Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

কেমিক্যাল রোমান্স: দিমিত্রি মেন্ডেলিয়েভের জীবনে প্রেম

‘কেমিক্যাল রোমান্স’! শিরোনামে অদ্ভুত এই শব্দবন্ধটি দেখে এবং একই সঙ্গে ফেব্রুয়ারির এই ‘ভ্যালেন্টাইন’স সপ্তাহ’-র কথা মনে রেখে কেউ কেউ হয়তো ভেবে নেবেন যে, এই লেখাটিও ‘ভালবাসার সপ্তাহ’ নিয়ে কিছু হবে। হেঁয়ালি না করে তাই ‘কেমিক্যাল রোমান্স’ কথাটি সম্পর্কে খোলসা করে বলি। বস্তুত এই কথাটি ধার করা। ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকান’ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনের শিরোনামের শুরুর শব্দ দুটি এরকমই ছিল। এরিখ মাইকেল জনসনের লেখা সেই প্রতিবেদনের শিরোনামটি ছিল এইরকম: ‘কেমিক্যাল রোমান্স: দ্য লাভস অফ দিমিত্রি মেন্ডেলিয়েভ’।

কে এই মেন্ডেলিয়েভ, যাঁর প্রেমকাহিনি নিয়ে ওই প্রতিবেদনটি? তাঁর পুরো নাম দিমিত্রি ইভানোভিচ মেন্ডেলিয়েভ (Dmitri Ivanovich Mendeleev, ১৮৩৪–১৯০৭)। তিনি যে একজন কিংবদন্তি রসায়নবিদ এবং ‘পিরিয়ডিক টেবিল’-এর স্রষ্টা, সেকথা স্কুলের ভৌতবিজ্ঞান পড়া ছাত্রছাত্রী সকলেই জানে। হ্যাঁ, তিনিই রসায়নের পর্যায় সারণী (পিরিয়ডিক সিস্টেম) যা ‘পিরিয়ডিক টেবিল’ নামে সবার কাছে পরিচিত, সেটি সৃষ্টি করেছেন। তাই তাঁকে ‘পিরিয়ডিক টেবিল’-এর জনকও বলা হয়।

‘পিরিয়ডিক টেবিল’-এর জনক স্যার দিমিত্রি ইভানোভিক মেন্ডেলিয়েভ।

যারা ‘পিরিয়ডিক টেবিল’-এর গুরুত্বের সঙ্গে সেভাবে পরিচিত নন, তাদের জন্যে ‘পিরিয়ডিক টেবিল’ নিয়ে অতি সংক্ষেপে দু-এক কথা বলে নিলে সুবিধা হবে। ‘পর্যায় সারণী’-র মধ্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক মৌলগুলিকে তাদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম, চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আলাদা আলাদা সারিতে রেখে একটি টেবিল আবিষ্কার করেছিলেন মেন্ডেলিয়েভ। তাঁর সময়ে তখনও পর্যন্ত তেষট্টিটি মৌল আবিষ্কার হয়েছিল। সেগুলি নিয়েই শুরু করেছিলেন এই কাজ। প্রকৃতিতে তখনও পর্যন্ত তেষট্টিটি মৌলের বাইরেও তো থাকবে আরও অনেক মৌল, যেগুলি তখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তাঁর এই টেবিল থেকে তিনি তখনও পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত মৌলের নিশ্চিত প্রস্তাব দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তখনও পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত মৌলগুলির জন্যে তাঁর করা টেবিলে যথাযথ স্থানগুলি ফাঁকা রেখেছিলেন। ভবিষ্যতে তাঁর অনুমান অনুযায়ী আবিষ্কৃত হয়েছে অপরাপর মৌলগুলি। টেবিলের এ এক যুগান্তকারী কাজ। তাঁর করা এই টেবিলটিই বলতে গেলে রসায়নের অপরিহার্য মানচিত্র। শতাধিক মৌলিক পদার্থ আর তাদের হাজার হাজার যৌগের মধ্যেকার সমন্বয়ের নতুন দিক খুলে গিয়েছিল এর ফলে।

দিমিত্রি ইভানোভিক মেন্ডেলিয়েভের জীবন চরম দুঃখকষ্টে আর দৈন্যদুর্দশায় ভরা। সতেরো জন ভাইবোন। তাঁর জীবনকাহিনি থেকে এটুকু জানা যায়, একাদশ থেকে সপ্তদশতম সন্তানের মধ্যে ছিল দিমিত্রির স্থান। আসলে সেসময় শিশুমৃত্যুর হার এতটাই বেশি ছিল, এর বেশি কিছু জানা যায় না। বাবা ছিলেন শিল্পকলা, দর্শন ও রাজনীতির শিক্ষক। পরবর্তীতে অন্ধ হয়ে যান এবং শিক্ষকতার চাকরিটি চলে যায়। মাকে একা সংসারের হাল ধরতে হল সেসময়। একটি কাচ ফ্যাক্টরিতে কাজ করে সামান্য উপার্জন করতেন মা। তাই দিয়ে সন্তানদের গ্রাসাচ্ছাদন হত। দিমিত্রির যখন তেরো বছর, বাবা মারা যান। তার দুবছর পরে আগুন লেগে কাচ ফ্যাক্টরি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। সন্তানদের নিয়ে অকূল পাথারে পড়েন মা। সেসময় দিমিত্রিকে কলেজে ভর্তি করানোর চেষ্টা করলেন। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। অবশেষে সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ মেলে, দিমিত্রির বাবা সেখানকার প্রাক্তনী ছিলেন বলে। দারিদ্র্য সত্ত্বেও পরিবার নিয়ে তাঁরা পিটার্সবার্গের কাছে বাসা বদল করে চলে এলেন।

বাইশ বছর বয়সে রসায়ন বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাঠ শেষ করে মেন্ডিলিয়েভ জৈবরসায়ন নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেছিলেন। ওইসময় গবেষণা করার জন্যে দু’বছরের একটি ফেলোশিপ পেয়ে হাইডেলবার্গে চলে আসেন দিমিত্রি। সেখানে তখন রয়েছেন অগাস্ট কেকুলে, রবার্ট বুনসেন, এমিল আর্লেন মায়ার প্রমুখ দিকপাল সব রসায়ন বিজ্ঞানী। কিন্তু তাঁদের কারও সঙ্গে কাজে যোগ না দিয়ে নিজের বাসস্থানে একটি গবেষণাগার তৈরি করলেন দিমিত্রি। সেখানেই চলল দিমিত্রির গবেষণা। ওই সময় একটি আন্তর্জাতিক রসায়ন বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভায় গিয়ে ইউরোপের নামজাদা সব রসায়ন বিজ্ঞানীদের সঙ্গে পরিচয় হয় দিমিত্রির। তাঁদের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ তৈরি হল দিমিত্রির।

দেশে ফিরে এসে শুরু হল চাকরির খোঁজ। তিন বছর অপেক্ষার পরে অবশেষে দিমিত্রি একটি চাকরি পেলেন। ‘ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট পিটার্সবার্গ’ নামের একটি প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের-এর ‘কেমিক্যাল টেকনোলোজি’ বিভাগে যোগ দিলেন। পরে সেখানে ‘প্রফেসর’ পদে উন্নীত হলেন এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হন। ক্লাসে ‘অজৈব রসায়ন’ পড়ানো শুরু হল। দিমিত্রি পড়াবেন যে, কিন্তু ওই বিষয়ে তখন কোনও ভাল বই ছিল না। তাই দিমিত্রি নিজেই অজৈব এবং জৈব রসায়নের ওপর পাঠ্যবই লিখে প্রকাশ করলেন। দারুণ সমাদৃত হল তাঁর লেখা ‘দ্য প্রিন্সিপলস অফ কেমিস্ট্রি’ বই। উচ্চপ্রশংসিত এবং পুরস্কৃতও হলেন তিনি ওই রকম উচ্চমানের বইয়ের লেখক হিসেবে। বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হল তাঁর বই এবং একাধিক সংস্করণ হল বইটির।

বিজ্ঞানের জগতে যাঁর এই বিশাল মাপের অবদান, যাঁর সমস্ত ধ্যানজ্ঞানে শুধুই রসায়ন, তাঁর জীবনেও উথালপাথাল করে দেওয়ার মত প্রেম আসা সম্ভব? সত্যিই এ কথা ঠিক মেলানো যায় না। যাঁর ছবি দেখে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় তাঁর জীবন হবে রসকষহীন আত্মভোলা একজন মানুষের। যখন জানতে পারি তিনিও আবেগে তাড়িত হন, তিনিও প্রেমে পড়েন, তখন আশ্চর্য লাগে বইকী! প্রেমের জোয়ারে বিজ্ঞানী দিমিত্রির জীবন কীভাবে ভাসিয়ে, ডুবিয়ে একেবারে পাগল করে তুলেছিল, এবার সেই কথা বলব। বিজ্ঞানী তো কী? তাই বলে কি তাঁদের জীবনে প্রেম-ভালবাসা থাকবে না? বিজ্ঞানীদের জীবন কি হবে কেবলই রুক্ষ? তা যে নয়, তা শুধু দিমিত্রি-ই নয়, আরও অনেক বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানীদের জীবনের ইতিহাস পড়লেই সেকথার সাক্ষ্য মেলে।

এবার সেই দিমিত্রি ইভানোভিচ মেন্ডেলিয়েভ নামের রসায়ন বিজ্ঞানীর প্রেমের রসায়নের কাহিনি বলব।

আঠাশ বছর বয়সে বোনের পছন্দ করা ফিওজভার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল দিমিত্রির। কিন্তু ফিওজভার সঙ্গে সেই সম্পর্ক একেবারেই জমাট বাঁধেনি। আসলে বেশিরভাগ সময় বিজ্ঞানের কাজে আর চিন্তায় সময় কাটত মেন্ডেলিয়েভের। অন্যদিকে বাড়িতে একা একা থেকে জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছিল ফিওজভার। তাই বাড়ি ফিরলে তুমুল অশান্তি করতেন স্ত্রী ফিওজভা। এভাবেই মনস্তাপ আর অশান্তিতে দিন কাটতে থাকে দিমিত্রির। পেরিয়ে যায় আট-ন’বছরের অসুখী ও বিড়ম্বিত পারিবারিক জীবন।

প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে মেন্ডেলিয়েভ।

মেন্ডেলিয়েভ তখন সেন্ট পিটার্সবার্গে যোগ দিয়েছেন রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে। ঘরে স্ত্রী ফিওজভা। এই সময় দিমিত্রি প্রেমে পড়লেন আনা ইভানোভা পোপোভা নামের কলা বিভাগের একজন পরমাসুন্দরী ছাত্রীর। ইভানোভার বয়স তখন মাত্র কুড়ি বছরের মত। দিমিত্রির বয়স তখন প্রায় সাতচল্লিশ বছর। নিজের বয়সের কথা ভেবে কিছুতেই ইভানোভাকে প্রেম নিবেদন করতে পারছেন না দিমিত্রি। যদি রাজি না হন ইভানোভা! এইভাবে পেরিয়ে গেল বেশ কয়েকটা বছর। দিমিত্রি তখন ইভানোভার প্রেমে তীব্র অস্থির আর উতলা হয়ে উঠেছেন। অবস্থা এমন যে, ইভানোভাকে না পেলে, জীবন যেন অর্থহীন হয়ে পড়বে তাঁর কাছে। দিমিত্রি তখন আবেগের একেবারে তুঙ্গে, সব আশংকার কথা ভুলে একদিন ইভানোভাকে ভালবাসার কথা বলে ফেললেন। ভালবাসার কথা তো বললেনই, তার সঙ্গে দিমিত্রি ইভানোভাকে বললেন, ‘তুমি যদি আমাকে তোমার ভালবাসা না দাও, আমি আত্মহত্যা করব!’ দিমিত্রির অমন পাগলপারা প্রেম নিবেদনকে অস্বীকার করতে পারলেন না ইভানোভাও। বিজ্ঞানীর প্রেমে সাড়া দিলেন ইভানোভা। এরপর বিয়েও করলেন দুজনে। ইভানোভার সঙ্গে বিয়ের এক মাস পরে প্রথম স্ত্রী ফিওজভার সঙ্গে দিমিত্রির বিবাহবিচ্ছেদ হল। যদিও রাশিয়ান গোঁড়া চার্চের নিয়ম অনুযায়ী একজন স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার সাত বছরের আগে দ্বিতীয় বিয়ে করা নিয়মবিরুদ্ধ। আর এই নিয়ম ভাঙার জন্যে দিমিত্রিকে দিতে হয়েছে অনেক খেসারত। ‘রাশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স’-এ যোগদানের সুযোগ হারাতে হয়েছে দিমিত্রিকে।

আনা ইভানোভা পোপোভা।

‘রাশিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি’ যা আজ ‘মেন্ডেলিয়েভ রাশিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি’ হিসেবে সুপরিচিত, তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্যার দিমিত্রি মেন্ডেলিয়েভ। সরকারের পরামর্শদাতা হিসেবে এবং রাশিয়ার শিল্পোন্নয়নের জন্যে আজীবন কাজ করে গেছেন দিমিত্রি। প্রায় চার শতাধিক নিবন্ধ লিখেছেন, লিখেছেন অসংখ্য বই। সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সম্মানে তাঁর নামে তৈরি করা হয়েছে জাদুঘর ও সংগ্রহশালা, যেখানে সযত্নে রাখা আছে তাঁর বহু অপ্রকাশিত লেখা এবং অমূল্য ও ঐতিহাসিক দলিল।

আজ ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববন্দিত রসায়ন বিজ্ঞানী স্যার দিমিত্রি ইভানোভিচ মেন্ডেলিয়েভের জন্মদিন। আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।

চিত্র: গুগল
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Anjana Ghosh
Anjana Ghosh
1 year ago

ভালবাসার সপ্তাহে পিরিয়ডিক টেবিলের স্রষ্টা’র এমন দুরন্ত প্রেমের অজানা কাহিনী… বেশ লাগল। ❤️

সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar
সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar
1 year ago
Reply to  Anjana Ghosh

ধন্যবাদ জানাই আপনার সহৃদয় মন্তব্যের জন্যে

Recent Posts

নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »
দীপক সাহা

বন্দুকের মুখে দাঁড়িয়ে ইতিহাসকে লেন্সবন্দি করেছেন সাইদা খানম

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে উপমহাদেশের বিখ্যাত প্রায় সকল ব্যক্তিত্ব— ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ইন্দিরা গান্ধী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী, বেগম সুফিয়া কামাল, মৈত্রেয়ী দেবী, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আশাপূর্ণা দেবী, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়— কার ছবি তোলেননি! সেই সঙ্গে রানি এলিজাবেথ, মাদার টেরেসা, মার্শাল টিটো, অড্রে হেপবার্নের মতো বিখ্যাত মানুষদের ছবিও তুলেছেন। এই বিশাল তালিকায় আরও তিনটি নাম যুক্ত করে না দিলে অন্যায় হবে। চন্দ্রবিজয়ী নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিনস, মাইকেল কলিন্সের ছবিও তুলেছেন তিনি।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

মামলায় জয়ী হয়ে থোড় কুঁচি দিয়ে কালীর আরাধনা করেন জমিদার-গিন্নি

দেবী কালিকার খড়ের মেড় দেখে মজুমদার গিন্নি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, মামলার রায় যদি তাঁদের পক্ষে যায় তাহলে কলাগাছের থোড় কুঁচো দিয়ে হলেও জগজ্জননী মা মহাকালীর পুজো করা হবে, আর যদি মামলার রায় তাঁদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে ওই খড়ের মেড় দামোদরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। যদিও সেদিন দুপুরের মধ্যেই আদালত থেকে মজুমদার জমিদার পক্ষের জয়লাভের খবর পৌঁছেছিল থলিয়ার মজুমদার বাড়িতে। মজুমদার-গিন্নিও অক্ষরে অক্ষরে তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। মামলায় জয়লাভের খবর পাওয়া মাত্রই জমিদার-গিন্নির নির্দেশে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দীপাবলি উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায়।

Read More »