মেলা বনাম মেলা
মেলাকে মেলা বলেই জানি
ভাবিও মেলা বলেই—
চাবিঢাকা গোপন রোদ্দুর এসে
জড়ো হয়, হাসে, গায়, নাচে,
তালপাতার ভেঁপু আর পাপড়
সার্কাস নয় তো যাত্রার দল—
তবু, এ মেলার মুখ চাপা
ওপাশে চাপা তার উচ্ছ্বাস,
এ মেলার বুকের ওপর পাটাতন,
সিন্থেটিক ব্যস্ততা আর কফির সিপ;
ওপাশে নির্জন এক মঞ্চে একা ঘোড়সওয়ার
মশালের আলোয় জ্বলছে তার শব্দ,
মেলায় লুকোনো যত খেতখামার,
মজুর চাষি সবাই জ্বলে ওঠে;
জ্বালিয়েছে এক এক করে কাঠি
ধরাবে সে বিড়ি
তাকে পাশ কাটিয়ে, এড়িয়ে চলে যায়
সোনালি লেবেল আঁটানো চশমা।
*
পেসমেকার
সে তো জানত সবই, বুঝত সবই
কিছু বলত না, বোঝাত না
কিছু একটা তাকেও বিঁধেছিল
যখন আলোকুচির ঝর্না থেকে
কয়েকটা শব্দ নিয়ে এসেছিল—
সেই মানুষটিকেও বিঁধেছিল কিছু, কোনও বোধ,
তবু এই জারিত সময়, তাকে বশীভূত করে,
কিছু কি বলা যায়?
কেননা ওই মধ্যস্থ সময়ের দুটো অবয়ব
তারা তো কেউ কাউকেই দেখে না;
কালো ভেনাসের চুল ওড়ে পথে-পথে
হারিয়ে যায় রৌদ্রের সাদা হাঁস;
তবু জমিয়ে রাখাই যে স্বভাব তার
নিয়ে বেড়ায় তাই সে: একটা পেসমেকার বুকে।
*
আত্মজ হে
কতটা এগিয়ে গেছ তুমি, তবু কিছুই দেখোনি আয়নায়?
অতল গহ্বর থেকে এক খিদে পেঁচিয়ে ধরেছিল তোমাকে,
যথেষ্ট বিষও উগরেছ, তবু থলেতে দু’একটা কাশবন কেন?
অন্ধকার ছড়ানো ভনভন মাছি কোন কৌশলে ঢেকেছিল খাঁচা,
আত্মজ হে, ছিলে সুরক্ষিত তবে কীসেরই জোরে?
অনাবিল ঘৃণা আর কাদার বিষাক্ত পোকাগুলি
ক্ষতচিহ্নের ওপর পরপর মল, রক্তবমির মাইলস্টোন,
আর ট্রেনের সিটে তোমার এই পোকাধরা শরীরটাই
আয়না বেয়ে উঠেছিল যেই, শিউরে চোখ বুজেছি আমি!
শুধু তুমিই দেখোনি কিছু, আয়নার খোলা বুকে তো কাপড় ছিল না পরানো।
*
হে মেধা আমার
চেঞ্জে গেলে মানুষ যেমন সুস্থ হয়ে ওঠে
সেইভাবে দ্রুত সেরে ওঠো, হে মেধা আমার,
দেখো, তোমারই জন্য, অপেক্ষায় অপেক্ষায়
আকাশগঙ্গা সমেত এই সৌরমণ্ডল আমার;
ওঠো, নাড়োচাড়ো তাকে, সাহসী আঙুলে ধরো,
টেনে নাও তাপ, নেশা, তারপর ঝেড়ে ফেলো ছাই,
শুধু তুমি তুলে নাও বাইনোকুলার, খুঁজে খুঁজে দেখো
ক্যানভাসে লুকানো সমস্ত অচেনা অজানা পথঘাট,
গভীর গাঢ় পাইন, বিকেলের চক্ররেল,
গোপন হাপিত্যেসের নথি, দূরে চলে যাওয়া বিবাদী বাগ,
আমাকে মনে করায়, হারিয়ে যাওয়া কিছু চিঠিপত্র,
আমাকে মনে করায়, ফেরত চলে যাওয়া কুরিয়ার
কাশ্মীরি শালের গালা বসানো এক পার্সেল
এসব ফিরিয়ে দিতে পারো শুধু তুমি, হে মেধা আমার।
*
সংশোধন
তখন অন্য এক অধ্যায়ে, পাহারা টপকে
টুক করে ঢুকে পড়েছিল ইতিহাস,
আর সিঁড়ির ওপর এলোমেলো গল্পের মেজাজ
তার লম্বা ছায়া নিয়ে দোলাচ্ছিল—
যেখানে হাত বাড়িয়ে, তোমাকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল
পরের পৃষ্ঠায় তুলে রাখা সেই অনুচ্ছেদ
কাটছাঁট, সংশোধিত, পরিমার্জিত কত!
আজ তাই তো তারাই ফিরে চলে যায়
সম্পর্কের দোরগোড়ায় যারা কালিং বেল
বাজিয়ে শুভেচ্ছার সুগন্ধি পাউচ নিয়ে এসেছিল।