Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মার্কসীয় নন্দনতত্ত্ব কোন মাপকাঠিতে শিল্পসাহিত্যকে বিচার করে

একটি নাটক দেখলুম। গ্রুপ থিয়েটার। হাসির নাটক। বেশ ভাল অভিনয় মঞ্চ আলো ইত্যাদি। নাটক দেখে চায়ের দোকানে চা খাচ্ছি। দুজন ভদ্রলোকও সেখানে চা খাচ্ছিলেন। তাঁরা নাটক দেখে একেবারেই খুশি নন। প্রযোজনা বেশ ভাল হলেও নাটকটি কোনও মেসেজ দিতে পারেনি— এই হল তাঁদের বক্তব্য। বোঝা গেল, যে শিল্পসাহিত্যে কোনও মেসেজ নেই সেগুলি তাঁদের পছন্দ নয়।
আবার আমার চেনা এক কবিতা-পাঠক একটি দুর্বোধ্য কবিতা পড়ে কবিকে সেই কবিতার মানে জিগেস করেছিলেন। কবিমশাই চটে বলেছিলেন, ‘আমি কবি, মানে-বই নই। আমার কাজ হল সৃষ্টি, সেটা করেছি। আপনি কী বুঝবেন না বুঝবেন সেটা আপনার ওপর।’ তার অর্থ, সেই কবিমশাই শিল্পর জন্যেই শিল্প রচনা করেন। কোনও উদ্দেশ্য তাঁর নেই।
হালে শুধুই বিনোদনের জন্যেই শিল্পসৃষ্টির পক্ষে অনেকেই ওকালতি করছেন। শিল্পসৃষ্টির কোনও উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। আবার এমন অনেকেই আছেন, যে শিল্পসাহিত্যে দিনবদলের কথা, মানুষের দুঃখদুর্দশার কথা নেই সেগুলিকে তাঁরা শিল্পসাহিত্য বলেই মনে করেন না। আসলে শিল্পসাহিত্যর স্রষ্টা এবং যাঁরা সেগুলির দর্শক, শ্রোতা বা পাঠক তাঁদের নান্দনিকবোধের ওপরেই নির্ভর করে কোনও শিল্পসাহিত্যর বিচার। তাহলে কোনও শিল্পসাহিত্য দেখে শুনে বা পড়ে ব্যক্তির নান্দনিক প্রতিক্রিয়া একটি স্বীকৃত বিষয়। বিশেষ থাকলে সাধারণও থাকতে হবে। তবে তো একটা নির্দিষ্ট চিন্তাকাঠামোকে কেন্দ্র করে যাঁরা ভাবেন তাঁদের একটা সাধারণ নান্দনিকবোধ থাকতেই পারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কসীয় নন্দনতত্ত্ব বলে কিছু কি হতে পারে? মার্কস বা এঙ্গেলস সাহিত্যতত্ত্ব বা শিল্পতত্ত্ব নিয়ে খুব বিশদে তো কিছু বলে যাননি। বিভিন্ন লেখায় বা চিঠিপত্রে টুকরো-টাকরা মন্তব্য অবশ্য আছে। তার ভিত্তিতে কি কোনও মার্কসীয় নন্দনতত্ত্ব গড়ে তোলা যায়? উত্তর হল, অবশ্যই যায়। কারণ মার্কসবাদ কোনও ডগমা নয়। মার্কসবাদ বেদ কোরান বা বাইবেলের মত অভ্রান্ত ও পবিত্রতার দাবি করে না। তাই মার্কস-এঙ্গেলস যেসব বিষয়ে বিশদে কিছু বলেননি তা নিয়ে কিছু বলা যাবে না এমনটা নয়। মার্কসবাদ আসলে একটি পদ্ধতি। সেই পদ্ধতি কাজে লাগিয়েই সব কিছুর ব্যাখ্যা ও বিচার সম্ভব, শিল্পসাহিত্যর বিচারও সম্ভব। গেওর্গ লুকাচ মার্কসীয় নন্দনতত্ত্ব নিয়ে যুগান্তকারী কাজ করেছেন। মার্কসীয় পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে বের্টল্ট ব্রেশট নিজের মত করে এক নন্দনতত্ত্ব গড়ে তুলেছেন। বাংলায় এ নিয়ে তেমন কাজ হয়নি। সম্প্রতি রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য একটি অসাধ্যসাধন করেছেন। তিনি বাংলায় দুটি পর্বে একটি বই লিখেছেন, ‘মার্কসীয় নন্দনতত্ত্ব’। এই বইতে তিনি মার্কসীয় নন্দনতত্ত্বর একটি সুস্পষ্ট রূপ দিয়েছেন, শিল্পসাহিত্যর বিভিন্ন ক্ষেত্র ধরে ধরে বিশদে আলোচনা চালিয়েছেন, মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে কীভাবে সেগুলির বিচার করা যায়।
লেখক প্রথম পর্বের গোড়াতেই মার্কস-এর বিভিন্ন মন্তব্যর ভিত্তিতে মার্কসীয় নন্দনতত্ত্বর একটি খসড়া খাড়া করেছেন। সেটির গোড়ার কথা হল:
১. মানুষ উৎপাদনশীল,
২. শারীরিক প্রয়োজন মেটানো ছাড়াও অন্য উদ্দেশ্যেও সে নানা জিনিস গড়ে,
৩. শিল্প-সাহিত্য তারই ফল,
৪. তার ভেতর দিয়েই প্রকাশ পায় তার মানবিক সত্তা,
৫. শিল্প উপভোগ আর শিল্পসৃষ্টি— দুয়েরই পেছনে থাকে পরিকল্পনা ও চর্চা,
৬. এই সবের ভেতর দিয়ে গড়ে ওঠে, বিকশিত হয় ‘সুন্দর’ সম্পর্কে মানুষের বোধ।

মার্কসীয় নন্দনতত্ত্বর প্রথম কথা হল শিল্পসাহিত্য হল এক ধরনের উৎপাদন। মানসিক উৎপাদন। ‘জৈব প্রয়োজন মেটার পরেই আসে মানসিক প্রয়োজনের কথা— সেখান থেকেই মানুষের আসল পরিচয় শুরু।’ বইটি শুরুই হয় এইভাবে,
“তরুণ মার্কস-এর লেখার একটি অংশ দিয়ে শুরু করা যাক:
‘প্রাণীরাও অবশ্যই উৎপাদন করে। মৌমাছি, বীভর, পিঁপড়ে ইত্যাদির মতো তারা বাসা, আস্তানা বানায়। কোনো প্রাণী কিন্তু উৎপাদন করে একমাত্র তখনই যখন সেটি তার নিজের বা তার বাচ্চাদের আশু প্রয়োজন হয়। শুধু আশু শারীরিক চাহিদার ক্ষেত্রেই সে উৎপাদন করে; অন্যদিকে মানুষ যখন শারীরিক চাহিদাগুলি থেকে মুক্ত, এমনকি তখনও সে উৎপাদন করে, আর একমাত্র সেগুলি থেকে মুক্ত অবস্থাতেই সে আসল উৎপাদন করে।’
এইভাবে মানুষ আর অন্য প্রাণীর মধ্যে তফাত করে মার্কস শেষে লেখেন:
‘মানুষ তাই সৌন্দর্যর সূত্রাবলি অনুযায়ী নানা জিনিস গড়ে।’”
শিল্পসাহিত্যকে উৎপাদন বললে একটা ধাক্কা লাগতে পারে। উৎপাদন বললেই তো কারখানার কথা মনে পড়ে। শিল্পসাহিত্য হল মানসিক উৎপাদন। অবশ্য মানুষের কোন উৎপাদন মানসিক উৎপাদন নয়? মার্কস-এর কথায়,
“মাকড়সা যে প্রক্রিয়ায় কাজ করে তার সঙ্গে তাঁতীর কাজের সাদৃশ্য আছে, এবং মৌমাছি তার মৌচাক নির্মাণের কারিগরীতে অনেক স্থপতিকেই লজ্জা দেয়। কিন্তু সর্বশ্রেষ্ঠ মৌমাছির থেকেও সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থপতির তফাৎ এখানেই যে স্থপতি প্রথমে কল্পনায় তার ইমারত গড়ে তোলে। প্রত্যেক শ্রম-প্রক্রিয়ার শেষে আমরা যে ফল পাই, সূচনার আগেই সেটি শ্রমিকের কল্পনার মধ্যে ছিল।”
উৎপাদনের প্রাথমিক শর্তগুলো শিল্পসাহিত্যও পূরণ করে। যেমন শিল্পসাহিত্যর জন্যেও শ্রমের প্রয়োজন, মানসিক এবং শারীরিক শ্রম দুই-ই। একজন কবি বা চিত্রকর তাঁর মাথা ঘামিয়েই ছন্দ মেলান, অলীকসুন্দর ভাব রচনা করেন, নৈসর্গিক রং ফুটিয়ে তোলেন। মাথা তো শরীরের বাইরে নয়, তাই এই কাজও এক বিশেষ ধরনের শ্রম। তেমনই লেখার জন্যে কাগজ কালি চাই, আঁকার জন্যে রং তুলি ক্যানভাস চাই, সুরের জন্যে বাদ্যযন্ত্র চাই, নাটকের জন্য মঞ্চ বা আলো চাই। এগুলো তৈরি করতে শিল্পী-সাহিত্যিক ছাড়াও বহু লোকের শ্রমের প্রয়োজন হয়। আবার অন্যান্য উৎপাদনের মতই শিল্পসাহিত্যরও একটা ব্যবহারিক মূল্যও আছে। কোনও শিল্পসাহিত্য সৃষ্টি হিসেবে তখনই স্বীকৃতি পায় যখন তাঁর একজন হলেও দর্শক শ্রোতা বা পাঠক জোটে। কেবল শিল্পী যদি একাই নিজের সৃষ্টির কথা জানেন আর কেউ যদি না জানেন তবে সে সৃষ্টি শিল্পসাহিত্যর মর্যাদা পায় না। এখন কোনও শিল্পসাহিত্য দর্শক শ্রোতা বা পাঠকের আনন্দ উৎপাদন করতে পারে অথবা পারে না। মানে শিল্পসাহিত্য অন্যান্য উৎপাদনের মত কিছু বা অনেক মানুষের চাহিদা পূরণ করে, মানসিক চাহিদা। এখানে খেয়াল রাখতে হবে শিল্পসাহিত্যর বিনিময়মূল্য না-ও থাকতে পারে, শিল্পীসাহিত্যিক নিজের সৃষ্টিকে পণ্য করতে পারেন আবার নাও পারেন। কিন্তু ব্যবহারিক মূল্য থাকতেই হবে।
মার্কসীয় মতে সমসাময়িক অর্থনীতির ওপরে শিল্পসাহিত্য অনেকখানি নির্ভর করে। এটিও ধাক্কা খাওয়ার মতই কথা। মধ্যযুগে সামন্ততন্ত্র, শিল্পসাহিত্যর মূল উপজীব্য ছিল ধর্ম এবং দেবতা। আধুনিক পুঁজিবাদী সময়ে শিল্পসাহিত্য তৈরি হল মানুষকে কেন্দ্র করে। ধর্ম দেবতার বাইরে এসে মানুষকেন্দ্রিক চিন্তাই হল ইউরোপের রেনেশাঁ। প্রাচীন নাটকে নিয়তির ভূমিকা ছিল বিরাট বড়, আধুনিক কালে কার্যকারণ সম্পর্ক দিয়ে কাহিনিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হয়। পুঁজিবাদ আসার আগে উপন্যাস নামের কোনও সাহিত্যকর্ম ছিল না। আবার এই শিল্পসাহিত্যর একটা অগ্রণী অংশ চালু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে সহায়ক ভূমিকা নেয়। সে নতুন দিনের কথা বলে, ইউটোপীয় সমাজতন্ত্রর কথা বলে। তার থেকেই আত্মপ্রকাশ করে বৈজ্ঞানিক সমাজবাদের ধারণা।

মার্কসীয় নন্দনতত্ত্ব কোন মাপকাঠিতে শিল্পসাহিত্যকে বিচার করে? এঙ্গেলস জোড়া মাপকাঠির কথা বলেছেন, ঐতিহাসিক এবং নান্দনিক। শুধুই স্লোগানের মত পুরনোকে ভেঙে নতুন দিন আনার পক্ষে কোনও শিল্পসাহিত্য যদি কাজ করে, মানে শুধুই তার ঐতিহাসিক ভূমিকাকে পালন করে তবে তাকে সার্থক সৃষ্টি বলা যাবে না। তার সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে নান্দনিকতার দিকটিও। দিনবদলের কথা থাকলেই শুধু হবে না, গণসঙ্গীতকে সুর বাদ্যযন্ত্র গায়কী ইত্যাদি দিয়ে গান হয়েও উঠতে হবে। তবেই তা হবে সার্থক শিল্প। তাই শিল্পসাহিত্যে স্পষ্ট মেসেজ খুঁজে না পেলে তাকে শিল্পসাহিত্য বলে না-মানা যেমন একটি একদেশদর্শী চিন্তা, তেমনই কোনও উদ্দেশ্য ছাড়াই শুধুই সৃষ্টির জন্যে শিল্পসাহিত্যর কথা যাঁরা বলেন তাঁরা নেহাতই মিথ্যা বাগাড়ম্বর করেন। শিল্পসাহিত্যর একটা উদ্দেশ্য তো থাকতেই হবে, শিল্পর জন্যে শিল্প কথাটা শুনতে ভাল তবে তা সোনার পাথরবাটিতে কাঁঠালের আমসত্ত্ব খাওয়ার মত। রবীন্দ্রনাথ নিজে সৃষ্টি আর নির্মাণের একটা পার্থক্য করেছিলেন। সৃষ্টির কোনও উদ্দেশ্য নেই, আর নির্মাণ হল উদ্দেশ্যমূলক— এই ছিল তাঁর বক্তব্য। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের নিজেরই সমগ্র গদ্য ও নাট্যসাহিত্য উদ্দেশ্যমূলক ছাড়া আর কী? অবশ্যই তা বিরলতম সাহিত্যগুণসম্পন্ন। কিন্তু ‘রক্তকরবী’, ‘অচলায়তন’, ‘তাসের দেশ’ কিংবা ‘গল্পগুচ্ছ’ বা ‘জাপানে পারস্যে’ প্রভৃতি শুধুই সৃষ্টিসুখের উল্লাসের ফল নয়। প্রেম বা পুজো যতই নিষ্কাম হোক তার উদ্দেশ্য তো সমর্পণ-ই। আবার সত্যজিৎ রায়ের মত চলচ্চিত্র পরিচালককেও নিজের শিল্পকে পূর্ণতা দিতে ‘দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান’-এর মত স্লোগান বা ‘ওরে হল্লার রাজার সেনা তোরা যুদ্ধ করে করবি কি তা বল’-এর মত গান লিখতে হয়েছিল। এমনকি বাংলার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ননসেন্স ‘আবোলতাবোল’-এর পাতা উলটে যান। গোঁফচুরি থেকে ট্যাঁশগরু, রামগরুড়ের ছানা থেকে ভয় পেও না, বুঝিয়ে বলা-র বৃদ্ধ থেকে নন্দখুড়ো। সুকুমার রায়ের টার্গেট খুব স্পষ্ট।
শিল্পসাহিত্যর উদ্দেশ্য কি শুধুই বিনোদন? শিল্পসাহিত্য অবশ্যই মানুষের জ্ঞান অর্জনের একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও। রামকৃষ্ণবাবু উদাহরণ দিয়ে বলেছেন: “এখানে সত্যিই না-দেখা, না-চেনা জিনিস সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠে। প্রকৃতি সম্বন্ধে তো বটেই, মানুষের জীবনে কত কী ঘটে তার কতটুকুই বা একজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতায় আসতে পারে? শিল্প-সাহিত্যর ভেতর দিয়ে আমরা, বাংলার লোকেরা জেনেছি বরফ পড়ার কথা। ভূগোল বই-এ যা শুধু তথ্য, ছবিতে বা কথাসাহিত্যর বর্ণনায় তার সঙ্গে যুক্ত হয় সুন্দর-এর অনুভূতি। দুঃশাসনের আচরণ থেকে অল্প বয়সে জানা হয়ে যায়: মানুষ কত খারাপ হতে পারে। ক্লুতেমনেসত্রা বা লেডি ম্যাকবেথ-কে জানা মানে নারী মনস্তত্ত্বর এক দুর্জ্ঞেয় দিক জানা।”
এই বিষয়গুলি নিয়ে শুরু করে রামকৃষ্ণবাবু আলোচনা চালিয়েছেন সাহিত্যতত্ত্ব, নন্দনতত্ত্বর নানা শাখা নিয়ে। শিল্পসাহিত্যর নানান শাখাকে পর্যালোচনা করেছেন মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সত্যিই বইটি পড়লে শুধু “মার্কসবাদীরাই নন, নন্দনতত্ত্ব নিয়ে জিজ্ঞাসু সকলেই জানার ও ভাবনার খোরাক পাবেন…।” রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য নিজে একজন প্রতিথযশা ভারততত্ত্ববিদ। সেইজন্যে মার্কসীয় নন্দনতত্ত্বর আলোচনায় বারে বারেই প্রাচীন বা আধুনিক ভারতীয় সাহিত্যর কথা এসেছে। ফলে বাঙালি পাঠকদের কাছে বিষয়টি সুখপাঠ্যরূপে হাজির হয়।
বইটির প্রথম পর্বর দ্বিতীয় ও পরিবর্ধিত সংস্করণ, এবং দ্বিতীয় পর্ব এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে ababhasbooks.com-এ।

মার্কসীয় নন্দনতত্ত্ব/ মার্কসীয় নন্দনতত্ত্ব ২।। রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য।। অবভাস।। ৫০০ টাকা (প্রতিটি পর্ব)

সুকুমার অনুরাগীরা প্রবন্ধগুলি পড়লে উপকৃতই হবেন

‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ’ বিকৃতি, চার্বাকদের হেয় করতে

শুধুই প্রকৃতিপ্রেমী নন, বাস্তববাদেরও নিখুঁত শিল্পী বিভূতিভূষণ

ধর্ম কেন নিজেকে ‘বিজ্ঞান’ প্রমাণে মরিয়া

‘গালিলেও-র জীবন’-কে যেভাবে দেখাতে চেয়েছেন বের্টল্ট ব্রেশট্

ভারতের ঐতিহ্যর অন্যতম শরিক বস্তুবাদী চার্বাক দর্শন

হে মহাজীবন, আর এ তত্ত্ব নয়

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের এক বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ

5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

স্বামী বিবেকানন্দ : প্রয়াণদিনে স্মরণ

বিবেকানন্দই সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক বাঙালি তথা ভারতীয়। রবীন্দ্রনাথ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ১৯১২-পর্বে ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় যাওয়ার পর, এবং তার পরের বছর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে। কিন্তু এর প্রায় কুড়ি বছর পূর্বেই বিবেকানন্দ শিকাগো-বক্তৃতা ও আমেরিকা-ইয়োরোপে এক নাগাড়ে প্রথম দফায় চার বছর থাকার সুবাদে আমেরিকার বিদ্বজ্জনমহলে যেমন, তেমনই জার্মানির মাক্সমুলার, ফ্রান্সের রোমাঁ রোলাঁ, রাশিয়ার টলস্টয় প্রমুখের শ্রদ্ধা এবং মনোযোগ আদায় করেন।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

প্রফুল্ল রায়: ব্রাত্য সময়ের কথাকার

প্রফুল্ল রায় নাকি অতীশ দীপঙ্করের বংশের। দেশভাগের অভিশাপেই দেশছাড়া হতে হয় তাঁকে, ১৯৫০-এ। একটা বিধুর বিষয় আমরা লক্ষ্য না করে পারি না। দেশভাগ সুনীল-শ্যামল-মহাশ্বেতা-শীর্ষেন্দু-অতীনদের কেবল ভূমিচ্যুত করেই ছাড়ল না, এমনকি তাঁদের কারুবাসনাকেও অন্যতর রূপ দেওয়ালো। দেশভাগ না হলে আমরা সুনীলের হাতে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, শীর্ষেন্দুর ‘দূরবীণ’ বা প্রফুল্ল রায়ের ‘পূর্বপার্বতী’ পেতাম না, যেমন পেতাম না শওকত ওসমানের ‘কর্ণফুলি’ বা হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি।’

Read More »
শৌনক দত্ত

মন্দ মেয়ে ভদ্র অভিনেত্রী: সুকুমারী দত্ত

বিনোদিনী দাসীর বর্ণময় জীবনের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়া এই ‘তারকা অভিনেত্রী’-র বহুমাত্রিক জীবনটিও কম রঙিন নয় বরং বিস্মৃত নক্ষত্র এক, যিনি ১২৮২ বঙ্গাব্দের ৩ শ্রাবণ (১৮৭৫ খ্রি., মূল্য ছিল ১ টাকা) ‘অপূর্ব্বসতী’ নাটকটি লিখে বাংলা নাট্যাতিহাসের প্রথম নারী নাট্যকার হিসেবে সুবিদিত হয়ে আছেন।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

আষাঢ়স্য প্রথম দিবস ও কালিদাস

পণ্ডিতেরা তর্ক তুলেছেন, কালিদাস ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবস’ লেখেননি৷ কেননা একেবারে পয়লা আষাঢ়েই যে মেঘ নেমে বৃষ্টি আসবে, তা হয় না। তাঁদের মতে, ওটা আষাঢ়ের শেষদিন, ‘আষাঢ়স্য প্রশম দিবস’ হবে। কিন্তু প্রথম দিবস-ই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। এবং তা এতটাই যে, কালিদাসকে নিয়ে ভারত সরকার যে ডাকটিকিট বের করেছে, সেখানে ‘আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে’ শ্লোকটি উৎকীর্ণ।

Read More »
রূপকুমার দাস

রূপকুমার দাসের কবিতাগুচ্ছ

পড়তি বিকেলে আলতা রং রৌদ্রের রক্তিম ইজেলে,/ লজ্জারাঙা মুখ হত তরতাজা বসরাই গোলাপ।/ এখন ঈশানের মেঘপুঞ্জ ঢেকে দেয় সব কারুকাজ।/ বারুদের কটু ঝাঁঝে গোলাপের গন্ধ উবে যায়।/ নক্ষত্রের আলো কিংবা জ্যোৎস্নার ঝর্নাধারা নয়,/ বজ্রের অগ্নিঝলকে ঝলসে যায় উদভ্রান্ত চোখের নজর।/ হৃদয়ের ক্যানভাসে এঁকে রাখা আরাধ্যার চিত্রলেখা,/ অজানা শংকায় ডুবে যায় অন্ধকার সমুদ্রের জলে।/ সে সমুদ্র তোলপাড় লবেজান আমি তার পাই না হদিস।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »