Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

পোলিয়ো-মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন এখন ‘তালগাছের আড়াই হাত’

‘তালগাছের আড়াই হাত’! এমনই অবস্থা বিশ্বজুড়ে পোলিয়ো নির্মূলকরণ কর্মসূচির। উল্লেখিত প্রবাদের সার হল, গোটা তালগাছ উজিয়ে শীর্ষদেশে চড়ার মুখেই সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়। পোলিয়ো-মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্নও এখন আটকে আছে ওই তালগাছের আড়াই হাতে গিয়ে। সৌজন্যে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। ভারতীয় উপমহাদেশের এই দুই দেশে আজও পোলিয়ো নামক মারাত্মক ভাইরাসটি নিকেশ করা যায়নি। তবে ইউনিসেফ এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু)-এর লেগে থাকার সুবাদে দেশ দু’টিতে পোলিয়ো-সন্ত্রাসী জীবাণুরা রীতিমত কোণঠাসা অবস্থায় ছিল। কিন্তু করোনা অতিমহামারী ও তজ্জনিত বিধিনিষেধ এবং আফগানিস্তানের শাসনক্ষমতার নাটকীয় পালাবদলের ঘটনা গোটা প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিয়েছে।
কী এই পোলিয়ো? এই বিপজ্জনক রোগটি একসময় মহামারীর আকার ধারণ করে। গোটা দুনিয়ায় অসংখ্য শিশু পঙ্গুত্বের শিকার হয়। দরিদ্র দেশগুলিতে অপুষ্টিজনিত কারণে এর প্রাদুর্ভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। পাঁচবছরের কম বয়সী শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হতে থাকে। বেশিরভাগ শিশুর পা পোলিয়ো ভাইরাসের প্রভাবে প্যারালাইসড হয়ে পড়ে। আবার আক্রান্তদের প্রায় দশ শতাংশ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগে মারা যায়। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে বিশ্বব্যাপী একযোগে পোলিয়ো টিকাকরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়। সরকারি ও অসরকারি অর্থানুকূল্যে নিখরচায় এবং কার্যত ঘরে বসে পাওয়া এই পোলিয়ো টিকা প্রথমে পাঁচবছর বয়স পর্যন্ত সব শিশুকে একযোগে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না একটি বিশেষ ধর্মীয় শিবিরের নেতৃত্বের অপপ্রচারের ফলে। পরে অবশ্য ধীরে ধীরে বাধা অনেকটাই কেটে যায়। তবে কয়েকটি দেশের দায়সারা স্বাস্থ্যনীতি এবং অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন ব্যবস্থা বিশ্বের পোলিয়ো-মুক্তির চেষ্টায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। হাল ছাড়েনি ইউনিসেফ এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন। ফলও মিলেছে হাতেনাতে।
জানা গিয়েছে, ১৯৮৮-তে যেখানে ৩৫০০০০ জন পোলিয়ো আক্রান্ত ছিল, সেখানে বর্তমান সংখ্যা মোটে ২০০-রও কম। যেখানে পৃথিবীর ৫ মহাদেশের ১২৫টি দেশে এর প্রকোপ ছিল, সেখানে এখন মাত্র ২টি দেশেই বিদ্যমান। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য একটা পোলিয়ো-বিহীন বসুন্ধরা। ইতিমধ্যেই ‘ওয়াইল্ড পোলিয়োভাইরাস’ নামে তিনটি কুখ্যাত ভাইরাসের দু’টিকে নির্বংশ করা গিয়েছে। শেষ তিন দশকে ওয়াইন্ড পোলিয়োভাইরাস সংক্রমণ কমানো গিয়েছে ৯৯.৯ শতাংশ। ২৭ মার্চ ২০১৪-তেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে পোলিয়ো-মুক্ত ঘোষণা করেছিল ‘হু’। ভারতে ২০১১-র পর নতুন করে আর কেউ পোলিও আক্রান্ত হয়নি। ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারতকে ‘পোলিও-এন্ডেমিক’ দেশগুলির তালিকা থেকে সরিয়ে দেয়।
কীভাবে সম্ভব হয়েছে এই অসাধ্যসাধন? না, গোটা বিশ্ব একজোট হয়েছে বলে। শিশুদের অভিভাবক, স্বেচ্ছাসেবী থেকে রাষ্ট্র বা সরকার, জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব থেকে রাষ্ট্রসংঘ— পঙ্গুত্ব বয়ে আনা এই চরম সংক্রামক অসুখটিকে ঝাড়ে বংশে বিনাশ করতে সক্রিয়তা দেখিয়েছে বলে। কিন্তু তীরে এসেও তরী ডুবল যে! আশার বাণী শুনিয়েছেন হু-র স্বাস্থ্য আধিকারিকরা, নতুন করে পোলিয়ো টিকাকরণ অভিযান চালানো হচ্ছে। সবাই একজোট হলে দ্রুত ধরিত্রী থেকে চিরতরে মুছে যাবে পোলিয়োভাইরাস। সে-দিন হয়তো খুব দূরে নয়, যে-দিন ‘পোলিয়ো’ শব্দটা থাকবে শুধু মানুষের দুঃস্বপ্নের ইতিহাসে। পোলিয়ো দূরীকরণ প্রকল্পে নিয়োজিত সর্বস্তরের মানুষের হাত ধরে আসা এই সাফল্যকে ‘মানবসমাজের ঐতিহাসিক অর্জন’ বলে লেখা হবে।

চিত্র : UNICEF
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »
শুভদীপ রায়চৌধুরী

শুভদীপ রায়চৌধুরীর দুটি কবিতা

অন্ধকারের তুমি,/ নরম পুঁইমাচার নিচে সবজেটে বহুরূপী/ তোমাকে আলোর কণার ভেতর গড়িয়ে যেতে দেখব বলে/ আমি এই পাগলের পৃথিবী ছেড়েছি/ টিলাপায়ে বাস করি/ নাম, সমুদ্রসম্ভব।/ পাতার ইমারত আছে, আছে/ কিছু দৈনন্দিন কাজ/ মাছ ধরার নাম করে/ বালসাভেলায় অনেকদূর যাওয়া/ যতদূর ভেসে গেলে ঢেউয়ের চুম্বন থেকে/ ছোবলটুকু আলাদা করাই যায় না

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | দ্বিতীয় পর্ব

সকালে চিড়ে নারকেল-কোরা আর গুড় খেয়ে আমি সাইকেলে চেপে ছুটিয়ে দিলাম— আট মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে যখন পৌঁছালাম— তখন গণগণে রোদ্দুর তেষ্টায় গলা কাঠ। ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে একটা বাড়ি দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়লাম যদি একটু জল খাওয়া যায়। বাড়ির বারান্দায় একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসেছিলেন— তার কাছে উদ্দিষ্ট ঠিকানার কথা প্রশ্ন করতেই তিনি উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা পাটি পেতে বসতে দিলেন। আমি আবার জল চাইলে বললেন, “দাদাঠাকুর ব্যস্ত হবেন না— ঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন।”

Read More »