পাবলো নেরুদা
অনুবাদ: শুভঙ্কর সাহা
যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও
আমি চাই তুমি এটা জেনে রাখো।
তুমি জানো বিষয়টা এ’রকম:
যদি আমি তাকাই
স্ফটিক— চাঁদের দিকে, শরতের লাল লতার পানে
আমার জানলায়,
যদি আমি ছুঁয়ে দিই
ফায়ারপ্লেসের অদেখা ছাই অথবা
মুচড়ে যাওয়া কাঠের শরীর,
সব কিছুই আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যায়
তাদের অস্তিত্ব, সুগন্ধ, এই আলো
যেন ছোট ছোট নৌকার ভেসে যাওয়া
তোমার দ্বীপভূমিতে যা আমার জন্যই অপেক্ষায় আছে
এখন দেখো, যদি তোমার
ভালবাসা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়
আমার ভালবাসাও তোমার জন্য
ধীরে ধীরে শুকোতে শুরু করবে।
যদি হঠাৎ করেই
তুমি আমাকে ভুলে যাও
আমার জন্য আর অপেক্ষায় থেকো না
কারণ ততক্ষণে আমিও তোমাকে ভুলে গিয়েছি।
যে দমকা বাতাস আমার জীবনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত
যদি তুমি ভাবো এ এক পাগল-প্রায় দীর্ঘ যাত্রা
এবং তুমি আমাকে ওই হৃদয়ের গহীন তীরেই ফেলে যেতে চাও
যেখানে রয়ে গেছে আমার শিকড়
মনে রেখো,
সেই দিনে, সেই মুহূর্তে
আমি গুটিয়ে নেব আমার সব অস্ত্র
আর, আর শিকড় খুঁজে নেবে অন্য কোনও জমি।
কিন্তু যদি প্রতিদিন প্রতি ঘণ্টায় অফুরান মধুরতায়
তোমার মনে হয় তুমি আমারই
যদি প্রতিদিন কোনও ফুল তোমার ঠোঁট
ছুঁয়ে দাবি করে আমাকে
ওহে ভালবাসার-জন
এই আগুন বারেবারে আমাকেও পোড়ায়,
কিছুই নেভে না এই চুল্লিতে,
আমার ভালবাসা বেড়ে ওঠে তোমার ভালবাসার প্রশ্রয়ে
আমাদের অস্তিত্ব বেঁচে থাকবে দু’হাতের আশ্রয়ে।
***
প্রতিদিন তুমি খেলা করো
তুমি তো এখানেই, কোথাও পালাতে চাও না
আমার শেষ ডাকের উত্তরও আমি পাব জানি।
মনে করো ভয় পেয়েছ, সেভাবে একবার জড়িয়ে ধরো আমাকে
সেখানেও এক অদ্ভুত ছায়া পড়ে যায় তোমার দু’চোখে।
এখনই তুমি আমাকে এনে দিলে মধুমালতি লতা
আর তার সুগন্ধ জড়িয়ে রয়েছে তোমার বুকেও
দুঃখী বাতাস যখন প্রজাপতির মৃত্যুঘণ্টা বাজায়
তখনও তুমি আমার প্রিয়,
আমার সুখ কেড়ে খায় তোমার মুখের ফল
আমার সঙ্গ হয়তো তোমাকে পীড়া দেয় অবিরত
আমার বুনো নিঃসঙ্গ আত্মা, আমার নাম সবকিছু ঘুরে মরে
চোখে চুমু খেতে খেতে কতবার দেখেছি ভোরের তারাকে নিভে যেতে
আর মাথার উপর ঘুরতে ঘুরতে দেখেছি ধূসর আলোর খেলা
আমার হাজারো শব্দ বৃষ্টির ফোঁটার মত ঝরে পরে তোমার ওপরে
কতদিন ধরে আমি ভালবেসেছি রোদমাখা তোমার মুক্তো-শরীর
যতদিন পর্যন্ত বিশ্বাস করেছি এই বিশ্বের মালকিন তুমি।
পর্বতের কন্দর থেকে এনে দেব ফুল, নীল অথবা হলুদ লিলি
আসলে বসন্ত যেমন চেরির সঙ্গে খেলা করে
আমিও তোমার সঙ্গে খেলে যেতে চাই…
চিত্র: গুগল
