Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

বাংলা আওয়াজ

ফ্রান্সের কোনও এক আধা-গ্রাম্য রাস্তার পাশে, বেশ খোলামেলা রেস্তোরাঁয়, রৌদ্রোজ্জ্বল ঝলমলে খুশি খুশি দিন। ভূমধ্যসাগরীয় হাল্কা উষ্ণ গ্রীষ্ম। জলপাই তেলে ভাজা মিষ্টি পেঁয়াজের গন্ধভরা উন্মনা বাতাস। লা সালাদে মঁমার্তে, মোজোরেলা, বেসেমেল সস, আর রেড ভেলভেট কেকের সুস্বাদু ডিসে সবে হাত দিয়েছেন। হঠাৎ যদি কানে আসে, ‘হোল সেল সাড়ে বাইশ’! টুপি বিক্রি করছে কোনও বাংলাদেশি, ফরিদপুর কী খুলনার ছেলে। সাড়ে বাইশের বদলে ইউরো হাঁকছে। কিন্তু সুরটা একই।

বাংলার চৈত্র সেলে শ্যামবাজার ফুটপাত, কিংবা গড়িয়াহাট মোড়ে হকারদের টিপিক্যাল সুরে কান অভ্যস্ত হয়নি এমন কোলকাত্তাইয়া বাঙালি নেই। বিচিত্র পাঞ্চলাইন তার সুরে। চৈত্র সেলে ক্রিয়েশনের ছড়াছড়ি। ‘‘লেজ্জা লেজ্জা’ জামাইয়ের কোচ্চা’’, ‘আমার রক্তে তোমার সোহাগ’, ‘লে ছক্কা একশ তিরিশ’, ‘মার গুড়জল হাত্তা/ বাবার চেয়েও সস্তা’। স্যান্ডো গেঞ্জির বুক ভেঙে কলকল করে নামছে শিবের জটার গঙ্গা। বড় বড় চোখ, বাবরি চুল, বছর বাইশের যুবক জিভটা উলটে টাগরার দিকে তুলে ক্রমাগত বলে চলেছে, ‘লুটবি খাবি’।

পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মোটা ফরসা বড়ি খোপা মহিলা দেখলেই গলা নীচু খাদে নামিয়ে এনে বলছে, ‘দিদি ও দিদি’। জন্মজন্মান্তরের অ্যাকটার সব। পানকৌড়ির মত ডুবে গুগলি তুলছে। অটোওলার খারাপ মেজাজ, পুলিশের খিটমিট, বাসের হর্ন, ভিড়ের খিচুড়ি গুঞ্জন, বহুবর্ণরঞ্জিত, বহুআকৃতিবিশিষ্ট ধাপ্পাবাজি, অনিশ্চয়, হুল্লোল পাকিয়ে উঠছে বিশাল নাগরিক ঘোলাটে আকাশে। নোনাধরা দেওয়ালে সিনেমার পোস্টার থেকে ছিঁড়ে ঝুলছে নায়িকা, হাওয়ায় মাথা ঠুকছে। বখাটে, ব্রিলিয়ান্ট, মিচকে, প্রেমিক, হবু ইঞ্জিনিয়ার, নেশাখোর, ঢপবাজ, ছিঁচকে চোর, বিরহী ন্যাকা, কনফিউজড সব বড় শহরে ছেয়ে থাকে পুঞ্জ মেঘের মত। চরম খিটকেল গরম চৈত্র দুপুরে যখন নেতাড়ির ঘোড়াও শ্যামবাজার মোড় থেকে পালিয়ে যায়, বাঘেরা মাংস ছেড়ে ভেজ স্যান্ডউইচ খায়, তখন এই ক্রিয়েটিভ হকার কলকাতার মার্কামারা নিজস্ব ব্যাপার।

আস্তে বাঁয়ে রেক্কে!

দাঁতে বিড়ি চেপে এক হেলপারকে শীতের সন্ধ্যায় এমনভাবে স্টপেজের নাম হাঁকতে শুনেছিলাম, মনে হচ্ছিল, নাখোদা মসজিদ থেকে আরবি ভাষায় আজান দিচ্ছে। জেনারেটারের মত ঘড়ঘড়ে গলা। সর্দি ঝেড়ে উঁচুতে উঠে আবার নীচে নেমে আসছে। শুকনো বাদুড়ের মত মুখ। কুতকুতে চোখ যেন নিস্তেজ টুনি। মহব্বতের দারুণ ক্ষতিতে কিশোর কুমার একেই ভর করেছে। একেবারে ‘অমানুষ বানাকে ছোড়া’। মুখে পানপরাগের রসালো উচ্চারণে চেনা শব্দও অচেনা ঠেকছে। ড্রাইভার কিন্তু এই বিমূর্ত ভাষায় সাড়া দিচ্ছে।

বাসের ভেতরে রোমহর্ষক কাণ্ডকারখানা ঘটছে। পা মাড়িয়ে দিচ্ছে, চিমটি কাটছে, ভয়াল থমথমে দৃষ্টিতে মাপছে। দীর্ঘকায়, শীর্ণকায়, খর্বকায় মানুষের গুঁতোগুঁতি, কনুই মারামারি, শাসানি চলছে। বোঁটকা গন্ধ, হাড় কড়কড় রগরানি, চকাচক বাক্যবাণ, মৃদু আর্তনাদ, মার মার কাট কাট চোদ্দ ফুটের প্রকোষ্ঠে এক চুল নেহি ছোড়েগা করে যে যার স্টপেজে নামছে সলমন খান, মিঠুন চক্কোত্তিরা। জানলা দিয়ে ফুরফুরে হাওয়া আসছে। বাস চলছে বিশেষ সুরেই।

—বাছুর নিয়ে বাসে উঠেছেন কেন?

—কেন আপনাকে গুঁতিয়েছে?

—ঝুনো নারকোলের মত মাথাটা সরান দাদা!

—আপনার তো নব্বই ডিগ্রি, হাঁটুতে ভাঁজ খায় না। ট্যাক্সিতে যান।

বিনীত যুবক মহিলাকে আশ্বস্ত করছে, কিছু মনে করবেন না ওটা টর্চ।

দরজায় ঝুলছে নির্বিকার সাধক। ভবনদী পার হয়ে এখানে ডিউটি দিতে এসেছে। পকেটে হাফ চিরুনি। সরু করে চুল আঁচরাচ্ছে। ড্রাইভার অভ্যস্ত বাসের গতির সঙ্গে কখন সুর উঠবে নামবে। এই রোক্ককে, বাস থামে। এই যা-যা-যা…

বাস চলে। আ-স্তে লেডিস বাস স্লো হয়। এই বাঁয়ে রেক্কে। বাস পজিশন নেয়। টিনের কন্টেনারে পিলপিল করে লোক ওঠে। খালাসিরা বাসের গান গায়। কলকাতার অদ্ভুত জীবন্ত ফসিল। এরা ছাদ থেকে লাফাতে পারে, শূন্যে উড়ে হিরোকে ল্যাং মারতে পারে, বাসের ছাদ থেকে উলটো ঝুলে জানলা দিয়ে বাচ্চা নামায়। দুরপাল্লায় ছাগল ওঠায়। জুরাসিক পার্কের কাঁটাতার পেরিয়ে বড় বড় ডায়নোসরাস, টেরাড্যাকটিল, ম্যামথ পর্যন্ত ঠুসে দেয় চোদ্দ ফুটের খুপরিতে। রাবণ, কংস, হিরণ্যকশিপু, ওমরেশ পুরি, হাতকাটা দিলীপ, ওসি, কনস্টেবল, সব একা হাতে ডিল করে। কচি পকেটমারকে দোকানে বসিয়ে চা খাওয়ায়। ফোয়ারা কলের তলায় বালতির তলানিতে বিকেল চারটের রোদে উড়াল পুলের গা-ঘেঁষে চান করে। তারপর ধর্মতলায় তরকা রুটি খেয়ে বাসের খুপরিতে জোৎস্না রাতে মশারি টাঙায়।

এদের ময়ূরপঙ্খী গানেই কলকাতার ওই অলৌকিক যান চলে। চকককে কাস্তের মত ঝিক করে বাঁক নিয়ে খুল্লামখুল্লা দারিদ্রসীমার নীচ দিয়ে ব্রিজ পেরোয়।

হ্যালি মাইক টেসটিং

মধ্যদুপুরে হয়তো ট্রমা আক্রান্ত সাইকোলজিক্যাল মন বিশৃঙ্খলায় ভরে আছে, ঘটনাস্রোতের তো বিরাম নেই, জলোচ্ছ্বাসের মত আছড়ে পড়ছে। দগ্ধ দাবদাহ, একটি মফস্বলের বাজার অঞ্চল, পশারিরা উঠে গেছে। রোগা ঠ্যাং ডাগর হলুদ চোখ, কৌতূহলী শালিখের উঁকিঝুঁকি, ক্লান্ত গোরু শালপাতা চিবোচ্ছে। ধারে ধারে দু-চারটে গাছের ছায়া জমে আছে। জানলায় ভারী পর্দা টানা নিঝুম, পেঁপে সেদ্ধ ভাত খেয়ে বৃদ্ধের রোগা, হাত চশমা রাখছে নিঃসঙ্গ টেবিলে। এমন সময় আকাশ চিরে ভয়ানক মেটালিক সাউন্ডসহ সাইফাই ছবির মত হ্যালির ধূমকেতু নেমে এল। হ্যালি মাইক টেসটিং। ওয়ান থেকে জিরো, জিরো থেকে ওয়ান, অক্লান্ত যাতায়াত।

বাজারের পাশেই রবীন্দ্রনাথের মর্মর মূর্তি। খর্বকায়, কালিবর্ণ, কুৎসিত, আগুনে পোড়া, ঘোর সন্দিদ্ধ, বিরক্ত মুখ। পেছনে হাত দিয়ে ঝুঁকে পড়ে কী দেখছেন যেন। বাজারের দরদামের দিকে নজর রাখছেন বোধহয়। চারপাশে নানা মনীষীদের পাথুরে নজরদারি। বাসস্ট্যান্ডে দুরন্ত সব বাণী লেখা। সর্বত্র রবীন্দ্রনাথ ঝুঁকে আছেন। নির্জন আবর্জনার পাশে, শূন্য খাঁ খাঁ রাস্তায়, নেতাজি সামরিক পোশাকে হাত তুলে দিল্লি যেতে বলছেন, মিউনিসিপ্যালিটির সাজানো বাগানে বিবেকানন্দ দীপ্ত ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছেন, পায়ের তলায় ম্রিয়মাণ, উদাসী কুকুর ঘুমোচ্ছে। চারপাশে মনীষীদের পাথুরে দেহ টাঙানো। যত মনীষী তত জন্মদিন, মৃত্যুদিন। আর তত রাতদুপুরে হ্যালি মাইক টেসটিং। এঁদের জীবনচর্চা, অনুশীলন, শিক্ষা, কর্মবিধি, চিন্তাশীলতা, মর্মর দেহগুলো রিফ্লেক্ট করে দিকে দিকে সততাময় ভাইব্রেশন সৃষ্টি করছে কিনা সেসব খুব ঝাপসা বিষয়। কিন্তু হ্যালির ধূমকেতুওলাদের ব্যস্ত সময়।

Advertisement

দুপুর দুটো। মিডডে মিলের ঘরে রান্নার মাসি ও তাদের হেল্পারদের কাঁচা আনাজ, মশলাপাতির ভাগবাঁটোয়ারা চিৎকার-চেঁচামেচিতে কান পাতা দায়। হাতা খুন্তি নিয়ে পরস্পরের দিকে তেড়ে যাচ্ছে। ছেলেপুলে অনাথ হয়ে ঘুরছে, ক্লাসে টিচার নেই। মিডডে মিলের তদারকির নামে প্রথম দুটো পিরিয়ডের পর থেকেই তারা হাওয়া। একজন বেঁটেমত লোক এসে হড়হড় করে ডালের কড়ায় জল ঢেলে দিল। ক্লাসে ক্লাসে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা, হট্টগোল চলছে। যাদের দায়িত্বে এই খাওয়াপর্ব পরিচালনার ভার তারা কেউ কেউ আগেভাগে খেয়ে শিক্ষককক্ষে টানা ঘুম দিচ্ছে। হঠাৎ আকাশবাতাস মথিত করে হ্যালির ধূমকেতু গর্জে উঠল। স্কুলে টিফিনের পর রবীন্দ্রজয়ন্তী। লঞ্চা কাকা হ্যালি টেসটিং করছে। একটা ছোকরা ইলেক্ট্রিশিয়ান লাইটফাইটের জন্য তার টানাটানি করছে, শ্যামা না চিত্রাঙ্গদা নৃত্যটিত্য আছে। ‘দে দোল দোল পরানে আমার তুফান তোল’— সবে শুরু হয়েছে, এদিকে খাবারঘরে প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে ভূগোলের স্যারের মারপিট বেঁধেছে। সব স্যারেরা ছুটেছে সেখানে। অঙ্ক স্যার আলুর বস্তার ওপর দাঁড়িয়ে রেফারিং করছে। রবীন্দ্রনাথ একাকী রজনীগন্ধা পরে, ধূপ শুঁকছেন।

পাঁচু চারটে ডিম চুরি করে পালাচ্ছিল, ধরা পড়েছে, রান্নার মাসি পার্টির পেটোয়া রমণি, কায়দা করে, দশ কেজি চাল ছেলেকে দিয়ে পাচার করিয়ে, নিরীহ মুখে ফাংশান দেখছে। ওয়ান থেকে জিরো হাঁকড়ে সাউন্ড চেকের লোক চলে গেছে। জিরো দিয়ে সংখ্যাতত্ত্বের শুরু। বাংলার ইকেট্রিশিয়ানরাই তা মুখে মুখে মেনে চলে। সিপিএম বিকেলে হ্যালি মাইক টেসটিং মানেই, আজ যত যুদ্ধবাজ, আর ট্যাঙট্যাঙে প্লাস্টিকের গ্লাসে কমলা রসনা।

ঢ্যামকুড়াকুড় কাইনানা

সেই সময় কোন পাড়ায় বা মিঠুন না থাকত। সেই কানচাপা বিশেষ চুল, পেছনটা ময়ূরের পেখমের মত। চাপা প্যান্ট, গোঁপ-দাড়ি চাঁচা, তামাটে কালো ঝিলিক। ব্যাস! বহু মেয়ে এমনকি বউ ও মিঠুন কুমারদের সঙ্গে পালাত। সেবার পুজো সংখ্যায় মিঠুন গেয়েছিল, তখন ক্যাসেট। প্রথম লাইন ‘পুজো এল, এল পুজো জয় দুর্গা বল, ঢ্যামকুড়াকুড় ঢাক বাজাবি চল।’ এক এক মাস ধরে দীপু ইলেক্ট্রিকে গানটা বেজে বেজে পাড়ার বয়োবৃদ্ধদের মাথা চেটে ছেড়ে দিয়েছিল। ঢাক বাজে অনেক শহরেই কিন্তু এই বিশেষ বোলটি মানেই বাঁশে দড়ি বাঁধা শেষ, ফুচকা, কাঠি রোল স্টল বসে গেছে, বিরিয়ানির হাঁড়ি মেজেঘষে ফিটফাট, চায়ের দোকানের বিশুদা যে কোনওদিন হাসে না, সেও ভাইপোকে হেসে ক্যাপ-বন্দুক দিচ্ছে। ফটাফট তালিতে মনখারাপের ঘুঘু পাখি উড়ে যাচ্ছে।

দূর গাঁয়ে কাশফুলের ঝাড়, মাঠ পেরিয়ে শরতের বাতাস ভেসে এলেই বাড়ির জন্য মন কেমন। সারা বছর কেউ তার নিজস্ব হিসাবের সময়ের এককণা ভেঙে কাউকে দেয় না। যে বৃদ্ধের বিশাল সময় ঘড়ি কালছন্দে অতলান্ত গভীরে বয়ে যায় একা একা। সেও তখন নতুন ফতুয়া, আরও দুবার চায়ের অর্ডার। দুটাকার বিড়ির বান্ডিল, আর সন্ধের বারান্দায় বৃষ্টির ছাঁট নিয়ে বসে থাকে যে, তাকেও পঞ্চা এসে অষ্টমীর খিচুড়ির প্যাকেট দিয়ে যায়। ওই শব্দে কলকাতা বদল হয়। খানাখন্দ আবর্জনার খোঁদল থেকে চলকে ওঠে চন্দননগরের লাইটিং। গভীর রাতে পিচের রাস্তায় ঝলমলে নদী বইতে থাকে। তাতে নৌকার মত মানুষ। ঢ্যাম কুড়াকুড় শব্দের কোনও রাত দিন নেই। অনন্ত অখণ্ড।

চিত্র: গুগল

কচুরি

সাধু

কারখানা বিরিয়ানি

লিটল বুদ্ধ

শেরপা

সবুজ মিডাসের ছোঁয়া

ঘুষ

জুতো

মাদারি কা খেল

সিঁড়ি

ইসবগুল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 8 =

Recent Posts

মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনচক্রের মহাকাব্য নবান্ন: শ্রম, প্রকৃতি ও নবজন্মের দ্বান্দ্বিকতা

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব বসু: কালে কালান্তরে

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

Read More »
দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »