Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ঋত্বিককুমার ঘটক: স্মৃতিতে

আমাদের যৌবনে, অর্থাৎ বিশ শতকের ছয়ের দশকের শেষ ও গোটা সাতের দশক জুড়ে সত‍্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটক যেন ছিলেন ‘দুই ভ্রাতৃসূর্যলোক’। মৃণাল সেন, তপন সিংহ বা হঠাৎ চমকে দেওয়া রাজেন তরফদার-হরিসাধন দাশগুপ্তরা হয়তো ছিলেন, কিন্তু ফিল্মি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ওই রায় আর ঘটক। তাঁদের ছবি কবে মুক্তি পাবে, তাই নিয়ে বছরভর আগ্রহ, কৌতূহল, প্রতীক্ষা ও উৎকণ্ঠা। এঁদের ছবি বছরের পর বছর চাখানায়, রকে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে-কফিহাউসে আলোচনার ঝড় তুলত।

এহেন সময়ে ঋত্বিক ঘটকের তখন পর্যন্ত নির্মিত ছবির পূর্বাপর (Retrospective) দেখানোর আয়োজন করল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ক্লাব। সে-উপলক্ষ্যে স্বয়ং আমন্ত্রিত হলেন ঋত্বিক। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ফিল্ম ক্লাবের সদস্য হওয়ার সুবাদে ঋত্বিকের সব ছবি দেখা আর পরিচালককেও, এ ছিল এক অসামান্য অভিজ্ঞতা।

প্রথম দিন তিনি এলেন, বক্তৃতা দিলেন, এবং আমাদের সকলের মন জয় করে নিলেন মুহূর্তে। তাঁর ছবি তৈরির নেপথ‍্যের কাহিনি শোনালেন, যে ভাষণে স্বাধীনতা ও দেশভাগ নিয়ে তাঁর বেদনার্ত উচ্চারণ আপ্লুত করল শ্রোতাদের। বক্তৃতার এক পর্বে তিনি গান্ধী সম্পর্কে তুমুল বিতর্কিত একটি উক্তি করেছিলেন। পরদিন সংবাদপত্রে তা প্রকাশিত হলে সংসদে পর্যন্ত আলোড়ন ওঠে তা নিয়ে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে ডেকে পাঠান। উক্তি প্রত‍্যাহার করতে বলেন। ঋত্বিক রাজি হননি। সেই থেকে ঋত্বিক আমাদের কাছে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ বা ‘সুবর্ণরেখা’ ছবির পরিচালক হিসেবে নন, তার অনেক অধিক। যিনি নজরুলের মতোই বলতে পারতেন, ‘আমি আপনারে ছাড়া করিনে কাহারে কুর্নিশ’।

ঋত্বিককে প্রথম দেখা থেকে তাঁর সঙ্গে আলাপ হতে লেগেছিল তিন বছর। ১৯৭২-৭৩ সেটা। আমরা বারোজন মিলে ‘সন্ধান সমবায় সমিতি’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা খুলি। আমি ছিলাম সেখানকার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। আমরা প্রথমেই ঋত্বিক ঘটকের প্রবন্ধের বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিই। সদস্যদের মধ‍্যে দুজন ছিলেন ঋত্বিকের স্নেহভাজন। পার্থ সেন ও প্রবীর সেন। পার্থদা বিখ‍্যাত নাট‍্যব‍্যক্তিত্ব সতু সেনের ছেলে। প্রবীরদা সতু সেনের আপন ভাগ্নে। সতু সেন ঋত্বিকের বন্ধুস্থানীয় ছিলেন।

ঋত্বিক অতি সহজেই রাজি হলেন। এ-সময় তাঁর লেখা সংগ্রহ করতে তাঁর বাসায় আমাকে একাধিকবার যেতে হয়েছিল। তবে ওরকম আগ্নেয় ব‍্যক্তিত্বের কাছে নিতান্তই অপ্রতিভ থাকতাম। এসময় তিনি সদ্য দুটি ছবি তোলা শেষ করেছেন। কলকাতায় বসে ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’, আর বাংলাদেশে গিয়ে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। ছবিদুটি করাকালীন তাঁকে দুটি কঠিন রোগের সঙ্গেও লড়তে হয়েছিল,— টি বি আর মানসিক ব‍্যাধি। শরীর জীর্ণ, দেখে কষ্ট হত।

সত‍্যজিতের ‘সীমাবদ্ধ’ রিলিজ করেছে তখন। মুখ ফুটে বেরিয়ে এল আমার, ‘সীমাবদ্ধ দেখেছেন?’ খানিকটা ব‍্যঙ্গাত্মক হাসি উপহার দিয়ে বললেন উনি, ‘বাংলা ছবি ইদানীং বড় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।’ যা বুঝবার বুঝে নিলাম।

ওইরকম দুর্বল ও রোগগ্রস্ত শরীর, অথচ দেখতাম তাঁকে, সদ্য যক্ষ্মা থেকে রেহাই পাওয়া মানুষটি অনবরত বিড়ির পর বিড়ি খেয়ে চলেছেন। সঙ্গে আরও এক মারাত্মক বিষ,— দিশি মদ। যেন তিনি পুষ্পের হাসি হাসবার জন‍্য জাহান্নামের আগুনে বসাতেই পরিতোষ বোধ করেন।

একদিন লেখা আনতে গিয়ে জানতে চাইলাম, আগামী ছবির কী পরিকল্পনা তাঁর। বললেন, বিষ্ণুপ্রিয়া নামে একটি মেয়ে সম্প্রতি ধর্ষিতা হয়েছে। ধর্ষণের পরে মেয়েটিকে মেরে ফেলা হয়। ঘটনাচক্রে ওই বিষ্ণুপ্রিয়ার জন্ম চৈতন্যজায়া বিষ্ণুপ্রিয়ার জন্মস্থানে, নবদ্বীপের মালঞ্চপাড়ায়। এই ঘটনা নিয়ে ছবি করবেন ভাবছেন। প্রযোজকের অপেক্ষায় আছেন।

যথসময়ে ঋত্বিকের বই বের করলাম আমরা। ‘চলচ্চিত্র, আমি ও অন্যান্য’। বইয়ের শিরোনাম তাঁর-ই দেওয়া। আমাদের আগ্রহাতিশয‍্যে বইটির প্রচ্ছদ-ও এঁকে দিলেন তিনি। ঋত্বিকের প্রথমতম বইয়ের প্রকাশক আমরা, এটা ঐতিহাসিক ঘটনা।

আমাদের প্রকাশনার দ্বিতীয় বইটিও তাঁকে নিয়ে করব ঠিক হল। তাঁর লেখা নয়, তাঁর বিস্তৃত সাক্ষাৎকার নিয়ে বই। নিঃসন্দেহে অভিনব পরিকল্পনা। টানা তিন দিন ধরে এজন্য সাক্ষাৎকার নিলাম তাঁর। ম‍্যারাথন কথোপকথন। সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে জানলাম, তিনি ওস্তাদ আলাউদ্দীন খান-এর কাছে সেতার শিখেছিলেন। জানলাম, ‘সুবর্ণরেখা’-র প্রিমিয়ারে তিনি আমন্ত্রণ জানান সত‍্যজিৎ রায়কে, কিন্তু অকিঞ্চিৎকর অজুহাত দেখিয়ে সত‍্যজিৎ যাননি। এরকম আরও বহু অজানা তথ‍্যে ভরা ছিল সেই অবিনশ্বর সুদীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি।

এই তিন দিন তাঁর অতি কাছাকাছি আসা আমার জীবনের চিরস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন আরও দুজন,— পার্থদা ও প্রবীরদা। দক্ষিণ কলকাতার এক জীর্ণ বাড়িতে থাকতেন তিনি, শরৎ চ‍্যাটার্জি (ব‍্যানার্জি নয়) রোডে। মলিন বিছানা, একটি নিতান্ত সাধারণ চৌকি, সেখানেই বসতে হত আমাদের। তাঁর তুচ্ছ বেশবাস, খোঁচা খোঁচা দাড়ি, আর সকাল থেকেই অনবরত মদ্যপান। বিড়ির গন্ধে সমস্ত ঘরটি দান্তের Inferno যেন।

এবং এর-ই মাঝে প্রজ্ঞা, যাবতীয় শিল্পের তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ, রাজনীতি ধর্ম অর্থনীতি নিয়ে নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গী, নির্দ্বিধ মন্তব‍্য। ‘যেথা বাক‍্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে/ উচ্ছ্বসিয়া উঠে’, ঠিক তাই। মহাভারতীয় সেই সাক্ষাৎকারে তিনি কেন ছবিতে এলেন, চলচ্চিত্রে তাঁর পূর্বসূরিদের অবদান, তাঁর আত্মদর্শন নিয়ে কত কথা-ই না বলেছিলেন! পাশে বসা ছিলেন ঋত্বিকের এক ভাই, নাবিক হয়ে একদা সারা বিশ্ব চষে বেড়িয়েছেন।

এক পর্যায়ে ঋত্বিকজায়া সুরমাদেবী দুজনের জন্য গেলাসে করে দুধ নিয়ে এলেন। দুই ভাই পরম ব‍্যঙ্গে ফিরিয়ে দিলেন তা।

বিধি বাম ছিল আমাদের প্রতি। সেই সাক্ষাৎকারটি বই হয়ে বেরোতে পারল না শেষপর্যন্ত। সাক্ষাৎকার দেবার কয়েক মাস বাদেই ঋত্বিক প্রয়াত হন। ওঁর পরিবার থেকে বইটি ছাপার জন্য মোটা টাকা দাবি করা হয়। তা দেবার সাধ‍্য আমাদের ছিল না। পরে ‘চিত্রবীক্ষণ’ ও অন্যান্য চলচ্চিত্র-বিষয়ক পত্রিকায় বিচ্ছিন্নভাবে সাক্ষাৎকারটি বেরিয়েছিল। আরও পরে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘সাক্ষাৎ ঋত্বিক’ গ্রন্থে এর বহুলাংশ ছাপা হয়।

আজ ঋত্বিকের বই তাঁর চলচ্চিত্রের মত-ই জনপ্রিয়। ‘চলচ্চিত্র, আমি ও অন্যান্য’ বর্ধিতাকারে নামী প্রকাশনা থেকে বেরিয়েছে (ওদের প্রচ্ছদে ঋত্বিক বর্জিত!)। তাঁর গল্পগ্রন্থের-ও প্রকাশ ঘটেছে। তাঁর লেখা বারোটি নাটক নিয়ে বেরিয়েছে নাট‍্যসমগ্র। আমরা এখন ধূসর স্মৃতি!

চিত্র: গুগল

ঋত্বিক ঘটক: পুনর্বিবেচনা

5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Rimi Dey
Rimi Dey
1 year ago

ভালো লাগল

মোহাম্মদ কাজী মামুন
মোহাম্মদ কাজী মামুন
1 year ago

ঋত্বিক ঘটক বাংলাদেশের মানুষ। তাকে জানি ‘তিতাস একটি নদী’ থেকেই। এও জানা ছিল, তিনি নজরুলের মতই ক্ষ্যাপাটে ছিলেন। কিন্তু জানা ছিল না, ইন্দিরা গান্ধির অনুরোধ প্রত্যাখানের কাহিনি, জানা ছিল না তাকে নিয়ে বই করার কাহিনি, জানা ছিল না সত্যজিৎয়ের ছবিকে নিয়ে তার অর্থপূর্ণ মন্তব্যের কথা। এমনকি, তিনি যে গল্প লিখেছেন, তাও তো অজানাই ছিল। আর সব থেকে অবাক করা ব্যাপার, যে মলয়দার সাথে আমি কথা বলেছি, তিনি দিনের পর দিন এই মনীষিকে দেখেছেন, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আচ্ছা, ঋত্বিকের বইগুলো পাওয়া যায়? … মলয়দা, অনেকবারই ভেবেছি ঋত্বিকের ছবিগুলো দেখে ফেলব। এখন মনে হচ্ছে, আর দেরী করা উচিৎ হবে না। আসলে আমরা একটা সীমার মধ্যে বাস করি বলেই হয়ত দেরী হয়ে গেছে আমাদের মাটির সম্পদকে আরো চিনে নিতে!…লেখাটার জন্য কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »