কাহলিল জিব্রান
ভাষান্তর: অনিন্দিতা মণ্ডল
৬৫
না, আমরা বৃথা এ জীবন বাঁচিনি। তারা তো আমাদেরই অস্থি দিয়ে প্রাসাদ বানিয়েছে।
৬৬
আমরা যেন বিভক্ত না হই। যেন বদ্ধ না হই। একই মাটি থেকে বিছের লেজ ও কবির খ্যাতি দুইই আপন মহিমায় উঠে আসে।
৬৭
প্রতিটি ড্রাগন একজন সেন্ট জর্জের জন্ম দেয় যিনি তাকে বধ করেন।
৬৮
বৃক্ষেরা হল কবিতা। পৃথিবী আকাশের গায়ে লেখে। আমরা তাদের কেটে কাগজ বানাই। যাতে সেই কাগজে নিজেদের শূন্যতাকে ধরে রাখতে পারি।
৬৯
(সন্তরাই জানেন কেন) যদি লিখতে চাও তবে তোমার জ্ঞান, যাদু ও শিল্পকে জানতে হবে। শব্দের মধ্যে নিহিত সুরের জ্ঞান, শিল্পহীন হওয়ার শিল্প এবং পাঠকদের ভালবাসবার যাদু।
৭০
তারা আমাদের হৃদয়ে কলম বিঁধেছে, আর তারা ভাবে তারা অনুপ্রাণিত।
৭১
একটি বৃক্ষ যদি আত্মকথা লেখে তবে তা একটি জাতির ইতিহাসের সমতুল্য।
৭২
যদি একটি কবিতা লেখার শক্তি ও একটি না-লেখা কবিতার আনন্দের মধ্যে বেছে নিতে বলা হয় তবে আমি ওই না লেখা কবিতার আনন্দকে বাছব। কবিতা হিসেবে সেটি বেশি ভাল। কিন্তু তুমি ও আমার প্রতিবেশীরা সবসময় আমার পছন্দকে মন্দ বলে থাকো।
৭৩
কবিতা কোনও মত প্রকাশ করে না। এটি রক্তাক্ত ক্ষত কিংবা একটি হাস্যময় মুখচ্ছবি থেকে উৎসারিত গীত।
৭৪
শব্দরা শাশ্বত। তাই লেখার সময় শব্দের এই চিরন্তন সত্ত্বাকে মনে রাখতে হয়।
৭৫
কবি একজন পরাজিত রাজা। তিনি নিজের পুড়ে যাওয়া প্রাসাদের ছাইয়ের ওপরে বসে কল্পনার চিত্র নির্মাণ করেন।
৭৬
কবিতা হল আনন্দ বেদনা ও বিস্ময়ের প্রকাশ। তাতে কিছুটা অভিধান মিশে থাকে।
৭৭
বৃথাই কবি তাঁর মনে হৃদয় হতে উৎসারিত গীতের দেবীকে খোঁজেন।
৭৮
একবার এক কবিকে বলেছিলাম,— তোমার মৃত্যুর আগে তোমার মূল্য জানব না। তিনি বললেন,— হ্যাঁ, মৃত্যু সবসময়ই প্রকাশক। আর যদি আমাকে জানতে পারো তবে দেখবে আমার জিভের চেয়ে হৃদয় বেশি ভরা। আমার হাটের চেয়ে আকাঙ্ক্ষা বেশি।
৭৯
মরুভূমির মাঝে বসেও যদি তুমি সুন্দরের গান করো তবে নিশ্চিত একজন শ্রোতা পাবে।
৮০
কবিতা হৃদয়ে জ্ঞানের আলো দেয়। জ্ঞান সেই কবিতা যা মনের মাঝে গান গায়। যদি কোনও মানুষের হৃদয়কে মুগ্ধ করি ও একই সঙ্গে মনে সুর দিই তবে সে ঈশ্বরের ছায়ায় বাঁচবে।
৮১
প্রেরণা সবসময় গান গাইবে। কখনওই তার ব্যাখ্যা দেবে না।
৮২
আমরা শিশুদের ঘুমপাড়ানি গান শোনাই, যাতে নিজেরা ঘুমোতে পারি।
৮৩
মনের আকাশ থেকে খসে পড়া একটি টুকরো হল শব্দ।
৮৪
ভাবনা সবসময় কবিতার প্রতিবন্ধক।
৮৫
শ্রেষ্ঠ গায়ক তিনিই যিনি আমাদের নৈঃশব্দ্যকে সুর দিতে পারেন।
৮৬
তোমার মুখ যদি খাবারে ভরা থাকে তবে তুমি কী করে গান গাইবে? তোমার হাত যদি সোনায় ভরা থাকে তবে তুমি হাত তুলে কী করে আশীর্বাদ করবে?
>>> ক্রমশ >>>
চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
***
লেখক পরিচিতি
কাহলিল জিব্রান (Kahlil Gibran) একজন লেবানিজ-আমেরিকান কবি, শিল্পী ও দার্শনিক। ১৮৮৩ সালে লেবাননে জন্ম। বাল্য কেটেছে জন্মভূমিতে। আমেরিকার বোস্টনে আসেন কৈশোরে। আবার লেবাননে শিক্ষালাভ করতে যান। তাঁর দর্শনে মধ্যপ্রাচ্যের সুফী ভাবধারার স্পষ্ট ছাপ। সুফী মরমিয়াদের মতই তাঁর দর্শনে বালির ধারা যেন প্রাণের ধারা। প্রাচ্য দর্শনের মধ্যে ইসলামের একেশ্বরবাদের সঙ্গে ঔপনিষদিক দর্শনের প্রভাবও দেখতে পাওয়া যায়। তিনি আরবি ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই লিখেছেন। তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘দ্য প্রফেট’ প্রকাশ হয় ১৯২৩ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রকাশিত এই লেখাটির মধ্যে প্রচলিত পাশ্চাত্য দর্শনের বিপ্রতীপ একটি কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছিল। প্রফেটের সমগোত্রীয় লেখা ‘স্যান্ড অ্যান্ড ফোম’। দর্শনকাব্য বলা চলে। পুস্তকের অলংকরণ তাঁর নিজের করা। এটি ১৯২৬ সালে প্রকাশিত।
আরও পড়ুন…
বালি ও ফেনা প্রথম কিস্তি