Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

গৌরী মৈত্রর কবিতাগুচ্ছ

মেলা বনাম মেলা

মেলাকে মেলা বলেই জানি
ভাবিও মেলা বলেই—
চাবিঢাকা গোপন রোদ্দুর এসে
জড়ো হয়, হাসে, গায়, নাচে,
তালপাতার ভেঁপু আর পাপড়
সার্কাস নয় তো যাত্রার দল—
তবু, এ মেলার মুখ চাপা
ওপাশে চাপা তার উচ্ছ্বাস,
এ মেলার বুকের ওপর পাটাতন,
সিন্থেটিক ব্যস্ততা আর কফির সিপ;
ওপাশে নির্জন এক মঞ্চে একা ঘোড়সওয়ার
মশালের আলোয় জ্বলছে তার শব্দ,
মেলায় লুকোনো যত খেতখামার,
মজুর চাষি সবাই জ্বলে ওঠে;
জ্বালিয়েছে এক এক করে কাঠি
ধরাবে সে বিড়ি
তাকে পাশ কাটিয়ে, এড়িয়ে চলে যায়
সোনালি লেবেল আঁটানো চশমা।

*
পেসমেকার

সে তো জানত সবই, বুঝত সবই
কিছু বলত না, বোঝাত না
কিছু একটা তাকেও বিঁধেছিল
যখন আলোকুচির ঝর্না থেকে
কয়েকটা শব্দ নিয়ে এসেছিল—
সেই মানুষটিকেও বিঁধেছিল কিছু, কোনও বোধ,
তবু এই জারিত সময়, তাকে বশীভূত করে,
কিছু কি বলা যায়?
কেননা ওই মধ্যস্থ সময়ের দুটো অবয়ব
তারা তো কেউ কাউকেই দেখে না;
কালো ভেনাসের চুল ওড়ে পথে-পথে
হারিয়ে যায় রৌদ্রের সাদা হাঁস;
তবু জমিয়ে রাখাই যে স্বভাব তার
নিয়ে বেড়ায় তাই সে: একটা পেসমেকার বুকে।

*
আত্মজ হে

কতটা এগিয়ে গেছ তুমি, তবু কিছুই দেখোনি আয়নায়?
অতল গহ্বর থেকে এক খিদে পেঁচিয়ে ধরেছিল তোমাকে,
যথেষ্ট বিষও উগরেছ, তবু থলেতে দু’একটা কাশবন কেন?
অন্ধকার ছড়ানো ভনভন মাছি কোন কৌশলে ঢেকেছিল খাঁচা,
আত্মজ হে, ছিলে সুরক্ষিত তবে কীসেরই জোরে?
অনাবিল ঘৃণা আর কাদার বিষাক্ত পোকাগুলি
ক্ষতচিহ্নের ওপর পরপর মল, রক্তবমির মাইলস্টোন,
আর ট্রেনের সিটে তোমার এই পোকাধরা শরীরটাই
আয়না বেয়ে উঠেছিল যেই, শিউরে চোখ বুজেছি আমি!
শুধু তুমিই দেখোনি কিছু, আয়নার খোলা বুকে তো কাপড় ছিল না পরানো।

*
হে মেধা আমার

চেঞ্জে গেলে মানুষ যেমন সুস্থ হয়ে ওঠে
সেইভাবে দ্রুত সেরে ওঠো, হে মেধা আমার,
দেখো, তোমারই জন্য, অপেক্ষায় অপেক্ষায়
আকাশগঙ্গা সমেত এই সৌরমণ্ডল আমার;
ওঠো, নাড়োচাড়ো তাকে, সাহসী আঙুলে ধরো,
টেনে নাও তাপ, নেশা, তারপর ঝেড়ে ফেলো ছাই,
শুধু তুমি তুলে নাও বাইনোকুলার, খুঁজে খুঁজে দেখো
ক্যানভাসে লুকানো সমস্ত অচেনা অজানা পথঘাট,
গভীর গাঢ় পাইন, বিকেলের চক্ররেল,
গোপন হাপিত্যেসের নথি, দূরে চলে যাওয়া বিবাদী বাগ,
আমাকে মনে করায়, হারিয়ে যাওয়া কিছু চিঠিপত্র,
আমাকে মনে করায়, ফেরত চলে যাওয়া কুরিয়ার
কাশ্মীরি শালের গালা বসানো এক পার্সেল
এসব ফিরিয়ে দিতে পারো শুধু তুমি, হে মেধা আমার।

*
সংশোধন

তখন অন্য এক অধ্যায়ে, পাহারা টপকে
টুক করে ঢুকে পড়েছিল ইতিহাস,
আর সিঁড়ির ওপর এলোমেলো গল্পের মেজাজ
তার লম্বা ছায়া নিয়ে দোলাচ্ছিল—
যেখানে হাত বাড়িয়ে, তোমাকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল
পরের পৃষ্ঠায় তুলে রাখা সেই অনুচ্ছেদ
কাটছাঁট, সংশোধিত, পরিমার্জিত কত!
আজ তাই তো তারাই ফিরে চলে যায়
সম্পর্কের দোরগোড়ায় যারা কালিং বেল
বাজিয়ে শুভেচ্ছার সুগন্ধি পাউচ নিয়ে এসেছিল।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 4 =

Recent Posts

মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনচক্রের মহাকাব্য নবান্ন: শ্রম, প্রকৃতি ও নবজন্মের দ্বান্দ্বিকতা

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব বসু: কালে কালান্তরে

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

Read More »
দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »