Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ছোটগল্প: বিভোর

একচিলতে খোলা জানালাটা দিয়ে বিগত দেড় বছরে একবারও বাইরে দেখতে ইচ্ছে হয়নি চিত্রার। এই ঘরটাতেই থাকতে হবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত, জানে চিত্রা। নাঃ, হয়তো একটু ভুল ভাবা হচ্ছে। শেষ দিন আসার আগে, যদি শরীর বিশেষ অ্যালার্ম দেয়, তাহলে এই ঘর থেকে আইসিইউ-তে শিফট করবে এরা। মানে, এই ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার সুযোগ! আত্মীয়দের বিশেষ আদেশ আছে, ‘কোনও কিছুতেই যেন কোনও অসুবিধে না হয়।’

দেড় বছর আগে, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায়, আত্মীয়রা তড়িঘড়ি এই নার্সিংহোমে নিয়ে এসেছিল। মাস তিনেক লেগেছিল সুস্থ হতে। কিন্তু চিত্রা যে সুস্থ হয়ে গেছে, আত্মীয়দের হয়তো তা মনে হয়নি। ওদের সঙ্গে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কী সব আলোচনা হয়েছিল। তারপর থেকে চিত্রা এখানেই আছে। এক ভাইপো একবার শুরুতে দেখতে এসে বলেছিল, ‘এখানে অন্তত চব্বিশ ঘণ্টা চিকিৎসার ভাল ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া ওই অত বড় বাড়িতে, এই বয়সে একা থেকে লাভ কী? এখানে কথা বলার লোক আছে। বেল টিপলেই, যা চাই, তাই পাবে। ও বাড়িতে মরে পড়ে থাকলেও কেউ জানতে পর্যন্ত পারবে না। বাড়ির দেখাশোনা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। আমরা আছি।’ কথাটা সত্যি! অনেক বড় বাংলো চিত্রার। খুব শখ করে কিনেছিল। নিজের পসার আর পয়সা দুটোরই সাক্ষী ওই বাংলো। উৎসব অনুষ্ঠানে নিজের সঙ্গে সঙ্গে বাংলোও সাজত। উৎসব? এখন তো সেটা কী, তাও ভুলতে বসেছে প্রায়!

আজ সকালে শিলা মেন্ডেস এই ঘরের জানালাটাকে প্রায় জোর করেই খুলে দিল। বলছিল, ‘এসি চলে ঠিক। কিন্তু মাঝেসাঝে বাইরের আলো-বাতাস ঘরে ঢোকা দরকার।’ শিলা মেন্ডেস এখানে নতুন জয়েন করেছে। নার্স। বেশ বাতুনি। তবে খুব কেয়ারিং। প্রথমে তো বুঝতেই পারছিল না সে, চিত্রা এখানে কেন আছে? পরে বোধহয় সিনিয়ররা কাউন্সেলিং করে থাকবে!

জানলার কাছে এগিয়ে যেতে বাধ্য হল চিত্রা। একটা সুন্দর গন্ধ যেন তাকে হাতছানি দিল। জানলার কাছে গিয়ে গন্ধ অনুসরণ শুরু করল চিত্রার জ্ঞানেন্দ্রিয় সমূহ! জানলার নিচে গাছটার খানিকটা দেখা গেল শেষে… শিউলি ফুল! তাহলে কি দুর্গাপুজো এসে গেল? কী জানি! কত কিছুরই যে খবর নেই আজকাল। জানলা দিয়ে বাইরে দেখতে দেখতেই আনমনে বলে উঠল, ‘পুজো পুজো গন্ধ!’ চমক ভাঙল কবিতার কথায়, ‘হ্যাঁ গো মাসি! আসছে সপ্তাহে দুর্গাপুজো তো!’ কবিতা এখানে সাফাইয়ের কাজ করে। ‘ওঃ তাই?’ একটুক জবাব দিল চিত্রা। আজ আর গল্প জমাতে মন সায় দিল না। জানলা দিয়ে আসা আলতো রোদ একটু একটু করে দাপুটে হবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও ওখান থেকে নড়ল না চিত্রা। কবিতাকে বলল, ‘চেয়ারটা এখানে একটু এগিয়ে দেবে?’ কবিতা চেয়ার জানলার কাছে রেখে, নিজের কাজ সেরে, অন্য কামরা সাফাইয়ের কাজে চলে গেল।

জানলার কাছে বসল চিত্রা। নার্সিংহোমের সামনের সরু গলিটা বেশ দূর পর্যন্ত দেখা যায় তো এখান থেকে! ভাবল মনে মনে, ‘দুর্গাপুজো মাত্র এক সপ্তাহ বাকি?’ যখন ছোট ছিল চিত্রা, মহালয়ার দিন থেকেই পুজোর হিড়িক লেগে যেত বাড়িতে। মা, কাকিমারা ঘরদোর পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। চতুর্থীর দিন দরজায় দরজায় তেল-সিঁদুর লাগাতেন মা। চিত্রা একবার মাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘এমনটা কেন করো মা?’ মা বলেছিলেন, ‘চতুর্থী দেখতে আসে, মা দুগ্গা যে ঘরে আসছেন, আমরা সব তার জন্য কেমন প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ চিত্রা বলেছিল, ‘তারপর?’ মায়ের কথায় চিত্রা দেখতে পেত, কেমন করে চতুর্থী ঘরে এসে, সব ঘর কেমন সাফ-সাফাই হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে, তুরতই কৈলাসে গিয়ে মা দুর্গার কাছে রিপোর্ট করছে। মা একগাল হেসে বলতেন, ‘যা দেখি আর বকাসনে। মেলা কাজ পড়ে আছে।’
একান্নবর্তী পরিবারে লোকের অভাব ছিল না। ঠাকুমা বলতেন, ‘মা চিতু, কাল থেকে বইপত্তরে সব তেল-সিঁদুর দিয়ে তুলে রেখে দিয়ো। একবারে বিজয়া দশমীর পর, বেলপাতায় ‘শ্রী দুগ্গা সহায়’ লিখে, তারপরে বইপত্তরে হাত দেবে।’ ‘কেন ঠাম্মা? শুধোত চিত্রা। ঠাকুমা আদর করে বলতেন, ‘‘পুজোর ক’টা দিন বইপত্তরে হাত দিতে নেই। কেবল আনন্দ করতে হয়। নইলে মা দুগ্গা রাগ করেন যে! বলেন, ‘আমি এতদূর থেকে এলুম আর তোদের যে সব ভারি সময়ই নেই দেখছি!” তারপর ঠাকুমা চিত্রার চিবুকে হাত দিয়ে চুমু খেতে খেতে বলতেন, ‘চিতু আমার স্বয়ং মা দুগ্গা ঠাকরুণ! একেবারে তুলি ধরে আঁকা!’ ঠাকুমার নীল চোখদুটো আজও চিত্রার স্পষ্ট মনে আছে।

ঘরের বাগানে, বেশ ক’টা শিউলি গাছ ছিল। আর ছিল স্থলপদ্ম, লঙ্কাজবা, আরও কত কী! দুর্গাপুজোর সময় চিত্রা উবু হয়ে বসে, শিউলি ফুল ভরে নিত পুজোর সাজিতে। সাজি উপচে পড়ত ফুলে। কখনও যদি আঁধার ভোরে ফুল কুড়োতে চলে যেত চিত্রা, দূরের কলাগাছটার আকার দেখে কেমন যেন গা ছমছম করত! ঠিক মনে হত, তালঢ্যাঙা কে যেন মাথায় কাপড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! ওদিক পানে না তাকিয়েই টপ টপ ফুল ভরত সাজিতে। দেখতে দেখতে আলো ফুটে উঠত। এবার গোবেচারা কলাগাছটাকে দেখে একবার ভুরু কোঁচকাত চিত্রা! স্থলপদ্মগুলো বড় উঁচুতে ফুটত। চিত্রার হাত যেত না। অনেক লাফালাফিতেও কাজ না হলে, সে ঘরের কাজের লোক, বিশুদাকে ডাক দিত। বিশুদা লগা এনে পটাপট স্থলপদ্ম পেড়ে দিত গাছ থেকে! সাদা স্থলপদ্ম পুরনো হলে, গোলাপী হয়ে যেত। একদিন চিত্রার খুড়তুতো দাদা বলল, ‘অত কষ্ট করে কেন ফুল কুড়োনো? চল বিছানার চাদরটা বরং গাছ তলায় পাতিগে যাই। গাছটাকে ধরে এক-আধবার ঝাঁকালেই সব শিউলি চাদরে পড়বে। আমরাও একরাশ ফুলের পুঁটুলি করে নেব।’ পরের দিন সেই অনুসারেই কাজ হল। নিজেদের শোবার চাদর পেতে, পুজোর ফুল আনার খবরে খুশি তো কেউ হলেনই না, উল্টে এমন উৎপটাং বুদ্ধি বের করার জন্য, কাকিমা দাদার পিঠে বেলনা ভাঙবেন বলে তেড়ে গিয়েছিলেন! শুধু দুই পিসি হেসে কুটিপাটি হচ্ছিলেন!

হাসছে চিত্রা। হাতের কর গোনা শুরু করল— চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী…। পঞ্চমীর ছবি ভেসে উঠল মনের পটকথায়। দেবীর বোধন। পঞ্চমীর বিকেলে, বাড়ির কাছের সন্ন্যাসী মঠে যেত চিত্রা, বন্ধুদের সঙ্গে। সেই মঠের ধারে, বয়ে যাওয়া গঙ্গার পাড়ে, গুটিকতক গেরুয়াধারী সন্ন্যাসী বোধন কলস ভরতে আসতেন। গঙ্গার জল ভরা কলস নিয়ে সন্ন্যাসীরা চলে যেতেন, মঠের মন্দিরে। সেখানে একচালার সাবেকি দুর্গার মূর্তি পূজা হত। ওই কলস মায়ের মূর্তির সামনে রাখার পর শুরু হত দেবী বোধনের পুজো। এই দিনটায় মঠে বেশি ভিড় হত না। তবে আসল পুজোর দিন, মানে, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে মঠে পা ফেলা দায় ছিল।

ষষ্ঠীর দিনে, মা, কপালে দই-হলুদের ফোঁটা দিতেন। হাতে দই-হলুদে ডোবানো সুতো বেঁধে দিতেন। ষষ্ঠীর সকালে কচুরি আর জিলিপি খাওয়া হত জলখাবারে। ষষ্ঠীর কাকভোরেই সব ভাইবোনেরা মিলেমিশে আশপাশের সব দুগ্গা ঠাকুর দেখে ফেলত! সকাল-সাঁঝে ছাতিম ফুলের উড়ে আসা গন্ধে বাতাস ম ম করত!

চিত্রা একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একান্নবর্তী পরিবারের লোক কমা শুরু হয়েছিল। গ্রামের পুরনো বাড়ি ছেড়ে চলে আসা হল শহরে। তবে শুধু বড় কাকা আর চিত্রাদের পরিবার একসঙ্গেই থেকে যাওয়ায়, যৌথ পরিবার বোধটুকু রয়ে গিয়েছিল। আর তাছাড়া মফস্বলের ঘর, গ্রামের দালানঘরের থেকে অনেক ছোট হওয়ায় খালি খালি অনুভবটা জাঁকিয়ে বসতে পারেনি কখনও।

সপ্তমীর এক সকালে পাড়া থেকে ডাক এল, পুজোর ফল কাটতে যেতে হবে। ঘরের ছোট ফল কাটার বঁটিটা চিত্রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে মা বলেছিলেন, ‘যাও মা! পুজোর কাজে না করতে নেই।’ চিত্রার আরও বেশ ক’টি বান্ধবীরাও এই কাজে যোগ দিয়েছিল। শহরের পাড়ার পুজো হত, একটা প্রাইমারি স্কুলের মাঠে। স্কুলের ক’টা ঘর, পুজো সামগ্রী রাখা, ফল কাটার জন্য খুলে দেওয়া হত। সকাল-সকাল চিত্রা, শৈলী, মৌসুমিরা ফল কাটার কাজে লেগে যেত। মৌসুমীর মাসি, যাকে সবাই ‘ছিয়া’ বলে ডাকত, সবাইকে হাতে ধরে দুর্গাপুজোর যোগাড় শিখিয়েছিলেন। ছিয়ার তখনও বিয়ে হয়নি। বয়স প্রায় ত্রিশের কোটায়। চোখে ভারি পাওয়ারের চশমা ছিল। এতটা বয়সে মেয়েদের বিয়ে না হওয়া, নানা আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে সেকালে। তবে সেসব বোঝার মত অতটা বড় চিত্রা তখনও হয়ে ওঠেনি।

সপ্তমীর নৈবেদ্যের সাতটা ভাগ। অষ্টমীর আটটা আর নবমীর ন’টা, ছিয়াই শিখিয়েছিল ওদের। বিশাল কাঠের বারকোশে একশো আটটা, রোজকার নৈবেদ্য গুনে বসাতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যেত সব! শেষে ছিয়া বলেছিল, ‘বেশি হলে ক্ষতি নেই। কম কোরো না যেন।’ সেই দিন থেকে নৈবেদ্য গুনতি একশো আটের কোটা পেরোলেই, একটা স্বস্তির শ্বাস পড়ত যেন! ফল কাটার ভার ছুঁড়িদের ওপর থাকলেও, দুপুরের ভোগ রাঁধতেন মা, কাকিমাদের বয়সীরা। চিত্রার মা, কাকিমার অবশ্য তাতে ভাগ নেওয়া হয়ে উঠত না। পুজোর দিনে ঘরের কাজই তাদের শেষ হত না। সকালবেলায় একটুক্ষণ প্যান্ডেলে ঘুরে-বসে গল্প করে বাড়ি চলে যেত চিত্রা আর তার বন্ধুরা। বিকেলে আবার প্যান্ডেলে। রাত পর্যন্ত সে ঘোরাঘুরি, গল্প চলতে থাকত।

পাড়ায় পাড়ায় সবে লাউডস্পিকার বাজা শুরু হয়েছে তখন। সে কত সব গান… পুজোতেই শোনার সৌভাগ্য হত! শহরে থাকার সময় গ্রামের পুজোর কথা ক’বার মনে পড়েছিল চিত্রার। গ্রামে গানবাজনা মেশিনে বাজত না। সন্ধেতে গানের আসর বসত। কখনও বা যাত্রা হত। বাড়ি বাড়ি ‘আমান্ন’ আসত, অন্যান্য যাদের বাড়িতে দুর্গাপুজো হচ্ছে তাদের বাড়ি থেকে। কতবার চিত্রা আর ভাইবোনেরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ‘আমান্ন’ আনা দেখেছে। মাথায় ধামাধারী লোকেদের একটিও, যদি কোনও বিশেষ বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞেস করার ফেরে পড়েছে, চটপট ধামা থেকে ক’টা কদমা আর নাড়ু বকশিশ হিসেবে আদায় করে নেওয়া হত! ধামাধারী লোকটি এক-আধ বার বলত, ‘সব লাড়ু লিয়ো না। আমাকে ঝুড়ি লিয়ে লোক-ঘর যেতে হবেক। বাবুদের মান থাকা চাই।’ দাদা-ভাইরা বলত, খুব থাকছে তোমার বাবুদের মান। চিঁড়ে, ফল আমরা ছুঁইনি। শুধু ক’টা কদমা, মন্ডা আর নাড়ু নিয়েছি। তাও সব নিইনি।’

Advertisement

শহরের পুজোয় ফিরে এল চিত্রা। গ্রামের পুজো সবটাই গল্প হয়ে গিয়েছিল যে! সপ্তমীর সকাল। ঢাকের আওয়াজে ঘুম ভাঙত। ঢাক পিটিয়ে নবপত্রিকার আগমন হত। সকাল-বিকেল দেবীর পুজোর কত বহর ছিল! সন্ধেবেলায় বুড়ো ঠাকুরমশাই চামর দুলিয়ে যখন আরতি করতেন, সত্যিই মা দুর্গার চোখেমুখে চমক দেখা যেত! পুজোতে কত প্রাণ ছিল। একবার সন্ধ্যারতির সময় হঠাৎ চিত্রার নজর গেল, একটা থালায়। দেবীর জন্য রাখা বড় কাঠের বারকোশে লুচি-সুজির পাশে, একটা তুলনামূলকভাবে ছোট থালায় রাখা আছে, মুড়ি চপ ভাজা আর এক বোতল মদ! চিত্রা, ‘ওটা কী?’ জিজ্ঞেস করতেই ছিয়া বলেছিল, ‘ওটা অসুরের প্রসাদ! সেও তো মায়ের সঙ্গে বেড়াতে এসেছে। তাকে তার মনের মত খাবার দেওয়া হয়!’ ভারী মজা পেয়েছিল চিত্রা! সত্যিই ‘অতিথি দেবঃ ভবঃ!’ আরও একটু বড় হবার পর, যখন পুজোর ফল কাটতে যেত চিত্রা আর তার বন্ধুরা, দু-পাঁচটা ছেলেপুলে স্কুলের জানলা দিয়ে ফল চাইত ওদের কাছে। বিদেয় হতে বললেই ওরা বলত, ‘আগে পেটপুজো। পেটপুজোই মহাপুজো।’ সেসব অন্যরকম দিন ছিল।

‘চান করবেন না?’ সম্বিত ফিরল চিত্রার। শিলা মেন্ডেস। পাশের মোটা পর্দা ঢাকা পার্টিশন এরিয়াতে নতুন পেশেন্ট এসেছে। তাই বলতে এসেছে শিলা মেন্ডেস। নতুন পেশেন্ট এলে চিত্রাকে বলে দেওয়া হয়। সে যাতে নার্সিংহোমের পুরো ঘরটাতে তার রাজত্ব ফলাও না করে, তাই হয়তো এ ব্যবস্থা! তা অবশ্য চিত্রা করেও না আজকাল। শুরুতে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াত। বড় অস্থির লাগত যে! ওই বড় বাংলোতে থেকে অভ্যেস। শেষে কিনা এই নার্সিংহোমের একটা ঘর? তাও পার্টিশন দিয়ে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করে থাকা? ধীরে ধীরে সব সয়ে গেছে। ওই পর্দার ওপারে নতুন পেশেন্টদের সব চিন্তা, তাদের বাড়ির লোকেদের আনাগোনা, সব বুঝতে পারে সে। শুধু আজ পর্যন্ত এমন কোনও পেশেন্ট আর আসেনি যাকে, তার পরিজনেরা এই নার্সিংহোমে পার্মানেন্টলি রেখে দিয়ে গেছে! হয়তো অত টাকাপয়সাও সবার নেই, নয়তো এমনতর চিন্তাভাবনার অভাব আছে!

‘আমি আরও একটু বসি এখানে’, বলল চিত্রা। শিলা মেন্ডেস পাশের পেশেন্টকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সত্যি বলতে কী, অসুস্থ না হয়ে পড়লে চিত্রাকে নিয়ে মাথাব্যথা কারও নেই। সে তো নিজেই নার্সিংহোমের গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে! এই তো সেদিনই… না, আজ বরং অন্য কথা ভাবি, ভাবল চিত্রা। কোথায় ছিলাম যেন? অষ্টমী না নবমীতে? অষ্টমীতেই ফিরে যাই। সবচেয়ে সেরা জামাটা অষ্টমীর জন্য রাখা থাকত। নতুন জুতো পরে ফোসকা না হয় পায়ে! বড় পিসি বলতেন, ‘ওরে, পঞ্চমী থেকেই নতুন জুতো পড়ে গটগট করে সব ঘরে হাঁটা শুরু কর। তাহলে জুতো পায়ে সয়ে যাবে। ফোসকা পড়বে না।’ বড় পিসির কথায় কাকিমারা মুচকি হাসতেন। আর ঠাকুমা বলতেন, ‘জুতো পড়ে ঘরে হাঁটবি? অনাছিষ্টির সব বেলা এসেছে রে!’

অষ্টমীর দিন ঘরে নিরামিষ খাওয়া হত। ‘সেদিন ভাত খেতে নেই’, বলতেন বড়রা। তাই লুচি, নারকোল দিয়ে ছোলার ডাল, পায়েস, মিষ্টি এসব কত কীই না হত! এখন তো রোজ নার্সিংহোমের খাবার খেয়ে খেয়ে ঘেন্না ধরে গেল! ঘেন্না তো এই জীবনটার প্রতিও ধরতে বসেছে, মনে হল চিত্রার। না, না আজ নয়…, আবার মনকে বলল সে, আজ বরং অষ্টমীতেই থাকি। সন্ধিপুজো। সন্ধিপুজোর একশো আটটা পদ্ম খুলতেন মা, কাকিমারা। একশো আটটা বেলপাতার মালা দুলতো মা দুর্গার গলায়। একশো আটটা মাটির প্রদীপ জ্বলে উঠত। সেই প্রদীপের ছটায় সন্ধিপুজোর উপোস করে থাকা, সব মা, কাকিমাদেরই দেবী বলে মনে হত যেন!

সন্ধিপুজোর শেষ মানেই নবমীর সুর শুরু। নবমীর দিনে, লাউ, কলা, আখ বলি দেওয়া হত। হোম হত। ভোগ বিতরণ হত পাড়ায় পাড়ায়। নবমীর সন্ধেতে হয়তো চোখাচোখি হত কোনও তরুণ সমবয়সীর সঙ্গে! তার বেশি কিছু নয়! বিদায়ের সুর ছড়িয়ে পড়ত নবমীর রাত থেকেই। পুজো শেষ হল বলে! ভাবনাটাকে ঠেলে সরিয়ে দিতে হত বারবার।

দশমীর দিনে মা দুর্গার ভোগে রাখা হত, পান্তা ভাত আর এটা-ওটা ভাজাভুজি। মা যেন তড়িঘড়ি খাবার খেয়ে ট্রেন ধরতে যাচ্ছেন! একটা মাটির হাঁড়িতে থাকত জল। তিনকোনা কাঠির ওপর রাখা হত আয়না। সেই আয়নায় দেখতে হত মা দুর্গার বিদায় বেলার মুখ। সত্যিই মনে হত, মায়ের চোখ ছলছল করছে। দধিকর্মা মাখা হত। বিকেলে সিঁদুর খেলা দেখতে যেত চিত্রা, মায়ের সঙ্গে। মা দুর্গাকে, মা-কাকিমারা পান দিয়ে বরণ করতেন, মিষ্টিমুখ করাতেন, আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিতেন। একগাল সিঁদুর মেখে মা-কাকিমারা বাড়ি ফিরতেন। সবাইকে কী ভীষণ সুন্দর দেখাত! দশমীর দিনে বাড়িতে ঘুগনি হত। কত রকমারি নাড়ু তো নবমীর দুপুর থেকেই তৈরি হতে থাকত। বিজয়ায় বাড়ি বাড়ি প্রণাম পর্ব, দূরের আত্মীয়-স্বজনদের বিজয়ার প্রণাম আর আশীর্বাদী চিঠি লেখা, বাবা-কাকাদের কোলাকুলি, সবই যে মনে পড়ে যাচ্ছে! মুড়ির নাড়ু, চিঁড়ের নাড়ু, নারকোল নাড়ু, কাঠিভাজার নাড়ু…। সব নাড়ু ভাল লাগত চিত্রার। কিন্তু ওই কাঠি ভাজার নাড়ু? বাবারে! যা শক্ত হত! দাঁত ভেঙে যাবার যোগাড়! মন ভরে এল চিত্রার। উঠে দাঁড়াল। জানলা দিয়ে আবার দেখল বাইরের দিকে। একটু মেঘ করে এলো হঠাৎ করে। শরতের মেঘ বলে কথা। এই আছি এই নেই! ঠিক আমাদের জীবনের মত, ভাবল চিত্রা। জানালাটা বন্ধ করি। এইবার একটু এসি চাই।

দুপুরের স্নান, খাওয়া সেরে বিছানায় বসে বসে পরবর্তী দিনগুলোর কথা ভাবতে শুরু করল সে। সময় বদলাতে শুরু করেছিল। বাবা, মারা যাবার পর সংসারের স্থিতি পাল্টেছিল। বড় কাকিমার ছেলেরাও ফ্ল্যাট কিনে আলাদা হয়েছিল। চিত্রাকে পড়াশোনা মাঝপথে থামিয়ে চলচ্চিত্র জগতে ঢুকে পড়তে হয়েছিল। ‘আজকাল যাকে রিজিওনাল সিনেমা বলা হচ্ছে! নিজের মাতৃভাষায় সংলাপ বলা। রিজিয়ন, স্থানিক, ক্ষেত্রীয় এসব শব্দ ফেরে নাই বা পড়লাম। ওসব অত বুঝিনে বাপু’, বলল চিত্রা মনে মনে। চলচ্চিত্রজগতের নায়িকা চিত্রার নাম হল, যশ হল, অর্থ-সম্পত্তি হল, বাকি ভাই-বোনেদের সামলানো হল। শুধু ওই বিশাল বড় বাংলোটি ছাড়া চিত্রার নিজের জন্য আর কিছুই গোছানো হল না। মা যতদিন বেঁচেছিলেন, বলতেন, ‘যে যারটা ঠিক দেখে নেবে। তুই এবার বিয়ে-থা করে, ঘর কর।’ ‘এখন ওসবের সময় নেই মা’, জবাবে বলত চিত্রা। মনে আছে, চিনু মাসির ছোটমেয়ের বিয়েতে যখন অভিনেত্রী চিত্রাকে নিয়ে কমবয়সীরা মাতামাতি করছে, কে যেন বলেছিল, ‘অতি বড় সুন্দরী না পায় বর, অতি বড় ঘরণী না পায় ঘর!’ সেদিন চিত্রা ভেবেছিল, ‘বর না হোক, ঘর আমার হবেই!’ একদিন মাও চলে গেলেন। সময়ও গেল। চিত্রার ঘর হল, বর হল না। বাকিরা সব নিজের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। চিত্রাকে দেখার আর কারও সময় ছিল না। বোনপো-ভাইপোরা মাঝেসাঝে খবর নিত। তাও কম হওয়া শুরু হয়েছিল। ভরা কলসির জল গড়িয়ে আর কতদিন খাওয়া? টাকাপয়সাও খুব বেশি বাকি ছিল না। হ্যাঁ, তবে জীবন ভালভাবে খেয়েপরে চলে যাবার মত ছিল। আর ছিল, ওই মহামূল্য বাংলোটা। এমন সময় শরীর আর সহায়তা করল না। একদিন সিঁড়ি থেকে পড়ে গেল চিত্রা। কতক্ষণ ধরে বেঘোরে পড়েছিল সে জানে না। বাড়ির ঠিকে কাজের মেয়েটি, এক বোনপোকে খবর দিয়েছিল। বাকি আত্মীয়দের কাছেও এ খবর পৌঁছাতে সময় লাগেনি। তারপর থেকে চিত্রা এই নার্সিংহোমে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চিত্রা বুঝেছে, বাংলোর খবর নেবার আর কোনও অধিকার হয়তো তার নেই। তবে আত্মীয়রা খুব ভাল বলতে হবে! তারা এই নার্সিংহোমে পার্মানেন্টলি থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এখনও প্রতি মাসে একটা বাক্সে চিত্রার জন্য, নানা রকম স্ন্যাক্স, বিস্কুট, চানাচুর, মুড়ি পাঠিয়ে দেয় আত্মীয়রা! শুধু লোক আর কেউই প্রায় আসে না। এসব ভাবতে ভাবতেই উঠে দাঁড়াল চিত্রা। ছোট ঘরটার মধ্যেই ধীরে ধীরে পায়চারি করতে শুরু করল।

পার্টিশনের ওপাশের পেশেন্টের বাড়ি থেকে কেউ দেখা করতে এসেছে। ওপাশ থেকে শিলা মেন্ডেসের চাপা গলার উৎসাহিত আওয়াজ শোনা গেল। সে পেশেন্টকে বলছে, ‘আপনার ছেলে অ্যাক্টর? বাহ! ওই যে পার্টিশনের ওপাশে যিনি থাকেন, উনিও একসময়ের নামচীন অভিনেত্রী ছিলেন। ওনার পরিবারের অনেকেই আজকাল অ্যাক্টিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। উনি এখানেই…’। চিত্রা জানত, পার্টিশনের ওপারে আসা অনেক পেশেন্টকেই তার গল্প শোনানো হয়। আর আজ তো কোন অ্যাক্টরই হাজির সেখানে! তবে চিত্রা এও জানত, তার গল্প শুনে, অ্যাক্টরের বাবার মনে হয়তো সন্দেহের মেঘ জমলেও জমা শুরু হতে পারে! আর অ্যাক্টরও হয়তো এ গল্প শুনে অস্বস্তি বোধ করছে। নাকি নতুন আইডিয়া পাচ্ছে কোনও? ছি, ছি একি ভাবছে চিত্রা! তার মনে হল, প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব একটা যাত্রা আছে। তা অন্য কেউ বোঝে না। বোঝানোর দরকারও তো নেই। ওই বাংলোতেও তো সে প্রায় একটা ঘরেই থাকত। মনে শুধু বাংলো আছে, বাংলো আছে, খেয়াল চলত। এখানেও সে একটা ঘরেই থাকে। তবে এখানে লোকের মুখ দেখা যায়, শিলা মেন্ডেস গল্প করে, কবিতাও বাইরের জগতের খবর দেয়। এ তো কম কিছু নয়! হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে ছুটোছুটি পড়ে যায়। স্ন্যাক্সের বাক্স থেকে বিস্কুট বের করে, চায়ে ডুবোনো যায়! কখনও বিস্কুট টুপ করে চায়ের ভিতরে পড়ে গিয়ে মিলিয়ে যায়। সেই চায়ের বিশেষ স্বাদ বদল বোঝা যায় না। চিত্রার মনে হল, সেও ওই বিস্কুটের মত। অনন্ত প্রকৃতি নামের তরলে মিলিয়ে যাবার জন্য সে অপেক্ষায় বসে আছে!

তারপর মনে পড়ল, সেই বৈজ্ঞানিকের কথা। শিলা মেন্ডেস ক’দিন আগে গল্প করছিল, এই ক’বছর আগে কোনও এক মহিলা বৈজ্ঞানিক নাকি তার মৃত্যুর আগে তার বিশাল বড় ফ্ল্যাটটা গবেষণাকার্যের জন্য দান করে গেছেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন আর ক্যানসারে ভুগছিলেন। তাঁর আত্মীয়রাও নিশ্চয়ই তাঁর কাছ থেকে বিষয়সম্পত্তির প্রত্যাশা করে থাকবেন। তাহলে আমিই বা কেন আমার শর্তে জীবনের বাকি ক’টা দিন কাটাতে পারব না? আমার কোথায় থেকে মরা উচিত সেই সিদ্ধান্ত ওরা কখনওই নিতে পারে না। মৃত্যুর মধ্যে মৃতের একটা মর্যাদা থাকা উচিত। এ তো চিরসত্যি, কোনও মানুষই তার বাড়িঘর, বিষয়-সম্পত্তি ওপরে নিয়ে যায় না। কিন্তু জীবিত অবস্থায় জীবনের মর্যাদাটুকু অন্য কেউ কেড়ে নিতে চাইলে, ক্ষমতা থাকলে তার প্রতিবাদ করা উচিত। আর এই ক্ষমতা শুধু শরীরের নয়। এ হল মনের ক্ষমতা। চিত্রার একবার মনে হল, আমি কি পারব? সে আরও ভাবল, সে চলে যাবার পরে, তার জিনিসের মধ্যে কার কী প্রাপ্য সেটা সে নিজেও নির্ধারণ করে যেতে পারে বা তা নিয়ে আত্মীয়রা পরেও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু তার বাকি জীবনটা সে কীভাবে কাটাবে, তা সামর্থ্য থাকলে, নির্ধারণের দায়িত্ব, শুধু তার নিজের। অন্যরা নিজেদের স্বার্থে তাকে যেখানে খুশি ফেলে দিয়ে আসতে পারে না, ‘ডাম্প’ করতে পারে না। ‘আগে কেন আমার এমনটা মনে হয়নি?’, নিজের মনেই বলল চিত্রা। মুচকি হাসল। ‘মা দুর্গার প্রভাবে আমারও ক্ষমতা ফিরে আসছে হয়তো!’

এইবার সে বেল টিপল। এখনই শিলা মেন্ডেস এল বলে! ততক্ষণে সে ব্যাগ হাতড়ে ছোট ডায়েরিটা বের করে ফেলেছে। শিলা মেন্ডেস ঘরে আসতেই, চিত্রা তাকে ডাইরির পাতায় একটা নম্বর দেখিয়ে বলল, ‘এই নম্বরে উকিলবাবুকে ফোন করো তো।’ আজ সে সত্যিই আনন্দে বিভোর ছিল।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 2 =

Recent Posts

মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনচক্রের মহাকাব্য নবান্ন: শ্রম, প্রকৃতি ও নবজন্মের দ্বান্দ্বিকতা

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব বসু: কালে কালান্তরে

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

Read More »
দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »