুঁজে বার করতে ভারতের ১২৮টি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সম্বন্ধে তথ্য যোগাড় করে এই ঐতিহাসিক বইটি তিনি লিখেছিলেন।

‘গীতা’ নিয়ে দুটি প্রবন্ধ আছে ‘খোলা চোখে খোলা মনে’ বইটিতে। ধর্মতাত্ত্বিক দিক থেকে গীতা আদতে এক বিস্বাদ খিচুড়ি। ব্রাহ্মণ্য ধর্মে তিনটে জল-অচল কামরা আছে, কর্মকাণ্ড, জ্ঞানকাণ্ড আর ভক্তি। ও তিনে মেলে না। কিন্তু ‘গীতা’-য় তিনটেই স্বীকৃত। বেদস্তুতি চান? ‘গীতা’-য় পাবেন। বেদনিন্দা চাই? তা-ও ‘গীতা’-য় আছে। ‘গীতা’ অনুযায়ী চার ধরনের লোক কৃষ্ণর কাছে আসতে পারেন, আর্ত (বিপদগ্রস্ত), জিজ্ঞাসু (তত্ত্বজ্ঞান-ইচ্ছুক), অর্থার্থী (টাকাকড়ি পেতে চান) আর, জ্ঞানী। কেন সবেতেই এমন মিলিঝুলির বন্দোবস্ত রয়েছে ‘গীতা’-তে? যাগযজ্ঞ আর ব্রহ্মচিন্তা দুই-ই জায়েজ। জ্ঞানী আর টাকাকড়ির প্রত্যাশীর মধ্যে কোনও ভেদ নেই। সেই সূত্রেই এসেছে এক বাঙালি বৈদান্তিক সন্ন্যাসী সোহং স্বামী (প্রথম জীবনে বিখ্যাত ব্যায়ামবীর ‘ব্যাঘ্র বশকারী’ শ্যামাকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়)-র লেখা একটি গীতাভাষ্যর কথা। সোহং স্বামী বাংলা বলে দিয়েছিলেন, কৃষ্ণ ছিলেন এক শক্তিশালী রাজা। তিনি নিজেকে দেবতায় উন্নীত করে পুজো পেতে চাইলেন। নতুন করে ভক্ত যোগাড় করতে হবে তাই সকলের জন্যে অবারিত দ্বার। ‘গীতা’ হল আদতে নরপূজার উদ্দেশ্যে লেখা একটি বই।

বিবিধ বিষয়ে আরও নানান গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ আছে বইটিতে, যেমন ‘বাঙালির পড়াশোনা: সেকাল একাল’, ‘গ্রন্থাগারের সামাজিক ভূমিকা’, ‘সহিষ্ণুতা অসহিষ্ণুতা’ (ইতিহাসের আলোয় ধর্মের ব্যাপারে), ‘বিরাট-এর অনুভূতি’ ইত্যাদি।

বইটি শুধুই সংগ্রহযোগ্য নয়, কাজের দিশারীও বটে।

খোলা চোখে খোলা মনে।। রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য।। ঋতবাক

সুকুমার অনুরাগীরা প্রবন্ধগুলি পড়লে উপকৃতই হবেন

‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ’ বিকৃতি, চার্বাকদের হেয় করতে

মার্কসীয় নন্দনতত্ত্ব কোন মাপকাঠিতে শিল্পসাহিত্যকে বিচার করে

শুধুই প্রকৃতিপ্রেমী নন, বাস্তববাদেরও নিখুঁত শিল্পী বিভূতিভূষণ

ধর্ম কেন নিজেকে ‘বিজ্ঞান’ প্রমাণে মরিয়া

‘গালিলেও-র জীবন’-কে যেভাবে দেখাতে চেয়েছেন বের্টল্ট ব্রেশট্

ভারতের ঐতিহ্যের অন্যতম শরিক বস্তুবাদী চার্বাক দর্শন

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের এক বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »
দীপক সাহা

বন্দুকের মুখে দাঁড়িয়ে ইতিহাসকে লেন্সবন্দি করেছেন সাইদা খানম

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে উপমহাদেশের বিখ্যাত প্রায় সকল ব্যক্তিত্ব— ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ইন্দিরা গান্ধী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী, বেগম সুফিয়া কামাল, মৈত্রেয়ী দেবী, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আশাপূর্ণা দেবী, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়— কার ছবি তোলেননি! সেই সঙ্গে রানি এলিজাবেথ, মাদার টেরেসা, মার্শাল টিটো, অড্রে হেপবার্নের মতো বিখ্যাত মানুষদের ছবিও তুলেছেন। এই বিশাল তালিকায় আরও তিনটি নাম যুক্ত করে না দিলে অন্যায় হবে। চন্দ্রবিজয়ী নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিনস, মাইকেল কলিন্সের ছবিও তুলেছেন তিনি।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

মামলায় জয়ী হয়ে থোড় কুঁচি দিয়ে কালীর আরাধনা করেন জমিদার-গিন্নি

দেবী কালিকার খড়ের মেড় দেখে মজুমদার গিন্নি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, মামলার রায় যদি তাঁদের পক্ষে যায় তাহলে কলাগাছের থোড় কুঁচো দিয়ে হলেও জগজ্জননী মা মহাকালীর পুজো করা হবে, আর যদি মামলার রায় তাঁদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে ওই খড়ের মেড় দামোদরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। যদিও সেদিন দুপুরের মধ্যেই আদালত থেকে মজুমদার জমিদার পক্ষের জয়লাভের খবর পৌঁছেছিল থলিয়ার মজুমদার বাড়িতে। মজুমদার-গিন্নিও অক্ষরে অক্ষরে তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। মামলায় জয়লাভের খবর পাওয়া মাত্রই জমিদার-গিন্নির নির্দেশে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দীপাবলি উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায়।

Read More »