শবদে শব দে বিয়া
ছন্দের জটিল জালে ধরা পড়ে শব্দেরা বাধায়
সহসা বিদ্রোহ বড়। তাদের নিষ্ঠুর কেটেকুটে
টেবিলে সাজানো যায় মনোহর; হয়তো মানায়
মামুলি পদ্যের ভোজে। কিন্তু জীবন যায় ছুটে
শব্দদের। কবিরও তা যায় না কি? নিয়ম-নিগড়ে
বাঁধা পড়ে গিয়ে সে-ও স্বভাবের সঙ্গে প্রতারণা
ক’রে সৃষ্টি করে কাব্য; ক্রমাগত যে-শিল্প সে গড়ে,
ক্রমাগত বোঝে, তার না-গড়া রয়েছে আধখানা।
কলম-খোঁচায় গেঁথে শব্দ তুলে কবি বসে ভাবে:
প্রজাপতি-সম্ভাবতী শুঁয়োপোকা গোলাপকে খেলে
দাঁতের ঘর্ষণ কোন্ ধ্বন্যনুপ্রাসে আনা যাবে?
জীবন-মৃত্যুর দোলা পয়ারে, না মাত্রাবৃত্তে দোলে?
অথচ আঁধারে কণ্ঠনালী বেয়ে জীবন্ত শব্দরা
উঠে আসে নাভি থেকে, সচীৎকার বক্তব্য শোনায়:
অত্যাচার, প্রতিবাদ, ক্রোধ, ঘৃণা, ভাবপরম্পরা—
রক্তিম উলঙ্গ ধ্বনি। তাদের কখনো আনা যায়
সুভদ্র সমাজে? তাই ছন্দে ঘেরা এ-কয়েদখানা
তারাই ভরায় এসে: সারি বেঁধে নিয়মশৃঙ্খলে
পা-ঘষ্টিয়ে হেঁটে চলে। জ্যান্তে এরা আইন মানে না,
ফাঁসিতে-গুলিতে শেষে বাধ্য করতে হয় তার ফলে।
*
কাজেই কবিতা মরে; দীর্ণ করে লাল জন্মদ্বার
ব্যাদিত আগ্নেয় মুখ নাড়ে না সে বিদ্যুতে কখনো
মেদিনীকে গ্রাস করবে বলে। তার তীক্ষ্ণ হুহুঙ্কার
গোঙানিরও আগে থামে: জন্মনাড়ী কণ্ঠেতে পাকানো।
শব্দেরা স্বীকৃতি পেলে এরকম দমনকৌশলে
এ-পীড়ন, ভ্রূণহত্যা, হতো না কি পুলিশের পাকে?
কবিতায় শব্দদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে
শব্দরা কি নির্বাচন করে নিতো কবির কথাকে?
দ্যাখো নাকি, স্বশব্দসম্মতিক্রমে, গোষ্ঠীর কৃপাতে
কবিতা-রিগিংকারী শব্দনেতা গজিয়ে বিস্তর
পদলেহী শব্দদের চাড়া দেয় নানা মিডিয়াতে?
বাঁধি গৎ যে-শব্দে বাজে না সে তো জেলের ভিতর!
শব্দের কারবারী যারা— শব্দভেদে শবদের কারবারী
চোরাই সেসব দেহ রাতে তারা চালানে পাঠায়;
চোলাইচক্রেও থাকে। পথ নেই তাদের ধরবারই—
অর্থ নয়, রূপোচ্ছবি ইত্যাকারে ঘুষ তারা দেয়।
শব দেহই চলে, তাই শব্দ হয়। সে সব যাত্রার
কীর্তনের খোলে, আসরের ঢোলে সীৎকার বিঁধিয়ে
‘কবিতার শ্রাদ্ধ’ বোলে তুমি যত দাও না ধিক্কার,
শবদের পিণ্ড গেলে অগ্রদানী উদ্গার উঠিয়ে।