মনোজ দাস
ভাষান্তর: তরুণ সিংহ মহাপাত্র
সামাজিক সাবালকত্ব প্রাপ্তির অন্য নাম ছিল কলিকাতা–দর্শন।
আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় পঁচিশ মাইল দূরবর্তী জলেশ্বর স্টেশন থেকে সেই জাদুনগরী মাত্র কয়েক ঘণ্টার রেলপথ হলেও, তার স্পর্শ–প্রাপ্ত পুরুষের সংখ্যা আমাদের গ্রামে দুই বা তিন অতিক্রম করেনি। সে দিকে নারীর সংখ্যা, বলা বাহুল্য, শূন্য।
মহানগরী কলিকাতায়, সাতসমুদ্র পারের ইংরেজি নাম বহন করা এক–দু’টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিচারক স্তরের কোনও পদে নিযুক্ত এক–দু’জন ভাগ্যশালী যুবক অনেকের ঈর্ষার পাত্র হওয়া স্বাভাবিক। অভূতপূর্ব কেশসজ্জায় সজ্জিত হয়ে তারা গ্রামে আসত। গ্রামে যে ক’দিন থাকত প্রতিদিনেই একাধিকবার সুগন্ধি তেল মেখে তারা সেই অভূতপূর্বতার যত্ন নিত। পকেটে চিরুনি রাখা এমনকি খোদ শিক্ষকমশাইদের সামনে তা বের করে চুল আঁচড়ানোর মতো বিংশ শতকীয় আধুনিকতার তারাই ছিল প্রবর্তক। সাধারণত তারা বাংলা ভাষাতেই কথা বলত। যদি নিতান্তই ওড়িয়া ভাষায় কথা বলার প্রয়োজন পড়ত, তবে তারা যে করুণাবশত সেই ক্লেশকর কাজ করছে, বাচনভঙ্গিতে তা শ্রোতার হৃদয়ঙ্গম করিয়ে দিত।
মহানগরীর প্রচণ্ড প্রভাবের ফলে নিজ নিজের জন্মভূমির আশপাশের মামুলি, ছোটখাটো অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের কথা তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিস্মৃত হওয়ার প্রমাণও মিলেছিল। পাশের গ্রামের জনৈক তরুণের দৃষ্টান্ত মনে আছে। একাদিক্রমে দীর্ঘ তিনমাস কলিকাতায় কাটিয়ে কৃষ্ণ নামের সেই ভাল ছেলেটি ‘কেষ্ট’-তে পরিণত হয়ে ছুটিতে গ্রামের মাটিতে ফেরার সময় যে ওড়িয়া ভুলে যাবে, সে বাস্তবতা কিছুটা উদারভাবে গ্রামবাসীরা স্বীকার করে নিল। কিন্তু যখন কেষ্ট দক্ষিণের দিকে হাত দেখিয়ে ভাইকে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, সামনের দিকে কী একটা সব সময় ঘো ঘো করছে বলো তো?’ তখন তার বাবার হাত স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার গালে কষিয়ে দিল এক প্রচণ্ড চড়। কেষ্টর স্মৃতিতে তৎক্ষণাৎ নিজ মাতৃভাষা সহ গ্রামের সামনে আবহমান কালের বিস্তৃত সমুদ্রটি উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
ঘরে অক্ষরশিক্ষা শেষ করে গ্রামের নিম্ন-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তখন সদ্য ভর্তি হয়েছি, বাবা বারবার কলিকাতা যেতে লাগলেন। সঙ্গে যেতেন বাবার দু’জন বন্ধু।
সেই সময় বোধহয় ঈশ্বরের কাছে আমার একমাত্র আকুল আবেদন ছিল, বাবা যেন আরও ঘন ঘন কলিকাতা যান। এই রকম প্রার্থনার কারণ, বাবা প্রতিবার ‘ভীমনাগের সন্দেশ’ নিয়ে ফিরতেন।
বিদ্যালয়ের বারান্দায় অঙ্ক কষার মতো অভিশপ্ত জীবন যাপন করার সময় হঠাৎ শুনতাম এক গুঞ্জরণ— ‘মালিক আসছেন।’ মুহূর্তের মধ্যে আমার চেতনা স্থান-কাল-পাত্রের এক অনির্বচনীয় পর্যায়ে উন্নীত হত। স্লেট-খড়ি ফেলে রেখে, মুহূর্তের মধ্যে, কয়েকটি সংক্ষিপ্ত লম্ফের মাধ্যমে রাস্তায় গিয়ে উপনীত হতাম। মাস্টারমশাইও বেরিয়ে এসে বাবাকে নমস্কার করে হতাশাময় জুলুজুলু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আমার অনুচ্চারিত দর্পিত প্রশ্নে— ‘পারবে আর আমাকে অঙ্ক কষাতে?’ জর্জরিত হয়ে চুপ থাকবেন। আমার এই রকম আচরণ যে একজন আদর্শ কনিষ্ঠপুত্রসুলভ, স্মিত হেসে তার সমর্থন করবেন বাবা আর আমি তাঁর আগে আগে লাফিয়ে লাফিয়ে পথ চলব। বড় আকাঙ্ক্ষিত ছিল জীবনের এইরকম কয়েকটি মুহূর্ত।
হায়! একদিন কলিকাতা প্রত্যাগত বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে হতাশ হলাম। সত্যিই যেন মানবসভ্যতায় হাসি প্রবর্তন হওয়ার বহু পূর্বের সে মুখ!
অপেক্ষাকৃত অধিক হতাশা আমার জন্য অপেক্ষা করেছিল— বাবা সেদিন বিনা সন্দেশে কলিকাতা থেকে ফিরে এসেছিলেন। সন্দেশ ছাড়া ফেরার থাকলে কলিকাতা যাওয়ারই বা কী প্রয়োজন? সন্দেশ ছাড়া খাস কলিকাতায় থাকারই বা কী প্রয়োজন? সেই মুহূর্তে বিধাতা আমার পাল্লায় পড়েছিলেন। তাঁর কাছে দাবি করেছিলাম সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কিত এই মৌলিক প্রশ্নমালার উত্তর।
বাবার সেই অসহায়তার সমগ্র পটভূমি জানা সম্ভব হয়েছিল ক্রমে ক্রমে। সেই জ্ঞাতব্যের কিছুটা সংগ্রহ করেছিলাম মায়ের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা থেকে, বাকিটা বাবার প্রিয়পাত্র বাণ্টিয়া ভাই তথা তাঁর সহযাত্রী ও বন্ধুর সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে। ঘটনাটি এরকম—
মহানগরীতে ব্যবসা করার জন্য বাবা সেই সময় আগ্রহী হয়েছিলেন। বারবার কলিকাতা গিয়ে সে বিষয়ে গবেষণার শেষে বাবা ও তাঁর পরামর্শদাতারা সিদ্ধান্ত করলেন ব্যবসার ভিত্তিরূপে প্রথমে দরকার একটি ঘর।
একদিন বাবা ও তাঁর দুই বন্ধু একটি চায়ের দোকানে বসে সামনের অট্টালিকাগুলির দিকে তাকিয়ে বাড়ি কেনার বিষয়ে কীভাবে এগোনো যায়, সেই আলোচনায় মগ্ন ছিলেন।
‘দাদা!’ হঠাৎ পাশের টেবিলের ওপর নিঃশেষ চায়ের কাপটি রেখে এক ভদ্রলোক বাবার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললেন— মার্জিত বাংলায়— ‘এই রকম একটি সম্পত্তির সন্ধান আমি দিতে পারি, যা এক জমিদারের দু’মহলা কোঠা, অথচ মিলবে দুঃখিনী বিধবার কুঁড়েঘরের মূল্যে— প্রয়োজনীয় কথাবার্তার জন্য প্রস্তুত?’
বক্তার চেহারা, বাক্য-বিন্যাস, হাবভাব দেখে মনে হয়েছিল, তিনি বাস্তবে এই মরজগতের বাসিন্দা নন— স্বর্গাগত দেবদূত। পৃথিবীপৃষ্ঠে বিরল সজ্জন বিক্রেতা ও সজ্জন ক্রেতার পরস্পর দেখাসাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার মতো নিরাসক্ত কর্মের জন্য কলিকাতার গলিঘুঁজির চায়ের দোকানে হঠাৎ কবে কখনও আবির্ভূত হয়ে পড়েন।
তিন বন্ধুর অনুরোধে দেবদূত নিজের বসার চেয়ার তাঁদের কাছে সরিয়ে আনলেন এবং দ্বিতীয় অনুরোধও এড়াতে না পেরে আরও এক কাপ চা খেলেন। সেই অবসরে তিনি যা বললেন তার মূলকথা— কোঠাটির মালিক যদি খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিতেন, তবে কোঠাটির কাটতি সোনার দামে না হলেও রূপার দামে অবশ্যই হত— তবে ভদ্রলোক সম্ভ্রান্ত। মফস্বলে তাঁর জমিদারিটি আসন্ন নিলাম থেকে রক্ষা করার জন্য তিনি শহরের সম্পত্তি সম্ভব হলে রাতারাতি হস্তান্তর করতে উদগ্রীব।
তিন বন্ধুর মধ্যে অর্থপূর্ণ চাহনির আদান-প্রদান হল। তাঁরা নিজেদের যথেষ্ট অভিজ্ঞ মনে করেছিলেন তাই কলিকাতা নিবাসী দেবদূতটিকে সেদিন তথা পরের দিন দু-তিনটি ভাল ভাল হোটেলে খাওয়াদাওয়া করানো ছাড়া নিজেদের উৎফুল্লতার আর কোনও উদ্দাম অভিব্যক্তি হল না।
তৃতীয় দিন দেবদূত স্বয়ং গাড়ি চালিয়ে এসে তিনবন্ধুকে প্রখ্যাত চৌরঙ্গির নিকটবর্তী এক রাস্তার পাশে অবস্থিত সেই দু’মহলা কোঠায় নিয়ে গেলেন।
দেবদূতের ভূমিকা আপাতত শেষ হল। বিনয়াবনত জমিদার ও তাঁর গৃহিণী এগিয়ে এসে বাবা ও বন্ধু দু’জনকে সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন। রসগোল্লা ও চা দিতে দিতে জমিদারগৃহিণী বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন, “স্বর্গবাসী আমার পুণ্যাত্মা শ্বশুরমশাই নির্মিত এই কোঠা আমি কখনও যাকে-তাকে দেব না। কেবল যাকে আমি বড়ভাই বলে মনে করতে পারব, তিনিই এই বাড়ির নতুন অধিকারী হওয়ার যোগ্য। আপনাকে দেখামাত্রই মনে হল আজ আমার ভ্রাতৃলাভ ঘটল। আমার নাম ধরে ডাকবেন। আমরা একবার সংকট থেকে উৎরে গেলে, আমাদের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার পর, আপনাকে কিন্তু আমাদের গ্রামে গিয়ে এই ছোটবোনের ঘরে পায়ের ধুলো দিতে হবে। কিন্তু আগে এই হতভাগিনী বোন ও তার অযোগ্য স্বামীকে সংকট থেকে উদ্ধার করুন।’’
“অবশ্যই, অবশ্যই।” আপ্যায়িত বাবা বললেন। “আর আপনি এবং…”
“খবরদার! আমাকে আপনি বললে সম্পর্ক ভেঙে যাবে।”
“আচ্ছা, আচ্ছা। যা বলছিলাম— তোমার ও তোমার স্বামীর জন্য এই ঘর থাকবে অবারিত। যখনই কলকাতা আসবে, এখানে থাকবে।”
“দাদা!” ভদ্রমহিলার বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠ থেকে বাকস্ফূর্তি হল না। তিনি বাবার পা স্পর্শ করলেন।
দরদাম করার প্রশ্ন ছিল না। বোন কি রক্ষাকর্তা দাদার কাছ থেকে অযৌক্তিক দাম দাবি করবে, না বিবেকবান দাদা বোনের সংকটের সুযোগ নেবে!
বাবার কাছে যা টাকা ছিল, তাতে শহরের অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে হয়তো ছোট একটি ঘর কেনা যেত। তবে অগ্রিম হিসেবে তা পেলে আপাতত বোন ও ভগ্নিপতি সংকট থেকে রক্ষা পাবে— বাকি পরে হলেও চলবে।
“আমার ইচ্ছা আগামীকাল রেজিস্ট্রির কাজ শেষ করার কিন্তু আজ রাত্রে আমি গ্রামে না গেলে চলবে কি?” জমিদার তাঁর স্ত্রীর পরামর্শ চাইলেন।
“রেজিস্ট্রি কি এতই জরুরি?” নতুন ভগ্নিপতিটির বস্তুবাদী মনোভাবের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ করলেন বাবা।
“তোমাকে কী কেউ সন্দেহ করছে?” মহিলা তাঁর স্বামীকে ধমক দিলেন, “আমাদের পবিত্র সম্পর্ক থেকে কি দলিল বেশি মূল্যবান? ছিঃ।”
তারপর বাবার দিকে ঘুরে বোন বললেন, “দাদা ভুল বুঝবেন না। আমার স্বামীকে আমি দোষ দিতে পারব না। সবাইকে বিশ্বাস করে সারাটা জীবন এত ধাক্কা খেয়েছেন যে নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।”
বাবা স্নেহভরে ভগ্নিপতির পিঠ চাপড়ে দিলেন। সংসারের রীতিনীতি সম্পর্কে তাঁকে কিছু মূল্যবান পরামর্শ দিলেন এবং মানুষের প্রতি সতর্ক থাকতে বললেন। অবিলম্বে টাকা হস্তান্তর হয়ে গেল। সম্পূর্ণ নিষ্প্রয়োজন বলে বাবা বলা সত্ত্বেও জমিদার একখণ্ড সাধারণ কাগজে ঘরের বিবরণ, ঠিকানা ইত্যাদি লিখে রসিদ কেটে দিলেন।
বাবার ইঙ্গিতে এক বন্ধু ইতিমধ্যে উঠে চলে গিয়েছিলেন। তিনি ফিরে এলেন একটি মূল্যবান নতুন শাড়ি নিয়ে।
“ছোটবোনকে দাদার সামান্য উপহার।” লজ্জাবতীকে শাড়িটি দিতে দিতে বাবা বললেন।
“দাদা!” পুনরায় বাক্যহারা হলেন ভদ্রমহিলা এবং চোখ মুছলেন।
পনের দিন পরে বাকি টাকা নিয়ে বাবা আসবেন এবং ঘরের দখল নেবেন বলে কথা হল।
“সাফসুতরো করে আমরা আর একবার চুনকাম করিয়ে নেব। হ্যাঁ, যেসব আসবাবপত্র ও কার্পেট আমরা রেখে যাব, সে-সব আপনার— আমাদের পক্ষ থেকে সামান্য উপহার।” জমিদার বললেন।
“দাদা, মূর্খ ছোটবোনের কথা ফেলে দেবেন না। একজন ভাল জ্যোতিষীর পরামর্শমতো শুভদিন দেখে আসবেন।” বোন নিবেদন করলেন।
“আরে, আজ কি শুভদিন নয়? একটি বোন পেলাম না?”
বাবার কথা তাঁদের মুগ্ধ করল। সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাঁরা আর কী করতে পারেন?
“দাদা” সদর দরজার কাছে নমস্কার করতে করতে জমিদার বললেন, “টাকা দৈবাৎ যোগাড় না হলে যে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে, এমন কোনও শর্ত নেই।”
“যোগাড় হয়ে যাবে।” এই ছিল বিদায়কালে বাবার সদম্ভ বার্তা।
ঠিক এক পক্ষকাল পরে পুলকিত বাবা প্রত্যাবর্তন করলেন। তিনি টাকা সংগ্রহ করেছিলেন চড়া সুদে। কিন্তু তাতে কীইবা যায়-আসে! ব্যবসায়ের প্রথম পরিকল্পনা ঠিক হয়ে গিয়েছিল। নীচের তলায় হবে একটি আদর্শ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।
স্টেশন থেকে ঘোড়ার গাড়ি করে তাঁরা সেই কোঠার সামনে গিয়ে নামলেন। পাশের দোকানটির সামনে বিজ্ঞাপন ছিল— “রকমারি লোহার সরঞ্জাম, শস্তা ও মজবুত।”
বাবা হেসে হেসে বন্ধুদের বললেন, “আমরাও লিখব রকমারি মিষ্টি। শস্তাও ঠিক আছে। কিন্তু মজবুত বলে লেখা যাবে কি? হাঃ হাঃ।”
হাসি হাসি মুখে তাঁরা বাড়িটির দরজায় করাঘাত করলেন।
“কী দরকার?” অর্ধেক কপাট খুলে একজন শ্মশ্রুধারী প্রশ্ন করলেন।
“আমরা এসে পড়লাম।”
“সে তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু কেন? এবং তোমরা কে?”
“আরে বাবু, তোমার ঘর মালিককে বলো।” বাবা একটু বিরক্ত স্বরে বললেন। লোকটা জমিদারের কোনও মূর্খ কর্মচারী হবে নিশ্চয়।
“ঘরমালিক? তোমরা তবে কার সঙ্গে কথা বলছ বলে ভাবছ?” শ্মশ্রুধারীর দৃষ্টিতে পরিস্ফুট হল ক্রুরতা।
বন্ধুদের দিকে তাকালেন বাবা। কিছু ভুল হল? ভুল দরজায় এসে ধাক্কা দিয়েছেন? তাঁরা রাস্তার নাম ও ঘরের নম্বর মিলিয়ে দেখলেন। না, নির্ভুল। ভুল অনেক গভীর বলে সহজে স্বীকার করতে মন প্রস্তুত ছিল না।
“আমার বোন কোথায়?”
“তোমার বোনকে আমার জিম্মায় রেখেছিলে বুঝি!’’ অট্টহাসি করলেন শ্মশ্রুধারী।
“কিন্তু আমাদের এই ঘর বিক্রি করেছেন জমিদার শ্রীমান…”
লোকটি তাঁর ভাই ও পরিবারের অন্যদের উদ্দেশে বললেন, ‘‘দেখবে এসো, দু-চারজন গেঁয়ো আমাদের ঘর দখল করতে এসেছে। রেলগাড়িতে আসার ধকলে মুণ্ডু থেকে কিছু কিছু কলকব্জা খসে পড়েছে…।”
লোকটির ভাই বা কেউ একজন এসে চোখে করুণা ফুটিয়ে পরামর্শ দিলেন, ‘‘পালাও— না হলে থানায় যেতে হবে।”
বাবা তাঁর জিনিসপত্র থেকে রসিদ বের করলেন। করুণাময় লোকটি তা পড়লেন।
“এই দস্তখত কার? আর আমাদের এই বাড়ির জন্য সামান্য এই ক’টা টাকা? শুনো বাবু, নিজেদের খুব সেয়ানা ভেবে তোমরা আমাদের ঘর দখল করার ফন্দি এঁটেছ, আমি সেরকম ভাবছি না। যা সম্ভব, তা হল তোমাদের ধোঁকা দিয়েছে কোনও ধূর্ত।”
“কিন্তু তারা তো এই ঘরে ছিল!”
“শোনো, আমাদের পরিবার ছাড়া এই ঘরে কেউ কখনও থাকেনি। আর নষ্ট করার মতো সময় আমার নেই। শোনো— তোমরা গ্রামের লোক, গ্রামে ফিরে গিয়ে শান্তিতে থাকো। কর্ম… বুঝলে… কর্ম!”
করুণাময় কপাট বন্ধ করে দিলেন।
সবন্ধু বাবা সামনের ফুটপাতে বসে থাকলেন ঘণ্টাখানেক। তারপর যে চা দোকানে দেবদূতের সঙ্গে দেখা হয়েছিল সেখানে গিয়ে তাঁর খোঁজ করলেন। রাজপথের সহস্র নরনারীকে নিরীক্ষণ করে সেই নিরুদ্দিষ্ট বোন ও ভগ্নিপতিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করলেন।
অবশেষে বিনা ঘোড়ার গাড়িতে হাওড়া স্টেশনে ফিরলেন।
উত্তরপর্ব
কোঠা কেনা হওয়ার পর মাকে মহানগরী ঘুরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাবা। দারুণ প্রতারণার শিকার হওয়া সত্ত্বেও সে প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য তিনি প্রস্তুত হলেন।
“যুদ্ধ শেষ হোক।’’— মা বললেন।
“আমাদের জীবনকালে এই যুদ্ধ শেষ হবে কিনা কেউ বলতে পারবে?” বাবা বললেন। অতএব গেলাম কলিকাতা— বাবা, মা ও আমি। আমার তখন ছয় বছর।
হাওড়া পৌঁছলাম সন্ধ্যাবেলায়। আমার আমোদিত, বিস্মৃত দৃষ্টি প্রথমে আকর্ষণ করেছিল হাওড়া ব্রিজের উপর ভাসমান কয়েকটি প্রকাণ্ড বেলুন। জাপানি বোমারু বিমানকে ব্রিজের কাছে আসতে না দেওয়ার জন্য সে ব্যবস্থা।
কলিকাতা নিষ্প্রাণ মনে হয়েছিল। সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবে শহর অন্ধকার রাখা হয়েছিল। আগের থেকে ঠিক করা ভাড়াঘরে জিনিসপত্র রেখে আমরা প্রখ্যাত জৈন মন্দির পরেশনাথ দেখতে বেরিয়ে পড়লাম। পথে বাবা তাঁর ও আমার জন্য দু’জোড়া জুতা কিনলেন। মন্দির প্রাঙ্গণে রইল তাঁর পুরনো এবং উভয়ের নতুন জুতা। দর্শন করে মন্দির থেকে বেরিয়ে এসে দেখলাম বাবার নতুন জুতাজোড়া নেই।
আমাদের সঙ্গে ছিলেন বাবার বিশিষ্ট বন্ধু, কখড়া অঞ্চলের বিখ্যাত নাট্য-নির্দেশক মন মামু (মন কর)। তিনি যাত্রীদের পা নিরীক্ষণ করতে করতে দ্রুত গতিতে মন্দিরের প্রধান প্রবেশপথের দিকে চললেন এবং হঠাৎ একজনের কনুই ধরে আটকালেন।
“এই জুতা তোমার?” তিনি ধমক দিলেন।
“আমার নয় তো কি তোমার?” লোকটি জুতাজোড়া পা থেকে খোলার সঙ্গে সঙ্গে মন মামুর কবল থেকে কনুই ছাড়িয়ে চম্পট দিল। আমরা জুতা জোড়া উঠিয়ে নিয়ে মন্দিরের প্রশস্ত মার্বেল প্রাঙ্গণে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। তারপর যখন বাইরে এলাম, চোর তার দু’জন সঙ্গীকে নিয়ে বাবাকে আটকাল। ধমক দিয়ে বলল, “এই জুতা তোমার?”
আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়ল একদল কৌতূহলী উত্তর-ভারতীয় যাত্রী।
“দেখো, এই বাবুর লোভ। নিজের পুরনো জুতা হাতে নিয়ে আমার নতুন জুতা পায়ে পরে চলে যাচ্ছেন।”
“মুখ সামাল!” মন মামু চিৎকার করে উঠলেন।
“কেন? এই বাবুর দু’জোড়া জুতা দেখতে পাচ্ছি। এই বেচারা লোকটির তো খালি পা। দুনিয়ায় কেউ দু-দু’জোড়া জুতা নিয়ে পথ চলে?” বলিষ্ঠ যুক্তি দিল চোরের সঙ্গী।
অভিনেতা মন মামু নিজেকে যত ভয়ংকর দেখানোর চেষ্টা করছিলেন, সেই লোকটা সত্যিই তার থেকে বেশি ভয়ংকর।
“দরকার পড়লে একজন দু’জোড়া জুতা নিয়ে পথ চলে।” হঠাৎ এক ভদ্র ও গম্ভীর-দর্শন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পড়ে মন্তব্য করলেন।
“আমি তো এই কয়েক ঘণ্টা আগে কিনেছিলাম।” চোর ঘোষণা করল।
“তবে তো সমস্যার সমাধান সহজ। কোন দোকান থেকে কিনেছিলে? চলো, আমার গাড়ি আছে। হয় জুতা পরে আনন্দে ঘরে যাবে, নাহলে হাতকড়া পরে কাঁদতে কাঁদতে হাজতে যাবে— ঠিক আছে?”
“সময় কোথায়!” বলে চটপট চোর ও তার দুই বন্ধু অন্ধকার গলিতে মিলিয়ে গেল।
বাসায় ফেরার সময় বাবা ও মন মামু মাঝে মাঝে উচ্চৈস্বরে হাসছিলেন, কিন্তু সে হাসি নিষ্প্রাণ। সেই অপরিচিত ভদ্রলোক না জুটলে ঘটনা কোথায় যেত? এই প্রশ্ন আমাকে আলোড়িত করেছিল। সম্ভবত বাবা ও মন মামুও সে বিষয়ে ভাবছিলেন এবং অস্বস্তি অনুভব করছিলেন।
কলিকাতা-ফেরত যুবক বাণ্টিয়া ভাইয়ের কাছে শুনেছিলাম, কেউ যথেষ্ট চতুর হলে ভিন্ন ভিন্ন ফেরিওয়ালার থেকে খাদ্যের নমুনা চেখে চেখে খুব মজা পেতে পারে। নিজের কাছে নিজেকে যথেষ্ট চতুর প্রতিপন্ন করার জন্য আমার বাসনা ছিল প্রবল। তৃতীয়দিন অপরাহ্নে বাবা ও মন মামু শুয়েছিলেন, মা একটি বইয়ে নিমগ্ন ছিলেন এমন সময় সামনের গলিপথে এক চিনাবাদামওয়ালাকে দেখতে পেলাম।
“তাজা?” ভাবি পৃষ্ঠপোষকসুলভ অধিকার-দৃপ্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করলাম।
“আমার ‘চিজ’ থেকে তাজা কলিকাতায় আর কিছু থাকতে পারে?” বলে সে মাথা থেকে পসরা নামাল। আমি একটি বাদাম উঠিয়ে নিয়ে মুখে দিলাম।
“নাহ্… ” বলে হাফপ্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে চলতে শুরু করার পরমুহূর্তেই অনুভব করলাম, এক লৌহকঠিন মুঠোয় বন্দি আমার কব্জি।
“ঠাট্টা পেলে?” চাপা অথচ ভীষণ কণ্ঠে এই প্রশ্ন করে বাদামওয়ালা আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে একটা অন্ধকার উপগলিতে ঢুকল। আমি তার মুখের দিকে তাকালাম। বাস্তবে লোকটাকে খুব হিংস্র দেখাচ্ছিল। আশপাশে কেউ ছিল না। মহাযুদ্ধকালীন কলিকাতা!
লোকটার গতি বাড়ল। ‘হরণচাল’ শব্দের সঙ্গে পরিচয় হতে তখনও কয়েক বছর বাকি ছিল। আতঙ্ক ও হতাশা আমাকে মুহূর্তের জন্য এমন বেসামাল করল যে, আমি চিৎকার করে সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে ঠেলে দিলাম। সে পড়ে গেল। কলিকাতার সবচেয়ে তাজা চিজ সব ছড়িয়ে পড়ে অর্ধেকের বেশি নর্দমায় গেল।
পিছন ফিরে বাঁটুলের বেগে এসে বসার ঘরে পৌঁছলাম। কিন্তু কলিকাতা ছাড়া পর্যন্ত আমার আশঙ্কা ছিল— লোকটা হঠাৎ আমাকে দেখে ফেলবে না তো?
বহু বছর পর্যন্ত— বারবার ভ্রমণ ও মহানগরীর বহু আকর্ষণ তথা বিশেষত্বের সঙ্গে পরিচয় হওয়া সত্ত্বেও প্রথম কলিকাতা দর্শনসম্ভূত অস্বস্তি আমাকে ছাড়েনি।
কিন্তু একদিন সন্ধ্যায় কলিকাতা অনাবৃত করল তার অন্য এক দিক— মধুর তথা দুঃখজনক।
বর্তমানে আছে কিনা জানি না, ষষ্ঠ দশকের প্রথম দিকে ‘চোরাবাজার’ বলে দুর্নামলিপ্ত এক বিপণিমালা ছিল। সেখানে মিলত সচরাচর দুর্লভ নানা বস্তু।
দুর্লভ কয়েকটি গ্রামোফোন ডিস্ক, রেকর্ডের সন্ধানে বেরিয়ে ছিলাম। একটি দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। খরিদ্দারহীন দোকানি গ্রামোফোনে যে গানটি বাজিয়ে নিবিষ্ট মনে শুনছিলেন, তা আমার তালিকায় ছিল।
গান শেষ হতে দোকানি চোখ খুলে আমার দিকে তাকালেন। তাঁর দৃষ্টিতে বিশেষত্ব ছিল।
“চমৎকার! তাই না?’’ আমি বললাম।
তিনি আমার দিকে একটা চৌকি ঠেলে দিলেন। আমি আমার তালিকা পড়ে শোনালাম— সবগুলি শাস্ত্রীয় ধারার সঙ্গীত।
“আপনি যদি দয়া করে দশ মিনিট অপেক্ষা করেন, তবে শুধু দুটো গান শেষবারের মতো শুনে নিতাম।” ভদ্রলোক বললেন।
“নিশ্চয়, আমিও তো শুনব।”
তিনি কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। গান শেষ হল। বারোটি রেকর্ড কাগজে জড়িয়ে বাঁধায় মন দিলেন।
“কত দিতে হবে?”
বাঁধা শেষ করে তিনি দুই হাঁটুর ওপরে মাথা রেখে বসেছিলেন। মনে হল যেন আমার প্রশ্ন শুনতে পাননি। গুনগুন করে বললেন, “আপনি গানের সমঝদার।”
“আপনি কিন্তু আমার থেকে বেশি সমঝদার বলে মনে হয়। যেরকম মনোযোগ দিয়ে আপনি শুনছিলেন, সেরকমভাবে শোনা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আচ্ছা, কত দেব?”
মানিব্যাগ খুলে আমি উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
রেকর্ডের প্যাকেটটি এবার তিনি আমার হাতে দিলেন।
“ধন্যবাদ। কত?”
“যেন আমি নেহাতই অসঙ্গত কোনও প্রশ্ন করছি— অথচ ঘনিষ্ঠতার অভাবে তিনি আমাকে কিছু বলতে পারছেন না— এমন ভাব তাঁর মুখে স্পষ্ট হল। তিনি আমার দিকে না তাকিয়ে মৃদুকণ্ঠে বললেন, “দেবেন যদি— বেশ— দেন তবে চারআনা হিসেবে।”
“মানে— সবগুলির জন্য তিনটাকা?”
“আর কী?”
আমি আনন্দিত হলাম। পুরনো রেকর্ড এত সস্তা বলে আমার ধারণা ছিল না। টাকা দেওয়ার সময় তিনি হাত বাড়ালেন না। অগত্যা তাঁর সামনে রেখে তাঁকে ধন্যবাদ ও স্বতঃস্ফূর্ত নমস্কার জানিয়ে বিদায় নিলাম। দোকানের ভেতর একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। প্রায় শূন্য।
তালিকার অবশিষ্ট রেকর্ড দু’টির খোঁজে সেখান থেকে শ’খানেক গজ দূরে বিপণিমালার অন্য এক দোকানে গেলাম। সেখানে মিলল।
“কত?” আমি মানিব্যাগ থেকে একটি একটাকার নোট বা কয়েন বের করেছিলাম।
“দশ— দশ— কুড়ি টাকা।”
“একটির দশ টাকা? নতুন রেকর্ডের দাম তো অর্ধেক!”
“সেকথা আপনি যেমন জানেন, আমিও তেমনি জানি। দুনিয়াও জানে। যে রেকর্ড বাজারে মিলে, আপনি আমাদের কাছে নেন— অর্ধেক দামে। কিন্তু আপনি খুঁজছেন দুষ্প্রাপ্য রেকর্ড। দুষ্প্রাপ্য বইয়ের দাম বেশি বলে আপনি জানেন না?”
“কিন্তু আমি পুরো এক ডজন পুরনো রেকর্ড— অধিকাংশ দুষ্প্রাপ্য— এখানে কিনেছি— খুব কম দামে…”
“কত করে?”
“তিন টাকায়।”
আমি এক-একটি তিন টাকা হারে কিনেছি, এরকম ধারণা সত্ত্বেও সে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকাল এবং ঠাট্টার ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করল, “বাবু, কোন স্বর্গরাজ্যে অবস্থিত সেই দোকানটির ঠিকানা আমাকে দেবেন না?’’
আমার দুর্বল আঙুল প্রথম দোকানটির দিকে নির্দেশ করল। সেই দোকানি তখনও মাথাটি দুই হাঁটুতে রেখে চুপচাপ বসেছিলেন।
“ওঃ! তার কথা বলছেন! আর একবার যান না! একটু খোসামোদি করলে সে বোধহয় তার শেষ সম্বল গ্রামোফোনটিও দিয়ে দেবে— একটা টাকার বিনিময়ে!”
স্বগতোক্তি করার মতো সে পুনরায় বলল, “আলালের ঘরের দুলাল সর্বস্বান্ত হয়ে দোকান দিল— আরও সর্বস্বান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও সমস্যায় ফেলছে। ভাগ্যে বিক্রি করার মতো আর কিছু তার নেই।”
বিষাদ, আস্থা, সহানুভূতি, কৃতজ্ঞতা— এসবের সমাহারে অবর্ণনীয় এক অনুভূতি আমাকে আচ্ছন্ন করেছিল। একটি চা দোকানে বসে চা খাওয়ার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিলাম, তাঁর কাছে ফিরে যাব। আরও কিছু টাকা নিতে তাঁকে বাধ্য করব।
গেলামও— কিন্তু দোকান বন্ধ করে তিনি চলে গেছেন।
কলিকাতা মহানগরীর সন্তানসম্ভার কত বিচিত্র! তারই অন্তর্ভুক্ত কত দরদী হৃদয়।
চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
***
লেখক পরিচিতি
মনোজ দাস (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৪–২৭ এপ্রিল, ২০২১) আধুনিক ওড়িয়া তথা ভারতীয়-ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক। কথাসাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। ভূষিত হয়েছেন পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ সম্মানে। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘সমুদ্র কুলর এক গ্রাম’ (পরিমার্জিত নতুন মুদ্রণ, ২০১৯) থেকে বর্তমান রচনাটি অনূদিত হল।
মনোজ দাসের আরও গল্প…
অসাধারণ গল্প। শ্লেষের ভঙ্গিমাটি যেন শব্দের ছোট ছোট তির। পর এসে বেঁধে। কষ্ট হয় না। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফোটে। সাধু শব্দগুলো শ্লেষকে আরও তীব্র করেছে। গল্পের সময়েরও প্রতিনিধিত্ব করছে। শেষের অংশটি কলকাতাকে বাঁচিয়ে দিল। না হলে চালাকি সর্বস্ব অভিধা এখনও তেমন দূর হয়নি রাজধানীর গা থেকে।
অনুবাদের কথা বলতেই হয়। ঝরঝরে অনুবাদ। কোথাও হোঁচট নেই। ধন্যবাদ অনুবাদককে।
অবাক কলকাতার রকমসকম, অনেক মানুষের ভিড়ে আসল নকল সব মিশে যায়, তবুও তিলোত্তমা আকর্ষণীয়