বইমেলা এখন কেবল বাঙালি বা ভারতীয়দের কাছেই নয়, মানবসভ্যতার কাছেই এক মহান উৎসবে পরিণত। কেবল বাংলাভাষীদের কথাই যদি ধরা যায়, কলকাতা, ঢাকা, আগরতলা, শিলচর তো বটেই, প্রত্যেক জেলাপর্যায়ে পর্যন্ত বইমেলা হচ্ছে প্রতিবছর। মেলাকে উপলক্ষ্য করে অজস্র বই বেরোয়, বিভিন্ন লেখকের, বিভিন্ন বিষয়ের। সাধারণ পাঠাগার রয়েছে অগুনতি, যেখানে বই কেনার বার্ষিক বরাদ্দ আছে। বইমেলায় এসে মানুষ বই কেনেন, নিন্দুকেরা যদিও নৈরাশ্যজনক চিত্র দেন। আগেকার চেয়ে তাই বই বিক্রির আশাপ্রদ সংবাদ প্রকাশকদের মাধ্যমে জানতে পারি আমরা। সব মিলিয়ে বইমেলা নামক বাঙালির নতুন এই পার্বণের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার্হ।
বইমেলা পার্বণের এই শুভলগ্নে কয়েকটি জরুরি প্রশ্ন মাথায় এসে ঘা মারে। যে বইগুলো মেলায় কেনা হল, বা পত্রপত্রিকাগুলো, তা কি সম্বৎসরে পড়া হয়ে ওঠে? মেলায় বই দেখতে দেখতে হয়তো নেশায় পড়ে বা বিহ্বলতাবশে কয়েকটি বই কেনা হল। কিন্তু নিয়মিত পাঠাভ্যাস তৈরি না হলে বইগুলো নিয়ে যে বিড়ম্বনা-ই! তা ছাড়া, পাঠ করবার জরুরি বইগুলো আছে তো আমার সংগ্রহে, না কেবল ভুষিমাল? গ্রন্থ পবিত্র। তবে সব গ্রন্থ-ই সমান পবিত্র নয়। এমনকি অপবিত্র গ্রন্থ-ও রয়েছে প্রচুর। চিন্তা ও রুচির বিকার ঘটায় যেসব বই, বইমেলায় ঘটা করে সেসব বই বাড়িতে বরণ করে না আনাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বেকনের বিখ্যাত উক্তি, বই প্রসঙ্গে,— Some books are to be tasted, others to be swallowed, and some few to be chewed and digested. ফলে গ্রন্থমাত্রেই গ্রন্থ নয়, বইমেলায় যাওয়ার আগে এ-বোধ তৈরি করে নেওয়া দরকার। একটি খারাপ বই ভাল বইয়ের থেকে ক্রমশ আমাদের দূরে সরিয়ে নেয়, কথাটি বিবেচনাযোগ্য। তাছাড়া, শরীর-পুষ্টির জন্য যেমন দরকার সুষম আহার, কেবল প্রোটিন বা শুধু কার্বোহাইড্রেট খাওয়াটা যেমন স্বাস্থ্যবিধিসম্মত নয়, পাঠক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য-ও তেমনই চাই নানা লেখকের নানা বিচিত্র বিষয়ের বই পড়া। দেখা যায়, কোনও কিশোর বা কিশোরী কেবল একজনমাত্র লেখকের বই-ই পড়ে চলেছে। অভিভাবকদের উচিত, তাদের এই একমুখীনতাকে বহুশাখায়িত করা।
প্রকৃত একটি বইকে কবি মিলটন তাঁর ‘Areopagitica’ গ্রন্থে আখ্যায়িত করেছেন ‘Life-blood’ বলে। একে বলেছেন ‘Master-spirit’, যা কি না ‘treasured up in purpose to a life beyond life.’ কথাগুলো মনে রাখবার।
জার্মান মনীষা গুটেনবার্গের হাত ধরে ছাপাখানার সূচনা। চিনে এর অনেক আগেই অবশ্য মুদ্রণযন্ত্রের সূচনা হয়েছিল।
একটি বই আজ আমাদের কাছে কতই না সহজলভ্য! তবে ছাপাখানার ইতিহাস তো সেদিনের। হাতে-লেখা পাণ্ডুলিপি পড়েই তো মানুষ গ্রন্থপাঠস্পৃহা মিটিয়েছে সুদীর্ঘকাল। মিশরের হায়ারোগ্লিফিক, ব্যাবিলনের কিউনিফর্ম লিপি বা প্রাচীন চিনের চিত্রলিপির ইতিহাস তো সে-কথাই বলে। আর লিপি আবিষ্কার না হলেও যে জ্ঞানচর্চার ব্যাঘাত হয় না, তার প্রমাণ তো বেদ। মেধা থেকে মেধান্তরে স্থানান্তরিত করেছে জ্ঞানকে স্রেফ কণ্ঠস্থ করে নিয়ে। সেজন্যই বেদের অন্য নাম ‘শ্রুতি’। কণ্ঠস্থিত এ মহাগ্রন্থ লিখিত রূপ পায় ঢের ঢের পরে, যাকে বিচিত্র পরিশুদ্ধ করে নিয়ে তার সংকলন বের করলেন মাক্সমুলার। ইন্টারনেটের যুগ নয় তখন, ছিল না দ্রুত কোনও সংযোগব্যবস্থা, তবু এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন তিনি। তুলনায় এখনকার মানুষ কী সহজেই না একটি বই হাতের কাছে পেয়ে যায়! এবং পায় বলেই সবসময় তার যথাযথ মূল্য বোঝে না।
গ্রন্থ, গ্রন্থকার, গ্রন্থপ্রীতি, গ্রন্থাগার আজকের নয়। পারস্যের সম্রাট দারায়ুসের যে গ্রন্থাগার ছিল, তাকে বিশ্বের বিস্ময় মনে করা হয় আজ-ও। দেশবিদেশ থেকে সংগৃহীত বই স্থান পেয়েছিল সেখানে। আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণের পথে পারস্য অভিযানের সময় ধ্বংস করলেন সেই পাঠাগার, পরিণত করলেন গ্রন্থাগারকে আস্তাবলে, তাঁর সৈন্যদের অশ্বশালা! পরিহাসের কথা, এই আলেকজান্ডার ছিলেন পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী আরিস্টটলের ছাত্র!
পৃথিবীতে গ্রন্থহত্যা, গ্রন্থকার হত্যার-ও দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। গ্রন্থরচনা করে নয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কারণেই নিহত হতে হয়েছিল আরিস্টটলের গুরু প্লেটোর গুরু সক্রেটিসকে। প্রায় মরতে বসেছিলেন গ্যালিলিও। ‘বিজ্ঞানের জন্য শহিদ’ আখ্যায় ভূষিত ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, সূর্য মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় লেখার অপরাধে। আর আজ তাঁর অধিকাংশ তত্ত্ব ও বই পরম সমাদরের সঙ্গে পাঠ করে মানুষ।
কত কারণে কত মহার্ঘ বই চিরতরে হারিয়ে গেছে। শ্রীচৈতন্য নিজের যাবতীয় লেখা গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। সামান্য কিছু রক্ষা পেয়েছে যা ‘শিক্ষাষ্টক’ নামে পরিচিত। ‘চর্যাপদ’-এর পুথি নেপালের রাজদরবারে লুকিয়ে ছিল। ভাগ্যিস চোখে পড়েছিল মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর! তেমনই রোমাঞ্চ জাগানো ইতিহাস ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’-এর পাণ্ডুলিপির আবিষ্কার বিষ্ণুপুরের কাকিল্যা গ্রামের গোয়ালঘর থেকে। আবিষ্কর্তা বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ। হারানো এই বইদুটির পুনঃপ্রাপ্তি-ই বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসকে প্রবীণত্ব দিয়েছে।
আর পাণ্ডুলিপি হারিয়ে নোবেল পুরস্কার হাতছাড়া হতে বসেছিল স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের। লন্ডনে মেট্রোস্টেশনে কবির একটি স্যুটকেস পুত্র রথীন্দ্রনাথের অনবধনতায় ট্রেনেই রয়ে যায়, যার ভিতরে ছিল ‘গীতাঞ্জলি’-র ইংরেজি অনুবাদের পাণ্ডুলিপি। পরে সেটি উদ্ধার হয়। এইভাবে এক মহান স্বস্তি এবং পরিশেষে মহত্তর ঘটনা, কবির নোবেল লাভ।
অন্যদিকে মেগাস্থিনিসের ভারত-বিষয়ক বই ‘ইন্ডিকা’-র কোনও অস্তিত্বই আজ আর নেই। কালের গর্ভে সে গ্রন্থ হারিয়ে গেছে। প্রাচীন মিশর নিয়ে গ্রিক ঐতিহাসিক ম্যানেথো-র লেখা বইটি সম্পর্কেও এক-ই বেদনা। পরবর্তীকালে অন্য ঐতিহাসিকেরা তাঁদের গ্রন্থে এই দুই ঐতিহাসিকের লেখার যে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, তা জোড়া দিয়ে দিয়ে মেগাস্থিনিস আর ম্যানেথোর ইতিহাসকে পুনর্নির্মাণ দেওয়া হয়েছে।
তেমনই সহস্রাধিক বছর ধরে বিভিন্ন সংস্কৃত কবির লেখায় ভাস-নামীয় নাট্যকারের কথা পাওয়া যেত। কালিদাস, বাণভট্ট ও জয়দেবের লেখায় ভাস-প্রশস্তি রয়েছে। অথচ আধুনিক কালে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত ভাসের কোনও রচনাই চাক্ষুষ করেননি কেউ। সহসা ওই বছরেই কেরালায় তাঁর তেরোটি নাটক আবিষ্কৃত হল। আবিষ্কর্তা পণ্ডিত গণপতি শাস্ত্রী। তেরোটি নাটক, অর্থাৎ বিপুল রচনাই বলা চলে একে। কালিদাস লিখেছেন তিনটি নাটক। শূদ্রক একটি, ভবভূতি দুটি। সংস্কৃত ভাষার সর্বাধিক নাট্যরচনা ভাসের। দেশেবিদেশে ভাসচর্চা, ভাসের নাটকের অভিনয় আজ বহুব্যাপ্ত।
গ্রন্থজগতের বিশালত্ব আমাদের ধারণার বাইরে। কেবল মিশরের কথাই যদি ধরা যায়, গত পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে কত অসংখ্য লেখা-ই না রচিত হয়েছে সেখানে! প্রাচীন মিশরের আদিতম ঐতিহাসিক নথি লিপিবদ্ধ আছে পার্লেমো পাথরে। এখানে মিশরের প্রথম রাজত্বের সূচনা থেকে পঞ্চম রাজবংশ পর্যন্ত প্রত্যেক রাজার প্রতিটি দিনের কার্যবিবরণী লিপিবদ্ধ আছে। এর পুরোটা পাওয়া গেলে মিশরের রাজা বা ফ্যারাওদের বিস্তৃত ইতিহাস দিনের আলোর মত স্বচ্ছ হয়ে উঠত। তাছাড়া রয়েছে তুরিন রাজকীয় ইতিহাস, যেখানে ৯৫৫ বছরের পুঙ্খানুপুঙ্খ ঘটনাবলি বিধৃত হয়ে আছে। হাজার হাজার পৃষ্ঠার দলিল, যা প্যাপিরাসের পাতায় লেখা। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন মিশর আক্রমণ করার সময় সেগুলো জাহাজবোঝাই করে স্বদেশ ফ্রান্সে পাঠিয়েছিলেন। জাহাজ যখন ফ্রান্স পৌঁছয়, দেখা গেল, অযত্নের ফলে প্যাপিরাসের পৃষ্ঠাগুলি ঝুরঝুরে হয়ে গিয়েছে। বছরের পর বছরের চেষ্টায়,অসীম ধৈর্য ও অধ্যবসায়ে সেগুলো জোড়া লাগাবার কাজে হাত দেন সেহার্থ নামে একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ ও তাঁর অধীনে একদল পণ্ডিত। এইভাবে মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধার করলেন জাঁ ফ্রাঁসোয়া শাপলিঁয়। মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধার করে ইনি অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন। আড়াই হাজার বছরের রাজত্বে মিশরীয়রা যা লিখে গেছেন, আবিষ্কৃত হয়েছে। বাকি সব-ই হারিয়ে গেছে মহাকালের গর্ভে। তবে যা পাওয়া গেছে, তা-ও বিস্ময়কর ও অতীব মূল্যবান।
কেবল মিশর নয়, চিন, আরব দেশ, ভারত, আজকের গ্রন্থজগৎ মাথা হেঁট করবে এই দেশগুলোর কাছে। দু-দুটো মহাকাব্য রচিত হল গ্রিসে, ভারতে আরও বৃহদায়তনিক আরও দুটো। ইরানেও মহাকবি ফেরদৌসী রচনা করলেন ‘শাহনামা’।
ব্যাবিলনে রচিত হল মহাকাব্য ‘গিলগামেশ’। ফিনল্যান্ডে ‘কালেভালা’। আজকের মানুষের সে মহাকাব্যিক মেজাজ কোথায়? লেখা দূরের কথা, সে মহাকাব্যগুলো পড়ি ক’জন? আমরা এখন কেবল সীমাবদ্ধ জল ও সীমিত সবুজে ঘোরাফেরা করি। বইমেলায় ঢোকার আগে এসব ভাবনাকে মাথায় ঠাঁই দিলে ভাল হয় না?
গ্রিস মিশর প্রাচীন ভারত আর চিন ছেড়েই দিই, বর্তমান ভারতের মত নানাভাষার দেশেই তো কী বিপুল পরিমাণ রচনারাজি! সারা বিশ্বে যে তিরিশ কোটির ওপর বাঙালির বাস, তাদের লেখালেখির পরিমাণও সুবিপুল। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় থেকে হরিশংকর জলদাস, মঞ্জু সরকার থেকে অভিজিৎ সেন— কত যে লেখকতালিকা! ভারতে চব্বিশটি ভাষা সরকারিভাবে স্বীকৃত। যেমন তামিল, তেলুগু, গুজরাতি, মারাঠি, মালয়ালম, হিন্দি, ওড়িয়া, গুরুমুখী ইত্যাদি। মালয়ালম লেখক ভৈকম মুহম্মদ বশীর, তামিল কবি সুব্রহম্মন্যম ভারতী, হিন্দি-উর্দুর প্রেমচাঁদ, কৃষণ চন্দর, মহাদেবী বর্মা, কুর অতুলায়ন হায়দার— এঁদের ধ্রুপদী লেখা বাদ দেব? তাকাষি শিবশংকর পিল্লাইয়ের ‘চেম্মিন’, ফকিরমোহন সেনাপতির ‘ন মণ আট গুণ্ঠ’, ইউ আর অনন্তমূর্তির ‘সংস্কার’, কালিন্দীচরণ পাণিগ্রাহীর ‘মাটির মনিষ’ তো বাংলা অনুবাদেই লভ্য। এসবের স্বাদ পাঠক হিসেবে গ্রহণ করব না আমরা? অসমিয়া লেখিকা মামণি রায়সম আর পাঞ্জাবি লেখিকা অমৃতা প্রীতমের সঙ্গে, ইন্দিরা পার্থসারথী আর ইসমত চুগতাইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে হবে মহাশ্বেতা দেবী, আশাপূর্ণা দেবী, নবনীতা দেবসেন ও বাণী বসু, সেলিনা হোসেনকে। তাহলেই উপমহাদেশের নারীলেখকদের ভাবনাচিন্তার জগৎকে আমরা আমাদের করপুটে পেতে পারব। নানক সিং, কর্তার সিং দুগ্গল, খুশবন্ত সিং পাঞ্জাবের, তেমনি রামবৃক্ষ বেণীপুরী, মৈথিলীশরণ গুপ্ত, ফণীশ্বরনাথ রেণু বা অজ্ঞেয়কে বাদ দিয়ে ভারতীয় সাহিত্যপাঠ নিতান্তই অসম্পূর্ণ থাকে, যেমন থাকে বিজয় তেণ্ডুলকর, অনিতা দেশাই, জয়শংকর প্রসাদ, রাহুল সাংকৃত্যায়নকে বাদ দিলে।
শিশুসাহিত্য-ও অবহেলার নয়। কেবল শিশুকিশোররাই নয়, বয়স্কদের-ও শিশুসাহিত্য নিয়মিত পড়া উচিত শৈশব আর সাবালকত্ব অর্জনের পার্থক্যটা বুঝতে। তাছাড়া বিশ্বসাহিত্যের রত্নখনি এই শিশুসাহিত্য,— যেখানে গ্রিসের ঈশপ আর তুরস্কের মোল্লা নাসিরউদ্দীন হাত ধরাধরি করে চলেন। কাহিনি পরিবেশনের ছলে সদুপদেশ দান একদিকে, অন্যদিকে, বিষ্ণুশর্মা বা ঈশপে যেমন, পশুপাখিকে চরিত্র হিসেবে এনে আমাদের প্রতিবেশী জীবজন্তুদের প্রতি সচেতনতা গড়ে তোলে। সুপ্রযুক্ত নীতিবাক্যগুলো এসব শিশুকিশোরপাঠ্য বইয়ে মণিমুক্তার মত গ্রথিত, যা সারাজীবনের আলোকবর্তিকা আমাদের। বিষ্ণুশর্মা ‘পঞ্চতন্ত্র’-তে লিখছেন:
‘আদেয়স্য প্রদেয়স্য কর্তব্যস্য চ কর্মণঃ/ ক্ষিপ্রমক্রিয়মানস্য কালঃ হরতি তদ্রসম্’। অর্থাৎ যা পেতে হবে বা যা দিতে হবে, অথবা যে কর্তব্যকর্ম করতে হবে, দ্রুত তা করে না ফেললে কাল, সময়, তার রস হরণ করে।
আর-একটি: ‘উপদেশো হি মূর্খানাং প্রকোপায়, ন শান্তয়ে’। অর্থ, উপদেশ দিলে মূর্খরা শান্ত হয়ে তা অনুধাবন করে না, বরং রেগে যায়।
শিশুসাহিত্য রূপকথা গল্পগাথা মনীষীজীবনী কল্পকাহিনি অ্যাডভেঞ্চার মিলিয়ে বহুমুখী। গ্যালিভার্স ট্রাভেলস রয়েছে একপ্রান্তে তো এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড এডওয়ার্ড লিয়ার রাউলিং অন্যপ্রান্তে। বাংলাতেও কি কম? রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’, ‘রাজর্ষি’ বা ‘শিশু ভোলানাথ’ আর ‘সে’, অবনীন্দ্রনাথের ‘শকুন্তলা’, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’ আর ‘হযবরল’ সামান্য উদাহরণ। আছেন শিবরাম-নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়-নারায়ণ দেবনাথ-সত্যজিৎ রায়-হুমায়ূন আহমেদ-জাফর ইকবাল।
বই হোক প্রতিদিনের পথ্য। বইমেলায় যাওয়া ও বই কেনা যেন আমাদের প্রতিমাসেই এক-আধটা বই কেনায় উদ্বুদ্ধ করে। বই, সেইসঙ্গে দু-একটি ম্যাগাজিন। ঘরের শিশুকিশোরদের জন্য-ও যেন বরাদ্দ থাকে অন্তত একটি ম্যাগাজিন, প্রত্যেক মাসে। বইমেলার প্রকৃত সার্থকতা সেখানে। আর আমরা কি বইমেলার একটি দিনকে গ্রন্থ উপহার দিবসরূপে চিহ্নিত করতে পারি না? ওইদিন আমরা অন্তত দুটি বই কিনব, আমাদের অতি প্রিয় দুজনকে উপহার দেবার জন্য। তাহলে বই বিক্রির জগৎটায় আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে। নিতান্ত ইউটোপিয়া?