Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ছবিবৃত্তান্ত

পুরো নাম ছায়াছবি, ছোট করে ছবি। সেই ছবিকে আজকের স্তরে তুলে ধরতে যুগ যুগ ধরে মানুষের যে নিষ্ঠা ও পরিশ্রম জড়িয়ে আছে, তা ভাবতে বসলে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। এর পেছনে আছে কত সাফল্য, ব্যর্থতা, সুখদুঃখ ও নানান মজার কাহিনি। ছবির দুনিয়ার সেইসব অনবদ্য গল্পকাহিনি নিয়ে ধারাবাহিক ‘ছবিবৃত্তান্ত’।

তৃতীয় কিস্তি

এরপর ডিকশন, কারবাটরা ফটোগ্রাফির জিনিসপত্রের ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ভারি সেলুলয়েড শিট যোগাড় করলেন আর সেই পাতের ওপর লাগানো ছিল আলোক সংবেদনশীল রাসায়নিক পদার্থ। সেলুলয়েডের ফিতের উপরদিকে ফুটো করে দেওয়া হল, যাতে সহজে চলাফেরা করতে পারে। পুরনো সিঙ্গার সেলাই মেশিন ব্যবহার করা হল সেলুলয়েডকে গতি দেওয়ার জন্য। সেলুলয়েডের ফিতের উপরের সেই ফুটোর মধ্যে দেওয়া হল অশ্বারোহীদের জুতোর তলায় যে বহু কোণবিশিষ্ট চাকা (spur wheel) থাকে তা। স্পার হুইলের কাঁটাগুলো সেলুলয়েডের ফুটোর মধ্যে ঢুকে যাতে সঙ্গতিপূর্ণ গতি দিতে পারে, তার জন্য ব্যবহার করা হল জেনেভা ক্রশ (geneva cross) বা ঘড়ির যন্ত্রাংশ। সেলুলয়েডের পাতকে প্রয়োজনমত ফালি ফালি করে কেটে লম্বা ফিতের মত করা হল। তবুও ডিকশন দেখলেন সেলুলয়েডের ফিতে ঠিকমত চলাচল করতে পারছে না। তখন এর নিচের দিকেও ছিদ্র বা perforation-এর ব্যবহার শুরু করলেন। আজকের চলচ্চিত্রের উপযোগী মানে পৌঁছনোর উনচল্লিশ বছর আগেই ওয়েস্টওরেঞ্জ-এর ৫নং ঘরে ঠিক হয়ে গিয়েছিল ফিল্মের এই উপর-নিচে ফুটো ও প্রত্যেক ছবি (frame) পিছু চারখানা ফুটো অবধি।
১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে কোডাক নির্মাতা ইস্টম্যান একধরনের নমনীয় পাতলা ফিল্ম তৈরি করলেন। কোডাক ক্যামেরায় এই ছবি তুলে ইস্টম্যান কোম্পানির কাছে পাঠাতে হত বাকি কাজগুলো করার জন্য। ব্যাপারটা সময়সাপেক্ষ হলেও রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠল।
১৮৮৯-এর ২ সেপ্টেম্বর Eastman Kodak Company-র কাছে চলচ্চিত্র তৈরির জন্য ফিল্মের অর্ডার এল এবং এটাই ইস্টম্যান কোম্পানির প্রথম চলচ্চিত্র তৈরির জন্য ফিল্ম সরবরাহ।
আড়াইশো বছর আগের কারচার নির্মিত ম্যাজিক লণ্ঠনে এডিসন জ্বেলে দিয়েছিলেন বৈদ্যুতিক আলো।
১৮৮৯ সালেরই ৬ অক্টোবর এডিসন ইউরোপ থেকে ফেরার পর তাঁকে চমকে দেওয়ার জন্য ডিকশন তাঁকে সোজা স্টুডিওতে নিয়ে আসলেন ও যা দেখালেন তাতে এডিসন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। তিনি দেখলেন পর্দায় প্রক্ষিপ্ত ছবিতে ডিকশন তাঁকে টুপি খুলে অভিবাদন জানিয়ে বলছেন, ‘Good morning, Mr. Edison, glad to see you back. I hope you are satisfied with the kineto-phonograph.’
এই ঘটনা ঘটার আগে ডিকশন অবশ্য চার্লস ব্যাচেলর নামে এক কর্মীর সহায়তায় সেপ্টেম্বর মাসে ওয়েস্টওরেঞ্জ স্টুডিওরই অন্যদিকে আরও একটা বড় জায়গা নিয়ে স্টুডিওর পরিসর বাড়িয়ে নিয়েছিলেন, ৫নং ঘরটা খালিই পড়েছিল। এতে এডিসন কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধ হলেও ডিকশনের সাফল্য তাঁকে চমৎকৃত করেছিল।
ডিকশন ফনোগ্রাফ রেকর্ডের আওয়াজের সঙ্গে প্রক্ষিপ্ত ছবির সমন্বয়সাধন করে ছবিকে সবাক করার চেষ্টা করেছিলেন। বলা যেতেই পারে পৃথিবীর প্রথম চলচ্চিত্রটি ছিল সবাক।
এডিসনের ওয়েস্টওরেঞ্জ স্টুডিওর ৫নং ঘরে যে শিশু-চলচ্চিত্রের জন্ম হয়েছিল, তার জন্য এডিশন ও ডিকসন যেমন পরস্পরের কাছে ঋণস্বীকার করেছেন, তেমনই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তাঁরা দুজনেই সমান স্মরণীয়।
এডিসনের Peep Show Machine-এর নাম রাখা হয় Kinetoscope। এর ভেতরে ছিল একটা ব্যাটারিচালিত মোটর, যা পঞ্চাশ ফুট ফিল্মকে ক্রমাগত বিভিন্ন পুলির সাহায্যে ঘুরিয়ে চলত। একটা দ্রুত ঘূর্ণায়মান শাটার ছবির এক-একটা ফ্রেমকে দৃষ্টিপথের সামনে আলোকিত করে তুলত। ছবি তৈরির এই দীর্ঘমেয়াদি পথে এ এক সাড়াজাগানো পদক্ষেপ।
পঞ্চাশ ফুট ফিল্মের প্রতি ফুটে থাকত ষোলোটা করে ছবি।
সেলারস, হেইল, আইজাক, মেরিজের কারিগরি স্থিরচিত্র গ্রহণের কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, সেগুলি ছিল গতিশীল বস্তুর তাৎক্ষণিক মুহূর্তের ছবি। তবে এটা অনস্বীকার্য যে লক্ষ্য ছিল সার্বিক গতি গ্রহণের।
১৮৯৩ সালে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের চারশো বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শিকাগোয় বিরাট উৎসব— great columbian exposition-এ আমেরিকান ফটোগ্রাফ কোম্পানির মালিক থমাস লমবার্ড চেষ্টা চালালেন মেলায় যাতে Kinetoscope দেখানো যায়। কিন্তু এডিসন মত না দিলে কাজটা সম্ভব ছিল না, তাই মেলার কর্মকর্তা জন বয়েড থ্যাচার, প্রধান সহকারী আর গ্যামন ও তাঁর শ্যালক নর্মান চার্লস র‌্যাফ এডিসনকে রাজি করিয়ে— র‌্যাফ, গ্যামন ও লমবার্ডকে নিয়ে গঠিত হল কিনোটোস্কোপ কোম্পানি। এই মেশিন ও বেশ কিছু ছবি তাড়াতাড়ি তৈরি করে ফেলার জন্য নির্মিত হল বিশ্বের প্রথম ফিল্ম স্টুডিও, ‘ব্ল্যাক মারিয়া’, ১৮৯৩-এর ফেব্রুয়ারি মাসে।
ঘূর্ণায়মান একটা পাটাতনের ওপর তৈরি এই স্টুডিও, সূর্যের আলোর দিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঘুরতে পারত। প্রয়োজনে স্টুডিওর ছাদও খুলে দেওয়া যেত। স্টুডিওর ভিতর একদিকে ছিল মঞ্চ, অন্যদিকে ডার্করুম। ডিকশন ব্ল্যাক মারিয়া-কে অনেক সময়ই The Kinetographic Theatre নামে অভিহিত করেছেন। ক্যামেরার সামনে থাকবে কে? চ্যাপলিনের বয়স তখন তিন আর মারি পিকফোর্ড জন্মাননি। অগত্যা সেই অট-কেই আবার আসতে হল অভিনেতার ভূমিকায়। অটের হাঁচি তোলার ছবি নেওয়ার সময় একটু গপ্পো বা sequence জুড়ে দেওয়া হল।

অট চোখ বন্ধ করে অফিসে বসে আছেন। বেয়ারা তাঁর নাকের সামনে লঙ্কার কৌটো নেড়ে চলে যায়, যার ফলে হাঁচি। এই প্রথম ছবিতে গল্প ও closeup-এর ব্যবহার করা হল আমেরিকায়। একাধারে ডিকশনই ছবির চিত্রগ্রাহক, পরিচালক ও রসায়নাগার কর্মী। একে একে তৈরি হল Trick Dog Teddy, The Gaiety Girls, Mexican Knife Thrower ইত্যাদি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, শিকাগোর বিশ্বমেলা চলাকালীন কিনেটোস্কোপ মাধ্যমে এসব ছবি দেখানো গেল না, সময়মত না পৌঁছনোর জন্য।
১৮৯৪-এর ১৪ এপ্রিল ১১৫৫ ব্রডওয়ে, নিউ ইয়র্কে কিনেটোস্কোপের প্রথম বাণিজ্যিক প্রদর্শনী হয়। তবে বিশ্বমেলাতে ডুপ্র‌্যাক্সিনোস্কোপ, ত্যাচাইস্কোপ ইত্যাদি মাধ্যমে চলমান ছবি দেখানো হয়েছিল ও হাজারো দর্শকের মধ্যে রিচমন্ড ভার্জিনিয়া থেকে আসা থমাস আর্মাট (১৮৬৬-১৯৪৮) ও তাঁর ভাই জে হান্টার আর্মাট-এর ত্যাচাইস্কোপ প্রদর্শনী দেখাটা পরবর্তীকালে চলচ্চিত্র শিল্পকে দ্রুত তার লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে।
১৮৯৪-তেই নর্থক্লিফ ভার্জিনিয়াবাসী ল্যাথামদের দুই ভাই গ্রে ল্যাথাম ও অটওয়ে ল্যাথাম-এর ওষুধে ব্যবসা ভাল না চলায় তাঁরা কিনেটোস্কোপের ব্যবসার দিকে ঝুঁকলেন। এডিসনকে রাজি করিয়ে তোলা হয়েছিল ১৫০ ফুট লম্বা মুষ্টিযুদ্ধের ছবি। আগস্ট মাসে নিউ ইয়র্কে ছ’খানা কিনেটোস্কোপ যন্ত্রে দেখানো হল ল্যাথামদের ছবি। ভিড় সামলাতে সেদিন পুলিশ ডাকতে হয়েছিল।
ল্যাথামদের গবেষণাগার তৈরি হল ৩৫নং ফ্র‌্যাঙ্কফোর্ট স্ট্রিটের স্কট বিল্ডিংয়ে। জায়গা মাত্র ১২ ফুটx১৫ ফুট। ল্যাথামদের প্রথম ছবি লিওনার্দো ও কাশিং-এর মুষ্টিযুদ্ধের পর আবার তৈরি করা হল জেমস করবেট ও পিটার কার্টনির মুষ্টিযুদ্ধের ছবি। করবেট ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন। তিনি পরিচিত ছিলেন ‘জেন্টলম্যান জিম’ নামে। করবেটের সঙ্গে ল্যাথামদের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর হল, যাতে তিনি অন্য কোম্পানির হয়ে কাজ করতে না পারেন। করবেট পৃথিবীর প্রথম চিত্রতারকা যিনি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। ছয় রাউন্ড ব্যাপী এই ছবির প্রতি রাউন্ড এক মিনিট স্থায়ী ও শেষ পর্যায়ে করবেটের মুষ্ঠ্যাঘাতে কার্টনির পতনের মাধ্যমে একে চলচ্চিত্র উপযোগী করে ছকে ফেললেন। ছবি সাংবাদিকতার দায়িত্ব অতিক্রম করে একধাপ এগিয়ে গেল। চলচ্চিত্র ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতার সূত্রপাত হল।
অ্যানাবেল মুর নামে এক নর্তকী এডিসনের স্টুডিওতে পঞ্চাশ ফুটের ফিল্মের সামনে তাঁর নৃত্যপ্রতিভা প্রদর্শন করেন। নাচকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বিভিন্ন রঙের ব্যবহারকে, প্রতিটি ফ্রেম হাতে রং করে সৌন্দর্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা মোটেই সহজসাধ্য ছিল না। তবে চলচ্চিত্র রঙিন করে তোলার এটিই ছিল প্রথম অবৈজ্ঞানিক প্রয়াস।
১৮৯৪-তেই ল্যাথামরা কিনেটোস্কোপ এগজিবিশন কোম্পানি থেকে আলাদা হয়ে ল্যামডা কোম্পানি নামে এক নতুন কোম্পানি গঠন করেন।
১৮৯৫-এর জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ল্যাথামদের ক্যামেরা একটা নতুন চেহারা পেল। ক্যামেরায় অতিরিক্ত লম্বা ফিল্ম পুরলে সময় সময় সাময়িক বিরতি ও গতির জন্য যে ঝাঁকুনি লাগত, তার ফলে ফিল্ম ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকত। বহু চিন্তাভাবনার ফলে রেক্টর একটা আলগা ফিল্মের ফাঁস (loop) তৈরি করলেন যা মূল ফিল্ম সরবরাহগুচ্ছের আরও একটা ছোট্ট আবর্তনের সৃষ্টি করল। ফল হল অভাবনীয়। অনাবশ্যক ঝাঁকুনি থেকে রক্ষা পেল ক্যামেরা। সামান্য অথচ অসামান্য এই ফিল্ম ফাঁস সারা পৃথিবীতে ল্যাথাম লুপ নামে পরিচিত। এডিসনের কিনেটোস্কোপে ৪৫-৫০ ফুট ফিল্ম প্রদর্শনের সময়সীমা ছিল ১৫ সেকেন্ডের মত।
এডিসন-গিলমোরদের সঙ্গে প্রচণ্ড ঝগড়া, বাদানুবাদ শুরু হয় ১৮৯৫-এর ২ এপ্রিল ও তা সার্কিট কোর্ট অবধি গড়ায় এবং পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ১৯০০-র ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে।
ডিকশন এবার প্রজেক্টর তৈরির ব্যাপারে হাত লাগান। মার্চ মাস নাগাদ ল্যাথাম এই যন্ত্রের নাম রাখেন ‘প্যান্টোপটিকন’। ১৮৯৫-এর ২৯ এপ্রিল, রবিবার, ৩৫নং ফ্র‌্যাঙ্কফোর্ট স্ট্রিটে সাংবাদিকদের সামনে এই যন্ত্র প্রদর্শিত হয়। যদিও প্রক্ষেপণ যথেষ্ট খারাপ ছিল, তবু জনগণের প্রদর্শনী দেখার উৎসাহের অন্ত ছিল না।
১৮৯৫-এর ২০ মে ১৫৩ ব্রডওয়েতে জনসাধারণকে চার মিনিট সময়সীমার ছবিটি দেখানো হল। পৃথিবীতে প্রথমবারের মত জনগণের চোখের সামনে চলচ্চিত্র প্রক্ষেপণ করা হল। সি ফ্রান্সিস জেটকিনস (১৮৬৭-১৯৩৪) তাঁর তৈরি উন্নতমানের কিনেটোস্কোপের নাম দেন ফ্যান্টোস্কোপ (Phantoscope)। তখন প্রতি সেকেন্ডে আটচল্লিশটি ছবি প্রক্ষেপণ করা হত। থমাস আর্মাট এই যন্ত্রে গিয়ার লাগানোর ফলে (Boston Gear works) প্রক্ষেপণ মোটামুটি উপস্থাপনযোগ্য হল। সেইসময় সবচেয়ে সুন্দর প্রক্ষেপণ ছিল আর্মাটেরই, তবে আওয়াজে কানে তালা লাগার উপক্রম হত। ৩ ইঞ্চি মোটা পিতলের গিয়ার একবার থেমে, একবার চলে সেকেন্ডে আটচল্লিশটি ছবিকে গতি দিতে এই প্রবল আওয়াজের শব্দদূষণ।
১৮৯৫-এর অক্টোবর মাসে প্যারিসে ল্যুই ল্যুমিয়ের (১৮৬৪-১৯৪৮) কিনেটোস্কোপ দেখলেন। ওঁদের ছিল ফটোগ্রাফির ব্যবসা। ওঁদের জিনিসপত্রেরও যথেষ্ট কদর ছিল বাজারে। নিউ ইয়র্কে ইস্টম্যান কোম্পানির পর ওঁদের কারখানাই ছিল সবচেয়ে বড়। লিওঁ-তে (Lyons) ওঁদের কারখানার কর্মীসংখ্যা ছিল শ’তিনেক। ল্যুইয়ের দাদা অগাস্ট ল্যুমিয়ের (১৮৬২-১৯৫৪) উদ্যোগী হন প্রক্ষেপণ সমস্যা সমাধানে।
আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সেলুলয়েড কোম্পানি থেকে সেলুলয়েড আনিয়ে, ফাঁকা সেলুলয়েডের ফিতের ওপর নিজেদের কারখানার আলোক সংবেদনশীল রাসায়নিক লাগিয়ে চলচ্চিত্রের উপযোগী ফিল্ম বানিয়ে নিলেন। ল্যুমিয়েরদের প্রজেক্টর তৈরির সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা তৈরির কাজও চলতে থাকল। ১৮৯৪ থেকে ১৮৯৫ টানা একবছর চলল তাঁদের দুরূহ সাধনা। ফিল্মের খরচ বেড়ে যাওয়ার জন্য তাঁরা সেকেন্ডে ৪৮টা ছবি প্রক্ষেপণের বিরোধী ছিলেন ও সেকেন্ডে ১০ খানা ছবি প্রক্ষেপণ করে দেখলেন যে তা অত্যন্ত স্লথ হয়ে যাচ্ছে। অবশেষে সেকেন্ডে ১৬টি ছবি প্রক্ষেপণের সিদ্ধান্তে এলেন। এডিসনের যন্ত্রের শক্তির উৎস ছিল বিদ্যুৎ আর ল্যুমিয়েরদের যন্ত্র ছিল কায়িক শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। তাই ল্যুমিয়েরদের যন্ত্র ছিল অনেক সস্তা, ছোট এবং হালকা। ক্যামেরার গায়ে হাতলের মোচড়ে খাঁজকাটা দাঁতালো যন্ত্রাংশ একবারে টানতে পারত ৮ খানা ফ্রেম, অর্থাৎ দুবার হাতল ঘোরালেই কাজ শেষ। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, এই যন্ত্র হাতে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়া যেত যত্রতত্র। ল্যুইয়ের তত্ত্বাবধানে এই যন্ত্র নির্মাণ করেছিলেন চার্লস মোয়াসঁ নামে এক যন্ত্রশিল্পী।
১৮৯৫-এর ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি পেটেন্ট পেলেন ও তাঁর যন্ত্রের নাম হল ‘সিনেমাটোগ্রাফ’ (Cinematograph), যা সংক্ষিপ্তাকারে সারা পৃথিবীতে সিনেমা বা কিনেমা নামে ছড়িয়ে পড়ল। ‘Le Repas de Bébé’ ছবিটি প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা পায়। যার বিষয় ছিল বাগানে ল্যুইয়ের দাদা অগাস্ট তাঁর স্ত্রী ও বাচ্চাদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করছেন।

>>> ক্রমশ >>>

চিত্র : গুগল

ছবিবৃত্তান্ত প্রথম কিস্তি

ছবিবৃত্তান্ত দ্বিতীয় কিস্তি

ছবিবৃত্তান্ত চতুর্থ কিস্তি

ছবিবৃত্তান্ত পঞ্চম কিস্তি

ছবিবৃত্তান্ত ষষ্ঠ কিস্তি

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »
শুভদীপ রায়চৌধুরী

শুভদীপ রায়চৌধুরীর দুটি কবিতা

অন্ধকারের তুমি,/ নরম পুঁইমাচার নিচে সবজেটে বহুরূপী/ তোমাকে আলোর কণার ভেতর গড়িয়ে যেতে দেখব বলে/ আমি এই পাগলের পৃথিবী ছেড়েছি/ টিলাপায়ে বাস করি/ নাম, সমুদ্রসম্ভব।/ পাতার ইমারত আছে, আছে/ কিছু দৈনন্দিন কাজ/ মাছ ধরার নাম করে/ বালসাভেলায় অনেকদূর যাওয়া/ যতদূর ভেসে গেলে ঢেউয়ের চুম্বন থেকে/ ছোবলটুকু আলাদা করাই যায় না

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | দ্বিতীয় পর্ব

সকালে চিড়ে নারকেল-কোরা আর গুড় খেয়ে আমি সাইকেলে চেপে ছুটিয়ে দিলাম— আট মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে যখন পৌঁছালাম— তখন গণগণে রোদ্দুর তেষ্টায় গলা কাঠ। ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে একটা বাড়ি দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়লাম যদি একটু জল খাওয়া যায়। বাড়ির বারান্দায় একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসেছিলেন— তার কাছে উদ্দিষ্ট ঠিকানার কথা প্রশ্ন করতেই তিনি উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা পাটি পেতে বসতে দিলেন। আমি আবার জল চাইলে বললেন, “দাদাঠাকুর ব্যস্ত হবেন না— ঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন।”

Read More »