Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

মুখবন্ধ

‘‘মানুষের জীবন বিপদসম্পদ-সুখদুঃখের আবেগে নানাপ্রকার রূপে ধ্বনিতে স্পর্শে লীলায়িত হয়ে চলছে; তার সমস্তটা যদি কেবল ধ্বনিতে প্রকাশ করতে হয় তা হলে সে একটা বিচিত্র সংগীত হয়ে ওঠে; তেমনি আর-সমস্ত ছেড়ে দিয়ে সেটাকে কেবলমাত্র যদি গতি দিয়ে প্রকাশ করতে হয় তা হলে সেটা হয় নাচ।’’— জাভাযাত্রীর পত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

এই লাইনগুলি পড়ে মনে মনে যেন সেই প্রাচীনতম যুগে চলে গেলাম। বেশ কল্পনা করতে পারছি যে, জগতে পশুপাখি, নদী, ঝরনা, বায়ু, গাছের পাতার শিরশিরানি এ ছাড়া আর কোনও শব্দ কোথাও নেই, মানুষ এখনও কথা বলে না। তাহলে কীভাবে যোগাযোগ স্থাপন করে একে অপরের সাথে? কী করে প্রকাশ করে তার সব অনুভূতি? অঙ্গভঙ্গি, নিজের হাত পা চোখ মুখ, গোটা শরীর তো নড়েচড়ে ভাব প্রকাশ করে। এখনও এত এত ভাষা সৃষ্টি হওয়ার পরও কথা বলার সময় মানুষ হাত-পা নাড়ে। প্রাচীন অভ্যাস বহন করছি আমরা। খুব প্রয়োজনীয় অঙ্গভঙ্গির সাথে সাথে আনন্দ, উচ্ছ্বাস, লগ্নতা, ক্রোধ সব আবেগ প্রকাশ করতেও নানান অঙ্গভঙ্গির জন্ম দিয়েছিল তারা, এখানেই জন্ম মাইম ও নৃত্যের। কীভাবে কোনও নির্দিষ্ট ভঙ্গি কোনও নির্দিষ্ট আবেগকে প্রকাশ করবে, তা কীভাবে স্থির হল? সেখানে কাজে লাগল প্রকৃতিকে গভীরভাবে লক্ষ্য করার জ্ঞান। গাছ থেকে নেমে মানুষ যখন দু’পায়ে দাঁড়াল, তখনি তার চোখের সামনে খুলে গেল গোটা জগতের রূপ। ওপর থেকে নয় সামনাসামনি দেখল জীবজগৎ ও প্রাণীজগৎকে। নাচে যেসব মুদ্রা আমরা ব্যবহার করি, তার দিকে তাকালে এ সত্য প্রকাশ পায়, যা পরে নানান শাস্ত্রগ্রন্থে কোডিফায়েড হয়েছে। আকাশের চাঁদ, গাছের পাতা, ময়ূর, হরিণ, সাপ যা কিছু মানুষ দেখছে, হাতের আঙুলের সাহায্যে তাকেই রূপ দিয়েছে। শরীরের ভঙ্গিতেও যে তারা পশুপাখির ভঙ্গি অনুকরণ করবে, তা আর আশ্চর্য কী!

যদি শিকারি মানুষকে মনে করি, শিকার করতে শিখল কেমন করে? প্রথমে সে ফলমূলের সাথে খেত শিকার করা পশুর উচ্ছিষ্ট। লক্ষ্য করত, বড় পশুরা কেমন করে ছোট পশুদের শিকার করে। এভাবে সে নকল করল শিকারি পশুর দেহভঙ্গি। ছোট যে পশুকে সে শিকার করবে, লক্ষ্য করল তাকেও; কারণ সেই অনুযায়ী তাকে স্থির করতে হবে তার চলন, ভঙ্গি। এবার তা তাকে অভ্যাস করে রপ্ত করতে হবে, না হলে শিকারের সময় সে সফল হতে পারবে না। এভাবেই তার নিজের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই তাকে শিখতে হল শরীরচালনা করতে। শরীর যত চলে, তাতে মগজেরও পুষ্টি বাড়ে, শরীরী ভাষা সৃষ্টির এই হল প্রাথমিক ধাপ। এখানে তার শিক্ষক একমাত্র প্রকৃতি আর সে নিজে, নৃত্যের জন্ম একপ্রকার এখানেই।

আবার সবসময় যে শিকার জুটে যায় তাও নয়, অসফলও হতে হয় তাকে। এই অসফলতা ও সফলতার মাঝখানে ঢুকে বসে কিছু মায়াময় কল্পনা, যা তাকে আবার কর্মে উৎসাহিত করে। সবই প্রকাশিত হতে থাকে শরীরের মাধ্যমেই। শরীরের ভাষা, ও তার কণ্ঠাগত কিছু শব্দ সবমিলে জন্ম হয় এক মায়াময় পরিবেশনা, যাকে জাদুবিদ্যা বলা হবে পরবর্তীতে।

আবার শিকারজীবী মানুষ যখন কৃষিজীবী হচ্ছে, তখনও সে আর একপ্রকারে প্রকৃতিকে জয় করতে বেরিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতি যে ফলমূল দিয়েছে, তার ওপর নির্ভর না করে নিজে উৎপাদন করে নিতে চেয়েছে। আবার প্রকৃতির নিয়মকানুনের বাইরে যে কিছুই করা সম্ভব নয়, তাও সে বুঝেছে প্রকৃতিকে লক্ষ্য করেই। যথা সময়ে বৃষ্টি না হলে ফসল তো হবে না, আবার অতিবৃষ্টিতেও হবে না। একদিকে লক্ষ্য করা হাওয়ার গতিপথ, আকাশের রং, অনুমান করার চেষ্টা বৃষ্টি হবে, কি হবে না; অন্যদিকে সফলতা-অসফলতার মাঝের যে পরিসর, সেখানে জাদুবিদ্যা আরও বিস্তৃত ও মায়াময় হয়ে ওঠে। এতে একদিকে শারীরিক শক্তিক্ষয়ও হয়, আবার এসবের ফলে একটা কিছু ঘটবে সে আশাও জন্মায়, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জ্ঞান যে এখানেও কিছু কাজে লাগে তাও নিশ্চিত। সবকিছু মিলেই গড়ে ওঠে প্রাচীন জাদুবিদ্যা, যা আবার নাট্যের আঁতুড়ঘর।

পরবর্তী কৃষিজীবনেও মানুষের সবকাজের সাথেই জড়িয়ে আছে ছন্দ, সুর, তাল। দৈনন্দিন জীবনে তারা প্রকৃতির সাথেই অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত, যুক্ত উৎপাদনের সঙ্গে। প্রাথমিকভাবে মানুষের আচার ধর্ম শিল্প সংস্কৃতি এ সবের মূল চালিকাশক্তি হল এই দুই, প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করা ও উৎপাদনের রহস্যকে জানা ও ব্যাখ্যা করা। মানুষ যখন অবসর পেয়েছে তখনই আরও গভীরভাবে ভাবতে পেরেছে এবং তার কাছে নানা রহস্য উদ্ঘাটিতও হয়েছে। ভাবনার গভীরতা নানা বিষয়ে সূক্ষ্মতা নিয়ে এসেছে, কামও তখন কলা হয়ে উঠেছে। এই সূক্ষ্মতা ও সৌন্দর্যবোধ শিল্পের জন্ম দিয়েছে। নৃত্যের ইতিহাসেও আমরা দেখি কীভাবে সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর হয়ে উঠেছে ভাবপ্রকাশের ভঙ্গি।

এরপর নাচ চলেছে মানুষের সভ্যতার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে, তার জীবনজীবিকার প্রয়োজনে, সুখ-দুঃখে, ভয় ভাবনায় তার দোসর হয়ে। কিন্তু নগরজীবনে নাচ এমন কোণঠাসা হয়ে দাঁড়াল কেন? অষ্টাদশ শতক থেকে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা কলকাতাই তো আর একমাত্র শহর নয়। এর আগে ইতিহাস জুড়ে নানা নগরের গড়ে ওঠা ও তার বিবরণ আছে। সমুদ্র তীরবর্তী প্রাচীন বাণিজ্যনগরী কালিকটই হোক বা শতাব্দীপ্রাচীন বৈশালী নগরী, সব যুগেই সব নগরের সমসাময়িক সাহিত্যে, স্থাপত্যে, চিত্রে ‘নগরনটী’-র দেখা পাওয়া যাচ্ছে। দক্ষিণের ‘শিলাপদিকরম’ ও ‘মণিমেখলাই’-এ মাধবীর কাহিনিই হোক বা বৈশালী নগরীর আম্রপালী, নগরনটী আছেন কাহিনির কেন্দ্রে। আবার এসবই সম্পদ ও তার দখলের কাহিনি, যার সাথে জুড়ে আছে ধর্ম ও রাজনীতি, সমাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে। আরও অতীতে চলে যাই যদি, রামায়ণ মহাভারত পুরাণ, সব রাজার দরবারে নাচের উপস্থিতি, ইন্দ্রের দরবারে নাচ আছেই। ইন্দ্রের দরবারে নেচেই বেহুলা ফিরিয়ে আনবে লখিন্দরকে, এ কাহিনি বাংলারই। তাই শুধু দক্ষিণ ভারতই নয়, বাংলার নগরজীবনেও নাচ ছিল। মঙ্গলকাব্য, পদাবলিতে নাচের উল্লেখ সেকথা প্রমাণ করে।

নৃত্য গীত বাদ্যের সাথে যুক্ত পৃথক গোষ্ঠী গন্ধর্বরা থাকতেও অপ্সরাদের প্রয়োজন হয় ইন্দ্রের দরবারে। মাঝে মাঝেই কোনও ঋষিমুনির পক্ষ থেকে বিরোধের আশঙ্কা পেলেই এই অপ্সরাদের পাঠিয়ে দেওয়া হত তাকে মোহাবিষ্ট করতে, পরে তার সাথে একপ্রকার সন্ধি করা সম্ভব হত। নাট্যশাস্ত্রে যে আটটি রসের কথা বলা হয়েছে, শৃঙ্গার তার প্রথম রস, রতি যার ভাব। কাম, রতি, শৃঙ্গার এই শব্দগুলিরই ব্যবহার হচ্ছে নরনারীর যুগলমিলন বোঝাতে। কাম প্রাণীজগতে অত্যন্ত স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। কাম এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই না পুরোদস্তুর একজন দেবতার সৃষ্টি করতে হয়েছে। কামদেব অথবা অনঙ্গদেবের বাণে কামাবিষ্ট হয়ে নরনারী সঙ্গিনী অথবা সঙ্গী খুঁজে বেড়ায়। আবার এই ‘অনঙ্গ’ শব্দের কতরকম অর্থ, দেহহীন, আকাশ, চিত্ত। কাম, যা চিত্তকে অধিকার করে? কাম এবং রূপজ মোহ, তার সাথে যুক্ত হল নৃত্য ও লাস্য, যা একত্রে এতটাই শক্তিশালী হাতিয়ার, শত্রুপক্ষকে বাগে আনতে তার প্রয়োগও হচ্ছে অব্যর্থভাবে। অমৃতভাণ্ড রক্ষা করতে বিষ্ণুকেও মোহিনীরূপ নিতে হচ্ছে। যার হাতে ক্ষমতা, তার কাছে এও আর এক অস্ত্র। নৃত্যের সঙ্গে ভোগের সম্পর্ক সেই যুগ থেকেই কিন্তু তাই এক এবং একমাত্র নয়, পাশাপাশি নৃত্যের শিল্পিত রূপও গড়ে উঠেছে। আবার মূলবাসী মানুষ, গ্রামীণ কৃষিজীবী মানুষের নাচ তার জীবনের সাথে জড়িয়ে বয়ে চলছে উচ্ছল নদীর মতই। এত হাজার বছর পরেও এত ঝড়ঝাপটা সয়েও পৃথিবীর প্রাচীন কিছু উপজাতি যেমন এখনও বেঁচে আছে, বেঁচে আছে তাদের নাচও। কোল, ভীল, মুন্ডা, সাঁওতাল, আফ্রিকার বিভিন্ন উপজাতি এবং তাদের নাচ এরই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

যে প্রশ্নটা থেকে এত কথা উঠে এল, এবার আসি সেই জায়গায়। নাচ নগরজীবনে কোণঠাসা হল কেন? নাচ যে পরিসরেই ভোগের সামগ্রী হয়েছে, সে পরিসরেই পরিবেশক ও ভোক্তা তৈরি হয়েছে, যা গ্রামীণ স্তরগুলোতেও হয়েছে, কিন্তু তা সমগ্র গ্রামজীবনের সামাজিক পরিসর থেকে নাচকে সরিয়ে দিতে পারেনি। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা যে ভারতবর্ষে ঠিক কবে থেকে, তা সঠিকভাবে জানা না গেলেও তা যে বহাল তবিয়তেই ছিল তা নিশ্চিত। যে সামন্তরাজা সম্পদ সঞ্চয় যেমন করেছে ভোগও করেছে যথেচ্ছ, সে তালিকায় নাচও ছিল। এই বাংলাতেই নাচনী, ঝুমুর লাস্যপ্রধান এই নাচগুলি কিন্তু এখনও রয়েছে। ভোক্তা নাচ করে না, নৃত্য পরিবেশনের জন্য তখন একটি পৃথক দল তৈরি হয়েছে, যারা শুধু এর চর্চা করবে। আর চর্চায় যে কোনও বিষয়ের মান উন্নত হতে বাধ্য এবং তা হয়েওছে। যে প্রকৃতির কাছে শিক্ষার কথা প্রথমেই বলেছি, নাট্যশাস্ত্রে এসে তারই অতি উন্নত নির্দিষ্ট কাঠামো নির্মিত হতে দেখব। নাচ যখনই ইন্দ্রিয়-ভোগের বস্তু হয়েছে, তখনি তার সাথে ভোগের উপাদান মিশ্রিত হয়েছে, কীভাবে ভোক্তাকে খুশি করা যায় তার প্রচেষ্টা এসে পড়েছে। এর সাথে আবার এই চর্চাকারী দলের গ্রাসাচ্ছাদন নির্ভর করেছে। নগরজীবনে ও গ্রামজীবনের একটা অংশে তাই দুটি দল, একদল নাচের চর্চা করে আর একদল যারা এদের পৃষ্ঠপোষক ও ভোক্তা। নগরজীবনে এই ভোক্তা বা পৃষ্ঠপোষক যারা, তারা কিন্তু নাচেন না বা তাদের বাড়ির মেয়েরা বউরাও নাচেন না। গ্রামজীবনে রসিক নাচনী ও তার দলবল যেমন একটা অংশ, আবার সামাজিক জীবনে বাড়ির মেয়েবউদেরও নাচ ছিল পাশাপাশি। গ্রাম ও নগরে তফাৎ হল এখানেই।

সমস্ত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেই নতুন কিছু গড়ে উঠেছে সর্বকালেই। এই সামাজিক জীবনে যা গড়ে উঠল, তা কখনও সরাসরি ধর্মের হাত ধরে কখনও ধর্মীয় সংস্কারের অঙ্গ হিসেবে। নগরজীবনে যখন বৃহৎ মন্দির গড়ে উঠল তখন মন্দিরের সঙ্গে সংযুক্ত শিল্পধারার সমৃদ্ধি ও প্রসার হল ধর্মের প্রচার ও প্রসারের প্রয়োজনেই। মন্দিরে দেবদাসী ধারার নাচ গড়ে উঠল। অন্যদিকে আবার ধর্মীয় উৎসবে মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলে মেলার প্রচলন হল একদিকে অর্থনৈতিক কারণে অন্যদিকে সামাজিক কারণে।

সরাসরি মন্দির ও ধর্মের সাথে যুক্ত না হয়েও এই মেলা একপ্রকার সামাজিক মিলনের কাজ করল, যেখানে সামাজিক জীবনের বৃহৎ পরিসরে খুব সূক্ষ্মভাবে ধর্মীয় ভাবধারার প্রসার হতে থাকল। এই সমস্ত পরিসরের নাচ হিসেবে আমরা চিহ্নিত করতে পারি দক্ষিণের কোইকোট্টীকোলি, বাংলার ধামাইল (মেয়েরা গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে নাচে) প্রভৃতিকে। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক। [চলবে]

চিত্র: অপ্সরা। প্রাচীন ভারতীয় ভাস্কর্য।

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

5 3 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »