
কল্যাণ সেনগুপ্তের ছোটগল্প
ছিঁড়ে যায় নাড়ি হেলিকপ্টার সার্ভিস কোম্পানির ক্যাপ্টেন কাপুর সবে আবুজার সশস্ত্র ডাকাতির অভিজ্ঞতাটা বলতে শুরু করেছেন ওদের পোর্ট হারকোর্টের ক্যান্টিনে বসে। এমন সময় দেবেন মৌলিকের

ছিঁড়ে যায় নাড়ি হেলিকপ্টার সার্ভিস কোম্পানির ক্যাপ্টেন কাপুর সবে আবুজার সশস্ত্র ডাকাতির অভিজ্ঞতাটা বলতে শুরু করেছেন ওদের পোর্ট হারকোর্টের ক্যান্টিনে বসে। এমন সময় দেবেন মৌলিকের

ভালভাষা উৎসব সংখ্যা ২০২৩|| বইয়ের নেশায় জানার আগ্রহে লোকটা চলাফেরায় অন্যমনস্ক, খ্যাপার মত হয়ে গেল। হাতে লাঠির বদলে উঠে এল বই, সর্বক্ষণের জন্যে। প্রথম তাগিদ ছিল বাবু বলেছে। পরে হয়ে গেল নতুন নতুন জানার আগ্রহ। বয়েসকালের জ্ঞানের নেশা হাজার নেশার ওপরে। লিখেছেন কল্যাণ সেনগুপ্ত।

India’s First Bengali Daily Journal. তালগোলে আশ্রম ব্যাপারটা একটু আবছা হয়ে গিয়েছিল। তাহলে বোধহয় এখন চাপা পড়েছে। আবার হাঁটাহাঁটি শুরু করেছেন। সেদিন সন্দীপ বাড়িতে, তরুণবাবু হেঁটে এসে বসার ঘরে বসেছেন। বউমা, ছেলে দুজনই টিভি দেখছে। তরুণবাবু আড়চোখে খেয়াল করলেন সেই বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে সিরিয়ালটা হচ্ছে। উনি আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছিলেন। এমন সময় ছেলে বলে উঠল, ‘বাবা, যেয়ো না। অনেকদিন ধরে তোমাকে একটা কথা বলব বলে ভাবছি কিন্তু কোনও না কোনও কারণে বলা হচ্ছে না।’

India’s First Bengali Daily Magazine. মুখে মাস্ক আর টুপি পরে নিয়েছি। আয়নায় নিজেকে দেখেও চিনতে পারছি না। বেশ বইতে পড়া ডিটেকটিভ মনে হচ্ছে। সকাল থেকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা ব্যথা। অবশেষে মাধুরী রায় বেরোল। আজ দেখতে আরও সুন্দরী লাগছে। সাধারণ একটা সুতির শাড়িতে লাল ডুরে। শাড়ির সঙ্গে লাল হাতা ব্লাউজ। কপালে কালচে লাল বড় টিপ। গলায় কালো পাথরের মালা। লম্বা, ছিপছিপে চেহারা। লম্বা উঁচু গলা। হেঁটে যাচ্ছে সোজা হয়ে সাদা রাজহাঁসের মত।

India’s First Bengali Daily Magazine. এ কী? প্রথমে পুনু চমকে ওঠে। তারপর শেখর আর সুরমার চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে যায়। অবিশ্বাস্য! স্টেজে দাঁড়িয়ে উনি তো সেই চামার অনল স্যার। কাকে স্টেজে তুলেছে এরা? এরা কি জানে ওর অন্য রূপ? একমুখ দাড়ি নিয়ে লাজুক মুখে মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। শেখর-সুরমার মনের ভিতরে উথালপাথাল হতে থাকে।

India’s First Bengali Daily Magazine. আজ আবার ‘টাকা ফেরত ডে’। এই এক অদ্ভুত দিন হয়েছে। প্রথম প্রথম মাইক করে পাড়ায় পাড়ায় বলা হয়েছিল পার্কে পার্কে দেওয়া হবে। তাতে এমন ভিড় হল পার্কের আশেপাশে রাত থেকে যে, বেশ কিছু মানুষ অফিসে যেতে পারল না, কিছু রুগি মারা গেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া গেল না। কলকাতায় জ্যামের রেকর্ড হয়ে গেল। প্রথমে জড়ো হল— তারপর যে যার জায়গায় গেল। সারাদিন এমনকি রাত অবধি জ্যাম রইল। তাই ঠিক হয়েছে এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে ফেরত টাকা।

India’s First Bengali Story Portal. উঠে গঙ্গার দিকের জানলাটা খুলে দাঁড়ালেন। চারিদিকে চেয়ে দেয়ালে হাত বুলিয়ে বললেন, ‘অনেক সংস্কার করা হয়েছে। দরজা, জানলা সেসব আর নেই। শুধু কাঠামোটাই আছে। এমনকি সেই লাল মেঝে যার ওপর আমি শেষ শুয়েছিলাম, সেটাও নেই। শুধু কিছু সামান্য চকচকে কাঠের আসবাব। আমারও মনে নেই এইসব তখন ছিল কিনা। এত পয়সা কি ছিল? মনে হয় না। যেমনকার তেমন রাখতেও আমাদের কার্পণ্য। সাহেবরা কিন্তু দেখেছি একেবারে হুবহু তুলে রাখে। মনে হবে লোকটা মনে হয় এখুনি উঠে গেছে ঘর থেকে।’

India’s First Bengali Story Portal. সেই প্রশ্নটা আবার তুললাম, ‘তাহলে কি আমাদের সম্পর্কগুলো নদীর শাখাপ্রশাখার মত বেঁচে থাকে? নদী যদি শুকিয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে শাখাও বুজে যাবে। আমি এখন থেকে স্বাগতার সঙ্গে দেখা হলে মুখ ফিরিয়ে চলে যাব? এইটাই কি মানুষের মানুষে সম্পর্কের ভিত?’ এতগুলো কথা বলে একটু দম নিলেন, ‘হ্যাঁ যেটা জিজ্ঞেস করা হয়নি। আপনি থাকেন কোথায়?’’

আমি দুই স্টেপ নিচে দাঁড়িয়ে দেখছি মাসি মিলিয়ে গেল ভিড়ের মধ্যে। কিছুক্ষণ বাদে কায়দা করে সেই ক্যালেন্ডার, মিষ্টির বাক্স নিয়ে বেরিয়ে এসে বললে, ‘কী অসভ্য লোক দেখ। যেতেই দিচ্ছে না। আমি তেমন দিলাম দুজনের কোমরে ক্যাতুকুতু। ব্যস চিচিং ফাঁক।’ এই বলে আমার হাতে সব তুলে দিতে গিয়ে পাশে চোখ পড়াতে মুখ ব্যাজার হয়ে গেল। কাঁদো কাঁদো স্বর ভেসে এল, ‘আমাদের সরবত?’ ওইখান থেকেই চেঁচাতে লাগল, ‘বাবলুবাবু, বাবলুবাবু সরবত?’

যে ঘরে আমি পড়াশুনা করতাম, শুতাম, দেখি সেই ঘরটা কাঠের পার্টিশন করে ছোট একফালি ঘর হয়েছে। দুটো জানলায় দামি পর্দা। সামনের টেবিল-চেয়ারও বেশ দামি। আমাদেরটা দামি ছিল না। শিয়ালদহ থেকে সস্তা কাঠের কেনা। পর্দাগুলো রংওঠা জ্যালজ্যালে কাপড়ের, তাও দুয়েক জায়গায় মায়ের সেলাই করা। ঘরে ঢুকেই অচেনা হয়ে গেল বাড়িটা। বুড়ো ভদ্রলোক বললেন, ‘জল খাবেন?’ মেয়েটি বিরক্ত হয়ে ভিতরে চলে গেছে। বৃদ্ধ আমার সম্মতি পেয়ে এক গ্লাস জল এনে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আসলে যে বাড়িতে প্রথম জ্ঞানের উদ্রেক হয়, সেই বাড়িটিই নিজের বাড়ি। বাকি সব আসাযাওয়া।’

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।