সংক্ষিপ্তসার
কার্ল মার্ক্স (১৮১৮-১৮৮৩) উনিশ শতকের চল্লিশের দশক মাঝামাঝি সময় থেকে রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের একটি বিচার বা পর্যালোচনা শুরু করেছিলেন। সেই বিচার একটি বিজ্ঞান হিসেবে রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে নিবেদিত ছিল।
সেই পুনর্নির্মাণের উদ্দেশ্য: এই বিদ্যাটিকে ঘিরে থাকা বিভিন্ন মতাদর্শকে বা ভ্রান্ত চৈতন্যকে খণ্ডন করার পথে, একটি প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞান তৈরি করে, মজুরি শ্রমিকের আত্ম-মুক্তির সংগ্রামে তত্ত্বগতভাবে সাহায্য করা। মার্ক্স তাঁর এই কাজটিকে ৬টি ভাগে ভাগ করে গবেষণা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। ভাগগুলি, যথাক্রমে: পুঁজি, জমি সম্পত্তি, মজুরি-শ্রম; রাষ্ট্র, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিশ্ব বাজার।
Marx-Engels-Gesamtausgabe (MEGA)
[মার্ক্স-এঙ্গেলস-রচনাসমগ্র (মাএরস)]
গ্রন্থমালার দ্বিতীয় বিভাগে মার্ক্সের “পুঁজি” ও তার প্রস্তুতি পর্বের অসমাপিত ও সমাপিত লেখাজোখাগুলি ১৫টি খণ্ডে, কয়েকটি খণ্ডের একাধিক উপ-খণ্ড নিয়ে, মোট ১৯টি বই হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে: http://mega.bbaw.de/struktur/abteilung_ii ।
মার্ক্সের ও এঙ্গেলসের লেখা অন্য সব বই, নিবন্ধ ও সেগুলির খসড়া এই গ্রন্থমালার প্রথম বিভাগের: http://mega.bbaw.de/struktur/abteilung_i,
তাঁদের চিঠিপত্রগুলি ওই রচনাসমগ্রের তৃতীয় বিভাগের: http://mega.bbaw.de/struktur/abteilung_iii,
আর, বহু দেশ ও নানা বিষয় সম্বন্ধে লেখাপড়া করার সময়ে নেওয়া নোট ও উদ্ধরণ সম্বলিত খাতাপত্রগুলি চতুর্থ বিভাগের:
http://mega.bbaw.de/struktur/abteilung_iv,
বিভিন্ন খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে ও হবে। এই প্রকাশনা ২০২৫ সাল নাগাদ শেষ হতে পারে বলে জানা গেছে: http://mega.bbaw.de।
মার্ক্সের এ পর্যন্ত প্রকাশিত রচনা ও খসড়াগুলিতে আলোচিত বহু বিষয়ই অসম্পূর্ণ ও উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। এমনই একটি বিষয় হল মজুরি-শ্রম।
আধুনিক সমাজে মজুরি-শ্রমের আর বিনা মজুরির পারিবারিক, কৃষি-বাণিজ্যিক, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ও ডিজিটাল দাস-শ্রমের রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে আলোচিত হলে একটি বিজ্ঞান হিসেবে রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের বিচার আরও বিকশিত হতে পারে।
সব ধরনের শ্রমই কোনও না কোনও কাজের জন্য খরচ করা শ্রম-সময়ের মাপকাঠি দিয়ে মাপা যায়। ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস (১৮২০-১৮৯৫) রচিত Die Lage der arbeitenden Klasse in England (ইংল্যান্ডে শ্রমিক শ্রেণির অবস্থা) (১৮৪৫) প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশে মানুষের প্রতিদিনের জীবনে সময়ের ব্যবহার সংক্রান্ত গবেষণা [টাইম ইউজ স্টাডিজ/Time Use Studies (TUS)] চালু রয়েছে (বকশি, 2012 b)।
এই অনুসন্ধানের অন্যতম ফল হিসাবে, গত কয়েক দশকে, প্রতিদিনের বিনা মজুরির শ্রম-সময়ের ভিন্নতার আলোকে, স্ত্রী-পুরুষে পারিবারিক ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অসাম্যের ভিত্তিটি প্রকাশ্যে আসছে।
কৃষি-বাণিজ্যে, পুলিস-মিলিটারিতে ও ডিজিটাল শ্রমের পরিমণ্ডলে নিয়োজিত বেগার শ্রমের বা দাস-শ্রমের আলোচনায় শ্রম-সময়ের হিসাব-নিকাশ ও পর্যালোচনা করে বর্তমান কালের বিশ্বজনীন দাস-শ্রমের ও সেই সুবাদে সমগ্র মানবসমাজ হতে নিষ্কাশিত পুঁজির রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের বিজ্ঞানসম্মত বিচার আরও এগিয়ে যেতে পারে।
পিতৃতান্ত্রিক পরিবারগুলির নারীরা ও কন্যারা পৃথিবীর জনসংখ্যার অর্ধেকের থেকে সামান্য বেশি বলে অনুমান করা হয় (দ্র. গ্রন্থ-নিবন্ধপঞ্জী: মানব লিঙ্গানুপাত)। গত কয়েক হাজার বছর ধরে তাঁরা, তাঁদের পরিবারগুলির মধ্যে, বিনা মজুরিতে পরিবারের কর্তাদের ও অন্য সদস্যদের সেবা করে যাচ্ছেন। পুঁজি আজ, শিল্পজাত বুদ্ধিমত্তা [আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স/Artificial Intelligence (AI)] সম্পন্ন যন্ত্রের শিক্ষাদীক্ষা [মেশিন লার্নিং/Machine Learning (MI)] ব্যবহার করে, পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের পুরুষ কর্তা সহ সকলের বিনা মজুরির দাস-শ্রমের ফল ভোগদখল করছে। তার দাবি: তোরা সবাই কাজ করে যা, ফল আমি একাই ভোগদখল করব। এই জায়মান পরিস্থিতিটি প্রাচীন পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের একপ্রকার আধুনিক সর্বজনীনীকরণ বলে বিবেচিত হতে পারে। এখন সব স্ত্রী/পুরুষ মজুর, সমাজবাদী বুদ্ধিজীবী-নেতা, স্বেচ্ছাবৃত বিনা মজুরির গবেষক, এমনকি রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরাও পুঁজির দাস-শ্রমিক। জগৎজোড়া জাল [ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব/World Wide Web (W3)]-এর ওপর প্রযুক্তি দানব কোম্পানিগুলির মালিকদের একাধিপত্যের দৌলতে আজ পুঁজিই একমাত্র কর্তা-পিতা-মোহান্ত, আর বাদবাকি সবাই পুঁজির অধীন বউ-বাচ্চা, সেবাদাস-সেবাদাসী। প্রসঙ্গত, এই মালিকেরা তাঁদের দানব কোম্পানিগুলিকে খোলাখুলি পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের কর্তাদের কায়দাতেই পরিচালনা করেন, এ ব্যাপারে তাঁদের কোনও ঢাকঢাক গুড়গুড় নেই (লিটল/উইঞ্চ 2021)। গত কয়েক হাজার বছর ধরে যা ছিল বিশেষ— পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের চৌহদ্দির মধ্যেকার সেই বিনা মজুরির দাস-শ্রম— আজ বিশ্বজনীন হয়ে পড়েছে। আর এই বিশ্বজনীন দাস-শ্রমে নিয়োজিত শ্রম-সময়ের হিসাব-নিকাশ করাটা রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচারের সামনে এক আশু কর্তব্য হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এই হিসাব-নিকাশ হতে উঠে আসা তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে মজুরি-শ্রমের রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের পর্যালোচনার ক্ষেত্রে মার্ক্সের অসমাপিত পরিকল্পনাটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
এই নিবন্ধে এই হিসাব-নিকাশের অতীত ইতিহাসের ও আগামী দিনের প্রাসঙ্গিক গবেষণার একটি কর্মসূচির খসড়া রূপরেখা পেশ করা হল।
কোনও নিরক্ষর মানুষ নিজের সারা দিনরাতের শ্রম সময়ের হিসাব রাখতে ও দিতে পারেন না। সারা পৃথিবীর স্ত্রী-পুরুষের দৈনন্দিন কাজে শ্রম-সময়ের ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডারকে আরও বিকশিত করার পথে, পৃথিবীর সব জনসমাজের সব মানুষকে এই হিসাব রাখার জন্য দরকারি সাক্ষরতা অর্জন করতে হবে। এখনও বহু দেশের বহু মানুষ নিরক্ষর। তাই যাঁরা বিনা মজুরির শ্রম সময়ের হিসাব নিকাশ করার ব্যাপারে আগ্রহী, তাঁদের বিভিন্ন সমাজে সর্বজনীন সাক্ষরতা অর্জন করার প্রয়াসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এবং, বিভিন্ন নতুন প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এই কাজ করতে হবে। ডিজিটাল দাস-শ্রমের ক্ষেত্রে এই শ্রম-সময়ের হিসাব-নিকাশ করার জন্য শিল্পজাত বুদ্ধিমত্তা ও শিক্ষিত যন্ত্রের অতি দ্রুত বিকাশমান ক্ষমতা ব্যবহার করার বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যে শিল্পজাত বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন শিক্ষিত যন্ত্রের ওপর আধিপত্যের সুবাদে পুঁজি আজ জগৎ জোড়া জাল ব্যবহারকারী সবাইকে তার দাস-শ্রমিক করে ফেলার ফাঁদ পেতেছে, দুটি শর্তসাপেক্ষে সেই শিক্ষিত যন্ত্রই আগামী দিনে এই হিসাব-নিকাশের কাজে মুক্তিকামী মানুষের অন্যতম প্রধান সহায় হয়ে উঠতে পারে। শর্ত দুটি এই: (১) শিল্পজাত বুদ্ধিমত্তার ও যন্ত্রের শিক্ষাদীক্ষার বিকাশে নিয়োজিত গবেষক দাস-শ্রমিকদের চিন্তাশীল ও প্রাগ্রসর অংশটিকে নিজেদের দাস-দশা সম্বন্ধে আর, (২) ডিজিটাল দাস-শ্রম-সময়ের হিসাব-নিকাশের প্রয়োজন সম্বন্ধে ক্রমেই বেশি বেশি করে সচেতন হয়ে উঠতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ও ধারণা
জগৎ জোড়া জাল/World Wide Web (W3); দাস-শ্রম; পিতৃতান্ত্রিক পরিবার; মজুরি-শ্রম; যন্ত্রের শিক্ষাদীক্ষা/Machine Learning (ML); রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচার; শিল্পজাত বুদ্ধিমত্তা/Artificial Intelligence (AI); সময়ের ব্যবহারের হিসাব-নিকাশ ও পর্যালোচনা/Time Use Etudies (TUS); সাক্ষরতা।
নিবন্ধের কাঠামো
§ ১. কার্ল মার্ক্স: রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচার; § ২. মজুরি-শ্রম; § ৩. পারিবারিক ও অন্যান্য দাস-শ্রম; § ৪. সময় ব্যবহারের ও শ্রম-সময়ের হিসাব-নিকাশ; § ৫. আগামী গবেষণার সম্ভাবনা; § ৬. গ্রন্থ-নিবন্ধপঞ্জী।
§ ১. কার্ল মার্ক্স: রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচার
কার্ল মার্ক্স, ১৮৫৮-১৮৫৯ সালে, ৬টি প্রাথমিক ধারণায় বা বিষয়ে ভাগ করে, রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের বিচার করার জন্য একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। এই সময়ে তিনি চার বার এই পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।
প্রথম বার: ১৮৫৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে ফার্ডিনান্ড লাসালকে পাঠানো একটি চিঠিতে। সেখানে মার্ক্স লেখেন:
“এখন আমি অর্থশাস্ত্রের প্রাথমিক ধারণাগুলিকে বিচার করার অথবা, বলা যায়, বুর্জোয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি সমালোচনামূলক উপস্থাপনা করার কাজে ব্যস্ত। এটি একই সময়ে এই ব্যবস্থার ও তার সমালোচনার উপস্থাপনা।…
*** *** *** *** *** *** *** ***
এই উপস্থাপনা— আমি বলতে চাইছি, এর রচনাশৈলী— পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক, তাই এটি প্রচলিত অর্থে পুলিস-বিরোধী নয়। পুরো বিষয়টি ৬টি বইয়ে ভাগ করে লেখা হবে: ১. পুঁজি প্রসঙ্গে (এর মধ্যে ভূমিকা হিসাবে কয়েকটি অধ্যায় থাকবে)। ২. জমি সম্পত্তি প্রসঙ্গে। ৩. মজুরি-শ্রম প্রসঙ্গে। ৪. রাষ্ট্র প্রসঙ্গে। ৫. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। ৬. বিশ্ব বাজার” (MEGA III/9: 72-73; MECW 40:270)।
দ্বিতীয় বার: ওই বছরেরই ১১ মার্চ তারিখে লাসালকে পাঠানো অন্য একটি চিঠিতে:
“গোটা ব্যাপারটাকে আমি যে ৬টা বইয়ে ভাগ করছি, তার সবগুলোতেই সব বিষয় সমানভাবে সবিস্তারে লেখার কোনও ইচ্ছা আমার নেই। শেষের ৩টিতে সাধারণ রূপরেখার বেশি কিছু দেব না। আর প্রথম ৩টিতে যেহেতু অর্থশাস্ত্রের মূল ভিতগুলোর কথা থাকবে, তাই সেখানে খানিকটা বিস্তারিত আলোচনা এড়ানো যাবে না” (MEGA III/9: 99; MECW 40: 287)।
তৃতীয় বার: ওই ১৮৫৮ সালেরই ২ এপ্রিল তারিখে ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসকে লেখা একটি চিঠিতে। সেখানে মার্ক্স লিখেছেন:
“গোটা মালটাকে ৬টা বইয়ে ভাগ করে ফেলতে হবে। ১) পুঁজি প্রসঙ্গে। ২) জমি সম্পত্তি। ৩) মজুরি-শ্রম। ৪) রাষ্ট্র। ৫) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। ৬) বিশ্ব বাজার।” (MEGA III/9: 122; MECW 40: 298)।
আর চতুর্থ বার: ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত Zur Kritik der Politischen Ökonomie: Erstes Heft [রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচার: প্রথম পুস্তিকা]-র মুখবন্ধে। সেখানে তিনি লেখেন:
“বুর্জোয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটিকে আমি নিচে লেখা ক্রম অনুসরণ করে বিচার করছি: পুঁজি, জমি সম্পত্তি, মজুরি-শ্রম; রাষ্ট্র, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিশ্ব বাজার। আধুনিক বুর্জোয়া সমাজ যে তিনটি বিশাল শ্রেণিতে বিভক্ত সেই শ্রেণিগুলির অস্তিত্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রথম তিনটি শিরোনামের অধীনে বিশ্লেষণ করা হবে; আর বাকি তিনটি শিরোনামের মধ্যেকার সম্পর্ক নিজে নিজেই স্পষ্ট। …দরকারি সব মালমশলাই কয়েকটি পুস্তিকার আকারে আমার সামনে রয়েছে। এগুলি একে অপরের থেকে বেশ ছাড়া ছাড়া আলাদা আলাদা সময়ে রচিত। এসব আমি নিজে বোঝার জন্য লিখেছি, প্রকাশ করার জন্য লিখিনি। এই লেখাজোখাগুলিকে ওপরের পরিকল্পনা অনুসারে গুছিয়ে লেখার ব্যাপারটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে” (মার্ক্স,1859: III; MEGA2 II/2: 99; MECW 29: 261)।
এই বিচার তিনি শুরু করেছিলেন ১৮৪০-দশকের প্রথমার্ধে, কিন্তু ১৮৮৩ সালের মার্চ মাসে তাঁর মৃত্যুর আগে শেষ করে যেতে পারেননি। সেই অসমাপিত বিচার, আর তার মধ্যে বিশেষ করে “পুঁজি”-র রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচার সংক্রান্ত লেখাজোখার অসমাপিত অবস্থার, নানা প্রসঙ্গ গত একশো বছরেরও বেশি সময় জুড়ে নানা জনে আলোচনা করেছেন ও করছেন। এ বিষয়ে দেখুন: কাউটস্কি, 1897; ভিলব্রান্ট, 1918; রুবেল, 1973; কেনেস্সে, 1991; লেবোউইটস, 1992; এবং, ফান ডের লিন্ডেন ও হুবমান (সম্পা.), 2018। আর প্রাসঙ্গিক ভিন্ন মতের জন্য দেখুন: গ্রোসমান, 1929; লাপিডেস, 1998; মার্ক্স-এঙ্গেলস গবেষণায় অবদান, নতুন পর্ব, 2013; এবং, ঘোষ, 2017।
মার্ক্সের “পুঁজি”-র রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচারের অসম্পূর্ণতা, আরও দুটি, পর্যায়ক্রমিকভাবে আরও বড় মাপের, অসম্পূর্ণতার গর্ভে নিহিত।
এক: মার্ক্সের “পুঁজি” সংক্রান্ত লেখাজোখার অসম্পূর্ণতা তাঁর পরিকল্পিত রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচারের বৃহত্তর অসম্পূর্ণতার একটি অংশ মাত্র। সেই পরিকল্পিত বিচারের মধ্যেকার জমি সম্পত্তি, মজুরি-শ্রম; রাষ্ট্র, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিশ্ব বাজার সংক্রান্ত বাকি ৫টি বিষয়ে লেখার জন্য তৈরি করা, তাঁর বিভিন্ন ছক, গ্রন্থ-নিবন্ধপঞ্জী, ব্যক্তিগত সংগ্রহের কয়েক হাজার বইয়ের মার্জিনে লেখা মন্তব্য, ও শত শত খাতায় লিখে রাখা উদ্ধরণ, নোট ও খসড়াগুলি আরও অসমাপিত, এবং আরও কম বিকশিত, খানিকটা প্রকাশিত আর বেশ খানিকটা অপ্রকাশিত, অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। “পুঁজি” সংক্রান্ত লেখাজোখাগুলির মধ্যে তাঁর পরিকল্পিত রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচারের বাকি ৫টি প্রাথমিক ধারণা সংক্রান্ত নানা কথা প্রসঙ্গক্রমে এসেছে। তবে ওই বাকি বিষয়গুলি নিয়ে “পুঁজি” গ্রন্থমালার আদলে কোনও গ্রন্থমালা রচনার কাজ তিনি শুরুও করে যেতে পারেননি।
দুই: রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের ইতিহাস ও একটি বিদ্যা হিসেবে তার বিচার মানবসমাজের ইতিহাসের, আর তার মধ্যে বিকাশমান বিভিন্ন বিদ্যার ইতিহাসের একটি অংশ মাত্র। মার্ক্সের অসমাপিত রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচারও, তাঁর কালে, তাঁর জানা, পৃথিবীর মানবসমাজের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ও বিদ্যার ইতিহাসের, তাঁর সারা জীবন জুড়ে জারি থাকা সুবিশাল, অসমাপিত অধ্যয়নের ও পর্যালোচনার একটি অংশ মাত্র। মানবসমাজের ইতিহাসের, আর তার মধ্যে বিভিন্ন দেশের, নানা বিদ্যার ও বিষয়ের, বহু পর্যায়ের, এই অসমাপিত, আর তাই উন্মুক্ত, পর্যালোচনার এক বিশাল উত্তরাধিকার মার্ক্স তাঁর পরবর্তী প্রজন্মগুলির জন্য রেখে গেছেন। সেই উত্তরাধিকার মার্ক্সের ও এঙ্গেলসের সংরক্ষিত কাগজপত্রের মধ্যে: https://search.socialhistory.org/Record/ARCH00860/ArchiveContentList#tabnav;
মার্ক্সের নিজের লেখাজোখায় (A 1-115 এবং B 1-168), আর তাঁর প্রকাশিত রচনাসমূহে: http://mega.bbaw.de/struktur
লিপিবদ্ধ হয়ে রয়েছে। মার্ক্স-এঙ্গেলস-রচনাসমগ্রের চতুর্থ বিভাগের বত্রিশ নম্বর খণ্ডের প্রাক-প্রকাশনা হিসাবে, মার্ক্সের ও এঙ্গেলসের ব্যক্তিগত গ্রন্থগারের, এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গ্রন্থ-নিবন্ধাদির, একটি হালনাগাদ সটীক ক্যাটালগ (MEGA2 IV/32, 1999) প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে, তালিকাভুক্ত গ্রন্থ-নিবন্ধসমূহের মার্জিনে লেখা মার্ক্সের মন্তব্যগুলির হদিস মেলে। বহু দেশের ও বহু বিষয়ের প্রকৃতি ও ইতিহাস চর্চার যে প্রয়াস মার্ক্স আজীবন জারি রেখেছিলেন তার আংশিক পরিচয়বাহী একটি খসড়া গ্রন্থ-নিবন্ধপঞ্জীও গত কয়েক বছর যাবৎ আন্তর্জালে রয়েছে (বকশি, 2013)।
§ ২. মজুরি-শ্রম
রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচার করার ব্যাপারে মার্ক্সের ১৮৫৮-১৮৫৯ সালের পরিকল্পনার তৃতীয় বিষয় ছিল: মজুরি-শ্রম।
শ্রমের মজুরির আলোচনা দিয়েই মার্ক্স তাঁর ১৮৪৪ সালের Ökonomisch-philosophische Manuskripte (Erste Wiedergabe): |Heft I.| এবং, (Zweite Wiedergabe): |Heft I.| [অর্থশাস্ত্রীয়-দার্শনিক পাণ্ডুলিপিসমূহ (প্রথম উপস্থাপনা): |প্রথম পুস্তিকা| এবং, (দ্বিতীয় উপস্থাপনা): |প্রথম পুস্তিকা|] শুরু করেছিলেন। এই দুই উপস্থাপনাতেই প্রথম বাক্য: “Arbeitslohn: Arbeitslohn wird bestimmt durch den feindlichen Kampf zwischen Capitalist und Arbeiter.” [“শ্রমের মজুরি: পুঁজিপতির ও শ্রমিকের মধ্যে বৈরিতামূলক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে শ্রমের মজুরি নির্ধারিত হয়।”] (MEGA2 I/2, 1982:189 এবং 327)। তবে এই সূত্রপাত সত্ত্বেও জীবনের পরবর্তী বছরগুলিতে তিনি তাঁর অসমাপিত “পুঁজি” গ্রন্থমালার আদলে মজুরি-শ্রম সংক্রান্ত কোনও বিস্তারিত গ্রন্থমালার খসড়া রচনা করার কাজেও হাত দিতে পারেননি। এর মানে এই নয় যে মজুরি শ্রম সম্বন্ধে তাঁর চিন্তাভাবনা ১৮৪৪ সালের পর একই জায়গায় থেমে ছিল, আর এগোয়নি। এগিয়েছে, এবং সে সম্বন্ধে অন্যেরাও লিখেছেন।
“পুঁজি” গ্রন্থমালার প্রথম খণ্ডের বিভিন্ন সংস্করণে মজুরি-শ্রম সম্বন্ধে একটি অধ্যায় বা, কয়েকটি অধ্যায় নিয়ে গঠিত একটি করে বিভাগ রয়েছে। মার্ক্স-এঙ্গেলস-রচনাসমগ্র২-এর দ্বিতীয় বিভাগের মধ্যে এই প্রথম খণ্ডটির ৬টি ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণ পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে (MEGA2 II/5-10)। ১৮৬৭ সাল থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে বিভিন্ন বছরে প্রকাশিত এই সংস্করণগুলির ভেতরে মজুরি-শ্রম সংক্রান্ত অধ্যায়ের বা বিভাগের (প্রথম বন্ধনীর মধ্যে দেওয়া) পৃষ্ঠা সংখ্যাগুলি, যথাক্রমে: II/5, হামবুর্গ 1867 (433-455); II/6, হামবুর্গ 1872 (498-521); II/7, প্যারিস 1872-1875 (ফরাসি পাঠ, 461-487); II/8, হামবুর্গ 1883 (506-531); II/9, লন্ডন 1887 (এঙ্গেলস অনুমোদিত ইংরেজি অনুবাদ, 466-491); এবং, II/10, হামবুর্গ 1890 (479-505)। এর মধ্যে প্রথম তিনটি সংস্করণ (II/5-7) মার্ক্সের জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল; আর পরের তিনটি (II/8-10) তাঁর মৃত্যুর পর সম্পাদনা ও অনুমোদন করেন এঙ্গেলস। এই প্রতিটি সংস্করণেই খুবই স্পষ্ট করে ও অপরিবর্তিত ভাষায় লেখা রয়েছে: “মজুরির আবার নানা রূপ আছে …তবে সেই সব রূপের আলোচনা করার জায়গা মজুরি শ্রম সংক্রান্ত একটি বিশেষ রচনার মধ্যে, আর তাই এই বইয়ে তার জন্য কোনও জায়গা নেই” (II/5: 440; II/6: 505; II/7: 468; II/8: 513; II/9: 473; II/10: 486)। দেখা যাচ্ছে যে, আলাদা করে মজুরি শ্রমের রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচার করার প্রয়োজন নিয়ে ১৮৫৮-১৮৫৯ সাল থেকে শুরু করে ১৮৮৩ সালে মৃত্যু পর্যন্ত মার্ক্সের নিজের, আর তার পরে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত এই খণ্ডটির সম্পাদক ও অনুমোদনকারী এঙ্গেলসের কোনও ভিন্নমত ছিল না।
১৮৫৯ সালে মার্ক্স লিখেছিলেন যে তাঁর পরিকল্পনা অনুসারে তাঁর খসড়া লেখাজোখাগুলিকে “গুছিয়ে লেখার ব্যাপারটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে” (মার্ক্স, 1859: iii; MEGA2 II/2, 1980: 99)। মজুরি-শ্রমের আধার যে শ্রমিক তার জন্মের ঐতিহাসিক পূর্বশর্ত হিসেবে এবং, তার অবিচ্ছেদ্য পরিবেশ হিসেবে আজ পর্যন্ত উপস্থিত পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে মেয়েদের ও শিশুদের, কৃষি-বাণিজ্যের, পুলিস-মিলিটারির আর জগৎজোড়া জালে পরিব্যাপ্ত বিনা মজুরির দাস-শ্রমের রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র নির্মাণ করে, আর তারপর তার বিচারকে মজুরি-শ্রমের রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচারের সঙ্গে যুক্ত করে, মার্ক্সের উত্তরাধিকারকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
§ ৩. পারিবারিক ও অন্যান্য দাস-শ্রম
আজও পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রাক-বুর্জোয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বেশ শক্তিশালী অবস্থায় টিকে রয়েছে। এই অবস্থার অন্যতম প্রধান ভিত্তি অতীত হতে উত্তরাধিকার হিসাবে পাওয়া ও অতি ধীরে বিবর্তনশীল জমি সম্পত্তি এবং জমি-সম্পর্কসমূহ। জমি সম্পত্তির রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের বিচার, মার্ক্সের পরিকল্পনার দ্বিতীয় বিষয় হিসাবে ঠিক করা ছিল। সেই কাজ করার জন্য তিনি অনেক মাল-মশলাও যোগাড় করেছিলেন; কিন্তু কাজটি করে উঠতে পারেননি।
পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের অধিকাংশ সমাজ এখনও হয় প্রাক-আধুনিক, নয়তো সবে আধুনিক হওয়ার পথে পা বাড়াচ্ছে। এই সমাজগুলির শ্রমের বাজারে বুর্জোয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আজও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। সেখানকার বড় বড় ব্যবসাদাররাও এক ধরনের প্রতিবন্ধী। তাঁরা রাষ্ট্রের পরিচালক রাজনীতিবিদদের সঙ্গে লেনদেনের সুবাদে পাওয়া সুযোগ-সুবিধার, এবং প্রাক-বুর্জোয়া সংস্কৃতির ভেতরে গড়ে ওঠা আধিপত্যের, বশ্যতার, সাম্প্রদায়িকতার ও জাতপাতের নানা গোষ্ঠীগত যোগসাজসের ও রেওয়াজের ওপরে নির্ভর করে ব্যবসা করেন। এই সমাজগুলির অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ এখনও পুরোদস্তুর মজুরি-শ্রমিক নন। এঁদের মধ্যে যাঁরা পরিবারের বাইরে শ্রম-বাজারে নিয়োজিত, সারা দুনিয়ায় তাঁদের মধ্যে ৬০%-এর বেশি মানুষ এখনও নিজেদের দেশের রাষ্ট্রের দ্বারা নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি সীমার নিচে অর্ধ-দাস-শ্রমিক বা পূর্ণ-দাস-শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন (আইএলও, 2018a এবং 2018b; বিশ্ব ব্যাঙ্ক, 2019)। কয়েকটি হিসাব অনুসারে ২০১৪ সালে ভারতের শ্রমজীবীদের মধ্যে এঁদের অনুপাত ৯০%-এরও বেশি ছিল (শ্রীজা ও শিরকে, 2014: 41; শ্রম ব্যুরো, 2015:1)। গ্রামের চাষবাসে আর শহরের খুচরো পরিসেবায় যাঁরা স্বনিয়োজিত শ্রমজীবী মাত্র, তাঁদের যদি হিসেবের মধ্যে ধরা হয় তাহলে এই শতকরা অনুপাত বাড়তে পারে। এই শ্রম-বাজারকে অসংগঠিত ক্ষেত্র এবং সেখানে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক ঘোষণা করে বিপুল সংখ্যক মানুষের আংশিক ও পূর্ণ দাসত্বের এই বিশাল বাস্তবতাকে ঢাকা দেওয়া যায় না। আর পৃথিবীর সব পরিবারে বিনা মজুরির পারিবারিক শ্রমে নিয়োজিত শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষেরা তো পুরোপুরি ১০০% দাস-শ্রমিক।
যেসব তুলনামূলকভাবে শিল্পোন্নত সমাজে বুর্জোয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মোটের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেছে বলে ধরা হয় সেই G-7 গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত রাষ্ট্রগুলির সীমানার মধ্যেকার অবস্থাপন্ন ও ইচ্ছুক ক্রেতাদের জন্য, ভারতের মতো কম মজুরির দেশে সস্তায় জরায়ু ভাড়া করার ও নলজাতক তৈরি করার বাজার (পাণ্ডে, 2014; গ্রিলি, 2016); আর, সেই রকম দেশ থেকেই শিশুপালন করার, এবং অথর্ব সেবা ও অন্যান্য পারিবারিক পরিষেবা দেওয়ার জন্য সস্তায় পরিচারিকা/পরিচারক যোগাড় করার বাজার বেশ খানিকটা গড়ে উঠেছে। তবে তা সত্ত্বেও, আজও সেই শিল্পোন্নত সমাজগুলিতেও, প্রধানত পরিবারের চৌহদ্দির ভেতরের বিনা মজুরির পারিবারিক দাস-শ্রমই, বাজারের জন্য মজুরি-শ্রম প্রদানকারী শ্রমিকের পারিবারিক উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন সুনিশ্চিত করে। বাকি দুনিয়ার ক্ষেত্রে তো একথা আরও বেশি করে খাটে। অর্থাৎ, আজও, সারা পৃথিবীতে, শ্রম বাজারের মজুরি-শ্রম, আর বিনা মজুরির পারিবারিক ও অন্যান্য দাস-শ্রম একসঙ্গে মিলেমিশে সমগ্র মানবসমাজে সব ধরনের উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন সম্পন্ন করে।
এখানে একথাও বিশেষ করে উল্লেখ করা দরকার যে যখন বুর্জোয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আওতার মধ্যেই:
(০) সেনাবাহিনীর, পুলিশের এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর শ্রমজীবী কর্মীরা (কোল্ফ, 1990; লুকাস্সেন ও ৎসুরকার, 1998; ৎসুরকার, 2013) ন্যূনতম নাগরিক অধিকারহীন অবস্থায় দাস হিসাবে বা প্রায়-দাস হিসাবে কাজ করেন; অথবা,
(১) যখন মুচলেকা দিয়ে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে বাঁধা পড়ে যাওয়া, কোনও পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের সদস্যেরা সকলে মিলে, ঠিকা প্রথায় বা, পিস রেটে বা, ফুরনের হিসাবে, চাষের জমিতে ফসল বোনার ও কাটার সময়ে, পাথর কুচির খাদানে, নুনের খনিতে, ইটভাটায়, বা অগভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কাজ ইত্যাদিতে নিয়োজিত হন; অথবা,
(২) যখন বহু দেশের যৌনকর্মীরা সময়ের হিসাবে বা, ফুরনে যৌন পরিষেবা প্রদানকারী মজুরি শ্রমিক হওয়া সত্ত্বেও, পুরোনো ঋণের বোঝার বা, সন্ত্রাসের, দাপটের ও লোকনিন্দার চাপে পড়ে, বাড়িওয়ালাদের বা, মালকিনদের বা, দালালদের হাতে কয়েক বছরের জন্য বা, বাকি জীবনের জন্য পুরোপুরি বা, আংশিকভাবে বাঁধা পড়ে থাকেন; অথবা,
(৩) যখন একটা ভৌগোলিক এলাকার, যেমন দক্ষিণ এশিয়ার ভারত প্রভৃতি দেশের, জায়মান বুর্জোয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও নাগরিক সমাজ তার অতি প্রাচীন জাতিভেদ প্রথার কঠোর সামাজিক-সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণের অধীনে পঙ্গু ও হেঁটমুণ্ড হয়ে থাকে; অথবা,
(৪) যখন বর্তমান কালের চিনের বা বিগত শতাব্দীর সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, আইন ও বিচারের ব্যবস্থা পার্টিতান্ত্রিক আমলাশাহীর মৌরুসি রাষ্ট্রীয় স্বৈরাচারের অধীনস্থ হয়ে থাকে; অথবা,
(৫) যখন বিভিন্ন দেশের বাজারে পুঁজি নিবেশ বাড়ানোর জন্য সরকারি নিয়ন্ত্রণের অধীনে তৈরি করা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলিতে, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গুলাগ এবং চিনের লাও গাই প্রভৃতির মতো বন্দিশিবিরে, ও বিভিন্ন দেশের জেলখানায় কয়েদিদের দাস-শ্রম বা, প্রায়-দাস-শ্রম চালু থাকে; অথবা,
(৬) যখন আলফাবেট (Alphabet Inc.), আমাজন (Amazon.com, Inc.), অ্যাপল (Apple Inc.), মেটা প্লাটফর্মস (Meta Platforms, Inc.) ও মাইক্রোসফট কর্পোরেশন (Microsoft Corporation) প্রভৃতির মতো প্রযুক্তি দানবেরা প্রযুক্তির ওপর তাদের আধিপত্যের সুবাদে, তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মজুরি-শ্রমিকদের মারফৎ, প্রাচীন ভারতীয় পূজা-অর্চনা ও আচার-অনুষ্ঠান সংক্রান্ত প্রযুক্তির ওপর আধিপত্যকারী ব্রাহ্মণদের আর, সমরাস্ত্র ও যুদ্ধ প্রযুক্তির ওপর আধিপত্যকারী ক্ষত্রিয়দের কায়দায়, অবলীলায় ও বিনা বাক্যব্যয়ে, সারা পৃথিবীর আন্তর্জাল/ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শত সহস্র কোটি মানুষের প্রতি মুহূর্তের বিনা মজুরির দাস-শ্রমের ফসল আত্মসাৎ করে (মুখোপাধ্যায় 2023) তখন; অথবা,
(৭) যখন উপরের (০)-(৬) অনুচ্ছেদে বর্ণিত এক বা একাধিক পরিস্থিতি একই সময়ে, একই জায়গায় বিরাজ করে, তখন মজুরি-শ্রম ও বিনা মজুরির দাস-শ্রম মিলেমিশে তালগোল পাকিয়ে থাকে, তাদের জট ছাড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে।
সময়ের ব্যবহারের বিকাশমান গবেষণায় মজুরি-শ্রমের ও বিনা মজুরির দাস-শ্রমের হিসাব নিকাশ করার জন্য, সময়কে সাধারণ মাপকাঠি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই গবেষণার সুবাদে গড়ে ওঠা Centre for Time Use Research: https://www.timeuse.org/
প্রভৃতি সংস্থার তত্ত্বাবধানে গঠিত ও নির্ণীয়মান তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে উপরোক্ত প্রকার জটগুলি ছাড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।
শ্রম বাজারের মজুরি-শ্রমের আর বিনা মজুরির পারিবারিক ও অন্যান্য দাস-শ্রমের মধ্যে সময় ছাড়া আরও একটি সাধারণ ব্যাপার আছে। সেটি এই যে, বাইরের দিক থেকে দেখলে এদের স্বেচ্ছাবৃত পারস্পরিক চুক্তির ও স্বীকৃতির পরিণাম বলে মনে হলেও, ভেতরে ভেতরে উভয়েই প্রবল ও দীর্ঘ বৈরিতামূলক সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত। তফাৎ এই যে বিনা মজুরির দাস-শ্রমের ওপর আধারিত আধুনিক একপতি প্রথার পরিবারের ইতিহাস গত কয়েক হাজার বছরের পুরোনো। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে কৃষি-বাণিজ্যিক ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দাস-শ্রমের উদ্ভব ও বিকাশ প্রায় তার সমসাময়িক। আধুনিক মজুরি-শ্রমের বাজারের ইতিহাস মাত্র বিগত কয়েক শত বছরের। আর ডিজিটাল দাস-শ্রমের উদ্ভব ও অতি দ্রুত বিস্তার গত কয়েক দশকের ব্যাপার। পরিবার ও বাজার এই দুই প্রতিষ্ঠানেই মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক সম্পত্তির, ক্ষমতার ও মর্যাদার অসাম্যের ওপরে আধারিত; আর, উভয় ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের, আইনের, শিক্ষা ব্যবস্থার ও জনমত তৈরি করার জন্য মিথ্যা প্রচার করার মাধ্যমগুলির দৃষ্টিতে ও ভাষায়, এই সম্পর্কগুলি সমানাধিকার সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে স্বেচ্ছায় সম্পাদিত স্বাধীন চুক্তির ওপরে আধারিত।
সম্পত্তি ও পরিবার এবং, সে সম্বন্ধে সমাজে পরিব্যাপ্ত সাধারণ ভ্রান্ত চৈতন্যের বিষয়টি মার্ক্সের ১৮৪৫ সালের ব্রাসেলস প্রবাস পর্বের ২ নম্বর খাতায়, ইউজিন বুরে (1840) হতে নেওয়া একটি নোটে বীজাকারে প্রতিফলিত হয়েছে। বুরে লেখেন: “…সম্পত্তি ও চরম নিঃস্বতা কি থাকা উচিত? বিবাহ ও গণিকাবৃত্তি, পরিবার ও পরিবারহীনতা কি থাকা উচিত? এই সকল ব্যাপারই তাদের নিজ নিজ বৈপরীত্যসমূহে বিকশিত হয়েছে, আর কেবলমাত্র অতি বড় মিথ্যা ও মোহ-মায়া মারফৎই সাধারণ স্থির-নিশ্চিত ব্যাপার হিসাবে বিবেচিত হতে পেরেছে” (MEGA2 IV/3, 1998:142-143)।
এ প্রসঙ্গে মেগা-র এই খণ্ডের সম্পাদকেরা মন্তব্য করেছেন: “সংক্ষেপে: ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে একাধারে বাতিল-অপসারিত-সংরক্ষিত-ও-উন্নীত (Aufhebung) না করে চরম নিঃস্বতা দূর করা যাবে না। বুর্জোয়া পরিবারকে একাধারে বাতিল-অপসারিত-সংরক্ষিত-ও-উন্নীত না করে গণিকাবৃত্তির বিলোপ সাধন করা যাবে না” (ওই খণ্ডেই: ৪৭১)। বর্তমান নিবন্ধে এ প্রসঙ্গে একথা বলা যায় যে, দাস-শ্রমের পারিবারিক ও অন্যান্য রূপগুলিকে একাধারে বাতিল-অপসারিত-সংরক্ষিত-ও-উন্নীত না করে, মজুরি-শ্রমের বিলোপ সাধন করা যাবে না।
কার্ল মার্ক্স উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের যে বিচার শুরু করেছিলেন তার লক্ষ্য ছিল মজুরি দাসত্ব হতে মজুরি শ্রমিকের আত্ম-মুক্তির সংগ্রামে সাহায্য করা। আশা এই যে একদিন সেই আত্ম-মুক্তির সংগ্রাম, নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্র হতে ধারাবাহিক উত্তরণের পথে ভবিষ্যতের মানবসমাজে বা কমিউনিজমে পৌঁছাবে। তবে সেই মজুরি দাসত্ব হতে মুক্ত মানবসমাজে পৌঁছানোর আগে অবশ্যই আরও একটি দরকারি পর্যায় পার হতে হবে। সেই পর্যায়ে, সব বিনা মজুরির দাস-দাসীকে দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে হবে।
গত কয়েক হাজার বছর জুড়ে এক পতি প্রথার পিতৃতান্ত্রিক পরিবারই বিনা মজুরির দাস-শ্রমের বা প্রায়-দাস-শ্রমের সব থেকে প্রাচীন, বড় ও শক্তিশালী দুর্গ। লিউইস হেনরি মর্গান রচিত প্রাচীন সমাজ (1877) থেকে নেওয়া নোটের এক পতি প্রথা সংক্রান্ত অংশে এ বিষয়ে মার্ক্স লিখেছেন: “আধুনিক পরিবার একেবারে গোড়া থেকেই চাষবাসের পরিসেবার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে, আর তাই তার মধ্যে শুধু দাসত্বই নয় ভূমিদাসত্বও ভ্রূণাকারে বিদ্যমান। যেসব বৈরিতা পরে সমাজে ও তার রাষ্ট্রে বিকাশ লাভ করে, সে সবই তার মধ্যে ক্ষুদ্রাকারে রয়েছে” (মার্ক্স, B 162, 1880-1881; ক্রেডার, 1974: 120; এঙ্গেলস,1892: 61, ইংরেজি অনুবাদে: MECW, 26: 166 )। পরিবারের বাইরে দাসত্বের ও মজুরি-দাসত্বের আর পারিবারিক জীবনে দাসত্বের ও ভূমিদাসত্বের বহু স্তরের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে আমরা নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্র হতে উত্তীর্ণ হয়ে কমিউনিজমের মানবসমাজে পৌঁছাতে পারব না।
পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে ও সমাজে মেয়েদের অধস্তন দশার সমালোচনার প্রথম প্রতিফলন ঘটে প্রাচীন সাহিত্যে। এ প্রসঙ্গে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী হতে প্রথম শতাব্দীর মধ্যে রচিত থেরীগাথা-র অন্তর্গত ঋষিদাসী, সোণা, অড্ঢকাসী, অভয়মাতা, বিমলা, অম্বপালী, চাঁপা, মুক্তা, পূর্ণিকা, সুমঙ্গলমাতা, কৃশা গৌতমী, ও সোমা সংক্রান্ত গাথাগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য (রাজে, 2006: 87-100)। সেই প্রাচীন কাব্যিক উপস্থাপনা পরবর্তী কালের দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মসমূহের ও ললিত সাহিত্যের গতিধারাকে প্রভাবিত করে। তবে এখানে তা লিঙ্গ-বৈষম্যের সামাজিক-, নৈতিক-, ও দার্শনিক-বিচারে এবং, নারী ও পুরুষের সাংস্কৃতিক, নাগরিক, আইনগত, ও সাংবিধানিক সমানাধিকারের গণতান্ত্রিক দাবি দাওয়ার পর্যায়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
সেই উত্তরণ শুরু হয় ইউরেশিয়া ভূভাগের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে, ষোড়শ হতে অষ্টাদশ শতাব্দীর পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি দেশে। তার প্রতিফলন ঘটে গুর্নে (1594 ; 1641), ফান শুরমান (1641), বার (1673-1675), কন্দরসে (1790), গোজ়েস (1791), এবং ওলস্টোনক্রাফট (1792) প্রমুখের রচনায়। এই অঞ্চলের আধুনিকতার এই ঊষাকালের প্রাসঙ্গিক সামাজিক আলোড়নের সঙ্গে, এবং আরও বহু চিন্তাবিদ নারী ও পুরুষের দার্শনিক, রাজনৈতিক ও সাহিত্যিক রচনার সঙ্গে, সাধারণ পরিচিতির জন্য দেখুন: ম্যাককিয়োন (2005) এবং, ফান এল্ক (2017)। উনিশ শতকে ফুরিয়ের (1808), এবং বুরে (1840), আর তার পর, মার্ক্স/এঙ্গেলস কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার (১৮৪৮)-এ এবং অন্যত্র স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে সমানাধিকারের অভাবের সামাজিক-অর্থনৈতিক মর্মবস্তুর ওপরে গুরুত্ব আরোপ করেন। নারীমুক্তি সম্বন্ধে মার্ক্সের ও এঙ্গেলসের ধারণার বিবর্তন সম্পর্কে ম্যাক্সিমিলিয়ান রুবেল (১৯০৫-১৯৯৬)-এর বিবরণ (1997) প্রসঙ্গে দেখুন: বকশি, 2016।
শ্রমই যে মানবসমাজের সকল সম্পদের উৎস, একথা প্রবল নারী ও শূদ্র বিদ্বেষী প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রকার মনুও জানতেন। ১৮৭৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কোভালেভস্কির একটি বই থেকে নেওয়া ভারতবর্ষে জমি-সম্পর্কের ইতিহাস সংক্রান্ত একটি নোটে, মার্ক্স লিখেছেন: “…জনসমাজের অধিকারভুক্ত পতিত জমিতে হলকর্ষণের দ্বারা সম্পত্তির উদ্ভবের প্রতি সোজাসুজি অঙ্গুলি নির্দেশ করে মনু স্বীকার করেছেন যে শ্রমই সম্পত্তির ভিত্তি…” (মনুসংহিতা, 9.44; কোভালেভস্কি, 1879: 93; মার্ক্স, 2001:16 এবং, প্রাসঙ্গিক টীকা 14 ক: 79)। সম্পত্তি উৎপাদনকারী শ্রমের আধার যে শ্রমিক, তার উৎপাদন ও পুনরুৎপাদনের প্রয়োজনই পারিবারিক দাস-শ্রমের সামাজিক চাহিদার মূল কারণ।
সারা পৃথিবীতে বিনা মজুরির পরিবারিক শ্রম কেবলমাত্র শেষ ফল হিসাবেই পণ্য-মুদ্রা সম্পর্কসমূহের এলাকায় ঢোকে। সেই ফলগুলি হল: হাসপাতালের বাজারে শিশু হিসাবে শ্রমিকের জন্ম, স্কুল-কলেজ ইত্যাদির বাজারে শিক্ষানবিশ শ্রমিক হিসাবে তার বড় হওয়া, শ্রমের বাজারে যোগান দেওয়া শিশু শ্রমিকের ও প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকের মজুরি-শ্রমের সময়, আর সেই শ্রম-সময়ের মধ্যে ঢুকে থাকে শ্রমিকের পুষ্টি/খাবার-দাবার, বিশ্রামের বন্দোবস্ত, তার ঘরে কাচা জামা-কাপড়, অসুখ-বিসুখের সময়ে তার সেবা, আর দরকারি যৌন পরিষেবার যোগান ইত্যাদি, প্রভৃতি। পরিবারের চৌহদ্দির মধ্যে বিনা মজুরিতে যোগান দেওয়া এইসব পরিষেবার ও জিনিসের মোট যোগফল = শ্রমিকের শ্রমশক্তি। কোনও শ্রমিকের শ্রমশক্তি যখন শ্রমের বাজারে ঢোকে, তখন সেই বাজারের কেউ সেই শ্রমিকের দেহের ও চেতনার মধ্যে ঢুকে থাকা, তার মায়ের বা, বোনের বা, স্ত্রীর বা, পরিবারের অন্য কোনও সদস্যের/সদস্যার অতীত পরিষেবার জন্য কোনও দাম দেয় না। অন্য কথায় বলা যায়, যে অপেক্ষাকৃতভাবে শিল্পোন্নত বুর্জোয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সহ বর্তমান পৃথিবীর সর্বত্র, সব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতেই, গর্ভধারণ, জন্মদান, শিশুপালন, আর বয়স্কদের নানাভাবে সেবা করার সঙ্গে জড়িত পারিবারিক শ্রম, বিনিময় মূল্যের জগতের চৌহদ্দির বাইরেই পড়ে থাকে।
প্রশ্ন ওঠে, সমাজের অর্থনৈতিক সম্পদ সৃষ্টিতে এই বিনা মজুরির পারিবারিক শ্রমের অবদান কতটা? বিগত প্রায় ১২০ বছর যাবৎ সেকথা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই প্রয়াসের কয়েকটি উদাহরণ: স্টেটসন (আগেকার পদবি: গিলম্যান), 1898; ভিলব্রান্ট, 1906; ওয়েবার, 1912; স্ত্রুমিলিন, 1923-1925; জ়ালাই, 1966, 1972 এবং 1975; গোল্ডশ্মিড-ক্লেরমোন্ট, 1982 এবং 1987; কৃষ্ণরাজ এবং দেশমুখ, 1993; মো, 2003; আয়রনমঙ্গার, 1994 এবং 2004; ফোগেল, 1994 এবং 2008; রাজাভি, 2007; বাডলেন্ডার, 2007 এবং 2008; চৌধুরি, ত্রিপাঠী, জর্জ ও অন্যেরা, 2009; আন্তোনোপৌলোস এবং হিরওয়ে (সম্পা.), 2010; হিরওয়ে, 2016; ডঙ্গ এবং আন, 2012; জ়িলানাওয়ালা, 2013; গাগ্লিয়ারদোনে, 2015; শার্মেস, 2015-2016; বারবাগাল্লো 2016; থ্রোপ, টাইসন এবং নিলসেন, 2017; স্মিথ, 2017; কোনেলি এবং কোঙ্গার (সম্পা.), 2017; সুলিভান, 2018; দোত্তি সানি, 2018; এবং, জ়ু ও নিশিমাতো, 2018।
এই কাজগুলি নানা ধরনের রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রের ভাবাদর্শগত পরিমণ্ডলের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে। এইসব কাজ মার্ক্স প্রস্তাবিত রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচারের আলোকে খুব একটা আলোকিত হয়নি, বা হলেও তা অল্প কয়েক জন পথিকৃতের কাজের মধ্যেই ভ্রূণাবস্থায় থেকে গেছে (যথা: স্ত্রুমিলিন/Струмилин 1923-1925; জ়ালাই/Szalai 1966, 1972, 1975)। তবে মার্ক্স যেভাবে তাঁর কালের চিরায়ত রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র, সরকারি পরিসংখ্যান, ইংল্যান্ডের কারখানা পরিদর্শকদের রিপোর্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচার শুরু করেছিলেন, এই কাজগুলিকেও সেইভাবে বিনা মজুরির দাস-শ্রমের রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচারে ব্যবহার করা যায়। সময়ের ব্যবহারের হিসাব-নিকাশ সংক্রান্ত অতীত, বর্তমান ও আগামী গবেষণার সুবাদে গড়ে ওঠা তথ্যভাণ্ডার হতে যে প্রশ্নগুলি উঠে আসছে ও আসবে সেগুলির উত্তর খুঁজে বার করাটাই আগামী দিনের কাজ।
§ ৪. সময় ব্যবহারের ও শ্রম-সময়ের হিসাব-নিকাশ
এ প্রসঙ্গে দুটি দেশে সময়ের ব্যবহার সংক্রান্ত কয়েকটি অনুসন্ধান হতে পাওয়া কিছু তথ্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রথম দেশ: অস্ট্রেলিয়া, আর দ্বিতীয় দেশ: ভারত।
অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে ১৯৯৭ সালে ব্যবহৃত শ্রম-সময়ের প্রায় ৬৩% শিশুপালন করার কাজে খরচ হয়েছিল (আয়রনমঙ্গার, 2004: 105-106)। এর খানিকটা ছিল মজুরি-শ্রম, আর বাকিটা বিনা মজুরির। সময়ের ব্যবহারের বিচারে শিশুপালনই ছিল ওই বছরে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় শিল্প। সেখানকার সরকারের ২০১৬ সালের একটি রিপোর্ট অনুসারে সেখানে মেয়েদের প্রায় ৩৬% কাজ মজুরি শ্রমের আর বাকি ৬৪% কাজ বিনা মজুরির; অন্যদিকে ছেলেদের প্রায় ৬৪% কাজ মজুরি-শ্রম আর তাদের বাকি ৩৬% কাজ বিনা মজুরির (অস্ট্রেলিয়ার সরকার, 2016: 4)। একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক সংস্থার তৈরি করা হিসাব অনুসারে ওই ২০১৬ সালেরই বাজারদরে অস্ট্রেলিয়ায় বিনা মজুরির শ্রমকে মজুরি-শ্রম দিয়ে প্রতিস্থাপিত করার মূল্য সেখানকার রাষ্ট্রীয় গড় আয়ের প্রায় ৩৪% (থ্রোপ টাইসন এবং নিলসেন, 2017: 2)। সেখানকার গণমাধ্যমেও এই অনুসন্ধানের প্রতিফলন ঘটেছে: শিশুপালন করার কাজকে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির সবচেয়ে বড় শিল্প হিসাবে মেনে নেওয়ার দাবি উঠেছে (স্মিথ, 2017)।
২০০৯ সালে নাগপুরে করা একটি ক্ষেত্রসমীক্ষার ওপরে আধারিত একটি হিসাব অনুসারে, ওই বছরে ভারতের মেয়েদের বিনা মজুরির পারিবারিক শ্রমের মূল্য ছিল প্রায় ৬১২.৮ বিলিয়ন US $ বা, ২৯,৫৩৪৬৭৯৭ ট্রিলিয়ন ভারতীয় টাকা বা, ভারতের ওই বছরের রাষ্ট্রীয় গড় আয়ের প্রায় ৬১% (চৌধুরি, ত্রিপাঠী, জর্জ ও অন্যেরা, 2009: ii, 24)।
বাজারদরের মজুরি শ্রমের মাপকাঠি দিয়ে বিনা মজুরির শ্রমের প্রতিস্থাপন মূল্যের হিসাব করা ছাড়াও, মজুরি-শ্রমের হারানো সুযোগের মাপকাঠিতে বিনা মজুরির পারিবারিক শ্রমের হিসাব নিকাশ করা হয়। উদাহরণ: একটি নারী (না) ও একটি পুরুষ (পু) নিয়ে গঠিত এমন একটি একপতি প্রথার পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের কথা বিবেচনা করা যাক, যেখানে (না) এবং (পু) দুজনেই মজুর এবং দুজনেই সমান দক্ষ; কিন্তু এই ধরনের পরিবারের রেওয়াজ মেনে নিয়ে কেবলমাত্র (পু) শ্রম বাজারে মজুরি শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন, আর (না) পরিবারে বিনা মজুরির কাজে নিয়োজিত থাকেন। যদি (পু) প্রতিদিন তাঁর মজুরি হিসাবে কোনও মুদ্রার ১ একক পান, তাহলে (না)-র ওই দিনের জন্য বিনা মজুরির পারিবারিক শ্রমের মজুরি = অন্ততপক্ষে, শ্রম বাজারে না গিয়ে হারানো মজুরি হিসাবে প্রাপ্য ওই মুদ্রার ১ একক + বাড়িতে (পু)-র জন্য রান্না করা, তার বাসন মাজা, কাপড় কাচা, তার বিশ্রামের বন্দোবস্ত করা, তাকে যৌন পরিষেবা প্রদান করা ইত্যাদির জন্য বাজারদরে প্রাপ্য মজুরি। ওই পরিবারে শিশু থাকলে তাদের জন্য গর্ভের ভাড়া, বাজারদরে গর্ভধারণের ও শিশুপালনের মজুরি ইত্যাদিও যোগ করতে হবে। আর শিশুরা পরিবারে বিনা মজুরির কাজে অংশগ্রহণ করতে থাকলে, শিশু শ্রমিক হিসাবে তাদের প্রাপ্য মজুরিটাও পারিবারিক বিনা মজুরির হিসাবের মধ্যে যোগ করতে হবে। যেভাবেই মাপা হোক, সমাজে সম্পদ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে শ্রম বাজারের মজুরি-শ্রমের তুলনায় বিনা মজুরির পারিবারিক দাস-শ্রমের অবদানই বেশি বলে দেখা যাচ্ছে।
এই পর্যন্ত সম্পদ সৃষ্টিতে বিনা মজুরির পারিবারিক শ্রমের ভূমিকার ও তার হিসাব-নিকাশ করার প্রয়োজনের প্রসঙ্গ। এই একই কথা ওপরে § ৩ নম্বর বিভাগে উল্লেখ করা আংশিক ও পূর্ণ দাস-শ্রমের (০)-(৭) নম্বর রূপভেদগুলির ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক। এগুলির মধ্যে (৬) নম্বর রূপটি অতি সাম্প্রতিক: আজ শিল্পজাত বুদ্ধিমত্তা (AI) সম্পন্ন যন্ত্রের শিক্ষাদীক্ষার (ML) ওপর পুঁজির আধিপত্যের কারণে জগৎ জোড়া জালে বিশ্বজনীন ডিজিটাল দাস-শ্রমের সর্বগ্রাসী বিস্তার, পারিবারিক ও অন্যান্য দাস-শ্রমের হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রেও সম্ভাব্য নতুন অগ্রগতির বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে। এইবার সেই সম্ভাবনার কথা।
§ ৫. আগামী গবেষণার সম্ভাবনা
এই কাজ তিনটি পর্যায়ে করা যেতে পারে।
প্রথম পর্যায়:
প্রাচীন পিতৃতান্ত্রিক পারিবারিক দাস-শ্রম হতে সর্বাধুনিক ডিজিটাল দাস-শ্রমের রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচারে আগ্রহী সমাজবিজ্ঞানীদের, পরিসংখ্যানবিদদের, শিক্ষিত যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তার পরিচর্যায় ও শ্রীবৃদ্ধিতে নিবেদিত AI-ML বিশেষজ্ঞদের ও MEGA2 II চর্চাকারীদের গোষ্ঠী তৈরি করে সময়ের ব্যবহার সংক্রান্ত প্রকাশিত গ্রন্থ-নিবন্ধাদির সমীক্ষা করা। সেই সমীক্ষার অস্থায়ী ফলগুলি প্রকাশ করা।
দ্বিতীয় পর্যায়:
প্রথম পর্যায়ের অভিজ্ঞতার আলোকে আরও বড় গোষ্ঠী তৈরি করে বিভিন্ন দেশের সময়ের ব্যবহার সংক্রান্ত বিশাল ইলেকট্রনিক তথ্যভাণ্ডার অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণ করা। সেই অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণের অস্থায়ী ফলাফল প্রকাশ করা।
তৃতীয় পর্যায়:
পৃথিবীর সব দেশে নিয়মিত সময়ের ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য যোগাড় করা হয় না। এই কাজে সমগ্র জনসমাজের যোগদান সুনিশ্চিত করার জন্য, পৃথিবীর সব মানুষকে বা প্রায় সব মানুষকে সাক্ষর হয়ে অন্তত পক্ষে তাদের ৭ দিনের ২৪ ঘণ্টার কাজের ডায়েরি লেখার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে এই গবেষণার সঙ্গে, সর্বজনীন সাক্ষরতা অর্জন করার কাজের যোগসূত্র তৈরি করতে হবে। আজ মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে নিরক্ষরদের ও সাক্ষরদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টার সময়ের ব্যবহারের ক্ষেত্রসমীক্ষা করা যেতে পারে (কেলি ও অন্যেরা, 2015)। এই কাজ করার পথে মানবসমাজে, বিশেষ করে বিনা মজুরির শ্রমে নিয়োজিত মেয়েদের ও শিশুদের মধ্যে, ভাষা, গণিত ও তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত যুগোপযোগী শিক্ষাও বাড়বে (দ্য’আম্ব্রোসিয়ো, 1998; বকশি, 2012 a)।
সব ধরনের দাস-শ্রম সময়ের হিসাব-নিকাশ করার পথে যে অতি বিশাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে উঠেছে ও উঠবে, আগামী দিনে তার নির্মাণে, পর্যালোচনায় ও বিকাশে ডিজিটাল দাস-শ্রমিকদের প্রাগ্রসর অংশের যোগদানের জন্য অন্যান্য ধরনের দাস-শ্রমের পর্যালোকেরা অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছেন।
§ ৬. গ্রন্থ-নিবন্ধপঞ্জী
অস্ট্রেলিয়ার সরকার: Australian Government (2016), Unpaid care work and the labour market:
<https://www.wgea.gov.au/sites/default/files/documents/australian-unpaid-care-work-and-the-labour-market.pdf>
আইএলও: ILO (2018a), India Wage Report; Geneva: ILO.
__ (2018b), Women and Men in the Informal Economy: A Statistical Picture, Third Edition; Geneva: ILO.
আন্তোনোপৌলোস এবং হিরওয়ে (সম্পা.): Antonopoulos, Rania and Indira Hirway (Eds.) (2010), Unpaid Work and the Economy: Gender, Time Use and Poverty in Developing Countries; Basingstoke: Palgrave Macmillan U. K.
আয়রনমঙ্গার: Ironmonger, Duncan (1994), “The Value of Care and Nurture Provided by Unpaid Household Work”, Family Matters, April, No. 37: 36-51.
__ (2004), “Bringing up Bobby and Betty: the inputs and outputs of childcare time”, in: Family Time: The social organization of care: 93-109, ed. by Nancy Folbre and Michael Bittman. London/New York: Routledge.
এঙ্গেলস: Engels, Friedrich (1845), Die Lage der arbeitenden Klasse in England [ইংল্যান্ডে শ্রমিক শ্রেণির অবস্থা]; Leipzig: Verlag Otto Wigand; ইংরেজি অনুবাদ: MECW, Volume 4: 295-506.
__(1884;1892), Der Ursprung der Familie, des Privateigenthums und des Staats. Im Anschluss an Lewis H. Morgan’s Forschungen [লিউইস হ. মর্গানের গবেষণার আলোকে, পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি]; Hottingen-Zürich: Verlags-Magazin; চতুর্থ পরিবর্ধিত সংস্করণ, Stuttgart: J.H.W. Dietz (1892); ইংরেজি অনুবাদ: MECW, Volume 26 (1990): 129-276.
ওয়েবার: Weber, Marianne (1912), “Zur Frage der Bewertung der Hausfrauenarbeit”. In: Die Frau. Monatsschrift für das gesamte Frauenleben unserer Zeit. Bd. 19, 1911/1912, S. 389–399; পুনর্মুদ্রণ: Frauenfragen und Frauengedanken, Gesammelte Aufsätze von Marianne Weber (1919): 80-94; Tübingen: Verlag von J.C.B.Mohr.
ওলস্টোনক্রাফট: Wollstonecraft, Mary (1792), A Vindication of the Rights of Woman: with Strictures on Political and Moral Subjects; London: J. Johnson.
কন্দরসে, মার্কুই দ্য (1790), মেয়েদের নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে
https://www.academia.edu/26178936/Marquis_de_Condorcet_Meyeder_Nagarik_Adhikarer_Swikriti_Prasange_1790
কাউটস্কি: Kautsky, Karl (1897), ‘Vorwort’ in: Marx (1897).
কৃষ্ণরাজ এবং দেশমুখ: Krishnaraj, Maithreyi and Joy Deshmukh (1993), Gender in Economics: Theory and Practice. Delhi: Ajanta.
কেনেস্সে: Kenessey, Zoltan (1991), “Why Das Kapital remained unfinished”, pp. 119-133, in:
William Barber (ed.), Perspectives on the History of Economic Thought, Volume V: Themes in Pre-Classical, Classical and Marxian Economics, Cheltenham: Edward Elgar.
কেলি ও অন্যেরা: Kelly P, Thomas E, Doherty A, Harms T, Burke Ó, Gershuny J, et al. (2015), “Developing a Method to Test the Validity of 24 Hour Time Use Diaries Using Wearable Cameras: A Feasibility Pilot”, PLoS ONE 10 (12): e0142198:
https://journals.plos.org/plosone/article?id=10.1371/journal.pone.0142198
কোনেলি এবং কোঙ্গার (সম্পা.): Connelly, Rachel and Ebru Kongar (Eds.) (2017), Gender and Time Use in a Global Context: The Economics of Employment and Unpaid Labor; New York: Palgrave Macmillan.
কোভালেভস্কি: Ковалевский, Максим Максимович (1879), Общинное землевладение, причины, ход и последствия его разложения. Часть первая. Общинное землевладение в колониях и влияние поземельной политики на его разложение [এজমালি জমি-সম্পত্তি, তার অবক্ষয়ের কারণসমূহ, গতিধারা ও পরিণতি। প্রথম খণ্ড। উপনিবেশগুলির এজমালি জমি-সম্পত্তি এবং তার অবক্ষয়ের ওপর জমি-সম্পত্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রনীতির প্রভাব]; Москва: Типография Ф.Б. Миллера.
কোল্ফ: Kolff, Dirk H.A. (1990), Naukar, Rajput and Sepoy: The ethnohistory of the military labour market in Hindustan, 1450-1850; Cambridge etc.: Cambridge University Press.
ক্রেডার: Krader, Lawrence (1974), The Ethnological Notebooks of Karl Marx, 2nd ed., Assen: Van Gorcum.
ক্লার্ক: Clarke, Desmond M. (2013), The Equality of Sexes: Three Feminist Texts of the Seventeenth Century, Oxford: Oxford University Press.
গাগ্লিয়ারদোনে: Gagliardone, Laura (2015), Women’s Allocation of Time in India, Indonesia, and China. Published by the author.
গুর্নে: Gourney, Marie le Jars de (1594 ; 1641), Apology for the Woman Writing and other works; edited and translated into English by Richard Hillman and Colette Quesnel (2002); Chicago/London: The University of Chicago Press.
গোজ়েস, ওলিম্প দ্য (1791), মেয়েদের ও নাগরিকাদের অধিকারের ঘোষণাপত্র:
https://www.academia.edu/26179293/Olympe_de_Gouges_Meyeder_O_Nagarikader_Adhikarer_Ghoshonapotro_1791
গোল্ডশ্মিড-ক্লেরমোন্ট: Goldschmidt-Clermont, Luisella (1982), Unpaid Work in the Household: A review of economic evaluation methods. Geneva: ILO.
__ (1987), Economic evaluation of unpaid household work: Africa, Asia, Latin America and Oceania. Geneva: ILO.
গ্রিলি: Greeley, Henry T. (2016), The end of sex and the future of human reproduction; Cambridge, Massachusetts: Harvard University Press.
গ্রোসমান: Grossman, Henryk (1929), “Die Änderung des ursprünglichen Aufbauplans des Marxschen Kapital und ihre Ursachen” [“The Change in the Original Plan for Marx’s Capital and Its Causes”], Archiv für die Geschichte des Sozialismus und der Arbeiterbewegung, 14: 305–38; ইংরেজি অনুবাদ:
https://openresearch-repository.anu.edu.au/bitstream/1885/11124/1/Grossman_ChangeOriginalPlan2013.pdf
এবং, গ্রোসমান, 2018: 183-209.
__(2018), Henryk Grossman Works, Volume 1, Edited and Introduced by Rick Kuhn; Leiden/Boston: Brill.
ঘোষ: Ghosh, Peter (2017), “Constructing Marx in the History of Ideas”, Global Intellectual History, Volume 2, 2017, Issue 2: 124-168. এই নিবন্ধের পাঠভেদ:
https://ora.ox.ac.uk/objects/uuid:49ea606d-a554-441d-8640-6968ea7ce4ba/download_file?file_format=pdf&safe_filename=Marx%2Bin%2Bthe%2BHistory%2Bof%2BIdeas.pdf&type_of_work=Journal+article
চৌধুরি, ত্রিপাঠী, জর্জ ও অন্যেরা: Choudhary, Natasha, Asutosh Tripathy, Bina George et al (2009), Women’s Economic Contribution through Their Unpaid Household Work: The Case of India. Nagpur: Evangelical Social Action Forum and Health Bridge.
জ়ালাই: Szalai, Sándor / Alexander (1966), Trends in Contemporary Time Budget Research. Paris: UNESCO:
http://unesdoc.unesco.org/images/0015/001560/156021eb.pdf
__(অন্যদের সহায়তায় সম্পা.) (1972), The Use of Time: Daily activities of urban and suburban populations in twelve countries. The Hague: Mouton.
__(1975), “Women’s Time: Women in the light of contemporary time-budget research,” Futures, October: 385-99:
http://www.timeuse.org/files/cckpub/SzalaiA.Womens_Time.pdf
জ়িলানাওয়ালা: Zilanawala, Afshin (2013), Women’s Time Poverty: Differences by Family Structure, Employment and Gender Ideology. Doctoral Dissertation submitted at the Columbia University.
জ়ু ও নিশিমাতো: Xu, Haoliang and Tomoko Nishimoto (2018), Time-use surveys and statistics in Asia and the Pacific: A review of challenges and future directions; Bangkok: ILO Regional Office and UNDP Regional Hub.
ডঙ্গ এবং আন: Dong, Xiao-Yuan and Xinli An (2012), Gender Patterns and Value of Unpaid Work: Findings from China’s First Large-Scale Time Use Survey. Geneva:UNRISD.
ৎসুরকার: Zürcher, Erik-Jan (Ed.) (2013), Fighting for a Living: A Comparative History of Military Labour 1500-2000; Amsterdam: Amsterdam University Press.
থেরীগাথা (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ হতে প্রথম শতাব্দী), বাংলা অনুবাদ: ভিক্ষু শীলভদ্র (১৩৫৭/1950), কলিকাতা: মহাবোধি সোসাইটি। ডিজিটাল পুনর্মুদ্রণ: https://archive.org/details/dli.bengal.10689.18220/page/n3
থ্রোপ, টাইসন এবং নিলসেন: Thorpe, Jeremy, Rob Tyson, and Nicola Neilsen (2017), Understanding the Unpaid Economy; PwC Economics and Policy: Economic Views Australia.
দ্য’আম্ব্রোসিয়ো: D’Ambrosio, Ubiratan (1998), Literacy, Matheracy and Technoracy – The New Trivium for the Era of Technology: Paulo Freire Memorial Lecture delivered at the First Mathematics Education and Society Conference, Nottingham, UK, September 5-12, 1998:
https://www.academia.edu/25130564/Literacy_Matheracy_Technoracy
দোত্তি সানি: Dotti Sani, Giulia Maria (2018), Time Use in Domestic Settings throughout the Life Course: The Italian Case; Cham: Springer.
পাণ্ডে: Pande, Amrita (2014), Wombs in labor: transnational commercial surrogacy in India; New York: Columbia University Press.
ফান এল্ক: Van Elk, Martine (2017), Early Modern Women’s Writing: Domesticity, Privacy, and the Public Sphere in England and the Dutch Republic; Cham: Springer/Palgrave Macmillan.
ফান ডের লিন্ডেন ও হুবমান: Van der Linden, Marcel and Gerald Hubmann (Eds.) 2018, Marx’s Capital: An Unfinishable Project? Leiden and Boston: Brill. এই প্রকাশনা একটি সম্মেলনে পঠিত প্রতিবেদনগুলির একটি সংকলন। সেই সম্মেলনটি সম্বন্ধে জানার জন্য দেখুন: https://socialhistory.org/en/events/conference-marxs-capital-unfinished-and-unfinishable-project
ফান শুরমান: Van Schurman, Anna Maria (1641), Dissertatio De Ingenii Muliebris ad Doctrinam, & meliores Litteras aptitudine [লেখাপড়া করার ও শেখার ব্যাপারে মেয়েদের স্বাভাবিক ক্ষমতা সম্বন্ধে একটি অভিসন্দর্ভ]; ইংরেজি অনুবাদ: ক্লার্ক, 2013: 79-93।
ফুরিয়ের: Fourier, François Marie Charles (1808), Théorie des quatre mouvements et des destinées générales, Lyon. An English translation by Ian Patterson, edited by Gareth Stedman Jones and Ian Patterson (1996): The Theory of the Four Movements; Cambridge: Cambridge University Press.
ফোগেল: Vogel, Lise (1994), Domestic Labor Revisited.
http://biblioteca.clacso.edu.ar/ar/libros/cuba/if/marx/documentos/22/Domestic%20 Labor%20Revisited.pdf
__(2008), “Domestic-Labour Debate,”
in: Historical-Critical Dictionary of Marxism.
Hamburg: Argument Verlag.
বকশি: Baksi, Pradip (2012a), Literacy, matheracy and technoracy for justice and equity:
https://www.academia.edu/2955129/Literacy_Matheracy_and_Technoracy_for_Justice_and_Equity
__(2012b), A Note on Time UseStudies: https://www.academia.edu/3100436/A_Note_on_Time_Use_Studies
__(2013), A Partial and Partially Cyberdiscursive Bibliography Reflecting Karl Marx’s Encyclopedic Approach to the Study of History: https://www.academia.edu/5512520/A_Partial_and_Partially_Cyberdiscursive_Bibliography_Reflecting_Karl_Marxs_Encyclopedic_Approach_to_the_Study_of_History
__(2016), Reading Maximilien Rubel on Marx and Engels on Women’s Emancipation after about 20 years:
https://www.academia.edu/29322104/Reading_Maximilien_Rubel_on_Marx_and_Engels_on_Womens_Emancipation_after_about_20_years
বাডলেন্ডার: Budlender, Debbie (2007), A Critical Review of Selected Time Use Surveys.
Geneva: UNRISD.
__(2008), The Statistical Evidence on Care and Non-Care Work across Six Countries. Geneva: UNRISD.
বার: Barre, François Poullain de la (1673-1675 ), Three Cartesian feminist treatises; introductions and annotations by Marcelle Maistre Welch; translation into English by Vivien Bosley (2002); Chicago/London: The University of Chicago Press.
বারবাগাল্লো: Barbagallo, Camille (2016), The Political Economy Of Reproduction: Motherhood, Work and the Home in Neoliberal Britain; A thesis submitted in partial fulfilment of the requirements of the University of East London for the degree of Doctor of Philosophy.
বিশ্ব ব্যাঙ্ক: World Bank (2019), Global Economic Prospects, January 2019: Darkening Skies.Washington, DC: World Bank.
বুরে: Buret, Antoine-Eugène (1840), La misère des classes laborieuses en France et en Angleterre…2 T. [ফ্রান্সে ও ইংল্যান্ডে শ্রমজীবী শ্রেণীগুলির দুর্দশা…2 খণ্ডে]; Paris: Chez Paulin. মার্ক্সের বুরে (1840) হতে নেওয়া নোটের জন্য দেখুন: MEGA2 IV/2: 551-579 এবং, MEGA2 IV/3: 141-156.
ভিলব্রান্ট: Wilbrandt, Robert (1906), Die Frauenarbeit, ein Problem des Kapitalismus [মেয়েদের কাজ, পুঁজিবাদের একটি সমস্যা]. Leipzig und Berlin: Teubner.
__(1918), Karl Marx: Versuch einer Würdigung [কার্ল মার্ক্স: মূল্যায়ন করার একটি প্রয়াস], Leipzig und Berlin: Teubner.
মনুসংহিতা (আনুমানিক: খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২০০-২০০ খ্রিস্টাব্দ), শ্রীমৎ কল্লূকভট্ট-কৃত-টীকয়া, সম্পাদনা: পঞ্চানন তর্করত্ন (পুনর্মুদ্রণ, 1993); কলকাতা: সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার।
মর্গান: Morgan, Lewis Henry (1877), Ancient Society: or, Researches into the line of human progress from savagery through barbarism to civilization; Chicago: C.H. Kerr.
ম্যাককিয়োন: McKeon, Michael (2005), The Secret History of Domesticity: Public, Private, and the Division of Knowledge; Baltimore: The Johns Hopkins University Press.
মানব লিঙ্গানুপাত: Human Sex Ratio:
https://encyclopedia.pub/entry/28424#:~:text=The%20sex%20ratio%20for%20the,females%20(2021%20est.).
মার্ক্স: Marx, Karl (1844), Ökonomisch-philosophische Manuskripte (Erste Wiedergabe) |Heft I.| und (Zweite Wiedergabe) |Heft I.| [অর্থশাস্ত্রীয়-দার্শনিক পাণ্ডুলিপিসমূহ (প্রথম উপস্থাপনা): |প্রথম পুস্তিকা| এবং, (দ্বিতীয় উপস্থাপনা): |প্রথম পুস্তিকা|], MEGA2 I/2: 186-438.
__ (1859), Zur Kritik der politischen Ökonomie: Erstes Heft [রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচার: প্রথম পুস্তিকা] Berlin: Verlag von Franz Duncker. In: MEGA2 II/2 (1980), Text: 95-245.
__(1897), Zur Kritik der Politischen Ökonomie [রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিচার], herausgegeben von Karl Kautsky. Stuttgart: J.H.W. Dietz Nachf.
__(2001), ভারতবর্ষে জমি-সম্পর্কের ইতিহাস প্রসঙ্গে; কোলকাতা: বিশ্বকোষ:
https://www.academia.edu/24229353/Karl_Marx_Excerpts_and_Notes_On_the_History_of_Land_Relations_in_India_1879_Bengali_Translation_
মার্ক্স-এঙ্গেলস গবেষণায় অবদান, নতুন পর্ব, (2013): „Marx‘ Sechs-Bücher-Plan“. Eine Debatte [“মার্ক্সের ছয়টি বইয়ের পরিকল্পনা” সংক্রান্ত একটি বিতর্ক], Beiträge zur Marx-Engels-Forschung. Neue Folge 2013. Inhaltsverzeichnis [সূচিপত্র]: http://marxforschung.de/beitrage-zur-marx-engels-forschung-nf-2013/
MECW: কার্ল মার্ক্স/ ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস, সংকলিত রচনাবলি, ইংরেজি সংস্করণ: Karl Marx/Friedrich Engels, Collected Works (MECW), Volumes 1-50, 1975-2004, Moscow: Progress etc.
মেগা2 IV/32: MEGA2 IV/32 (1999): Vorauspublikation zu Band 32: Die Bibliotheken von Karl Marx und Friedrich Engels. Annotiertes Verzeichnis des ermittelten Bestandes. (মাএরস2 32-তম খণ্ডের প্রাক-প্রকাশনা: কার্ল মার্ক্সের ও ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার। সংগৃহীত গ্রন্থ-নিবন্ধাদির একটি সটীক ক্যাটালগ।) Bearbeitet von Hans-Peter Harstick, Richard Sperl und Hanno Strauß unter Mitarbeit von Gerald Hubmann, Karl-Ludwig König, Larisa Mis’kevich und Ninel’ Rumjanceva. Berlin: Akademie Verlag.
মো: Moe, Karine S. (Ed.) (2003), Women, Family and Work: writings on the Economics of Gender; Oxford, UK: Blackwell Publishing.
মুখোপাধ্যায়: Mukhopadhyay, Jayanta (2023), AI-ML and our society, last chapter in his: Off and on the track: Memoirs and reflections, Kharagpur: Cornerstone Publications [ছাপাখানায়].
রাজাভি: Razavi, Shahra (2007), The Political and Social Economy of Care in a Development Context: Conceptual Issues, Research Questions and Policy Options. Geneva: UNRISD.
রাজে: राजे, सुमन (2006), हिन्दी साहित्य का आधा इतिहास, तीसरा संस्करण, नयी दिल्ली: भारतीय ज्ञानपीठ।
রুবেল: Rubel, Maximilien (1973), “Marx, théoricien de l’anarchisme” [“মার্ক্স, নৈরাজ্যবাদের তত্ত্ববিদ”] , L’Europe en formation, no. 163-164, octobre-novembre.
লাপিডেস: Lapides, Kenneth (1998), Marx’s Wage Theory in Historical Perspective: Its Origins, Development and Interpretation, Westport, CT: Praeger Publishers.
লিটল/উইঞ্চ: Little, Ben / Alison Winch (2021), The New Patriarchs of Digital Capitalism: Celebrity Tech Founders and Networks of Power, London/New York: Routledge.
লুকাস্সেন ও ৎসুরকার: Lucassen Jan and Erik-Jan Zürcher (1998), “Conscription as Military Labour: The Historical Context”, International Review of Social History 43 (1998): 405–419.
লেবোউইটস: Lebowitz, Michael A. (1992), Beyond Capital: Marx’s Political Economy of the Working Class, New York: Macmillan.
শার্মেস: Charmes, Jacques (2015, updated in 2016), Time Use Across the World: Findings of a World Compilation of Time Use Surveys. UNDP Background Paper.
শ্রম ব্যুরো: Labour Bureau, Ministry of Labour and Employment, Government of India (2015), Report on Employment in Informal Sector and Conditions of Informal Employment (2013-14), Volume IV; Chandigarh: Labour Bureau.
শ্রীজা ও শিরকে: Srija, A. and Shrinivas V. Shirke (2014), “An Analysis of the Informal Labour Market in India”, CII: Economy Matters, September-October 2014: 40-46.
সুলিভান: Sullivan, Oriel (2018), “The Gendered Division of Household Labor”, in: Risman, Barbara J. et al (Eds.), Handbook of the Sociology of Gender; Second Edition: 376-392; Cham: Springer.
স্টেটসন: Stetson, Charlotte Perkins (1898), Women and Economics: A Study of the Economic Relation Between Men and Women as a Factor in Social Evolution. Boston: Small, Maynard & Company.
স্ত্রুমিলিন: Струмилин, Станислав Густавович (1923-1925) / 1964, К изучению быта трудящихся в СССР [সোভিয়েত ইউনিয়নে শ্রমজীবীদের জীবনযাত্রা প্রসঙ্গে ], Избранные произведения [নির্বাচিত রচনাবলি], T.3: 165 – 249. Москва: Наука.
স্মিথ: Smith, Fiona (2017), “Unpaid childcare is Australia’s largest Industry – it needs to be acknowledged”, The Guardian, 10 March 2017.
হিরওয়ে: Hirway, Indira (2016), Unpaid Work: An Obstacle to Gender Equality and Economic Empowerment including Women’s Labour Force Participation. Presentation at Bangkok, 25-27 May 2016.
চিত্র: গুগল
আরও পড়ুন…
ডা. স্মরজিৎ জানা, যৌনকর্মীদের দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি আর আমাদের যৌনজীবন
important