[দ্বিতীয় পর্বের পর…]
ব্রাহ্ম সমাজ ও ব্রাহ্মধর্ম
ব্রিটিশ উপনিবেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক যে আক্রমণ তার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ গড়ে উঠছিল অষ্টাদশ শতক থেকে, তার বেশ কয়েকটি ধারা চিহ্নিত করা যেতে পারে। একদল খ্রিস্টান ধর্ম ও ইংরেজি শিক্ষার বিপরীতে প্রাচীন সনাতনী ধর্মীয় সংস্কৃতিকে মহৎ বলে দাঁড় করাতে চান। অন্যদল যুক্তিবাদী, পাশ্চাত্য শিক্ষার যা কিছু ভাল দিক তাকে গ্রহণ করে নিজ ধর্ম শিক্ষা সংস্কৃতির উন্নততর রূপ গড়ে তুলতে চান। ঈশ্বর ও ধর্মীয় পরিসরের বাইরে জগৎ ও জীবনের যুক্তিবাদী কাঠামোই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। তাদের এ পথ সহজে গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এখানে ঈশ্বরের অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জ করা হয় ফলে প্রচলিত ধর্মগুলি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। আর একদল হলেন যারা হিন্দুধর্মের আধারে প্রচলিত, প্রচারিত কুসংস্কারগুলিকে বর্জন করে আচারসর্বস্বতার বাইরে এক পরিসর তৈরি করতে চান যাতে একদিকে ইংরেজ পাদরি ও অন্যদিকে যুক্তিবাদী— উভয় আক্রমণ থেকে হিন্দুধর্মকে রক্ষা করা যায়।
ইংরেজ পাদরিদের আপাতসংস্কারহীন বাহ্যিকরূপে আকৃষ্ট হয়ে এবং হিন্দুধর্মের জাতপাত বর্ণভেদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে ধর্মান্তরকরণ হিন্দুসমাজের মাতব্বরদের শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছিল। ধর্মরক্ষা ও ব্যাপক অর্থে হিন্দুত্বেরই প্রচার ও প্রসার হয় এমন কিছু করার প্রয়োজন তারাও বোধ করেছিলেন। সেদিক থেকে অপৌত্তলিকতা সত্ত্বেও দেবেন্দ্রনাথের প্রাচীন বৈদিক ধর্মে আসক্তি, যুক্তিবাদী ও নিরীশ্বরবাদীদের তুলনায় সহনীয় ছিল তাদের কাছে। সমাজ সংস্কারের থেকে ধর্ম হিসেবে একে গড়ে তোলায় অধিক মনোযোগ দিয়েছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, একথা বললে অন্যায় হবে না।
ফলত আদি ব্রাহ্ম সমাজে যে উপনয়ন অর্থ ছিল কোনও ব্রাহ্ম উপদেষ্টার ওপর কোনও বালকের শিক্ষার ভার অর্পণ সেখানে তিনি উপনয়ন পদ্ধতিতে শালগ্রামশিলা ও হোমযজ্ঞাদি বাদ দিলেও গায়ত্রী মন্ত্র ও বেদমন্ত্র পাঠের রীতি চালু করলেন, যাকে বিশুদ্ধ উপনয়ন বিধি বলে মান্যতা দেওয়া হল ব্রাহ্মধর্মে। নব্য ব্রাহ্ম যুক্তিবাদীরা যদিও এ রীতির বিপক্ষেই ছিলেন এবং রক্ষণশীলতা ও সংস্কারের প্রশ্নে ব্রাহ্মসমাজও ভেঙে গেল। কেশব সেনের নেতৃত্বে সমাজ সংস্কারের ধারা চলতে লাগল যা তথাকথিত হিন্দুধর্মের বর্ণভেদ, জাতিভেদ, কৌলিন্যপ্রথা এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। নারীশিক্ষা, বিধবাবিবাহ, বাল্যবিবাহ প্রথা রদ প্রভৃতি ক্ষেত্রেও প্রভূত সংস্কার সাধিত হয়েছিল। মহামারীর সময় দলগঠন করে ত্রাণ ও সেবাকাজে নিযুক্ত হয়েছিল সংস্কারপন্থী এই অংশ।
হিন্দু মেলা ও দেশাত্মবোধ
‘হিন্দু মেলা’ শুরুর সময় রবীন্দ্রনাথ পাঁচ বছরের বালক। ১৮৬৭ সালের ১২ এপ্রিল এই মেলার সূচনা হয়। মেলার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ন্যাশনাল পত্রিকার সম্পাদক নবগোপাল মিত্র। পৃষ্ঠপোষক ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজনারায়ণ বসু ও আরও অনেকে। দেশীয় শিল্প ও সংস্কৃতির প্রসার ও এরই মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলার ভাবনা ছিল এই মেলার মূল লক্ষ্য। এঁরা হিন্দু জাতীয়তাবাদকেই ভারতীয় জাতীয়তাবাদ মনে করতেন আর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যাপক অর্থে হিন্দুত্বের গণ্ডির মধ্যেই অবস্থান করেছেন এবং হিন্দুমেলার সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর পুত্রদের মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ ও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ আবার শুধুমাত্র মেলা বা উৎসব নয়, তাঁত ও দেশলাই কল করবার উদ্যোগ ও স্বদেশি স্টিমার কোম্পানি করে বাঙালির (অথবা নিজেদের) অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড শক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, যদিও সফল হননি। এই হিন্দু মেলাকে কেন্দ্র করে দেশাত্মবোধক গান কবিতা রচনার ঢেউ উঠল এবং ঠাকুরবাড়ির যুবকেরাও সেই দলে সামিল হলেন। সত্যেন্দ্রনাথ,গণেন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সকলেই দেশাত্মবোধক কবিতা ও সঙ্গীত রচনা করেছেন দেশের গৌরব বর্ণনা করে, জগৎসভায় ভারতবর্ষের উচ্চাসন লাভ করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে এই সাহিত্যে। রবীন্দ্রনাথ এই আবহেই বড় হয়ে উঠছেন, স্বাভাবিকভাবেই দেশ এবং ধর্ম সম্বন্ধে একরকম ধারণা তার তৈরি হচ্ছে বাড়ি থেকেই। হিন্দু মেলাকে কেন্দ্র করেই তার প্রথম রচনাও প্রকাশ হচ্ছে।
প্রথম কয়েকবছর যে উন্মাদনায় মেলা সংগঠিত হয় সে উৎসাহ ক্রমশ কমতে থাকে। অন্যদিকে যুক্তিবাদী সংস্কারপন্থীদের প্রভাব বাড়তে শুরু করে, যারা ধর্মীয় পরিসরের বাইরে সেকুলার ভারতের সত্যরূপকে তুলে ধরতে পেরেছিলেন। আবার হয়তো এও বলা যায় যে উচ্চবিত্ত শিক্ষিত বাঙালির মেলা বা উৎসবের কোনও গভীর প্রভাব ছিল না জনজীবনে তাই সে হুজুগের অবসান হয় উনবিংশ শতকেই।
যুক্তিবাদী কাঠামোর বাইরে কোনও কাঠামোতেই সমাজের আমূল পরিবর্তনের ঝুঁকি এবং আশা কোনওটাই থাকে না। যুগের দাবিতে খানিক এদিক-ওদিক করে মূল কাঠামোকে বজায় রাখায় চেষ্টায় সমাজ পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায় না। সেকারণেই ব্রাহ্মধর্ম মূলত কলকাতার এলিট বাঙালির মধ্যেই কিছু সাড়া ফেলেছিল এর বাইরে তার প্রভাব নগণ্য। ধর্মগত দিক থেকে রবীন্দ্রনাথও একরকম এই ব্রাহ্ম ধর্মীয় চর্চার মধ্যেই বড় হচ্ছেন এবং উপনিষদের প্রগাঢ় প্রভাব থাকছে তাঁর মননে। রবীন্দ্রনাথের উপনয়নকালে বৈদিক মন্ত্রজপ, সদ্য ব্রাহ্মণ হওয়ার পরবর্তীতে গায়ত্রীমন্ত্রের জপ তাঁর জীবনেও বহুকাল প্রগাঢ় প্রভাব ফেলেছিল। নিজস্ব সামাজিক জীবনেও তিনি বহুকাল ধর্মীয় আচার সংস্কার রক্ষা করে চলেছেন। আবার এর থেকে মুক্তি ও পেয়েছিলেন তিনি তাঁরই গভীর বোধ ও দেশ ও সমাজ সম্বন্ধে জ্ঞান ও উপলব্ধির মধ্য দিয়ে।
শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের প্রথম যুগ
১৯০৪ (১৩১০) সালে শীতের ছুটির শুরুতে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে ছিলেন শিলাইদহে, মাঝে পৌষ উৎসব শান্তিনিকেতনে কাটিয়ে এলেন কলকাতা। কলকাতায় মাঘোৎসবে কবি ভাষণ দিলেন ‘মনুষ্যত্ব’ বিষয়ে, তার পরদিন সিটি কলেজে ‘ধর্মপ্রচার’ প্রবন্ধ পাঠ করলেন। তখনও পর্যন্ত শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রমে তিনি যে আদর্শকে সফল করবেন বলে ভেবেছিলেন তারই ব্যাখ্যা করলেন এই প্রবন্ধে। এইখানে তার কিছু অংশ উদ্ধৃত করব। ‘ব্রহ্ম মানুষের নিকট একমাত্র মনুষ্যত্বের মধ্যেই সর্বাপেক্ষা সত্যরূপ, প্রত্যক্ষরূপে বিরাজমান… উপাসনার দ্বারা আমরা ক্ষণে ক্ষণে ব্রহ্মকে স্পর্শ করতে পারি; কিন্তু ব্রহ্মকে লাভ করতে পারি না। মানুষই মানুষের পক্ষে সর্বাপেক্ষা সমগ্রভাবে প্রত্যক্ষ— এবং সেই সর্বাপেক্ষা প্রত্যক্ষের মধ্যে ব্রহ্মেরই আবির্ভাবকে প্রত্যক্ষতম করিয়া জানা মানবজীবনের চরম চরিতার্থতা।’
পিতা দেবেন্দ্রনাথের প্রভাবে বেদ, উপনিষদ পাঠের ফলশ্রুতিতে প্রাচীন বর্ণাশ্রম ও ব্রহ্মচর্যের আদর্শও গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল রবীন্দ্রনাথের মনে। ছেলেবেলা থেকেই কঠিন শ্রম ও নিয়মের দ্বারা, সংযম ও ধৈর্য-বীর্যের সাধনার দ্বারা সত্যভাবে সংসারের মধ্যেই ব্রহ্মের উপলব্ধির দ্বারা মানবজীবনকে সার্থক করতে পারা যাবে, এমনটা মনে করতেন তিনি। প্রাথমিকভাবে সেই আদর্শ মাথায় রেখেই শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম গড়ে তোলা। ১৯০১ থেকে অল্প ছাত্র নিয়ে আশ্রম একরকম চলছিল, কোদাল চালিয়ে, ব্যবহারিক কাজের মধ্যে দিয়ে, গল্পচ্ছলে বিজ্ঞানশিক্ষার মধ্যে দিয়ে।
১৯০৪ সালে শীতের ছুটির পর বিদ্যালয় স্থানান্তরিত হল শিলাইদহে। এখানে মোহিতচন্দ্র সেন যোগ দিলেন বিদ্যালয়ের হেডমাস্টার হিসেবে। এখানেই সন্তোষচন্দ্র, রথীন্দ্রনাথ, সন্তোষ মজুমদার ও সরোজ মজুমদার, এদের ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা দেওয়া হল। মোহিতচন্দ্র সেনের হাতেই শিলাইদহে বিদায়তনের রূপ ফুটে উঠল। এরপর আশ্রম বিদ্যালয় যখন আবার শান্তিনিকেতনে ফিরে এল তখন তার সম্পূর্ণ দায়িত্বভার দিলেন মোহিতচন্দ্র সেনের ওপর। তিনি তার নিজস্ব আদর্শে বিদ্যালয়ের আকৃতি বাড়িয়ে তুললেন, সিলেবাসের চাপে কঠোর করে গড়ে তুলতে চাইলেন বিদ্যালয়টিকে। কিন্তু এত কর্মভার গ্রহণে ক্রমশ হাঁফিয়ে উঠলেন এবং অসুস্থ হয়েও পড়লেন। সুস্থ হওয়ার পরও তিনি আর বিদ্যালয়ে ফিরলেন না।
প্রায় সাত আটমাসের ছন্নছাড়া অবস্থা কাটিয়ে ১৯০৫-এর গোড়ার দিকে বিদ্যালয় আবার অল্পসংখ্যক ছাত্র নিয়ে তার যাত্রা শুরু করল অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে। এইসময় রবীন্দ্রনাথ এসে বাসা বাঁধলেন দেহলি বাড়িতে। শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে গোড়ার সময় থেকেই গান ও নাটকের চর্চা শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সকলেই যে গায়ক হয়ে উঠবে তা নয়, সুর তাল ছন্দ লয় জীবনে অনেকখানি মাধুর্যে ভরিয়ে দেবে তা তিনি নিশ্চিত ছিলেন। এ বালক কবির নরম্যাল স্কুলে নিয়ম করে ইংরেজি গান গেয়ে যাওয়া নয়, যাতে খানিক কায়দা ও উন্নাসিক মানসিকতা তৈরি হওয়া ছাড়া মনের কোনও বিকাশ হয় না। বালক বয়সের সে তিক্ত অভিজ্ঞতা যে তিনি ভোলেননি তা তিনি নিজেই জানিয়েছেন বহুবার। শান্তিনিকেতনে তিনি সঙ্গীতের আনন্দময় যাত্রা শুরু করেছিলেন। সঙ্গীত চর্চায় যাতে কোনও ফাঁকি না পড়ে সে দিকে সর্বদা নজর থাকত তাঁর, এমনকি শান্তিনিকেতনে না থাকলেও চিঠিপত্রে বারবার এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন তিনি।
জীবনকে ভোগ নয় উপভোগ করে বাঁচার সমস্ত রকম আয়োজন একেবারে পাকা করছিলেন ধীরে ধীরে। এবার এর চলন কীরকম ছিল তাই দেখব আমরা। প্রথম যুগে নিয়মিত সঙ্গীত চর্চার জন্য শিক্ষক নিয়োগ করার আর্থিক সংগতি ছিল না, তাই রবীন্দ্রনাথ নিজেই আবাসিক বালকদের গান শেখাতেন। যখন তিনি শান্তিনিকেতনে অনুপস্থিত থাকতেন তখন অন্যান্য অধ্যাপকদের ওপর থাকত সে দায়িত্ব। একটু একটু করে নাটকের গানের সাথে নাচ ও পরিক্রমা শুরু করেছিলেন তিনি।
১৯০৭ সালে কবিপুত্র শমীন্দ্রনাথের স্বাভাবিক আনন্দ উদ্যোগে শান্তিনিকেতনে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ঋতু উৎসব। শমীন্দ্রনাথ ও আরও দুই ছাত্র বসন্ত সাজে, তারা মাথায় ফুলের মুকুট পরে মঞ্চে এসেছিল। ‘আদি কুটির’ হলঘরে স্টেজ করে অভিনীত হয়েছিল শান্তিনিকেতনের প্রথম ঋতু উৎসব। পরে রবীন্দ্রনাথ ‘বসন্তোৎসব’ নামকরণ করে এই উৎসব পুনরায় চালু করেন। ২৩-এ নভেম্বর ১৯০৭ সালেই শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। ১৯০৮ (মুকুট ও শারদোৎসব) সালে ‘আমার নয়ন ভুলানো এলে’ গানের সাথে নৃত্যের আভাস পাওয়া যায় বালকদের উপস্থাপনায়। ১৯১১ সালে রবীন্দ্রনাথের ৫০ বছর পূর্তি উৎসবে ‘রাজা’ নাটকের অভিনয় হয়। এই অভিনয়ে প্রায় প্রত্যেকটি ‘গীতাভিনয়ের সাথে নৃত্যব্যঞ্জনা’ জুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। ‘গীতাভিনয়ে নৃত্যব্যঞ্জনা’ কথাটায় একটু নজর দেওয়া দরকার। বহু প্রাচীন সময় থেকেই নৃত্য, গীত, বাদ্য অভিনয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবেই জড়িয়ে ছিল, যার প্রমাণ আমরা পাই ভরত নাট্যশাস্ত্রে। পরবর্তী সময়ে যা পৃথক পৃথক শিল্পরীতিতে পরিণত হয়েছে এবং নাচ সাধারণ ভদ্রসমাজে ব্রাত্য হয়ে পড়েছে। রবীন্দ্রনাথ নাচকে আবার একটু একটু করে অভিনয়ে যুক্ত করতে থাকলেন।
১৯০৯-এ ক্ষিতিমোহন সেন যোগদান করেন শান্তিনিকেতনে। এইবছর থেকেই শান্তিনিকেতনের উৎসবে বৈদিক মন্ত্র প্রচলনের সূত্রপাত হয়। ব্রহ্মচর্যে দীক্ষার কথা আগেই বলেছি, এবার শান্তিনিকেতনের উৎসবেও বৈদিক রীতির প্রচলন ঘটল, এর কতটা আঙ্গিকগত আর কতটা আদর্শগত সে আলোচনায় পরে আসব। জ্যৈষ্ঠমাসে বিদ্যালয় খুললে বর্ষা উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়। ক্ষিতিমোহন সেন ও বিধুশেখর ভট্টাচার্য বেদ প্রভৃতি গ্রন্থ ঘেঁটে বর্ষার উপযোগী শ্লোক ও স্তোত্র সংগ্রহ করে ছাত্রদের দিয়ে আবৃত্তি করিয়েছিলেন। সেসময় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন শিলাইদহে গ্রামসংস্কারের কাজে এবং তখনি তিনি পরবর্তী শারদোৎসবের কথা ভেবে গান রচনা করছিলেন বলে জানা যায়। শারদোৎসব রচনার সময় বালকদের জন্য নাটিকা রচনা করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। এরপর থেকে প্রতিবছর শারদোৎসব তিনি নতুন নতুনভাবে সাজিয়ে তুলেছেন। রাজা নাটকের অভিনয়ে ছেলেদের মাঝে ঠাকুরদারূপী রবীন্দ্রনাথ নাচ করছেন এমন কথাও আমরা জানতে পাই। ‘ঘুর লেগেছে তাধিন্ তাধিন্’ গানটি নৃত্যের জন্যই রচিত হয়েছিল তা এর কথা থেকেই বুঝতে পারছি। ‘আজি দখিন দুয়ার খোলা’ গানটির অভিনয়ে কবি এবং ‘আমার সোনার হরিণ চাই’ গানটির সাথে দীনেন্দ্রনাথ নৃত্যের আভাস জুড়ে দিয়েছিলেন।
১৯১২ সালে অচলায়তনে অপাংক্তেয় শোনপাংশুরা অভিনয়ের সময় পায়ে পায়ে নৃত্যছন্দ তৈরি করে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের শিক্ষায়। ১৯১৩-১৪ সালে রবীন্দ্রনাথের প্রশ্রয়ে পিয়ারসন সাহেব পাশ্চাত্য ছাঁদের নাচ জুড়ে দিচ্ছেন অচলায়তনে। ১৯১৬ সালে ‘ফাল্গুনী’ নাটকে কবি অভিনয় করছেন অন্ধ বাউলের ভূমিকায়। শান্তিনিকেতনের পরে ফাল্গুনী আবার অভিনীত হয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে, এবারে ‘বৈরাগ্য সাধন’ নামক আর একটি ছোট নাটিকা অভিনীত হয় একইসাথে। এখানে কবি অভিনয় করেছিলেন কবিশেখরের ভূমিকায়। কবিশেখরের ভূমিকায় অভিনেতা রবীন্দ্রনাথ সকলকে অবাক করে দিয়েছিলেন। এইভাবে প্রতি বছর তিনি একটু একটু করে এগিয়ে চলেছেন। ১৯১৫ এবং ১৯১৬ সালে ফাল্গুনী নাটকে অন্ধ বাউলের ভূমিকায় নাচ করছেন তিনি।
১৯১৯-এ শারদোৎসবে শান্তিনিকেতনের ছেলেদের দিয়ে সারি বেঁধে গানের তালে তালে পরিক্রমা করিয়েছিলেন মঞ্চে, দুটি গানের সাথে, ‘আমার নয়ন ভুলানো এলে’ আর ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ’। এই পরিক্রমার একটা চেহারা আমরা এখনও দেখতে পাই বসন্ত উৎসবে ‘ওরে গৃহবাসী’ গানটির সাথে পরিক্রমায়। এরপর ১৯২৩–এ বসন্ত নাটিকা; এখানে অনেকগুলি গানের সাথে তার ভাব অনুযায়ী নাচ হয়েছিল। বসন্ত, বনভূমি আম্রকুঞ্জ, এই সব চরিত্রের সাজে ছেলেমেয়েরা মঞ্চে প্রবেশ করে হাতপা নেড়ে, যে যেভাবে পারে গানের ছন্দ মিলিয়ে নাচতে বলা হয়েছিল, কথার অর্থ প্রকাশ করতে হচ্ছে না এখানে। সেখানে সুর তাল ছন্দই প্রধান নাচের জন্য। নৃত্যের বিবর্তনের ইতিহাসের প্রথম যুগে যেমনটা আমরা দেখতে পাই। আজকের কথ্য ও লেখ্য ভাষা সৃষ্টির আগেই চিত্র, নাচ, নাট্য, মাইম, এগুলির জন্ম— ভাব প্রকাশের নানা মাধ্যম হিসেবেই তখন এসবের প্রয়োজনীয়তা, শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠা অনেক পরের বিষয়। তাল ও ছন্দ খুব স্বাভাবিক যেভাবে জীবনে আছে, নানান দৈনন্দিন কাজে আছে সেভাবেই ছিল তাদের ভাবের প্রকাশে, বানিয়ে তোলা ছিল না যেমনটি এখন ঘটে শিল্পমাধ্যমে, সাজানো বিষয়, ঝকঝকে উপস্থাপনা। কবির কাছে মূল বিষয় ছিল নানাভাবে ছেলেমেয়েদের ভিতর-জগৎকে জাগিয়ে দেওয়া, নাড়িয়ে দেওয়া।
সংস্কারের বাইরে গিয়ে যখন সে নিজেকে প্রকাশ করতে শিখবে, তখন সে নিজের জীবন-যাপনের গতি নিজেই ঠিক করে নিতে পারবে, চলাই তখন হবে মূলমন্ত্র। এভাবে প্রথম পর্ব কাটল, শরীরকে তাল লয় ছন্দে প্রকাশ করার অনুশীলনে এবং রক্ষণশীলতা দূর করতে। এরপর এল নৃত্যশিক্ষা পর্ব। এই পর্বে যাওয়ার আগে একটু নজর রাখব শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে ছাত্রী হিসেবে মেয়েদের প্রবেশের বিষয়ে।
দেশ তথা বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি ও রবীন্দ্রনাথ
১৯০৫ থেকে দেশের যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা ও আন্দোলন সংঘঠিত হয়েছিল তাতে রবীন্দ্রনাথ কখনও সরাসরি আবার কখনও পরোক্ষে জড়িত ছিলেন, কখনওই সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে থাকতে পারেননি। ১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা হলে রাখি উৎসব পালন করছেন তিনি সকলকে সাথে মিলে। ১৯০৪ সালে চৈতন্য লাইব্রেরির উদ্যোগে ‘স্বদেশী সমাজ’ প্রবন্ধ পাঠ করছেন। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে যে বয়কট আন্দোলন শুরু হচ্ছে তার ফলে ব্রিটিশ সরকারের আঘাত নেমে আসছে সরাসরি ছাত্রসমাজের ওপর। রাজনৈতিক আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ বন্ধ করতে কার্লাইল সাহেব (তৎকালীন বাংলা গভর্নমেন্টের প্রধান সেক্রেটারি) সার্কুলার জারি করছেন। জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি উঠছে কলকাতা ও সারা বাংলা জুড়ে। তার সূচনাপর্বেও বক্তব্য রাখছেন রবীন্দ্রনাথ। ডন সোসাইটির বৈঠকে তিনি স্পষ্টত বলছেন, আগামীতে সরকার এই সার্কুলার প্রত্যাহার করে নিলেও যেন জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষাকে স্বাধীন করতে জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপন জরুরি। আবার ব্রিটিশের ছাঁচে বিদ্যালয় গড়ে তাকেই জাতীয় বিদ্যালয়ের তকমা দেওয়াকেও তিনি সমর্থন করছেন না। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন হীরেন্দ্রনাথ, মোহিতচন্দ্র, ব্রহ্মবান্ধব প্রমুখ। ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় এবং রবীন্দ্রনাথ, এক বহু বিতর্কিত সম্বন্ধ, যা নিয়ে বিশেষ আলোচনাও হতে পারেনি মূলত তথ্যের অভাবে।
১৯০৬ সালেই মুসলিম লীগ গঠিত হচ্ছে, অপরদিকে জাতীয় কংগ্রেসে হিন্দুত্ববাদীদের প্রভাব বাড়ছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করেই স্বাধীনতা আন্দোলনকে পরিচালিত করার চেষ্টা হচ্ছে। ১৯১৫ সালে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা গঠিত হবে যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মদনমোহন মালব্য, জাতীয় কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট (৩ বার মনোনীত)।
১৯০৬ সালে ‘গোরা’ উপন্যাস লিখছেন রবীন্দ্রনাথ প্রবাসী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে। গোরা চরিত্র অনেকটাই ব্রহ্মবান্ধবের চরিত্রের কাছাকাছি বলে মত প্রকাশ করেছেন বহু বিশেষজ্ঞ। সেই গোরা চরিত্রকে তিনি অবশেষে কট্টর হিন্দুত্ববাদী অবস্থান থেকে সরিয়ে আনছেন। গোরা বলছে, ‘আপনি আমাকে সেই দেবতারই মন্ত্র দিন, যিনি হিন্দু মুসলমান খৃষ্টান ব্রাহ্ম সকলেরই— যার মন্দিরের দ্বার কোনো জাতির কাছে কোনো ব্যক্তির কাছে, কোনোদিন অবরুদ্ধ হয় না— যিনি কেবল হিন্দুর দেবতা নন, যিনি ভারতবর্ষের দেবতা।’ দ্বন্দ্ব, চূড়ান্ত দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে চলেছেন রবীন্দ্রনাথ। একদিকে মহর্ষির উপনিষদ ও বৈদিক শিক্ষা আবার আর-একদিকে তাঁর নিজস্ব অর্জিত জ্ঞান বিজ্ঞান, যুক্তিবোধ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বোধ। এই দুয়ের দ্বন্দ্ব চলছে নিরন্তর।
শান্তিনিকেতনে বালিকা বিদ্যালয়
১৯০৮-এ পূজার ছুটিতে রবীন্দ্রনাথ তাঁর দুই মেয়ে মীরা ও বেলা এবং আরও এক বাল্যবিধবা বালিকা লাবণ্যরেখাকে নিয়ে শিলাইদহে বাস করছিলেন। এইসময়েই তাঁর মধ্যম জামাতা সত্যেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। নিজের মেয়ের মৃত্যুর পর আর একটি বালিকা, ছবির সাথে তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে তার বিবাহ দিয়েছিলেন। পরিবারে তখন আরও একটি বাল্যবিধবা প্রতিমা রয়েছে (গগনেন্দ্রনাথের ভাগ্নী বিনয়িনীর কন্যা)।এতগুলি বাল্যবিবাহ কবি নিজে দিয়েছেন এবং আরও কত বিবাহের সাক্ষী তিনি। এই বাল্যবিধবাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে যারপরনায় ভাবিত তিনি।
সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?
১৯০৯-এর নতুন সেশনে শান্তিনিকেতনে ‘বালিকা বিদ্যালয়’ গড়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ এক চিঠিতে লিখছেন, আগে বহুবার এ ভাবনা এলেও তিনি তাকে রূপ দিতে ভয় পেয়েছেন। এবার এতগুলি মেয়েকে তিনি ফেলতে পারলেন না। ভগিনী নিবেদিতা কলকাতায় নারীশিক্ষার জন্য স্কুল স্থাপন করেন ১৮৯৮ সালে। নারীশিক্ষার জন্য নিবেদিতা নিরন্তর প্রচেষ্টা করে চলেছেন। নিবেদিতা, রবীন্দ্রনাথ, জগদীশ বোস, ওকাকুরা প্রমুখের সখ্যতা সর্বজনবিদিত।
বালিকা বিদ্যালয়ের প্রথম কয়েকজন ছাত্রী ছিলেন লাবণ্যরেখা, মোহিত সেনের দুটি বালিকা কন্যা, অরুণেন্দ্রনাথের কন্যা সাগরিকা, ঢাকার প্রসন্নকুমার সেনের দুই কন্যা হিরণবালা ও ইন্দুলেখা, গয়ার তারকনাথ রায় ও শ্রীশচন্দ্রের দুই কন্যা প্রতিভা ও সুধা ও মধুসূদন সেনের কন্যা হেমলতা। কিন্তু বছর দুয়েকের মধ্যে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। ‘গোরা’ উপন্যাসে পরেশবাবুকে অনেক অংশে তাঁর দ্বন্দ্ব তিনি দিয়েছেন বলে মনে হয়। বিরোধ শুধু বাইরে নয় তার অন্তরেও উপস্থিত। কঠিন সময়ে যিনি ধ্যানমগ্ন হন, কখন সুচরিতাকে সঙ্গে নেন কখনও একা। দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে যে নতুন ভাব ভাবনা উঠে আসবে তার জন্য তো নিজের কাছে একাকী বসা প্রয়োজন। ধ্যান শেষে তিনি সুচরিতা ও গোরার পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। গোরা তাঁর কাছেই আসছে ‘ভারতবর্ষের দেবতার মন্ত্র নিতে’। হিন্দু ব্রাহ্ম বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমান এভাবে যত খণ্ডিত হতে থাকবে মানুষ, তত ভাগে আসলে ভেঙে যাবে দেশ সমাজ, ভারতবর্ষ। রাজনৈতিক নেতার রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে ভাবিত, সমাজসংস্কারকরা সমাজের হিতসাধনে ব্রতী, শুধু মুষ্টিমেয় ভাবুকের দল মনে করেন মানুষের জীবনকে এভাবে খণ্ড খণ্ড করে দেখা যায় না। রবীন্দ্রনাথ অবশ্যই শেষোক্ত দলে পড়েন। তাই তাঁর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে নিরন্তর। তিনি শুধু হিন্দুত্ববাদী নেতা নন, তিনি যে এতগুলি বাল্যবিধবার পিতা, পিতাসমান। তিনি বউঠাকুরানীর আদরের কিশোর দেবরটি। তিনি সেই কিশোরটিও যে, বিলাত যাওয়ার আগে বোম্বাইয়ের আনা তরখড়ের কাছে ইংরেজি বলা ও আদবকায়দায় পারদর্শী হতে থাকেন। তিনি সেই মানুষটিও যিনি বিলাতে নাচের সভায় সঙ্গিনীর সাথে গ্যালপ নাচছেন। তিনি কবি, তিনি সৌন্দর্যের পূজারী।
‘নারীকে আপনভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার, হে বিধাতা’ যখন তিনি লিখছেন, নিশ্চিত জানেন যে, বিধাতা এই অধিকার হরণ করেননি, হরণ করেছে মানুষ, ধার্মিকতার নামে। তাই ধর্মের চেয়ে ধার্মিকতাকে বড় করতে পারছেন না যেমন তেমনই মানুষের চেয়েও ধর্মকে উচ্চস্থান দিতে পারছেন না। তাঁর কাছে ব্রহ্মের সবচেয়ে প্রত্যক্ষরূপ মানুষের মধ্যেই প্রকাশিত। ‘মানুষের ধর্ম’ যখন তিনি লিখছেন তখন মানুষকেই সবার উপরে স্থান দিচ্ছেন। ‘…আমার বুদ্ধি মানববুদ্ধি, আমার হৃদয় মানবহৃদয়, আমার কল্পনা মানবকল্পনা। তাকে যতই মার্জনা করি, শোধন করি, তা মানবচিত্ত কখনওই ছাড়াতে পারে না। আমরা যাকে বিজ্ঞান বলি তা মানববুদ্ধিতে প্রমাণিত বিজ্ঞান, আমরা যাকে ব্রহ্মানন্দ বলি তাও মানবের চৈতন্যে প্রকাশিত আনন্দ। এই বুদ্ধিতে, এই আনন্দে যাকে উপলব্ধি করি তিনি ভূমা কিন্তু মানবিক ভূমা। তাঁর বাইরে অন্যকিছু থাকা বা না থাকা মানুষের পক্ষে সমান। মানুষকে বিলুপ্ত করে যদি মানুষের মুক্তি, তবে মানুষ হলুম কেন।’ [চলবে]
চিত্র: ‘মায়ার খেলা’ গীতিনাট্যের দর্শক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]
রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]
রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]