মনোজ দাস
ভাষান্তর: তরুণ সিংহ মহাপাত্র
‘উত্তর উপত্যকার সেই পার্বত্য বসতির বৃদ্ধদের কথা আমার অনেক সময় মনে পড়ে’— দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন মি. জন। পরে পরে বিরক্তিব্যঞ্জক কণ্ঠে নিজের কাছে নিজে অভিযোগ জানানোর মত উচ্চারণ করলেন— ‘শুধু যুব— যুবশক্তি— যুবসমস্যা, এছাড়া জগতে যেন আর কিছু কথা নেই! খোসামোদি করে হোক বা গালিগালাজ দিয়ে হোক সবাই যুবকদের মাথা বিগড়ানোয় ব্যস্ত। কে মনে রেখেছে সেই কল্পনাপ্রবণ, সবুজ বৃদ্ধদের কথা?’
‘কী বললেন, সবুজ?’— আমাদের মধ্যে একজন যথেষ্ট সতর্ক কণ্ঠে প্রশ্ন করল।
‘জরুর। আর আমি জানি আমি কী বললাম। সবুজ ও অনন্য উপত্যকার সেই বিস্মৃত বৃদ্ধরা।’
পুনরায় একদমকা শীতল হাওয়া চূর্ণ বৃষ্টিজলসহ ভিতরে ঢুকে এল। আমরা জানলার পাশ থেকে যে যার চৌকি সরিয়ে এনে পরস্পর আরও নিকটবর্তী হয়ে বসলাম।
‘বর্ষা মনে করিয়ে দিল!’ মি. জন পুনরায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন।
আমরা তাঁকে তোয়াজ করে আরও এক গ্লাস পানীয় গ্রহণ করালাম। ফলে তিনি সাবলীল গতিতে বলে চললেন—
বর্ষা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে পর্বত-উপরে তাদের বার্ষিক উৎসবের কথা। বাস্তবিক বড় মজার উৎসব সেটি। কেবল বৃদ্ধবৃদ্ধাদের মধ্যে সীমিত। বাদ্য-বাঁশি বাজিয়ে তারা পর্বতের উপরে জড়ো হয়েছিল আর সন্ধ্যাটি কাটিয়েছিল বিড়াল বাচ্চার মত উদ্দাম নাচানাচি করে— পার্বত্য ঝরনার মত উচ্ছল গান ও চিৎকার করে।
বহুকাল পূর্বে এক সুন্দরী রাজকুমারীর এক রূপহীন বৃদ্ধর সঙ্গে পলায়নজনিত ঘটনার স্মারকী সেই উৎসব। বৃদ্ধটি রাজপ্রাসাদে এসেছিল কোনও কাজে। রাজকুমারীর দৃষ্টি পড়ল তার ওপরে— আর সে হল ইতিহাসে ক্ষিপ্রতম ‘প্রথম দৃষ্টিতে প্রেম’-এর দৃষ্টান্ত। মনে রাখো, এ তোমাদের গতানুগতিক প্রেমকাহিনি নয়— যেখানে বৃদ্ধটি এক ছদ্মবেশী রাজকুমার বা অভিশপ্ত গন্ধর্ব হতে বাধ্য। আমাদের এ ছিল আসল বৃদ্ধ। নির্মল বার্ধক্যের উজ্জ্বল আকর্ষণেই রাজকুমারী তার প্রেমে পড়েছিল।
পলকা রাজকুমারীকে পুলকিত বৃদ্ধ তুলে নিয়ে গেল পর্বতের উপরে। যখন রাজার ঈর্ষান্বিত সৈন্যরা তাদের পশ্চাৎধাবন করে পর্বতের পাদদেশে পৌঁছল, তখন বৃদ্ধ এমন তেজে তর্জন-গর্জন করে পাথর গড়াতে লাগল যে সৈন্যরা সমান উৎসাহে পিঠটান দিল।
কবে কোন অতীতের সেই প্রেরণাদায়ক ঘটনাকে উত্তর উপত্যকার স্থানীয় বৃদ্ধরা স্মরণ করত— পূর্বকথিত উৎসবের মাধ্যমে।
তোমাদের মেয়েমুখো সভ্য সমাজ থেকে ক্বচিৎ কেউ কখনও সেই অঞ্চলে যেতে পারে। চল্লিশ বছর পূর্বে যখন আমি গিয়েছিলাম, তখন শেষ পুরুষের বৃদ্ধরা সেই মহান পরম্পরা চালু রেখেছিল।
আমি তখন যুবক। যুবকদের সন্দেহের চোখে দেখত উপত্যকার বৃদ্ধরা। সেটা স্বাভাবিক। যুবকরা হয়তো লক্ষ্য করে দেখবে কোন ঠাকুমার সঙ্গে কোন ঠাকুরদা বেশি গলাগলি করছে— তাই স্থানীয় যুবক-যুবতীর কাছে সেই উৎসব নিষিদ্ধ ছিল। যদি কোনও যুবক পর্বতের ওঠার চেষ্টা করত, তবে সেই সুদূর অতীতের প্রেমিক বৃদ্ধের আদর্শ মনে করে তর্জন-গর্জন সহ পাথর গড়িয়ে তাকে হটিয়ে দেওয়া হত। মধ্যবয়স্ক লোক সমস্ত ব্যাপার থেকে নিজে নিজেকে দূরে রাখত— কিছুটা লজ্জায়। সে যাইহোক, আমি দূরের পর্যটক হওয়ার কারণে আমার উপস্থিতি সহ্য করা হয়েছিল।
পর্বত-উপরে সেই অনন্য উৎসবের বিশদ বিবরণী আমি তোমাদের শোনাব না। সত্যি কথা বললে, সে-সব প্রকাশ না করার জন্য আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবে এটুকু বলতে পারি, দুই দিগন্তস্পর্শী বিরাট ইন্দ্রধনু তলে, অস্তরাগরঞ্জিত সেই উৎসবের কোলাহলের মধ্যে কাটানো কয়েক ঘণ্টা আজ পর্যন্ত আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় সময়। যা হোক উৎসব-পরবর্তী অভিজ্ঞতা বলছি, শোনো।
সূর্যাস্তের পরে পরে হঠাৎ ঠান্ডা হাওয়া প্রবল হল। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও পড়ল। বিদ্যুৎচমকে লক্ষ্য করলাম অদূরবর্তী উত্তরের পর্বতশ্রেণির উপরে গহন কালো মেঘ জমেছে।
বৃদ্ধবৃদ্ধারা আকাশের অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত না করে মজায় মেতে রইল। আমি কিন্তু ঝড়ের গতিবিধি বুঝতে পেরে তরতর করে নীচে নামতে লাগলাম। পর্বতের পাদদেশে ছিল আমার কার। অর্ধেক পথ নেমেছি কী নামিনি ঝড় এসে পড়ল। উপর থেকে নীচের দিকে তাকিয়ে আমি চমৎকৃত হলাম! ঘূর্ণি বাতাসে শুকনো পাতারা যেভাবে উড়ে যাচ্ছে, সেই রকম দ্রুতগতিতে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সময় বৃদ্ধাদের কত চাতুর্য ও অনুরাগসহ সাহায্য করছিল সেই মধুর বৃদ্ধকুল!
চোখের পলকে সবাই বসতির মধ্যে লুকিয়ে গেল। সেই নির্জন পর্বতে শিলাখণ্ড আঁকড়ে ধরে দুরন্ত ঝড়ের কবল থেকে কোনও প্রকারে রক্ষা পেলাম আমি। ঝড় না থামা পর্যন্ত, প্রায় দু-ঘণ্টা ধরে আমি একটি বিশাল পাথরের নীচে হাঁটু গেড়ে বসে রইলাম।
কিন্তু তারপরে দেখা দিল সমস্যা। কার স্টার্ট হল না। আমার সমস্ত সাধ্য-সাধনা সত্ত্বেও সেটি কঙ্কালের মত শীতল হয়ে পড়ে রইল।
বসতির দিকে পথ ক্রমশ ঢালু হয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে আমি সেই তুষারশীতল বাতাসের প্রহার সহ্য করে কার ঠেলে ঠেলে এগিয়ে চললাম— কাঠবিড়ালীর ল্যাজের মত কেঁপে কেঁপে।
বসতির ঠিক প্রবেশপথে ছিল একটা চটি। আসার সময় আমি সেটা লক্ষ্য করেছিলাম। বর্তমানে গাঢ় কুয়াশার ভিতর দিয়ে আসা ম্লান জ্যোৎস্নায় তার মুরগি ও বোতল চিহ্নিত সাইনবোর্ডটি চিনতে আমার কষ্ট হল না।
চটির বৃদ্ধ মালিক কপাট খোলামাত্রই আমি তার ওপরে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। বৃদ্ধ নিজে একটু মত্ত অবস্থায় থাকলেও আমাকে সামলে নিল এবং ধরে নিয়ে গিয়ে একটা প্রশস্ত বেত-চেয়ারে বসিয়ে দিল।
‘আমি খুব ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত’— আমি বললাম।
‘চিন্তা নেই— আমি খাইয়ে-দাইয়ে ঠিক করে দেব।’— সে দেবোপম একটি স্মিতহাসি খেলিয়ে বলল। দেবোপম— কারণ সে-হাসিতে ছিল প্রাচুর্যের প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস। তোমাদের আধুনিকদের দেবতা ছেড়ে গেছেন— সে দেবোপম হাসিও।
‘দয়া করে ঠিক করে দাও।’— আমি ব্যাকুলভাবে বললাম, ‘কিছু গরম খাবারের ব্যবস্থা হোক। সেই সাইনবোর্ডে যে ছবি আছে তেমন কিছু হলে উত্তম।’
মনে হচ্ছিল, যেন আমি তখনই মূর্ছা যাব। বৃদ্ধ আমার ওপর একটা কম্বল ছুড়ে দিয়ে পাশের জ্বলন্ত আগুনে আরও কয়েকখণ্ড কাঠ ফেলে দিল।
এক ঘণ্টার বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। যখন বৃদ্ধ আমাকে ঘুম থেকে তুলল, তখন জিভ পেল মোটা মোটা রুটি, গরম মুরগি ও বোতলে পানীয়। জীবনে কোনওদিন খাওয়াদাওয়া ব্যাপারটা এত মধুময় লাগেনি। বুভুক্ষু কুকুরসুলভ একাগ্রতায় আমি সব খেয়ে চললাম আর বৃদ্ধকে অনর্গল ধন্যবাদ দিতে লাগলাম— বিশেষত মুরগির মাংস রাঁধার বিচক্ষণতার জন্য। বৃদ্ধ যেভাবে বিনা আপত্তিতে আমার সমস্ত উচ্ছ্বসিত প্রশংসা গ্রহণ করে নিল, তাতে বুঝলাম সে-সব তার একান্ত প্রাপ্য বলে তার কোনও সন্দেহ ছিল না। আমি চুপ করার পর সে বলল, ‘ধন্যবাদ। সেটা যে চমৎকার হবে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত ছিলাম। আমি জনিকে বলেছিলাম যে তার বিষয়টা চমৎকার হওয়া চাই।’
‘ও’… আমি এক ঢোঁক পান করে বললাম।
‘আমি জনিকে বললাম, এটা বিশেষ রাত। এই রাতের বিশেষ অতিথিকে আমাদের দিতে হবে বিশেষ অভ্যর্থনা।’
‘ও’… আমি বললাম আর জনিকে দেখার জন্য চারপাশে তাকালাম।
‘জনি একমত হল। জনি ছিল মূর্তিমান বিবেক। আহা!’
‘জনি তবে এটা রান্না করেছে! আমার তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কথা।’
‘হ্যাঁ, দিতে পারো। কিন্তু সমস্ত রান্না আমি করেছি। বেচারা জনি! ও হো!’
বেচারা জনিকে দেখার জন্য পুনরায় আমি ইতস্তত তাকালাম। কোথাও কারও অস্তিত্বের আভাস পেলাম না।
‘জনি কি শুয়ে পড়ল?’— আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
‘হঃ! তোমার পেট জানে বাবু! আমি রেঁধেছি, বেচারা জনিকে— গোটা জনিকে…’
‘ও… জনি তাহলে মুরগির নাম!’
‘মুরগি বলার আমরা কে! পাখিদের মধ্যে সে ছিল দেবদূত। বেচারা জনি!’
পেটের ভিতরে তখনও ক্ষুধা অনুভব করলাম। তবুও হাসতে চেষ্টা করলাম। ভেজা বানের মত সে হাসি ব্যর্থ হল। পরিস্থিতিটাকে হালকা করে দেওয়ার জন্য আর একবার চেষ্টা করলাম— ‘তুমি এমনভাবে বলছ— যেন সেই মুরগি কথা বলতে পারত!’
‘কথা? নির্মল জ্ঞান ছাড়া জনি আর কোনওদিন কিছু বলেছিল? তুমি তো শোনোনি, জানবে কেমন করে!’
আমি এবার উঠলাম ও আমার খাদ্য-পেয়র দাম দিয়ে দিলাম। জনির সমস্ত প্রতিভা সত্ত্বেও আমাকে তার বাবদ এমন কিছু অধিক দাম দিতে হল না, এটা আমি নিশ্চয় স্বীকার করব।
রাস্তায় এসে ধাক্কা খেলাম আর এক বৃদ্ধের সঙ্গে। ‘ক্ষমা করবেন… মাঝে কারটি থাকার জন্য আপনি যে ওদিক থেকে আসছিলেন, তা আমি দেখতে পাইনি।’
‘কার বুঝি! আমি সেরকমই অনুমান করেছিলাম।’— সে বিদ্রুপাত্মক কণ্ঠে বলল। এখানে সবাই মাতাল— নিজেকে একথা বুঝিয়ে আমি সেই অপমান সহ্য করলাম। কিন্তু আমি আমার কার ঠেলতে উদ্যত হওয়ামাত্র বৃদ্ধ ভদ্রলোক ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে অত্যন্ত মমতাভরা কণ্ঠে বলল— ‘কী হল? কিছু সাহায্য করতে পারি?’
আমি মোহিত হলাম। বললাম, ‘আপনি কত দয়ালু সত্যি! কথা হল, কার স্টার্ট হচ্ছে না। পাহাড়তল থেকে এই পর্যন্ত ঠেলে ঠেলে নিয়ে এসেছি। কিছু করতে পারবেন?’
‘আলবৎ পারব।’— এই কথা বলে বৃদ্ধটি তাকে অনুসরণ করতে ইশারা করল। তার কণ্ঠেও ছিল দেবোপম প্রাচুর্যের প্রতিশ্রুতি। আমি পুলকিত হলাম ও একটু অন্তরঙ্গ হওয়ার ইচ্ছায় বললাম, ‘আপনাদের এখানের লোক বাস্তবিক বড় মজাদার। ধরুন, এই চটির মালিকের কথা। আমার জন্য যে মুরগিটি রান্না করেছিল, তার নাকি মানুষের মত একটি নাম ছিল— প্রায় আমার নামের মত— জনি! হেঃ হেঃ। সে নাকি কথাও বলত! হেঃ হেঃ হেঃ!’
বৃদ্ধ ভদ্রলোকের গতি স্তব্ধ হয়ে গেল। সে পিছন ফিরে আমার দিকে তাকাল। সেই ম্লান জ্যোৎস্নাতেও আমি বুঝেছিলাম যে তার চোখে ফুটে উঠেছে তীব্র জিজ্ঞাসা। তারপর আতঙ্কিত স্বরে সে বলল, ‘মানে, তুমি কি বলতে চাইছ যে জনি আর ইহলোকে নেই— তুমি তাকে খেয়ে ফেলেছে?’
‘মানে— সত্যি বলতে— তা নয় তো আর কী?’
বৃদ্ধের কণ্ঠ থেকে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে এল এক অসহায় আর্তনাদ। তারপর কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, ‘তাহলে আমাদের উপত্যকায় সকাল কেমন করে হবে?’
‘সকাল… তার সমস্যা কী বুঝতে পারলাম না!’— আমিও কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম।
‘আমি চললাম। সব গ্রামবাসীকে উঠিয়ে বলব— হে আমার হতভাগ্য প্রতিবেশীরা, আমরা চিরকাল এইরকম অন্ধকারে পড়ে রইব। আর জনি নেই, যে ডাক ছেড়ে আমাদের উপত্যকার উপর সূর্যোদয় করাবে।’
বৃদ্ধ দৌড়াল। সেই রকম কান্নাভেজা গলায় বলছিল, ‘হায়, জনির ডাক ছাড়া কী করে সূর্য উঠবে?’ তার মধ্যেই একবার সে আমাকে আশ্বাস দিল— ‘দাঁড়াও— আমার কাছে এমন এক পুরনো মদ আছে, যা খাইয়ে দিলে মরা খচ্চরও বেঁচে ওঠে। তার থেকে এক পেগ তোমার কারের ইঞ্জিনকে খাইয়ে দেব— গাড়ি লাগামছাড়া হয়ে দৌড়াবে।’
বৃদ্ধ অদৃশ্য হয়ে গেল। সেই সময় দৈবাৎ সেই রাস্তায় যাচ্ছিল একটা ঘোড়ার গাড়ি। চালকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আমার কার তার গাড়ির পিছনে বাঁধলাম। অবশিষ্ট রাত ও পরের দিন রাস্তায় কাটল। সন্ধ্যাবেলায় ঘরে পৌঁছলাম।
মি. জন নীরব হলেন। আমরাও কিছুক্ষণ নীরব রইলাম। তারপর একজন বলল, ‘মি. জন, সেই রাজকুমারী ও তার বৃদ্ধ প্রেমিকের সম্পর্কে আর কিছু বলুন।’
‘জরুর।’ মি. জন বললেন, ‘বৃদ্ধ প্রেমিক পরের দিন সকালে দিবালোকে বুঝতে পারল যে রাজকুমারীটি যুবতী নয়— সেও বৃদ্ধা— রাজার জনৈকা পিসি, যে কিনা বহুকাল ধরে রাজার শিরঃপীড়া হয়ে রয়েছিল। সৈন্যরা সেই বৃদ্ধ প্রেমিকের কাছ থেকে গালি ও দু-চারটা ঢেলা খেয়ে আপ্যায়িত হয়ে ফিরে আসার এটাই রহস্য। সে যাই হোক, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা চিরকাল সুখে কালাতিপাত করে।
সেই একটি রাত্রির মধুর ভ্রান্তির স্মৃতিতেই বস্তুত বৃদ্ধরা বছরে একবার— একরাতের জন্য মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বৃদ্ধ প্রেমিকের সেই উদ্ভট মোহের সম্মানার্থে তারা উদ্ভট সব কথা কল্পনা করত। রাতের জন্য সে-সব বিশ্বাস করত আর সেই সময় যে তাদের সংস্পর্শে আসত সেও মোহিত হয়ে যেত। সেই ব্যাপার বোঝার জন্য চাই দরাজ দিল। ছাড়ো… আজ সবই উপকথামাত্র।
চিত্রণ: মুনির হোসেন
***
লেখক পরিচিতি
মনোজ দাস (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৪–২৭ এপ্রিল, ২০২১) আধুনিক ওড়িয়া তথা ভারতীয়-ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক। কথাসাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। ভূষিত হয়েছেন পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ সম্মানে। তাঁর ‘লক্ষ্মীর অভিসার’ (পরিমার্জিত নতুন মুদ্রণ, ২০২০) গ্রন্থ থেকে বর্তমান গল্পটি অনূদিত হল।
মনোজ দাসের আরও গল্প…