Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

তাঁর হাতে বই, মাথায় আলোকিত মানুষ

‘তবুও কোথাও তার প্রাণ নেই ব’লে অর্থময়/ জ্ঞান নেই আজ এই পৃথিবীতে; জ্ঞানের বিহনে প্রেম নেই।’ —জীবনানন্দ দাশ
উপলব্ধিতে এসেছিল কবির এ কথা। তারও আগে, আরও আগেও এসেছে। এসেছে বলে এই বাংলার আপাত রুগণ, দীর্ণ, জীর্ণ স্রোতাবহে উত্তাল বান ডেকেছে সময়ে সময়ে। মনে করিয়ে দিয়েছে এ কথা যে, আমরা জানি, যাবতীয় স্মৃতিধূসরতা সত্ত্বেও জানি সে কথাটি। আমাদের সংক্ষুব্ধ, ক্লান্ত সময়েও সে কথা মনে করাবার মানুষরা আছেন; এ কথা যে আশ্চর্যের, এ কথা গৌরবের।
অনেকদিন আগে বইমেলা উপলক্ষে গিয়েছিলাম সাঁইথিয়া। সাঁইথিয়াতে একটি বইয়ের দোকানের মালিক এবং প্রকাশকের সঙ্গে দেখা মেলাতে। বই নিয়েই কথা হচ্ছিল। একদিন তিনি দোকানে বসে আছেন। এমন সময় দোকানে ঢুকলেন একজন নিম্নবিত্ত মানুষ। লুঙ্গি এবং একটি টি-শার্ট পরিহিত। বই চাইলেন তিনি। মালিক বরুণ ভাণ্ডারি বইটি একটি প্যাকেটে ভরে দিলেন। অথচ মানুষটি প্যাকেট খুলে লুঙ্গির কোচড়ে বইটি ভরে নিলেন। জিজ্ঞাসা করাতে বললেন, ভ্যান-রিকশা টানেন, সেখানে বই দেখলে অনেকেই অনেক কথা বলবে। সাঁইথিয়ার অরুণ সাহার এই বই ভালবাসা বরুণ ভাণ্ডারিকে দিয়ে নতুন একটি কাজ করিয়ে নিয়েছে। তিনি এখন ভাল পাঠক খোঁজেন সারা বছর এবং তাঁদের পুরস্কৃত করেন। বইয়ের জন্য এ কাজ। শুনতে শুনতে মন ভরে যাচ্ছিল। ভাবছিলাম এমনও তো সত্যি হয় তাহলে, এখনও, এই সময়েও।
তার কিছুদিনের মধ্যেই যে আরও বড় এক সত্যের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ব সেদিন ভাবিনি। দাঁড়ালাম যখন দেখলাম সৌম্য, শান্ত এক পুরুষকে; যাঁর অন্তরে আগুনের ঝকঝকে দীপ্তি। যিনি জানেন আগুন থেকে আলো আসে, তবে তার আগে আসে দহন। সর্বগ্রাসী বেদনাময় দহনের উৎসব থেকেই জন্ম নেয় আলো। তিনি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ১৯৩৯ সালে কলকাতার পার্ক সার্কাস অঞ্চলে জন্মেছিলেন। তাঁর নিজের কথায়, বর্তমান বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার করটিয়াতেও জন্ম হতেই পারত। তাঁর আব্বা ওখানে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন। তা হল না, তাঁর নানা তাঁর আম্মাকে কলকাতায় নিজের কাছে নিয়ে চলে আসায়।
কলকাতা এবং করটিয়া দুই অঞ্চলেই কেটেছে তাঁর বাল্যকাল। এই দুই অঞ্চলের কথাই উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। কলকাতায় জন্মের বিষয়ে তাঁর গর্ব অনুধাবন করা যায়। একই রকমভাবে করটিয়া সম্পর্কেও তিনি স্বাভিমানী। বস্তুত সেখানকার জমিদার চাঁদ মিয়া করটিয়াকে বাংলার আলিগড় বানানোর সংকল্প নিয়েছিলেন। জমিদারীর বৃহদাংশ ওয়াকফ্ করে তার ব্যয়ে করটিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠানটি চালানোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা মেলানো এক বিরাট শিক্ষাসত্র খুলেছিলেন তিনি। সেই শিক্ষাসত্রের স্বপ্ন ও আন্তরিকতা ছাপ ফেলেছিল নিশ্চয়ই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ওপর।
স্বপ্নের কথা বললাম, আন্তরিকতার কথাও বলি। আবু সায়ীদের অসামান্য রসময় লেখা থেকেই জানতে পারি সে সব কথার কিছু অংশ। জ্ঞানী-গুণীদের সমাবেশ সেই কলেজ। দর্শনে সাইয়াদ আবদুল হাই অধ্যাপক হলে বাংলাতে জ্ঞানেশ্বর ভট্টাচার্য। পড়াশোনার পাশাপাশি গান-বাজনা-নাটক-সাহিত্যে মুখর হয়ে থাকে সে পরিবেশ। সেখানে অধ্যাপকদের তাঁদের তাঁদের বিষয়ের নাম দিয়েই ডাকার রেওয়াজ ছিল। সুরসিক সুসাহিত্যিক এবং কলেজের অধ্যক্ষ ইব্‌রাহীম খাঁ সাহেব রীতিটি চালু করেছিলেন। ইংলিশ সাহেব, আরবি সাহেব, হিস্ট্রি সাহেব ইত্যাদি। কিন্তু দর্শন বা ফিলোজফির ক্ষেত্রে কেউ তার সঙ্গে সাহেব জুড়তেন না। বলতেন ‘কেতাব সাহেব’। আবু সায়ীদের মত হল, অত ভারী ‘দর্শন সাহেব’ বা ‘ফিলোজফি সাহেব’ বলাটা বাঙালির স্বাস্থ্যে কুলোত না। আবু সায়ীদকে লেখাটার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলাম আকাশবাণীর জন্য তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার সময় আমাদের নিজস্ব আলাপচারিতায়। যে কথাটা জানা হয়নি তা হল, বাংলা যিনি পড়াতেন তাঁকে ‘বাংলা সাহেব’ বলে ডাকা হত কী না। হলে উনিশ শতকীয় বাঙালি চাকুরিজীবীর এক লৌকিক সন্দর্ভও রচিত হতে পারত রসিকতায়।
সে কথা অজানাই আপাতত। যা জানার, তা হল এই যে শিক্ষাবিস্তারের আন্তরিক প্রয়াস তাকে আমরা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের পরবর্তী কর্মকাণ্ডে পেলাম কতটা। আবু সায়ীদ বলছিলেন তাঁর ষাটের দশকের লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের কথা। ‘কণ্ঠস্বর’ পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন যুবক আবু সায়ীদ। অন্যরা লিখবেন, তাঁদের স্বরকে পৌঁছে দিতে হবে বলে তিনি নিজের লেখার চাইতে সম্পাদনাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন সেদিন। তখন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন পাওয়া দুর্ভর, বাণিজ্য নেই, সম্পদ সৃষ্টি সমাজে কম, হলেও তার চলন অতি সীমিত। সে অবস্থায় এ এক বুনো ঘোড়াকে বশ করার প্রয়াস।
যে উদ্যমে বাংলা বিভাগের সবচেয়ে বোকা ছাত্রটিকে বোঝাতেন, সেই একই উদ্যমে করেছেন পত্রিকা। একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবার সুযোগ পেয়েও ছেড়ে দিয়েছেন ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগে পড়ানোর জন্য। বক্তব্য ছিল, উজ্জ্বল সব ছাত্র ঢাকা কলেজে, তাদের ছেড়ে যাওয়া চলে না। পড়ানো সম্পর্কে তাঁর বক্তব্যটি এখানে অনুধাবনীয়।
‘ছেলেবেলায়, স্কুল থেকে কলেজে উঠে, অর্থনীতির বইয়ে পড়েছিলাম কেন একজন শিল্পপতি, কন্ট্রাক্টর বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীর চেয়ে একজন শিক্ষকের বেতন কম। যুক্তি হিসেবে সেখানে বলা ছিল একজন শিক্ষকের জীবন কাটে মার্জিত, পরিশীলিত পরিবেশে, বৈদগ্ধ্যময় ব্যক্তিদের সাহচর্যে, উচ্চতর জীবনচর্চার অবকাশময় আনন্দে। জীবনের সেই মর্যাদা, তৃপ্তি বা শান্তি ঐ ব্যবসায়ী বা নির্বাহীর জীবনে নেই। এই বাড়তি প্রাপ্তির মূল্য দিতে শিক্ষকের আয় তাদের তুলনায় হয় কম। ঢাকা কলেজের শিক্ষকতায় ঐ তৃপ্তি আমার এত অপরিমেয় হয়েছিল যে কেবল বেতন কম হওয়া নয়, আমার জন্য হয়ত বেতন না-থাকাই উচিত হত। এই পাওয়া যে কতটা তা বুঝেছিলাম কিছুদিনের জন্য অন্য কলেজে গিয়ে।’ —আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর জীবনী : উল্লেখযোগ্য স্মৃতি (৩য় অনুচ্ছেদ)
সেই তৃপ্তির জন্যই সম্পাদনার কাজ। জানতে চেয়েছিলাম নিজে লেখা থেকে সরে যাওয়াটাকে কেমন লাগে। এই তৃপ্তির কথা বলছিলেন। বলছিলেন সে সময় যাঁরা এই পত্রিকার সঙ্গে জড়িয়ে তাঁরা সকলেই বাংলাদেশের সাহিত্যক্ষেত্রে উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক। শুধু তাই নয়, পথপ্রদর্শক। এ তাঁর তৃপ্তি তো বটেই। অতৃপ্তি যদি থেকে থাকে তা নিজেকে নিয়ে। বহুবার বলেছেন যে, যদি জীবনের শুরুর দিকে ভেবে নিতেন যে একটা দিন হয় বাইশ ঘণ্টার তাহলে নিজের লেখাটা লিখতে পারতেন আরও। সেক্ষেত্রে জাতীয়, সামাজিক সব কাজ শেষ করেও নিজের জন্য অন্তত দু’ঘণ্টা তাঁর থাকত।
কিন্তু নানা সময় সে দু’ঘণ্টাও দিয়ে দেওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্যাশন। দাঁড়িয়েছে স্বপ্ন সার্থক করার তাগিদ। ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’ যে। একবার সাহিত্য আন্দোলন তো পরের বার টেলিভিশনের প্রেজেন্টার জীবন। কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন যে, সে সময় ভাবতেন একদিন এ কাজ করতে করতেই মঞ্চে তাঁর পতন ঘটবে, মৃত্যু আসবে, সেই হবে সার্থকতা। বলছিলেন তাঁর প্যাশনের প্রসঙ্গে। সেই প্যাশন ছিল বলেই তো বাংলাদেশে দীর্ঘকাল ধরেই সর্বাদৃত টেলিভিশন উপস্থাপক ছিলেন। এবং প্যাশন ছিল বলেই বাংলাদেশের জন্মেরও আগে থেকে ভাবতে পেরেছিলেন জাতি গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা।
সে সূত্রে বলাই চলে যে, জাতি গঠনের ধারণাটি উনিশ শতকীয় বাঙালির বোধের বিকাশ থেকেই এসেছে। যে সময় তাঁর জন্ম, যে কর্মকাণ্ডের আবহাওয়া তাঁর চারপাশ জুড়ে চলেছে, তাতে জাতির বিকাশ কত প্রয়োজনীয় সে তাঁকে খুব মাথা ঘামিয়ে বার করতে হয়নি। শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিকতাতেই এসেছে। ১৯৪৭-এ ভারত বিভাজন এবং পাকিস্তান সৃষ্টির মধ্যে দিয়েই পূর্ব বাংলা চলে গেল সেখানে। কেন গেছিল সে কারণ বিশ্লেষণের জন্য এই লেখা নয়। কিন্তু গিয়েছিল। এবং সে যাওয়া যে সুখের হল না তা বাংলাদেশ নির্মাণেই স্পষ্ট।
বাংলাদেশ নির্মাণ কথাটি আমি ব্যবহার করলাম বটে, কিন্তু তার অর্থ কী? দেশ মানে যেমন খুশি একটা সীমান্ত বানিয়ে বসা? তার চারপাশে পাহারা আর ভেতরে পাহারার ব্যবস্থা? বাইরের এবং ভেতরের শত্রুকে ঠেকানো? এই ঠেকানোর নেতিবাচক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই যে কোনও রাষ্ট্র জন্মায়, তা কি দেশ? যাঁরা দেশগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন তাঁদের প্রথমেই এ সম্পর্কে ভাবতে হয়। এবং তাঁরাই সবার আগে বুঝতে পারেন যে দেশ গঠন একটি ইতিবাচক কাজ।
এই উপমহাদেশের অন্যান্য যে কোনও রাষ্ট্রের মত বাংলাদেশও অন্তর এবং বাইরের অস্বাস্থ্যে ভুগেছে, ভুগছে। উপনিবেশের প্রচণ্ড মার তার ওপর দিয়ে গিয়ে তাকে অস্বাভাবিক রুগণ করে তুলেছে। সে রুগণতার নিষ্কৃতি কেমন করে হবে? সে সময় রাষ্ট্রনেতারা কেমনভাবে ভেবেছেন তার একটি রূপরেখাও দিয়েছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তাঁর মতামত সকলের পছন্দ নাও হতে পারে, কিন্তু মতামতটিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বা সাধারণভাবে উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে উড়িয়ে দেবার কোনও জায়গাই নেই।
শুরু করি সামাজিক সংগঠন দিয়েই। তাঁর মতে, এ ধরনের সংগঠনে সাধারণ সম্পাদক একজন থাকলে যুগ্ম দুই-চারজন। যুগ্ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরপর। এভাবে বেড়ে চলে হাজারে হাজারে পদ। ফলে ‘পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি,/ মূর্তি ভাবে আমি দেব— হাসে অন্তর্যামী।’ এমন ব্যবস্থাতে লোক মেয়র হতে চায়, মশা মারতে চায় না। সংগঠন থেকে নিতে চায়, দিতে চায় না। সাধারণভাবে এই উপমহাদেশে এ অত্যন্ত দৈনন্দিন বিষয়। এমন হালে সংগঠককে ভাবতেই হয় সংগঠনের কর্মপদ্ধতি নিয়ে। শেখ মুজিবের ‘বাকশাল’ নিয়ে নানা সমালোচনার পাশাপাশিই ভাবা দরকার তাই শিক্ষা ও চেতনাহীন গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা নিয়েও। এবং তিনি লেখায় উল্লেখ করছেন যে সামরিক শাসকেরা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকেই সামরিক শাসকের ক্ষমতা বলে রাষ্ট্র চালিয়েছে বাংলাদেশে। বর্তমানে সংসদীয় গণতন্ত্রেও শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ সুবিধা ভোগ করেন উত্তরাধিকার সূত্রে, তাই কিছু কাজ করতে সক্ষম। নতুবা সকলের স্বার্থের টানাটানিতেই কাজ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
সমালোচনা এর তীব্র হবে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। গণতন্ত্রের দাবি; অধুনাতন বিশ্বের এতটাই প্রবল দাবি এবং পলিটিক্যাল কারেক্টনেস একে এতটাই সমর্থন করে যে এর সমালোচনা করতেই হয়। সেই গণতন্ত্রের দোহাই দিয়েই তো বিদেশি নানা শক্তিও নানা দেশ আক্রমণ থেকে অভ্যুত্থান ঘটানোর কাজ করে চলে। সিআইএ-র পিছনে থাকা আমেরিকা অথবা আফগানিস্তানে একদা বকলমায় শাসন করা সোভিয়েত সকলেই একই গণতন্ত্রের যুক্তিই তো দিয়েছ। কথা হচ্ছে সে কেমন গণতন্ত্র? যে গণতন্ত্রে পরোক্ষ নির্বাচন এবং ভোট কেনাকাটা থেকে পেশীশক্তি; সবটাই রাজা হয়ে অঞ্চলে অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়ায় সেই গণতন্ত্র? নাকি সেই গণতন্ত্র যেখানে আঙ্গরিক ‘ইনফর্মড ডিসিশন’ নেবেন তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে? নাকি সে সিদ্ধান্ত আসলেই ‘ইনফর্মড’ নয় শুধু, ‘নলেজেবল’ হবে?
ভেবে দেখলে তৃতীয়টিই তো কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু তাই কি সত্যি এই উপমহাদেশে? তবে কি উনি রাজতন্ত্র চাইছেন? তবে কি এ প্রশ্ন তুলে আমি রাজতন্ত্রের বা স্বৈরাচারের জয়ডঙ্কা বাজাচ্ছি? না, একান্তভাবেই নয়। প্রশ্নটা এসেছে আমাদের দৈনন্দিনের অভিজ্ঞতা থেকে, আমাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার থেকে। উত্তর যদি জ্ঞানচর্চায় থেকে থাকে তাহলে সে জ্ঞানচর্চা হবে কেমন করে তা ভাবার মধ্য দিয়েই এসেছে। স্কুল-কলেজ সবই তো রয়েছে, তবে কেন জ্ঞানের এত দৈন্য সর্বত্র? এত এত ডিগ্রিধারীও তো আছেন শাসনক্ষমতায়, তাহলে কেন এত দৈন্য এবং দুর্নীতি?
ওঁর দেওয়া একটি উদাহরণ আমি এখানে আনতে পারি প্রসঙ্গত। ঢাকার নজরুল ইসলাম এভিনিউর বাংলামোটর এলাকায় রাস্তার দু’দিকে একদিন দেখলেন ফুটপাথে বড় গর্ত করা হচ্ছে। ফুটপাথের প্রস্থ গড়পড়তা চার ফুট। সেখানে সাত ফুট অন্তর অন্তর করা গর্তগুলো হচ্ছে তিন ফুট ব্যাসের, হচ্ছে বকুলগাছ লাগানোর জন্য। এক ফুট মানুষের চলার রাস্তা থাকবে। সে গর্ত হল, গাছও লাগানো হল এবং পথচারীদের পায়ের চাপে মারাও গেল সে সব গাছ কচি অবস্থাতেই। বছরের পর বছর চলেছে এমন। ওঁর প্রশ্নটা ছিল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী কী করে এতটাই নির্বোধ হতে পারেন যে এভাবে চলছে একটা বিষয়? প্রশ্নটাকে বাড়ালে দেখা যাবে এ প্রশ্নের গতি আসলে শাসনের উচ্চতম স্তর অবধিই বিস্তৃত। এবং কোনওভাবেই নিজ স্বার্থের বিষয় নিয়ে শাসনে থাকা ব্যক্তিরা এতটা মূর্খ না।
কিন্তু একধরনের মূর্খামি এঁদের থাকে একথাও তো সত্যি। সেই মূর্খামি অনেক বড় আকারের মূর্খামি। ঢাকা শহর বা বাংলাদেশ অথবা অন্য কোনও শহর, নগর, গ্রাম, অরণ্য এ সব পৃথিবীর বাইরে না। তার ভালমন্দে পৃথিবীর এসে যায়। এমন এসে যায় যে একদিন এই ছোট ছোট মন্দের স্তূপ জমে জমে ভয়ংকরকে তাদের ঘরের দরজায় এনে দাঁড় করাবে। সে ভয়ংকর হরিপদ কেরানি বা মহারাজা ভোজ কাউকেই তাঁর পদে চেনে না। সে বিপদের কাছে সবাই আপদমাত্র। এতদূর অবধি কি তাঁরা ভাবেন? না ভাবেন না। ভাবেন না যে সে সবটাই তাঁদের দোষ এবং লোভ বলে ছেড়ে দিলে অন্যায় হবে।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের প্রায়শই উল্লিখিত আরেকটি উদাহরণের কথা বলি এখানে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সবে গড়ে তুলেছেন। পাঁচ বছর স্বল্পসংখ্যক ছাত্রছাত্রী নিয়ে কাজ করে দেখেছেন যে ফল অত্যন্ত সুখকর। এবারে তার পরিসর আরও বাড়াবেন বলে গাড়ি নিয়ে বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত চষে বেড়াচ্ছেন। স্কুলে স্কুলে কলেজে কলেজে যাচ্ছেন। সে সময় তাঁকে এমন প্রধানশিক্ষকেরও মুখোমুখি হতে হত যাঁদের বক্তব্য বই পড়ে পড়া নষ্ট হবে। অর্থাৎ সিলেবাসের বাইরের বই পড়লে পড়া নষ্ট। স্বভাবসিদ্ধ রসিকতায় আবু সায়ীদ উত্তর দিয়েছেন, বাক্যটার গঠনই ঠিক করছেন না প্রধানশিক্ষক মহাশয়। পড়লে পড়া নষ্ট হবে কী করে? তারপর তাঁকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন কেন বই পড়া জরুরি ইত্যদির।
এবং বারেবারেই তিনি বলেন যে এই জাতীয় প্রধানশিক্ষক বা অভিভাবকেরা কেউ মানুষ খারাপ এমন না, এদের কেউ বইয়ের উজ্জ্বল, স্বপ্নময় ও মহীয়ান জগতে নিয়ে যাননি সময়মত। কৈশোরে বা তারুণ্যের কালে এ স্বপ্ন অধরা বলেই এমন অবস্থা। তার প্রতিবিধান হল বই। বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্ভারের সঙ্গে তাকে পরিচিত করা। তাকে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করা। বইয়ে যে আলো, সে আলো যেন তার সত্ত্বায় ছড়িয়ে পড়ে তা নিশ্চিত করা। পরিকল্পনা তো হল, হবে কাজ কীভাবে?
কবীরের দোঁহার কথা বলেছেন আবু সায়ীদ। মদ ক্ষতিকর, তার কাছে মানুষ দৌড়য়। দুধ উপকারী, তাকে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হয়। বই উপকারী, বই অস্ত্র, সব শুনেছি আমরা। বলেওছি। কিন্তু তাকে মানুষের কাছে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা করিনি তেমন। লাইব্রেরি করে ভেবেছি এই তো হল। সেই যে আলেক্সান্দ্রিয়াতে অসামান্য লাইব্রেরি ছিল হে! অন্যদিকে শিক্ষার মান উপনিবেশের শিক্ষানীতির থেকে বাড়েনি, বরং সাধারণ স্তরে আরও নিকৃষ্ট হয়েছে। পুঁজি যত গলা টিপেছে তত বেশি বেশি শিক্ষা আবার কুক্ষিগত হয়েছে মুষ্টিমেয়র। কয়েকজনের জন্য উচ্চশিক্ষা, তারা দেশে-বিদেশে মোটা উপার্জন করবে। অধ্যাপক থেকে প্রযুক্তিবিদ নানা পেশাতে তারাই থাকবেন। বেশিরভাগের জন্য কয়েকটা ধাপের মধ্যে দিয়েই শিক্ষার অধিকার শেষ। প্রাথমিক শিক্ষা পেরোতেই আদ্ধেক শিক্ষাশিবির থেকে হারিয়ে যায়। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কান্না পায়। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে তো অনুবীক্ষণ দিয়ে খুঁজতে হয় অর্থনীতির সুবিধে-বঞ্চিতদের। কিন্তু এভাবেই এরা থাকবেন। কেন না এরা বর্ণাশ্রমে শূদ্রের দল। না থাকলে বাকি সমাজের শাসক ও প্রতিষ্ঠিতদের চলবে না।
তাহলে এদের কাছে বই নিয়ে যাবে কে? কে দেবে আলো? কে বানাবে আলোকিত মানুষ? তার স্বপ্নেই জন্মেছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। ঢাকা কলেজ সংলগ্ন এডুকেশন এক্সটেনশন সেন্টারের (বর্তমানে ‘নায়েম’) একটি কক্ষে শুরু হল এর যাত্রা। সাতষট্টি বছরের প্রবীণ ছাত্র এবং রেডিওর সাবেক মহাপরিচালক জনাব আশরাফউজ্জামান খান দিয়েছিলেন পঁয়ত্রিশ টাকা। সেই দিয়েই ১৯৭৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর শুরু এ কেন্দ্রের যাত্রা। ১৯৮৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র চলে এসেছে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলের একটি ঠিকানায়। ১৪, ময়মনসিংহ রোড। বাংলাদেশের পঞ্চাশ শতাংশ থানা অঞ্চলে আজ এর উপস্থিতি। সদস্যসংখ্যা ক্রমে চল্লিশ লক্ষ ছাপিয়ে যেতে চলেছে। আরও বাড়বে কালে কালে সে নিশ্চিত। সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম বই আন্দোলন এটি। আন্দোলনের রূপকার নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
কিন্তু এ যাত্রা কি কণ্টকবিহীন? সাবেক সোভিয়েতপন্থীরা এঁকে বলতেন আমেরিকার মদতপুষ্ট। আমেরিকাপন্থীরা দেখতেন সোভিয়েতের হাত। আজ সোভিয়েত নেই। আমেরিকাতেও আজকাল খুব অসন্তুষ্টি নেই বেশিরভাগের। এককেন্দ্রিক বিশ্বের চেহারাতে যা হয়। এখন সামনে এসেছে নাস্তিক অথবা ভারতপন্থী হবার অপবাদ। কেন হয় এমন? কারণ আমাদের এই উপমহাদেশের দুর্বল অর্থনীতি, ক্ষীণজীবী রাষ্ট্রীয় শক্তি। পুঁজির বিকাশ বলতে বিদেশি পুঁজির সেবাদাসত্ব অথবা সরকারের ঘাড়ে বা বকলমে জনগণের ঘাড়ে চেপে উপার্জন। সে উপার্জন থেকে সমাজে ফেরা সম্পদের পরিমাণ অত্যন্ত কম। কেন না এই লুঠের জন্য লোকের প্রয়োজনও কমছে, বেশিটাই এখন সম্ভব অটোমেশনের সাহায্যে অথবা ভাড়াতে অস্থায়ী দিয়ে; যাকে পাওয়া যায় অতি কম পয়সায়। সমাজে অতি অতি সামান্য অংশের হাতে সম্পদ এবং বাকিদের হাল নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর হলে সামাজিক সংস্কারমূলক সংগঠনগুলো হাওয়া খেয়ে বাড়তে পারে না। তাই সে সব সংগঠন গড়ে ওঠে দেশি-বিদেশি সম্পদের সাহায্য নিয়েই। সে পথ মসৃণ নয়। সে পথেও অনেকেই বিত্ত অর্জনকেই সংস্কারের ছলে কাজ করে বসেন। এবং তা এত প্রকট যে মানুষ সংস্কারককে প্রায়শই সন্দেহ করে থাকে। ঠিক এ কারণেই আবু সায়ীদের পক্ষে বিদেশি সহায়তা শুরু থেকে এড়ানোটাই সব চাইতে যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়েছে।
তার পরেও প্রশ্ন এসেছে সাহিত্য কেন্দ্রের ঝাঁ-চকচকে ব্যবস্থাপনা নিয়ে। উন্নয়নশীল বলে কথিত এই উপমহাদেশের দেশগুলোতে বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে ওঠে চারতারা-পাঁচতারা হোটেলের সৌসাদৃশ্যে, রোগীর চিকিৎসায় যত মনোযোগ তার চাইতে বেশি থাকে নয়নসুখকর ও আরামদায়ক হবার দিকে, যাতে মোটা বিল করতে অসুবিধে না হয়, রোগীর পরিবার আগেই বেশ মেনে নেয় এ হল খুব হাসপাতাল। অথচ বই পড়ার জন্য যেখানে ব্যয় করতে হচ্ছে না সেখানের পরিবেশ সুসহ এবং সৌকর্য্যে আস্থাশীল হলেই কথা আসে, কোথা থেকে আসছে টাকা তার। এটা প্রমাণ করে জ্ঞানকে আমরা দারিদ্রের সঙ্গে আবশ্যকীয়ভাবে যুক্ত করে নিয়েছি। দেশি ধনিক এবং অন্যান্যদের অর্থসাহায্যে গড়ে তুলেছেন আন্দোলন আবু সায়ীদ। সেইসব ধনিকদের নিয়ে দেশজুড়ে অজস্র অভিযোগ আছে। তাঁর নিজের কথায়, নিজেরও সংশয় ছিল এঁদের সাহায্য নেওয়া নিয়ে। কিন্তু পরে মনে হয়েছে টাকা তো নিজে ভাল বা খারাপ নয়। তাকে ভাল কাজে লাগালেই ভাল। সেই বেড়াল যে রঙেরই হোক না কেন ইঁদুর ধরতে পারে কী না মূল প্রশ্নের নীতি।
এর মধ্যে যদি দ্বন্দ্বের সন্ধান পাওয়া যায় তাহলে সে দ্বন্দ্ব উত্তর-ঔপনিবেশিক সমাজের ধনব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার দ্বন্দ্ব। যে কোনও সংগঠনই এই দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়তে বাধ্য। সমাধান সকলের এক হবে না অবশ্যই, কিন্তু দ্বন্দ্বটা থাকবেই। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রীয় কাজ হওয়ার কথা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি। তা তো হয় না। বরং আবু সায়ীদের মত মানুষেরা প্রতিপদে রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্র এবং শাসকদের সন্দেহের শিকার হন। গোষ্ঠীভুক্ত না হওয়াতে পদে পদে ঠোক্কর খেয়ে চলেন। ওঁরই নিজের কথা অনুযায়ী, নিরপেক্ষকেই সবার চাইতে বেশি আক্রান্ত হতে হয়। তারপরেও আবু সায়ীদ হেঁটে চলেছেন।
ভিখারির পায়ে লক্ষ্মী— এই আপ্তবাক্য সম্বল করে তিনি হেঁটে চলেছেন। কিন্তু এই ভিখারি সেই ভিখারি নন যিনি আত্মস্বার্থে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা করেছেন। এই ভিখারি ভিক্ষা করেন না, দাবি করেন। নিজের জন্য তিনি ভিক্ষা করেননি কখনও। বরং যেখানে চাইতে গিয়েছেন সেখানে সদর্পে বলেছেন, তিনি জাতির হয়ে চাইতে এসেছেন, জাতির জন্য। দান করাটা মহত্ব নয়, না করাটাই অন্যায়, কর্তব্যচ্যুতি।
একটি বিকাশমান দেশে সাহিত্যকে কেন্দ্র করে এমন এক আন্দোলন যা দেশগঠনের শরিক তাকে নিয়ে আশা রাখাই চলে। মানবিক যে সব গুণ এবং বোধের জন্ম এই আন্দোলন থেকে হওয়া সম্ভব তা দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করে থাকে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের এই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র তাই শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, এই উপমহাদেশের সকল অঞ্চলের জন্য একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কর্মশালা, যার ভবিষ্যৎ-এর সঙ্গে আমাদের সকলের ভবিষ্যৎ-ও জড়িয়ে রয়েছে।

চিত্র : লেখক
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

কাজী তানভীর হোসেন

ধানমন্ডিতে পলাশী, ৫-ই আগস্ট ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কয়েকদিন ধরে যা ঘটেছিল, তা শুরু থেকেই গণআন্দোলনের চরিত্র হারিয়ে একটা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পরিণত হয়েছিল। আজ আমরা কার্যক্রম দেখেই চিনে যাই ঘটনাটি কারা ঘটাচ্ছে। আগুন আর অস্ত্র নিয়ে রাজনীতি করার স্বভাব রয়েছে বিএনপি-জামাত ও রোহিঙ্গাদের। তারা যুক্তিবুদ্ধির তোয়াক্কা করে না।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য: কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

আমরা বিধানচন্দ্র রায়ের মতো মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছিলাম, যাঁকে খুব সঙ্গত কারণেই ‘পশ্চিমবঙ্গের রূপকার’ বলা হয়। পেয়েছি প্রফুল্লচন্দ্র সেন ও অজয় মুখোপাধ্যায়ের মতো স্বার্থত্যাগী মুখ্যমন্ত্রী। এবং জ্যোতি বসুর মতো সম্ভ্রান্ত, বিজ্ঞ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখর কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ। কিন্তু তাঁদের সকলের চেয়ে অধিক ছিলেন বুদ্ধদেব। কেননা তাঁর মতো সংস্কৃতিমনা, দেশবিদেশের শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্র নাটক সম্পর্কে সর্বদা অবহিত, এককথায় এক আধুনিক বিশ্বনাগরিক মানুষ পাইনি। এখানেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনন্যতা।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর দুটি কবিতা

তারার আলো লাগে না ভাল, বিজলীবাতি ঘরে/ জ্বালাই তাই অন্তহীন, একলা দিন কাটে/ চেতনা সব হয় নীরব, বেদনা ঝরে পড়ে/ যজ্ঞবেদী সাজানো থাকে, জ্বলে না তাতে ধূপ/ রাখে না পদচিহ্ন কেউ ঘরের চৌকাঠে/ শরীরে ভয়, নারীরা নয় এখন অপরূপ/ তারারা সব নিঝুম ঘুমে, চাঁদের নেই দেখা/ অর্ধমৃত, কাটাই শীত ও গ্রীষ্ম একা একা

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বিশ্বকর্মার ব্রতকথা

বিশ্বকর্মা পুজোতেও কেউ কেউ বিশ্বকর্মার ব্রত পালন করে থাকেন। এমনিতে বিশ্বকর্মা যেহেতু স্থাপত্য ও কারিগরির দেবতা, তাই কলকারখানাতেই এই দেবতার পুজো হয়ে থাকে। সেখানে ব্রতকথার স্থান নেই। আবার কোন অলৌকিক কারণে এবং কবে থেকে যে এদিন ঘুড়িখেলার চল হয়েছে জানা নেই। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন শহর ও গ্রামের আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ও নানা আকৃতির ঘুড়িতে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার কখনও বাংলাদেশে পা রাখেননি!

ভাবতে অবাক লাগে, ‘৭১-পরবর্তী বাংলাদেশ উত্তমকুমারকে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। টালিগঞ্জের কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেছিলেন সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে। অন্যদিকে ববিতা, অলিভিয়া ও আরও কেউ কেউ টলিউডের ছবিতে কাজ করেছেন। ঋত্বিক ঘটক, রাজেন তরফদার ও পরে গৌতম ঘোষ ছবি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশে এসে, কিন্তু উত্তমকুমারকে আহ্বান করার অবকাশ হয়নি এখানকার ছবি-করিয়েদের।

Read More »