Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ডেকামেরন: প্রথম দিনের প্রথম গল্প

জোভান্নি বোক্কাচ্চো

অনুবাদ: দিবাকর পুরকায়স্থ

মাসিয়েত্ত ফ্রাঁজেসি ফ্রান্সের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ব্যাঙ্কিং ব্যবসায়েও হাত লাগিয়েছিলেন। একবার তিনি তৎকালীন রাজার ভাই মঁসিয়ে চার্লস লেকল্যান্ডের সাথে টাসকানি নগরে যেতে প্রস্তুত হলেন। কিন্তু তার ব্যবসা এত ছড়ানো ছিল যে একা হাতে সামলানো যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় কোথাও যাওয়া অসুবিধাজনক। তাই তিনি বিভিন্ন কাজের জন্য আলাদা আলাদা লোক নিয়োগ করলেন। কিন্তু ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে আদায়ের জন্য একজন বিশেষ লোকের দরকার পড়ল, বিশেষত বারগুন্ডি নামে এক জায়গায়, যেখানে তিনি অনেক ঋণ দিয়েছিলেন কিন্তু ওখান থেকে আদায় আসছিল না। বারগুন্ডির লোকগুলো মোটেই বিশ্বস্ত নয় উপরন্তু ঝগড়ুটে এবং মামলাবাজ। মাসিয়েত্ত ফ্রাঁজেসি অনেক চিন্তাভাবনা করলেন। এমন একজন লোক নিয়োগ করা প্রয়োজন যে শক্ত হাতে এই ঋণ আদায় করবে।

ওর হঠাৎ মনে পড়ল এক উকিলের কথা। মাস্টার চাপারেল্লো নামে ওই উকিল ওর প্যারির বাসায় মাঝে মাঝে আসতেন। তার নাম চাপারেল্লো, তার অর্থ ‘মালা’ এবং অনেকে তার নাম বদলে চিয়াপেলেট্টো করে দিয়েছিল এবং খুব কম লোকই জানত যে তার আসল নাম মাস্টার চাপারেল্লো।

আমরা এখন অন্য সবার মত ওকে চিয়াপেলেট্টো বলে উল্লেখ করব।

এই উকিল চিয়াপেলেট্টো সম্পর্কে কিছু পূর্ব কথা এখানে বলে নেয়া আবশ্যক, তাতে তার সম্বন্ধে পাঠকদের সম্যক ধারণা হবে।

চিয়াপেলেট্টো ক’টা মামলা সৎভাবে শুদ্ধ কাগজপত্র দিয়ে জিতেছেন তার চিন্তা করলে তিনি নিজেই লজ্জা পাবেন। কারণ সারা জীবন মিথ্যা এবং জালিয়াতি করে কাগজপত্র তৈরি করে মামলা জেতা ওনার বাঁহাতের খেলা ছিল। তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিতেও পারঙ্গম। তাছাড়া তিনি ঘোর নাস্তিক এবং কোনও ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন না। তাই আদালতে দাঁড়িয়ে বাইবেল ছুঁয়ে শপথ গ্রহণ করেও অবিরাম মিথ্যা সাক্ষ্য দিতেন।

চিয়াপেলেট্টোর মহিলা আসক্তি ছিল চরম এবং কুকুর যেরকম বংশদণ্ড তারিয়ে তারিয়ে চিবিয়ে আনন্দ লাভ করে, মহিলাদের ওপর তিনি তদ্রূপ ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিলেন। মামলা চলাকালে প্রতিপক্ষের তরফে যারা সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত হত, তাদেরকে নিশাকালে তিনি নিজে প্রচণ্ড প্রহার করতেন এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই প্রহারে দু-একজনের ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছিল শোনা যায় কিন্তু প্রমাণাভাবে ওর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

ওর জুয়া খেলা এবং মদ্যপানে আসক্তি কোনও অংশে কম ছিল না এবং অতিরিক্ত মদ্যপান করে তিনি দু-একবার নানা কেলোতে জড়িয়ে পড়েন কিন্তু অপরিসীম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পার পেয়ে যান।

এরূপ একজন গুণবান লোককে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য নিযুক্ত করতে পেরে মাসিয়েত্ত ফ্রাঁজেসি খুব খুশি হলেন এবং দুজনের মধ্যে একটা দলিল তৈরি করলেন যে, যা কিছু আদায় হবে তার একটা ভাল অংশ চিয়াপেলেট্টো পাবেন।

এই ব্যবস্থা করে মাসিয়েত্ত ফ্রাঁজেসি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে টাসকানি যাত্রা করলেন। এদিকে চিয়াপেলেট্টো মহা আনন্দে বারগুন্ডি চলে গেলেন। বারগুন্ডিতে এসে তিনি বীরবিক্রমে খাতকদের থেকে টাকা আদায় করতে লাগলেন। এভাবে কয়েকমাস কেটে গেল।

কথায় বলে, রতনে রতন চেনে। চিয়াপেলেট্টো বারগুন্ডিতে তেজারতি কারবার করে কুখ্যাত কাবুলিওয়ালা-সদৃশ দুই ভাইয়ের বাড়িতে থাকছিলেন। এখানে অতিরিক্ত পরিশ্রমে তিনি হঠাৎ ভীষণ অসুস্থ হয়ে শয্যা নিলেন। দুই ভাই প্রথমে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র করল, ঔষধপথ্যও চলতে লাগল কিন্তু যখন সাতদিন পার হয়ে গেল আর চিয়াপেলেট্টোর রোগের কোনও উন্নতির চিহ্ন দেখা গেল না তখন দুই ভাই চিন্তিত হল। একসময় দুজনে রোগী যেন শুনতে না পায় এরকম করে জনান্তিকে আলোচনা করতে লাগল।

এক ভাই বলল, ‘একে নিয়ে কী করি? এখন আশ্রিতকে যদি বাইরে ফেলে দিই তবে পাড়ায় আমাদের বদনাম হবে।’

আর-একজন বলল, ‘না না, কক্ষনো নয়। আমাদের বিরোধী গোষ্ঠী জানতে পারলে আমাদের ঘর আক্রমণ করে আমাদের সম্পত্তি লুট করতে পারে। কিন্তু এভাবে একে ক’দিন পালতে থাকব?’

চিয়াপেলেট্টোর কান কুকুরের থেকে পাতলা। ও ঘর থেকে দুই ভাইয়ের কথাবার্তা হয় শুনতে পেলেন।

তিনি ভাইদের ডেকে বললেন, ‘তোমাদের সব কথা আমি শুনতে পেয়েছি। তোমাদের কোনও ভয় নেই। আমি তোমাদের ক্ষতি করব না। তোমরা একজন পাদ্রীকে ডেকে আনো। আমি যাজকের সামনে পাপ স্বীকার করে ক্ষমা চাইব।

এরকম দুষ্টের এরূপ মানসিক বদলের কথা শুনে দুই ভাই যারপরনাই চমৎকৃত হল। কিন্তু কথামত ওরা শহরের গির্জা থেকে একজন বিশিষ্ট যাজককে ডেকে আনল।

ধর্মগুরু এসে চিয়াপেলেট্টোর শারীরিক অবস্থা খুব একটা আশাপ্রদ দেখলেন না। তিনি প্রথামত রোগীকে জিগ্যেস করলেন, ‘আপনি প্রভুর নিকট প্রার্থনা কতদিন পর পর করেন?’

যদিও চিয়াপেলেট্টো জীবনে কোনওদিন প্রার্থনা করা তো দূরের কথা এসবে বিশ্বাস অব্দি করেন না, কিন্তু এখন তিনি অম্লানবদনে বললেন, ‘প্রার্থনা তো রোজ দুবেলা করি, শুধু গত আটদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে একদিনও প্রভুর শরণ নিতে পারিনি। এর জন্য কি করুণাময় প্রভু আমাকে ক্ষমা করবেন?’

ধর্মগুরু খুব খুশি হয়ে বললেন, ‘ঈশ্বর আপনার মত লোকের মঙ্গল করবেন। এখন আপনার কী কী পাপের কথা স্বীকার করবেন বলুন?’

চিয়াপেলেট্টো বললেন, ‘হে মহাত্মন! আমি ঠিকভাবে হয়তো বলতে পারব না। আপনি বরং প্রশ্ন করুন, আমি জবাবের মাধ্যমে আমার পাপ স্বীকার করব।’

যাজক বললেন, ‘সেই ভাল। আচ্ছা প্রথমে বলুন, আপনি কোনও নারীর প্রতি কখনও আসক্ত হয়েছেন?’

দুষ্টর নারীর ওপর আসক্তির কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করে বললেন, ‘হে গুরুদেব! প্রভু সাক্ষী, আমি এক নারীকেই জানি। তিনি আমার মা। আমি তার জঠর থেকে বেরোনোর সময় যে কৌমার্য নিয়ে বেরিয়েছিলাম এখনও তাই আছি। আমি বিয়ে করিনি।’

যাজক যারপরনাই তুষ্ট হয়ে বললেন, ‘আপনি সত্যিই এক মহাত্মা। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করবেন। এখন বলুন তো, আপনি কখনও খাবারের ওপর লোভ করেছেন কখনও রাক্ষসোচিত আচরণ করেছেন?’

চিয়াপেলেট্টো প্রায় কেঁদে ফেললেন। বললেন, ‘হে মহান! আমি সত্যিই এই পাপে পাপী। আমি দিনে একটুকরো রুটি খাই আর জল খাই। কখনও মদ্যপরা যেরকম লোভ করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মদ খেয়ে নেয়, আমিও সেরূপ প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল খেয়ে নিয়েছি। আর ওই গ্রামের মহিলারা যখন বিকেলে সালাড তৈরি করার শাক নিয়ে ঘরে যায় আমার বাড়ির সামনে দিয়ে, আমি লোভীর দৃষ্টিতে ওই শাকসবজির দিকে তাকিয়েছি।’

‘এসব কোনও পাপের পর্যায়ে পড়ে না। এসব ছোট ভুল সবাই করে। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করবেন। এখন বলুন তো দেখি, একজন উকিল হয়ে কখনও মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন?’ যাজক প্রশ্ন করেন।

যদিও মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে মামলা জেতা ওর অতিপরিচিত পন্থা ছিল কিন্তু দুষ্ট চিয়াপেলেট্টো তার ধারেকাছে গেলেন না। উনি বলতে লাগলেন, ‘হে মহাত্মা! আমি একবার শুধু মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে ঘোর পাপে নিমজ্জিত হয়েছি। আমার প্রতিবেশী একবার মদ্যপান করে ওর পত্নীকে ভীষণ মারধর করছিল। এই দেখে আমি ওই মহিলাটির ওপর দয়াপরবশ হয়ে ওর পিতাকে মিথ্যা বলি যে, লোকটি ওর স্ত্রীকে রোজ প্রচণ্ড প্রহার করে। ওই মহিলাকে রক্ষা করার জন্য মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে পাপ করেছি আমি।’

‘এটা কোনও পাপ নয়। অন্যকে রক্ষার জন্য অনেকে এরূপ করে। আপনি মহান আত্মা। এবার বলুন তো, উকিল হিসাবে আপনি যা উপার্জন করেছেন তার সদর্থক খরচ কীভাবে করেছেন?’

অগাধ অর্থ যদিও মদ, জুয়া আর নারীর পেছনে খরচ করে আসছেন সারা জীবন তথাপি চিয়াপেলেট্টো অম্লানবদনে বললেন, ‘আমি যেটুকু উপার্জন করেছি তার অর্ধেক সর্বদা গরিব-দুঃখীদের এবং গির্জাতে দান করেছি আর বাকি অর্ধেক দিয়ে কায়ক্লেশে দিন গুজরান করেছি।’

ধর্মযাজক বললেন, ‘আপনি উকিল হিসাবে কার্যকালে কখনও উৎকোচ গ্রহণ করেছেন কি?’

ছলছল চোখে পাপিষ্ঠ বললেন, ‘ঈশ্বর সাক্ষী, একবার এক মোয়াক্কেল আমাকে অর্থ দিলে আমি না গুনে বাক্সে রেখে দিই। পরদিন দেখি ওখানে আমার প্রাপ্য টাকা থেকে চার টাকা বেশি। আমি লোকটির জন্য এক বৎসর অপেক্ষা করি এবং পরে ওই চার টাকা গির্জায় দান করি।’

‘সাধু সাধু! আপনি সত্যই মহান। আর কিছু কি আপনার বলার আছে?’ ধর্মগুরু অভিভূত।

‘আমি বহু পাপে পাপী প্রভু। আমি একদিন ভুলক্রমে গির্জার মাটিতে থুথু ফেলেছি। এ পাপ থেকে আমার কি মুক্তি হবে?’ দুষ্ট চিয়াপেলেট্টোর চোখে জল।

‘এসব কি পাপ? আমরা গুরু-পুরোহিতরা অনেক সময় গির্জার মাটিতে থুতু ফেলি। এসব ছোট পাপ।’ গুরু সান্ত্বনা দিতে লাগলেন আর দুষ্ট পাপী হঠাৎ হু হু করে কেঁদে ফেললেন।

‘আমার মুক্তি নেই প্রভু। আমি ছোটবেলায় আমার জন্মদাত্রী মাকে একবার গালি দিয়েছিলাম। এ যে বড় পাপ। আমার কী হবে প্রভু?’

যাজক দেখলেন না যে পাপিষ্ঠর এক চোখে জল অন্য চোখে হাসি। উনি বললেন, ‘আপনি সত্যিই মহান আত্মা। বালকের কোনও অপরাধ ঈশ্বরের দরবারে অপরাধ বলে গণ্য হয় না। কিন্তু আপনার শরীরের যে অবস্থা দেখছি তাতে এখানে যদি আপনার ভালমন্দ কিছু হয়ে যায় তবে আপনাকে যদি আমরা গির্জার মাটিতে সমাধিস্থ করি তবে আপনার মতামত কী?’

‘আমি তো সর্বদা গির্জার মাটিতে সমাধিস্থ হতে চেয়েছিলাম। পরম করুণাময় প্রভুর কাছে থাকার চেয়ে ভাল আর কী আছে?’

‘তবে তাই হবে।’ বলে ধর্মযাজক বিদায় নিলেন। আর সত্যি সত্যি দুষ্ট চিয়াপেলেট্টোর ভবলীলা ক’দিন পরই বারগুন্ডিতে সাঙ্গ হল। স্থানীয় গির্জার কর্তাব্যক্তিরা প্রবল জয়ধ্বনি সহ সভা করে বলেন যে, এরূপ মহান সাধুপুরুষ এতদঞ্চলে কখনও পাওয়া যায়নি এবং মহাসমারোহে চিয়াপেলেট্টোকে গির্জার ভেতরে সমাধিস্থ করা হয়। তদুপরি লোকজনের অনুরোধে চিয়াপেলেট্টোকে ‘সাধু চিয়াপেলেট্টো’ রূপে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ইতালিতে মহামান্য পোপের নিকট আবেদন করা হল। এইরূপে এক দুষ্ট নিজ দুষ্টবুদ্ধি দ্বারা মৃত্যুর পর সমাজে এক মহাত্মারূপে পরিগণিত হল।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

***

লেখক পরিচিতি

জোভান্নি বোক্কাচ্চো (জন্ম: শ্রটালদো অথবা ফ্লোরেন্স জুন/জুলাই ১৩১৩– মৃত্যু: শ্রটালদো, ২১ ডিসেম্বর ১৩৭৫) একজন বিখ্যাত ইতালীয় লেখক এবং কবি। বোক্কাচ্চো ছিলেন ১৪০০ শতকের সফলতম ইতালীয় এবং ইউরোপীয় ঔপন্যাসিকদের একজন। তাঁর লেখা ডেকামেরন যা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এই বইতে দশ জন‌ ব্যক্তি রানিকে প্রতিদিন একটি করে গল্প; মোট দশদিন ধরে শোনায়। ১০x১০, মোট একশটি ছোটগল্প নিয়ে এই ডেকামেরন লেখা হয়েছে। এই গল্পগুলোতে তখনকার ইউরোপীয় সমাজ, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা সব কিছু প্রতিফলিত হয়েছে। বোক্কাচ্চোর কাজের প্রভাব শুধুমাত্র ইতালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং ইউরোপের বাকি অংশে প্রসারিত হয়েছিল, ইংরেজি সাহিত্যের একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব জেফ্রি চসারের মত লেখকদের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। কিছু পণ্ডিতের বিবেচনায় তিনি তাঁর সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ ইউরোপীয় গদ্যকার।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »