Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

নববর্ষ: ভারতের নানা রাজ্যে

তৃতীয় পর্ব

আদিবাসী জনজীবনে ঋতু, মাস, নববর্ষের ভূমিকা অপরিসীম। প্রসঙ্গত সাঁওতাল সমাজের কথা বলা যায়। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নববর্ষের সঙ্গে তাদের সমাজজীবন যে ওতপ্রোত, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, পরম্পরাক্রমে নতুন বছরের দিনটিতেই তাদের পুরনো গ্রামপঞ্চায়েতের বিদায় আর নতুন পঞ্চায়েত গঠনের দিন। প্রসঙ্গত, সাঁওতালদের নববর্ষ কিন্তু বৈশাখে নয়, মাঘ মাসে। সাঁওতালিদের কাছে মাঘ মাসটি ‘রাবাং’ নামে পরিচিত। এইদিন এক-এক গ্রামের মানুষ প্রত্যেকে তাদের স্ব স্ব গ্রামে পূজাস্থান অর্থাৎ ‘জীহের’-এ উপস্থিত হন। অনুষ্ঠিত হয় মাঘসীম বা মাঘকুনামী পরব। সারা বছর যাতে গ্রামে সুখশান্তি বজায় থাকে, এই প্রার্থনা করে মারাং বুরু ও অন্যান্য দেবদেবীর পুজো করা হয়। বলি দেওয়া হয় মুরগি।

গ্রামের বাইরে শস্যখেতে ওইদিন সাঁওতালদের আর-এক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। পূজিত হন ‘সাকেত বোঙ্গা’ অর্থাৎ সুখ-সমৃদ্ধির দেবতা। এখানেও মুরগিবলি প্রসিদ্ধ। আর যে-কোনও উৎসবকে কেন্দ্র করে অন্যান্য আদিবাসী সমাজে যেমন, সাঁওতালদের মধ্যেও তেমনি নাচগানের প্রথা রয়েছে। এর সঙ্গে আরও একটি লোকাচারও পালন করেন সাঁওতালরা। গোরু, মোষ, বলদ, ইত্যাদি গৃহপালিত পশুদের শরীরে নানান চিহ্ন এঁকে দেন এঁরা। নববর্ষ তাই সাঁওতালদের কাছে মানুষ ও পশু নির্বিশেষে উদযাপিত হওয়ার শুভদিন। আর এ মাসেই যে গ্রামপ্রধান নির্বাচনের প্রথা, তার মধ্যে হয়তো নিহিত আছে— শীত তার প্রকৃতিজ জাড়ের প্রভাবে পুরনোকে বিদায় জানায়, আনে আসন্ন বসন্তে নবীনকে আহ্বান করে। বসন্তে সাঁওতালদের বাহা পর্ব, সে অবশ্য অন্য প্রসঙ্গ। এখানে সে আলোচনার অবকাশ নেই।

ভারতের মত বিশাল দেশে অজস্র ধর্ম-বর্ণ-ভাষা ও সংস্কৃতির মিশ্র ও আশ্চর্য রঙ্গভূমি। তাই প্রদেশে প্রদেশে নববর্ষের ভিন্ন সুর, ভিন্নতর মাত্রা। পঞ্জাবে দিনটি যেমন ‘বৈশাখী’ হিসেবে পালিত হয়, তেমনই মারাঠিদের নববর্ষ চৈত্রের গোড়াতে হয়, যা ‘গুড়ি পওয়া’ নামে খ্যাত। মারাঠিদের বিশ্বাস, নববর্ষের পুণ্যদিনেই বিশ্বস্রষ্টা ব্রহ্মা বিশ্বসৃষ্টির কাজে হাত দিয়েছিলেন। পঞ্জাবের যে ‘বৈশাখী’, তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে শিখ-ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়। এ বিষয়ে একটু বিস্তৃত জানার অবকাশ রয়েছে।

মধ্যযুগের ভক্ত সাধক ও শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক (১৪৬৯-১৫৩৮) একেশ্বরবাদের ওপর ভিত্তি করে যে ধর্মমত গড়ে তোলেন, তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে একে একে নানা শিখগুরুর আবির্ভাব হতে থাকে। গুরু অঙ্গদ, অমরদাস, রামদাস, অর্জুন, হরগোবিন্দ, হররায়, হরকিষণ, তেগবাহাদুর এবং গোবিন্দ সিং— শিখদের এই দশজন গুরু। ভারতে তখন মোগল রাজত্ব। চতুর্থ গুরু রামদাসের ধর্ম বিষয়ে গভীরতা ও কৃচ্ছ্রতায় মুগ্ধ হয়ে সম্রাট আকবর তাঁকে অমৃতসরে যে জমি দান করেছিলেন, সেখানেই নির্মিত হয় শিখদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র অমৃতসর। পরবর্তী সম্রাটরা কিন্তু শিখদের সঙ্গে এই সৌহার্দ বজায় রাখেননি। পঞ্চম শিখগুরু অর্জুন জাহাঙ্গীরের আদেশে নিহত হন, কারণ অর্জুন জাহাঙ্গীরের বিদ্রোহী পুত্র খসরুকে সাহায্য করেছিলেন। গুরু অর্জুনের পুত্র হরগোবিন্দ শিখদের নিয়ে সামরিক বাহিনি গড়ে তুলেছিলেন। মোগলদের বিরুদ্ধে তিনি পাঠানদের স্বদলে আনার চেষ্টা করলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে এবং তিনি প্রথমে বন্দি হন ও পরে সপ্তম শিখগুরু হররায় শাজাহানের উত্তরাধিকার-সংক্রান্ত প্রশ্নে শাহজাদা দারাকে সমর্থন করায় ঔরঙ্গজেব তাঁর শিরশ্ছেদ করেন। পরবর্তী অর্থাৎ নবম গুরু তেগবাহাদুরও কাশ্মীরি ব্রাহ্মণদের স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে যখন ঔরঙ্গজেবের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার সমালোচনা করেছিলেন, তখন ঔরঙ্গজেব তাঁকে বন্দি করে দিল্লিতে নিয়ে আসেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আদেশ দেন। স্বভাবতই তেগবাহাদুরের কাছে তা মর্যাদাহানিকর বিবেচিত হয়েছিল। ঔরঙ্গজেব তাঁরও শিরশ্ছেদ করেন।

তিন-তিনজন শিখগুরুর হত্যা-পরবর্তী অর্থাৎ দশম বা শেষ শিখগুরু গোবিন্দ সিংকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি শিখ জাতিকে একটি প্রবল প্রতিস্পর্ধী যোদ্ধা জাতিতে পরিণত করার শপথ নেন। পিতা তেগবাহাদুরের হত্যা তাই শিখ সামরিক ইতিহাসে নবযুগ আনে। গোবিন্দ সিং শিখদের নিয়ে ‘খালসা’ বাহিনি গঠন করেন। আদেশ দেন প্রতিটি শিখকে অস্ত্রধারণ করবার। তাছাড়া শিখদের জন্য তিনি পাঁচটি ‘ক’-এরও প্রবর্তন করেন। সেগুলি হল— কেশ (লম্বা চুল), কঙ্কতী (চিরুনি), কৃপাণ (তরবারি), কচ্ছ (খাটো পাজামা) আর কড় (লোহার বালা)। ১৬৯৯ ইংরেজি সালের পয়লা বৈশাখ অর্থাৎ নববর্ষের দিনটিতেই ‘বৈশাখী’ উদযাপনের মাধ্যমে খালসা বা ‘Brotherhood of Saint Soldiers’ গঠিত হয়। তাই শিখদের কাছে ‘বৈশাখী’ তথা নববর্ষের দিনটি অনন্য মাত্রা নিয়ে আসে।

দক্ষিণ ভারতে শকাব্দের প্রথম দিনটিকেই নববর্ষ হিসেবে পালনের রীতি আছে। ‘যুগাডি’ বলা হয় দিনটিকে। অন্ধ্র, কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্রেও পয়লা চৈত্র দিনটি উদযাপিত হয়। সাতবাহন বংশীয় রাজা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী এই শকাব্দের প্রবর্তক। এখন যে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার পৃথিবীময় মান্যতা পেয়েছে, তার সঙ্গে এই ক্যালেন্ডারের পার্থক্য ৭৮ বছরের। সেই হিসেবে ২০২৩ সাল হল ১৯৪৫ শকাব্দ। দক্ষিণ ভারতে বিন্ধ্য এবং কাবেরী নদীতীরস্থ তিনটি রাজ্যে এই নববর্ষ পালিত হয়। এছাড়া রাজস্থান ও সিন্ধু প্রদেশের মানুষও এদিনটিকে নববর্ষের মর্যাদা দিয়েছেন। রাজস্থানিদের কাছে দিনটি ‘থাপনা’ নামে খ্যাত এবং সিন্ধিদের কাছে ‘চেতি চাঁদ’। তামিলনাড়ুতে দিনটি হল ‘পুথাণ্ডু’। এমনকি মণিপুরেও শকাব্দের প্রভাবে এই দিনটিকে নববর্ষ ধরা হয়ে থাকে। তাঁদের ভাষায় নববর্ষ হল ‘সাজিবু সংগমা পানবা’। প্রসঙ্গত, ‘উগাডি’ শব্দটি অন্ধ্রপ্রদেশে ব্যবহৃত হয়, আর কর্ণাটকে এর আলাদা অভিধা রয়েছে— ‘বেভু বেল্লা’। ওইদিন অন্ধ্র ও কর্ণাটকে ঘরকে আমপাতার মালা দিয়ে সজ্জিত করার রেওয়াজ। সিদ্ধিদাতা গণেশ আম্রপল্লবপ্রিয় (আমপাতা নয় কেবল, এই পুণ্য দিনটিতে তালমিছরি, কাঁচা আম, তেঁতুল, নিমফুল, লবণ আর কাঁচা লঙ্কার সমাহার ঘটানো হয়, যার বৈচিত্র্যপূর্ণ স্বাদ শৈশব থেকে বার্ধক্যের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত। আম্রপত্র ‘থোরানা’ বড় পবিত্র দক্ষিণীদের কাছে, এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীমাত্রেরই কাছে। যে-কোনও উৎসবে আম্রপল্লব ব্যবহৃত হতে দেখা যায় তাই। এমনকি বৌদ্ধদের কাছেও এই ফলটি পবিত্র, সম্ভবত বুদ্ধদেবের জন্ম বৈশাখে বলেই। তাঁর আবির্ভাবের দিনটিতে ভক্তরা তাঁকে আম্রফল নিবেদন করে থাকেন। জাতকের একটি কাহিনির নাম হল ‘আম্রজাতক’।

কিংবদন্তি অনুসারে ‘যুগাদি’ বা যুগ আদি চিহ্নিত শ্রীকৃষ্ণের প্রয়াণ ও সেই সঙ্গে দ্বাপর যুগ শেষ হয়ে কলিযুগের আবির্ভাবে। ইতিহাস, মিথ ও যুগ যুগ ধরে চলে আসা লোকাচারের পরম্পরাগত ঐতিহ্য বহন করে টিকে আছে বিভিন্ন স্থানিক নববর্ষের উদযাপিত ক্রিয়াকলাপ।

তামিলনাড়ুতে যে নববর্ষ পালিত হয়, তা কিন্তু পার্শ্ববর্তী রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের ‘উগাদি’ পালনের মত চৈত্র মাসে হয় না। হয় বৈশাখ মাসে। ‘পুথাণ্ডু’ নামে এই নববর্ষ তামিলনাড়ু ছাড়া শ্রীলঙ্কাতেও তামিলভাষীদের মধ্যে পালিত হয়। মালয়ালমভাষী কেরালাও বৈশাখে তাদের নববর্ষ পালন করে, যার নাম ‘বিষু’। অর্থ, সমান। কীসের সমান? এসময় সূর্য নিরক্ষবৃত্ত অতিক্রম করে বলে দিন ও রাত্রির পরিমাপ সমান থাকে। কেরালায় দিনটি উদযাপিত হয় কেরলবাসীর নিজস্ব প্রথায়। ‘কানি কানাল’ নামে এই লোকাচারটি পালিত হয় বাড়িতে এবং মন্দিরে। কথাটির অর্থ হল, ‘প্রথম দর্শন’। এই দিনে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই শুভ কিছু বস্তু দেখলে সারা বছর সুখ-সমৃদ্ধিতে কাটবে বলে কেরলবাসীদের বিশ্বাস। কী কী জিনিস? সাদা কাপড়, স্বর্ণালঙ্কার, গন্ধপুষ্প, বই, নারকেল ও কুমড়ো। ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে ঘুম ভাঙিয়ে চোখ বোজা অবস্থায় এসবে সজ্জিত থালার সামনে নিয়ে আসা হয় এই মাঙ্গলিক বস্তুনিচয় দেখানোর জন্য। কেরলে ওইদিন শিশু-কিশোরদের হাতে কিছু পয়সাকড়ি দেবার রীতি আছে। প্রথাটির নাম ‘বিষু কাইনিকম’। আশ্চর্যের বিষয়, বাঙালিদের মধ্যেও কিন্তু প্রথাটি আছে, যাকে বলে, ‘থৌল খরচ’। ‘থৌল’ বা ‘থোল’ কথাটির অর্থ ‘অল্প’, কিয়ৎ পরিমাণ। ছোটদের দেওয়া হবে, তা কি খুব বেশি পরিমাণে দেওয়া কাম্য? তাছাড়া তাদের খরচের অবকাশও তো অল্পই হয়ে থাকে। সেজন্যই থৌল খরচ।

নববর্ষে প্রায় সবাই নতুন বস্ত্রে সজ্জিত হয়, ভারতের প্রায় সব রাজ্যে। আর এ-উপলক্ষ্যে মেলাও অনুষ্ঠিত হয়, বসে গান-বাজনার আসর, নৃত্যানুষ্ঠান। বাজিও পোড়ানো হয়, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের নানা স্থানে।

মহারাষ্ট্রে যে নববর্ষ ঐতিহ্যিকভাবে পালিত হয় অন্ধ্র ও কর্ণাটকের ‘যুগাদি’-র দিনেই, সে অনুষ্ঠানের অপর একটি নাম রয়েছে— গুড়ি পাদোয়া (Gudi Padwa)। মারাঠি বিশ্বাস, ব্রহ্মা এই দিনটিতে বিশ্ব সৃষ্টি করেন। রামচন্দ্র রাবণকে বধ করে ওইদিন অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন বলেও বিশ্বাস অনেকের। সে যাই হোক, একই দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু (অধুনা চেন্নাই) আর কেরালায় নববর্ষ পালিত হচ্ছে বৈশাখে, আবার অন্ধ্র আর মহারাষ্ট্রে চৈত্র মাসে, এটা বেশ অদ্ভুত লাগে। অন্ধ্র-সংলগ্ন ওড়িশায় যে নববর্ষ তার নাম ‘মহাবিষুব সংক্রান্তি’। এটিও অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখ মাসে। এ দিনটিকে ‘পান সংক্রান্তি’-ও বলে, কারণ বহুবিধ ফলের রস ও দই খেয়ে উদ্‌যাপিত হয় দিনটি। হনুমান পুজো করেন ওড়িশাবাসী ওইদিনে, সমুদ্র-বেষ্টিত রাজ্যটি যাতে ঝড়জল থেকে রক্ষা পায়।

>>> ক্রমশ >>>
চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

পড়ুন, প্রথম পর্ব

প্রসঙ্গ বাংলা নববর্ষ

পড়ুন, দ্বিতীয় পর্ব

বাঙালিজীবনে নববর্ষ

পড়ুন, চতুর্থ পর্ব

নববর্ষ: দেশে দেশে

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »