Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ছবিবৃত্তান্ত

পুরো নাম ছায়াছবি, ছোট করে ছবি। সেই ছবিকে আজকের স্তরে তুলে ধরতে যুগ যুগ ধরে মানুষের যে নিষ্ঠা ও পরিশ্রম জড়িয়ে আছে, তা ভাবতে বসলে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। এর পেছনে আছে কত সাফল্য, ব্যর্থতা, সুখদুঃখ ও নানান মজার কাহিনি। ছবির দুনিয়ার সেইসব অনবদ্য গল্পকাহিনি নিয়ে ধারাবাহিক ‘ছবিবৃত্তান্ত’।

প্রথম কিস্তি

এ-বাংলায় চলচ্চিত্র, ছায়াছবি অথবা ছবি। ইংলিশ, মার্কিন, জর্জিয়ান, আফ্রিকান, পর্তুগিজ ও বাংলাদেশিরা বলেন সিনেমা। কেউ কেউ মুভি বা পিকচারও বলে থাকেন। আরবিয়ানদের কাছে ‘দ্য সিনেমা’। চেক, জর্মন, বসনিয়া ও রাশিয়ানে ‘কিনো’। গ্রিকরা বলেন ‘কিনিমাতোগ্রাফোস’, সুইডিশরা ‘বিয়ো’, জাপানিরা ‘শিনেমা’, ইতালিয়ানরা ‘চিনেমা’, স্প্যানিশরা ‘সিনে’, ডেনিসরা ‘বিয়োগ্রাফ’ আলবেরিয়ানরা বলেন, ‘কিনেমা’, বাস্কের লোকেরা বলেন ‘জিনিয়া’, ডাচরা ‘বিয়োস্কুপ’, হাঙ্গেরিয়ানরা ‘মোজি’। আইসল্যান্ডে আমার নাম ‘ভিকমিনদাহুস’, ফিনল্যান্ডে ‘ইলোকুবাতিয়াডেরি’।
শুরু করা যাক একেবারে গোড়া থেকে। তখন সবেমাত্র বিভিন্ন পদার্থে আলোর সংবেদনশীলতা ও দৃশ্য স্থায়ী করার কথা ভাবা হচ্ছিল। সময়টা আজ থেকে পঁচিশ শতক আগে। চিন দেশের মোৎজু (Mo Tzu) নামে এক দার্শনিক-বৈজ্ঞানিক, বিভিন্ন পদার্থের আলোক সংবেদনশীলতা ও দৃশ্যকে স্থায়ী করার কথা ভেবেছিলেন।
গ্রিক বিজ্ঞানী অ্যারিস্টোটল (৩৮৪-৩২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রথম দৃষ্টিবিজ্ঞানের ভিত্তিতে আলোকপাত করেন ও আলোকবিদ্যার বাস্তব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। অ্যারিস্টোটলের পর আলেকজান্দ্রীয় বিজ্ঞানের যুগে বৈজ্ঞানিক আর্কিমিদিস (২৮৭-২১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রথম লেন্স ও আয়নাকে বৈজ্ঞানিক কাজে ব্যবহার করেন। উত্তল লেন্সের অনুরূপ Burning mirror তাঁরই তৈরি।
গণিতশাস্ত্রের অধ্যাপক ইউক্লিড (৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), অ্যারিস্টোটল ও আর্কিমিদিসের আলোকবিদ্যা ও লেন্সের গবেষণায় অনুপ্রাণিত হয়ে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে আবিষ্কার করলেন আলো সরলরেখায় গমন করে। পাওয়া গেল ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলার সন্ধান।
খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে আরব দার্শনিক আল হাজেন পূর্বসূরিদের গবেষণার সূত্র ধরে আবিষ্কার করেন ‘অবিরত দৃষ্টিতত্ত্ব’ (Persistence of vision) অর্থাৎ চোখের দেখা শেষ হয়ে গেলেও, মস্তিষ্ক তা আরও কিছুক্ষণ ধরে রাখে। ভবিষ্যতে গতিশীল ছবির সূত্র মিলল এ থেকেই।

চিত্তবিনোদনের জন্য চিন, ভারত, জাপানে প্রথম ছায়ার খেলা দেখানো শুরু হয়। ছায়ার খেলার পাত্রপাত্রী প্রথমে তৈরি হত গাছের পাতা ও জন্তুজানোয়ারের চামড়া দিয়ে। এশিয়ার ছায়ার খেলা যখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রসার লাভ করে তখন তামা, দস্তা, পিতল আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। শুরু হল আরও নিখুঁত ও যান্ত্রিকভাবে খেলা দেখানো।
ইতালির চিত্রশিল্পী, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯) ক্যামেরা অবসকিউরা (Camera obscura)-র জানান দিলেন। এর পেছনে গ্রিসের অ্যারিস্টোটল, আরবের ইবন আল হাইতাম (যিনি আল হাজেন নামেই বেশি পরিচিত, ৯৬৫-১০৪০), ইংল্যান্ডের রজার বেকন (১২১৯/২০-১২৯২), হিব্রু পণ্ডিত লেভি বেন গেরশন (১২৮৮-১৩৪৪)-দের গবেষণার যথেষ্ঠ প্রভাব ছিল।
ইতালির জিওভান্নি বাতিস্তা দেল্লা পোরতা (১৫৩৫-১৬১৫) ক্যামেরা অবসকিউরার উন্নতিসাধন করেন ও এর ফলে ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ক্যামেরা বাস্তবে রূপ নেয়। ক্যামেরা অবসকিউরাতে প্রথম লেন্স ব্যবহৃত হয় ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে এবং এই দ্বি-উত্তল লেন্সটি (Biconvex lens) ব্যবহার করেন গারদানো নামে এক বৈজ্ঞানিক।
১৫৬৮ সালে ড্যানিয়েল বারবারো নামে এক ইতালিবাসী বহু গবেষণার পর ক্যামেরার ভিতর প্রতিফলিত আলোকরশ্মির কমা-বাড়ার বিষয়টিকে আবিষ্কার করার ফলে তিনিই প্রথম ডায়াফ্রাম (Diaphragm)-এর প্রচলন করেন।
১৫৭৩ সালে দান্তি (১৫৩৬-১৫৮৬) অবতল আয়না (concave mirror) ব্যবহার করে দেখালেন যে, প্রতিফলিত বিষয়বস্তু সোজা দেখা যায়। অবসকিউরা নকল করার কাজে লাগল ও সুবিধামত তাকে পরিবর্তিত করে বহনযোগ্য করে তোলা হল। ইতালি থেকে জার্মানিতে এসে ক্যামেরা অবসকিউরা আরও উন্নত হল জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার (১৫৭১-১৬৩০)-এর হাতে পড়ে। প্রতিফলিত চিত্রকে আরও স্পষ্ট ও উজ্জ্বল করতে হলে ক্যামেরার ভিতরে অন্য কোনও আলো না ঢুকতে পারার জন্য কালো রং করা হল, সময়টা ১৬২০ সালের মাঝামাঝি।
১৬৪৫ সালে কারচার (১৬০২-১৬৮০) ক্যামেরা অবসকিউরাকে আরও উন্নত করেন। তিনি তাঁর ‘Ars Magna Lucis et Umbrae’ বইতে ম্যাজিক লন্ঠনের বর্ণনা দেন। আগামী দিনের চলচ্চিত্রের সম্ভাবনা লুকিয়ে ছিল এর মধ্যেই। কারচার কাচের ওপর ভুষোকালি দিয়ে হাতে এঁকে, ম্যাজিক লন্ঠনের মাধ্যমে খ্রিস্টের জীবনকহিনি দেখান। ম্যাজিক লন্ঠনের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়তে থাকায় প্রদীপ, মোমবাতি ও গ্যাসের আলোয় তা দেখানো শুরু হয়। উন্নত মানের ম্যাজিক লন্ঠন তৈরি করে হল্যান্ড যথেষ্ঠ মুন্সিয়ানার পরিচয় দেয় ও এর মাধ্যমে অর্থোপার্জনও শুরু হয়।
ফ্রান্স, ইতালি, হল্যান্ড, জার্মানি– এককথায় সারা ইউরোপ জুড়ে কিছু মানুষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, কীভাবে ছবি স্থায়ী করা যায়, চলমান ছবি দেখানো যায় কিনা– এসব বিষয়ে।
জার্মান প্রকৃতিবিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ শুলজ (১৬৮৭-১৭৪৪) ১৭২৫ সালে সিলভার নাইট্রেট ও চকের মিশ্রণ আলোর সংস্পর্শে কালো হওয়ায়, এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে stencil থেকে contact কপি তৈরি করেন। যদিও ব্যাপারটা স্থায়ী ছিল না, তবু এটি আরও এক ধাপ এগোনোর পথ দেখাল।
১৭৭৭ সালে সুইডিশ রসায়নবিদ ও ওষুধ প্রস্তুতকারক কার্ল উইলিয়াম শিলে (১৭৪২-১৭৮৬) দেখালেন সিলভার ক্লোরাইড আলোর মাত্রার তারতম্যে কালো হয় আর এই কালো অংশটা কমে যাওয়া সিলভার। সিলভার ক্লোরাইড খুব তাড়াতাড়ি কালো হয় বেগুনি বর্ণচ্ছটায়, যা Ultra Violet ray নামে পরিচিতি পেল।
১৭৮৯-এ ফরাসি বিপ্লব শুরু হল ও দেশের গণ্ডি পার হয়ে ইউরোপে তা বিস্তার লাভ করল। ফলস্বরূপ সামাজিক সংস্কার ও পুরনো ধ্যানধারণা পাল্টাতে থাকে।
১৮০০ সালে ইংল্যান্ডবাসী জার্মান বৈজ্ঞানিক ফ্রেডরিখ ভিলহেলম হারশেল (১৭৩৮-১৮২২) সূর্যালোকের বর্ণচ্ছটা নিয়ে গবেষণাকালে অবলোহিত (Infrared) রশ্মি আবিষ্কার করেন। ওই বছরেই ইংল্যান্ডের থমাস ওয়েজউড (১৭৭১-১৮০৫) তাঁর বন্ধু হামফ্রে ডেভির (১৭৭৮-১৮২৯) সঙ্গে প্রতিচ্ছবি গ্রহণের বিষয়ে এগিয়ে গেলেন আরও একধাপ। তারা ছায়া (silhouette) প্রতিচ্ছবি গ্রহণে সক্ষম হলেন। তবে শুলজের মতো এবারও প্রতিচ্ছবি স্থায়ী করা গেল না। তাঁরা কিন্তু হাল ছাড়লেন না এবং ১৮১৩-য় স্যার ডেভিই বৈদ্যুতিক আর্ক ল্যাম্প আবিষ্কার করে প্রতিচ্ছবি প্রক্ষেপণের (Projection) ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন।
১৮০৭ সালে তৈরি হয় ‘ক্যামেরা লুসিডা’ (Camera Lucida)। ড. উইলিয়াম হাইড ওলাসটন (১৭৬৬-১৮২৮) পুরনো ক্যামেরার অর্থাৎ ১৬৬৮-তে আবিষ্কৃত ড. রবার্ট হুকের ক্যামেরার দ্বি-উত্তল লেন্ম বদলে একদিকে অবতল (concave) ও অপরদিকে উত্তল (convex) লেন্স ব্যবহার করেন, যার নাম মিনিসকাস লেন্স (Meniscus lens)। এর ফলে প্রতিফলিত চিত্র অনেক স্পষ্ট ও উজ্জ্বল হয়। উইলিয়াম হেনরি ফক্স ট্যালবট (১৮০০-১৮৭৭) এই ক্যামেরা লুসিডা দিয়ে ইতালির ‘কোমো’ (Como) লেকের ছবি তোলেন।
ফ্রান্সের নিয়েপ্স (১৭৬৫-১৮৩৩) মুদ্রণ বিশেষজ্ঞ (lithographist), ফটো তোলার ব্যাপারে আগ্রহী হন। ১৮১৬-তে ক্যামেরা অবসকিউরা দিয়ে বেশ কিছু ছবিও তুলে ফেলেন।
সিলভার ক্লোরাইড, ভেজানো কাগজ, কাচ, দস্তা-তামার পাত ইত্যাদি ব্যবহার করলেও ছবি কিন্তু স্থায়ী হল না।
১৮২২ সালে কাচের ওপর জুডিয়া বিটুমেনের প্রলেপ লাগানোর ফলে কিছুটা সুরাহা হল। এরপর কাচের ওপর asphalt varnish লাগিয়ে ছবি তোলা হল।
১৮২৪ সালে পিটার মার্ক রোজেট নামক চিকিৎসক তাঁর গবেষণার ফল ‘Persistence of Vision with Regard to Moving Objects’ রয়েল সোসাইটির কাছে প্রকাশ করায় সারা ইউরোপ জুড়ে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দিল।
১৮২৬-এ টিন, সিসা ইত্যাদি মিশ্রিত ধাতুর পাত বিটুমেনে ভিজিয়ে তার ওপর প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি তোলেন নিয়েপ্স। তাঁর লক্ষ্য ছিল ক্যামেরায় তোলা ছবি ছাপার যোগ্য করা।
লুইস-জ্যাকস-ম্যান্ডি ডাগুয়েরে (১৭৮৭-১৮৫১) মুখ্যত একজন চিত্রশিল্পী। তবে তাঁর বন্ধু চার্লস শোভালিয়ের-এর সাহায্যে ক্যামেরা অবসকিউরাকে আরও উন্নত করে তোলেন। ১৮২৬-এর জানুয়ারিতে নিয়েপ্সকে চিঠি পাঠান সাক্ষাতের জন্য, তবে ১৮২৭-এর অগাস্ট মাসের আগে সাক্ষাৎ হল না।
১৮২৬ সালে প্যারিসে জন আয়ারটন প্যারিস নামক চিকিৎসক তৈরি করেন থাউমেট্রোপ (thaumatrope)। একটা শক্ত কাগজের চাকতির দু’পাশে দুটো আলাদা ছবি আঁকা– একদিকে খাঁচা ও অন্যদিকে পাখি। কাগজের দু’পাশে সুতো দিয়ে বাঁধা। অক্ষরেখা (axis)-র ওপর কাগজটা ঘুরতে শুরু করলেই অবিরাম দৃষ্টিতত্ত্বের নিয়মানুসারে একটা ছবিই দেখা যেত, অর্থাৎ মনে হত পাখিটা খাঁচার ভিতরে বসে আছে। সেসময় ইউরোপের বাজার ছেয়ে গিয়েছিল এই খেলনায়।
১৮২৯-এ নিয়েপ্স-ডাগুয়েরের দশ বছরের চুক্তি হয়। গোপন থাকবে ‘গবেষণা’র কাজ। লাভ ভাগাভাগি হবে সমানভাবে। ১৮৩৩-এ নিয়েপ্স হঠাৎই মারা যাওয়ায় দু’জনের আর সাক্ষাৎ হয়নি।
বেলজিয়ামের জোসেফ অ্যান্টনি ফার্দিনান্দ প্ল্যাটো (১৮০১-১৮৮৩) ও অস্ট্রিয়ার ড. সাইমন ভন স্ট্যাম্পফার নামক বৈজ্ঞানিকও ওই ‘খেলনা’ বিষয়ক গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন। প্ল্যাটো ও স্ট্যাম্পফার প্রায় একই সময়েই, দুজনে দুজনার ব্যাপারস্যাপার না জেনেই তৈরি করে ফেলেন পৃথিবীর প্রথম গতিশীল ছবি দেখার যন্ত্র। ১৮৩২-এ বেলজিয়াম ও অস্ট্রিয়ায় তৈরি হল এই যন্ত্র।
প্ল্যাটো তাঁর যন্ত্রের নাম দেন ফেনাকিস্টোস্কোপ (Phenakistoscope) ও স্ট্যাম্পফার নাম দেন স্ট্রোবোস্কোপিক ডিস্ক (Stroboscopic Disc)। প্ল্যাটো অবশ্য তাঁর যন্ত্রের নাম পাল্টে রাখেন ফ্যান্টোস্কোপ (Fantoscope)– এতে শয়তানের ক্রিয়াকলাপ নিয়ে দেখানো হয় নতুন ছবি ‘Le Diable Soufflant’।
১৮৩৯-এর ৭ জানুয়ারি ফটোগ্রাফির ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বেত্তা ও রাজনীতিবিদ ফ্রাঁসোয়া আরাগো French Academy of Sciences-এর সামনে বন্ধু ডাগুয়েরের আবিষ্কার প্রকাশ করেন। ১৮৩৯-এর ১৪ অগাস্ট দগিউর ইংল্যান্ড থেকে পেটেন্ট নিয়ে নেওয়ায়, ১৯ অগাস্ট ফরাসি সরকারের তরফ থেকে তা আর বিশ্ববাসীকে উপহার দেওয়া হল না।

>>> ক্রমশ >>>

চিত্র : গুগল

ছবিবৃত্তান্ত  দ্বিতীয় কিস্তি

ছবিবৃত্তান্ত তৃতীয় কিস্তি

ছবিবৃত্তান্ত চতুর্থ কিস্তি

ছবিবৃত্তান্ত পঞ্চম কিস্তি

ছবিবৃত্তান্ত ষষ্ঠ কিস্তি

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »