Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ধর্ম কেন নিজেকে ‘বিজ্ঞান’ প্রমাণে মরিয়া

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহ, মঞ্চের পেছন অদ্বৈতবাদের আধুনিক পুরুষের বিরাট ছবি, বক্তা বিদেশি নোবেল পুরস্কার জেতা বিজ্ঞানী, মঞ্চে সভাপতির আসনে কোনও সর্বত্যাগী গেরুয়াবসনধারী। বক্তৃতার বিষয়, বিজ্ঞান ও ধর্মর সমন্বয়। এখনকার একটা চেনা ছবি। ধর্ম এখন মরিয়া বিজ্ঞানের সঙ্গে একটা সমঝোতা করতে। কিন্তু নিষ্ফল চেষ্টা। ও হবে না। ধর্ম আর বিজ্ঞানের সম্পর্ক বৈরিতার, বিরোধের। আর সে বিরোধের শুরু করেছিল ধর্মই। ধর্মগ্রন্থর অভ্রান্ততা অক্ষুণ্ণ রাখতে বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সিদ্ধান্তগুলির ওপর, বিজ্ঞানীদের ওপর নানান আঘাত, নানান অত্যাচার ধর্ম করেছে। কিন্তু সে-লড়াইতে হেরে ভূত হয়ে ধর্মগ্রন্থগুলি এখন প্রায় নির্বাসনে। জগৎ-জীবনের কোনও বিষয়ে জানতে এখন আর কেউ ধর্মগ্রন্থগুলি খুলে বসেন না। মানুষের জ্ঞানচর্চা দিনদিন যত সেকুলার হয়ে উঠেছে জ্ঞানের জগৎ থেকে ততই পাততাড়ি গুটিয়ে সরে পড়তে হয়েছে ধর্মকে। অবশ্য ধর্মগ্রন্থগুলি একেবারেই নির্বাসিত তা-ই বা বলি কী করে? স্বর্গে কতজন হুরিপরির হারেম পাওয়া যাবে, পাপতাপ করলে কোন নরকে সেদ্ধ বা ভাজা হতে হবে, কিংবা নীচুজাত, কাফের বা ইনফিদেল-দের কীভাবে শায়েস্তা করতে হবে— এইসব গুরুতর বিষয়গুলো জানতে এখনও ধর্মগ্রন্থর কোনও বিকল্প নেই।

আর্যভট, কোপারনিকাস, গালিলেও— বিজ্ঞান-ধর্মর বিরোধের তিনটে ক্লাসিকাল ঘটনা। এই পরিপ্রেক্ষিত নিয়েই রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যর বই ‘ব্রাহ্মণ-রোমান ক্যাথলিক বিসংবাদ’। বইটি অবশ্যই শুধুই বিজ্ঞান-ধর্মর বিরোধেই সীমাবদ্ধ নয়। ‘উৎস মানুষ’ পত্রিকায় এই লেখাটি ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তাতে সম্পাদকীয় কারণে কিছু কাটছাঁট করা হয়েছিল। পুরো বইটির প্রথম সংস্করণ বেরোয় ১৯৯৪ সালে। বেশ কিছু সংযোজন নিয়ে হালে বেরিয়েছে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ। সম্ভবত এই মুহূর্তেই বইটি সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক ।

গঠনের দিক দিয়ে বইটি বিসংবাদের আকারে লেখা। প্রধান চরিত্রগুলো হলেন একজন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত, এক রোমান ক্যাথলিক, তিনটে তুলনায় কমবয়সি ছেলে— বাচাল, জিজ্ঞাসু আর সবজান্তা। এছাড়াও আছেন আরও কয়েকজন ছোট চরিত্র। সংলাপের মাধ্যমে আলোচনা এগোয়। প্রথমে গালিলেও, তারপরে কোপারনিকাস এবং আর্যভটকে নিয়ে। বইটি পড়তে পড়তে মনে হবে যেন কোনও সিরিয়াস আড্ডায় পাঠক বসে আছেন। প্রায় প্রতি লাইনেই নতুন কথা শোনা হচ্ছে। আর ছবির কোলাজের মত পাঠকের সামনে ফুটে উঠছে ধর্ম আর বিজ্ঞানের বিরোধের নানান ঘটনা।

বইটি তথ্যর খনি। খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যর সঙ্গে এমনিতেই বাঙালি সাধারণের পাঠকের পরিচয় একটু কম, বিশেষ করে অ-ইংরেজি খ্রিস্টীয় ঐতিহ্য জানতে বুঝতে গেলে ভাষার একটা সমস্যা হয়। এই বইতে গালিলেও আর কোপারনিকাসের ঘটনা ভালভাবে বুঝতে নানান লাতিন, ইতালীয় বই কিংবা ডিক্রি বা সনদের কথা এসেছে। অত্যন্ত প্রাঞ্জল বাংলা ভাষায় সেগুলো জানার সুযোগ পাঠক এই বইতে পাবেন।

এমনিতে গালিলেও আর কোপারনিকাসের কথা সারা বিশ্বেই পরিচিত। কিন্তু আর্যভটকে নিয়ে আলোচনা তুলনায় কমই হয়। এই বইয়ের সবচেয়ে বড় পাওনা আর্যভটর ভূভ্রমণবাদ তত্ত্ব ও তাকে অস্বীকার করতে বৈদিক পণ্ডিতদের নানান প্রচেষ্টা।

ধন্য ভাটিকান। কোপারনিকাস তো বই প্রকাশের পরে পরে মারা গিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর প্রায় তিয়াত্তর বছর পরে বইটি নিষিদ্ধ হয়। গালিলেওকে সহ্য করতে হয়েছিল অসীম নির্যাতন, মানসিক এবং অবশ্যই শারীরিক। সেগুলো নিয়ে এই বইতে বিস্তৃত আলোচনা আছে। কীভাবে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা সূর্যকেন্দ্রিক পৃথিবীর ধারণাকে জনগণের মধ্যে বিস্তৃত হতে বাধা সৃষ্টি করেছিল আছে তার ইতিহাস। পোপের ভয়ে ক্যাথলিকরা তো বটেই মার্টিন লুথারের ঘোষণায় প্রটেস্ট্যান্টরাও কোপারনিকাসীয় ধারণাকে বাইবেল-বিরুদ্ধ ঘোষণা করে ব্যাহত করেছিলেন বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে। এমনকি পোপের হাতার বাইরে থাকা ইংল্যান্ডেও কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক ধারণা মোটেও আমল পায়নি সমসময়ে। শেক্‌স্‌পিয়র, মিলটন এঁরা কোপারনিকাসের সমসাময়িক হলেও, তাঁর তত্ত্ব সম্বন্ধে জানলেও নিজেদের কাব্য-নাটকে কিন্তু পৃথিবীকেন্দ্রিক ধারণার বাইরে আসতে পারেননি। এমনকি ফ্রান্সিস বেকন পৃথিবীকেন্দ্রিক চিন্তাই করতেন যদিও সেটি একেবারেই অধর্মীয় কারণে।

বইটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করে। বিজ্ঞানের কোনও সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হলেই ধর্মের পাণ্ডারা বলতে থাকেন এ তো আমাদের ধর্মগ্রন্থে বহুদিন ধরেই আছে। তাঁরা অবশ্য সবসময়ই কোনও বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার পরেই দাবিটা তোলেন। ডারউইন বিবর্তনবাদের কথা তোলার পরে ভারতের কিছু লোক বলেছিলেন, আমাদের অবতারের ধারাটা দেখুন, মাছ, কচ্ছপ আর শুয়োর এবং তারপরে মানুষ। আমাদের এখানে প্রাচীনকালেও বিবর্তনের ধারণা ছিল। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে ডারউইনের বিবর্তনবাদ বাজারে আসার আগে তাঁরা এটা কেউ বুঝতে পারেননি। তেমনই এখন হচ্ছে, প্লাস্টিক সার্জারি আসার পরে গণেশের কথা তোলা কিংবা মিসাইল দেখে ‘মহাভারত’-এর কোনও অস্ত্রর সঙ্গে তুলনা। উৎকল্পনা আর বিজ্ঞান-প্রযুক্তি যে আলাদা বিষয় সেটা বুঝতে বিশেষ বুদ্ধি খরচ না করলেও চলে, কিন্তু ধর্মবিশ্বাস বড় কঠিন। কোপারনিকাস, গালিলেও এবং আর্যভট-র ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। যখন আর কোনওভাবেই সূর্যকেন্দ্রিক ধারণাকে অস্বীকার করার উপায় নেই, তখন খ্রিস্টান ধর্মর পাণ্ডারা বলেছিলেন, আগেকার লোকজন বুঝতে ভুল করেছিলেন। বাইবেলে আসলে পৃথিবী গতিশীল আর সূর্য স্থিরই লেখা আছে— এই বলে তাঁরা আজগুবি ব্যাখ্যা নামান। আমাদের দেশেও পৃথিবী যে নিজের চারদিকে ঘোরে, স্থির নয়— আর্যভটর এই সিদ্ধান্ত যে ঋগ্‌বেদেও আছে তা প্রমাণ করতে একদল উঠেপড়ে লাগেন। স্থির, নিশ্চলা, ধ্রুবা নামে বেদ-বেদান্তে পৃথিবীকে ডাকা হলেও ওগুলোর মানে নাকি ঠিক অচল কিছু নয় এমন কুতক্কোও চলে।

ভারতে যখন সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল তখন ইউরোপের লোকজন হরিণ চরাত। ভারত সবেতেই উন্নত ছিল। তাই ভারতে ধর্মবিরুদ্ধ বেদবিরুদ্ধ বৈজ্ঞানিক মতবাদকে খুবই কায়দা করে ঘায়েল করা হত। তিনটি পন্থা, এক, বৈদিক পণ্ডিতেরা এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলিকে মিথ্যেজ্ঞান বলে প্রচার করতেন, দুই, শ্লোক বিকৃত করে অর্থ পাল্টে দেওয়া হত, তিন, বেদবিরুদ্ধ পুথিগুলো হাপিশ করে দেওয়া হত। চার্বাকদের ক্ষেত্রেও যা ঘটে আর্যভটের সঙ্গেও তাই ঘটে। ভাস্করাচার্য, বরাহমিহির প্রভূত পণ্ডিতের বিদ্বেষাগার, টীকাকারদের শ্লোকবিকৃতি (যেমন আহ্নিকগতির ভারতীয় নাম ভূভ্রমণ, আর্যভটীয় তত্ত্ব তাই ভূভ্রমণবাদ নামেই পরিচিত। একজন টীকাকার খালি ভূ-টাকে ভ করে দিলেন। ভ মানে নক্ষত্র। তত্ত্বটা আর ভূভ্রমণ না থেকে ভভ্রমণ হয়ে গেল। বেদের অচলা পৃথিবী তত্ত্বর সঙ্গে তা মানানসই)। আর পুথি হাপিশ তো অন্য গল্প। মধ্যযুগেও আর্যভটর লেখা পুথি পাওয়া যায় না বলে তখনকার ঐতিহাসিকরা জানিয়েছিলেন।

আসলে ধর্মগ্রন্থগুলোর মত অসার জায়গায় বিজ্ঞান খুঁজতে গিয়ে আমরা আমাদের প্রকৃত বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্যকে অবহেলা করি। সেই সুযোগে ভারতে আবিষ্কৃত শূন্য ও ডেসিমাল পদ্ধতিকে সায়েবরা দিব্বি ‘আওয়ার নিউমেরাল’ বলে চালিয়ে দেন। শঙ্করাচার্যরা জনপ্রিয় হন, সম্রাট জগন্নাথরা হন প্রায় বিস্মৃত। কোন রাজা কোন মন্দির গড়েছিলেন সেই নিয়ে চর্চা হয়, অনেকগুলো মানমন্দির তৈরি করা সোয়াই জয় সিংহ থাকেন ইতিহাসে উপেক্ষিত। আর যখন দেশপ্রেমের জোয়ারে বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্যর খোঁজ করতে যাই তখন সব তালগোল। আর্যভট নাকি পৃথিবীর বার্ষিক গতির ধারণা দিয়েছিলেন— এমন ভিত্তিহীন কথাও বিজ্ঞানের ইতিহাসের বইতে জায়গা পায়। ঔপেনিবেশিক মানসিকতা আমাদের বাধ্য করে আর্যভটকে ভারতের কোপারনিকাস বলতে অথচ কাজের নিরিখে কোপারনিকাসই হলেন ইউরোপে আর্যভটের উত্তরসূরি, পোলান্ডের আর্যভট।

আর একটি কথা স্মরণ করা এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। বিজ্ঞান আর ধর্মর সম্পর্ক কি শুধুই বিরোধের? এমন প্রশ্ন কেউ কেউ তোলেন। কোপারনিকাস তো আমরণ একজন পাদ্রিই ছিলেন। আসলে একজন মানুষের নানান সত্ত্বা থাকতে পারে। কোপারনিকাসের বৈজ্ঞানিক সত্ত্বাই তার বৈপ্লবিক আবিষ্কারের মূলে, তাঁর পাদ্রি সত্ত্বা নয়। তিনি যদি ধর্মতত্ত্ব নিয়ে কিছু বলে থাকতেন তবে সেটা হত তাঁর পাদ্রি সত্ত্বার অবদান, বৈজ্ঞানিক সত্ত্বার নয়। ঠিক তেমনভাবেই আমরা ইতিহাসে দেখব অনেক ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে পুরোহিত ইত্যাদি ধর্মীয় মানুষেরা অবদান রেখেছেন। কিন্তু সে অবদান তাঁরা রেখেছেন বৈজ্ঞানিক হিসেবে পুরোহিত হিসেবে নয়। অনেকেই ধর্মবিশ্বাসী বিজ্ঞানীদের একটা তালিকা নিয়ে নাচানাচি করেন। তাঁরা ভুলে যান ধর্মে অবিশ্বাসী বিজ্ঞানীদের তালিকাটাও দীর্ঘ। কারও ধর্ম তাঁর বিজ্ঞানচর্চায় কাজে লাগে না, বরং ধর্মবিশ্বাস কাউকে কোনও ধর্মবিরোধী সিদ্ধান্তে পৌঁছতে দ্বিধাগ্রস্ত করতে পারে। বিজ্ঞান আর ধর্মর একটাই সম্পর্ক হতে পারে, সেটা নেউল আর সাপের।

সব মিলিয়ে বলা যায়, আজ যখন আবার নতুন করে ভারতীয় বিজ্ঞান, আরবের বিজ্ঞান, ইউরোপের বিজ্ঞানকে হিন্দুবিজ্ঞান, মুসলিমবিজ্ঞান কিংবা খ্রিস্টবিজ্ঞান বলে ধর্ম একটা বাঁচার রাস্তা খুঁজছে, তখন রামকৃষ্ণবাবুর এই বইটি একটি আলোকবর্তিকার কাজ করতে পারে। সংগঠিত ধর্মর পেছনদিকে এগিয়ে দেওয়ার বাইরে আজ আর কিছু দেওয়ার নেই। তার সেই চেষ্টাকে আটকাতে এক শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে ‘ব্রাহ্মণ-রোমান ক্যাথলিক বিসংবাদ’।

ব্রাহ্মণ-রোমান ক্যাথলিক বিসংবাদ ।। রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ।। অনুষ্টুপ ।। ২০০ টাকা

‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ’ বিকৃতি, চার্বাকদের হেয় করতে

সুকুমার অনুরাগীরা প্রবন্ধগুলি পড়লে উপকৃতই হবেন

মার্কসীয় নন্দনতত্ত্ব কোন মাপকাঠিতে শিল্পসাহিত্যকে বিচার করে

শুধুই প্রকৃতিপ্রেমী নন, বাস্তববাদেরও নিখুঁত শিল্পী বিভূতিভূষণ

‘গালিলেও-র জীবন’-কে যেভাবে দেখাতে চেয়েছেন বের্টল্ট ব্রেশট্

ভারতের ঐতিহ্যর অন্যতম শরিক বস্তুবাদী চার্বাক দর্শন

হে মহাজীবন, আর এ তত্ত্ব নয়

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের এক বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »