ছোটবেলায় কানমলা বা কান টানা খেয়েছেন কখনও? কান ধরে দাঁড়িয়ে থেকেছেন? কিংবা কান ধরে উঠবোস? লজ্জায় কান লাল হয়ে যেত না? তাতে দুঃখব্যথার চেয়ে অপমানবোধই বেশি থাকত। তাই না? অথচ আমরা কেউই বুঝতে পারতাম না, নির্দোষ কানের ওপরেই কেন মাস্টারমশাই বা গুরুজনদের এমন অবিচার। এই অবিচারের মধ্যে লুকিয়ে ছিল এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিচারও। যা অজান্তেই আমাদের মগজকে ধারালো করেছে, বাড়িয়েছে আমাদের স্মৃতিশক্তি, জ্ঞানধারণ ক্ষমতা। কমিয়েছে আমাদের মানসিক চাপ এবং শারীরিক ক্লেশ। অবাক হচ্ছেন? হালের গবেষণা কিন্তু প্রমাণ করেছে এর সত্যতা।
‘কান টানলে মাথা আসে।’ বাংলার প্রাচীন প্রবাদ। মানে, একটিকে টেনে আনলে, সংলগ্ন অন্যটিও অনুসরণ করবে। মাথাকে বাগে আনতে কান টানা হয়। এটি সাধারণ অভিজ্ঞতামূলক প্রবাদ। প্রবাদের কোনও লিখিত ভিত্তি থাকে না। একথা তাই এক অর্থে লোকসমাজের অভিজ্ঞতার নির্যাস। কানের বিচারে প্রবাদের সত্য আর প্রমাণের সত্য প্রায় একই ধরনের। প্রমাণ বলছে, কান টানলে ‘মাথা’ ভাল হয়। এই মাথা হল মগজ। কান টানলে বুদ্ধি খোলে আর বাড়ে মনে রাখার ক্ষমতা। তাই সাদাচোখে এই লাঞ্ছনার মাধ্যমেই বেলাইন ‘ব্রেন’কে টেনে সোজা ট্র্যাকে ফেলতে চেষ্টা করতেন আমাদের অগ্রজরা। নইলে ‘গোবরপোরা মাথা’ওলা আমাদের সব পড়াশোনা নাকি এ কান দিয়ে ঢুকে, ও কান দিয়ে বেরিয়ে যেত!
ভারতীয় উপমহাদেশে লঘু শাস্তির সবচেয়ে প্রাচীন এবং জনপ্রিয় রূপ দু’হাতে বিপরীত দিকের কান (ডানহাতে বাঁ-কান, বাঁ-হাতে ডান কান) ধরে রাখা। যা হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে এবং ভারতীয় বিদ্যায়তনগুলিতে যা ঐতিহ্যের অংশে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও অনেক জায়গায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার সময়েও এমনটা প্রচলিত অনুশীলন, তারা যেন ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছেন এবং নিজেকে শাস্তি দিচ্ছেন। তবে আপাতদৃষ্টিতে সহজ এই পদ্ধতিটি কেবল শাস্তির একটি প্রকারমাত্র নয়, এই অনুশীলনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। মার্কিন দেশে অনেকদিন ধরে এই ‘সুপার ব্রেন ইয়োগা’ ছোটদের মস্তিষ্ক বিকাশের ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃতও হচ্ছে। যোগ-কে ‘ইয়োগা’ না বললে এখন আবার অনেকে ব্যাকডেটেড বলবেন!
যা হোক, বিগত কয়েক দশক ধরে উন্নত বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষক-চিকিত্সকরা এই পদ্ধতিটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং তাতে আশ্চর্য ফল মিলেছে। বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলি আন্তরিকভাবে এটিকে গ্রহণ করেছে এবং একে দুর্দান্ত একটি চর্চা হিসাবে চিকিৎসকরা সুপারিশ করছেন। স্কুলেও এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে। আগ্রহীদের এই কৌশলটি শেখার জন্য বিশেষ কর্মশালাও হচ্ছে। তাদের কাছে, কানমলাটা দোষের না। প্রমাণ মিলেছে, এটি স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে এবং জ্ঞান উপলব্ধি করতে সহায়তা করে। এমনকী মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরের যে কোনও অংশের ব্যথা সারাতে কানের লতিতে চাপ প্রয়োগের বিকল্প নেই। শরীরী ধকল কমাতেও কাজে আসে। সর্বোপরি, পরিবারে ভালবাসার বন্ধন সুদৃঢ় করতেও নাকি কান টানাটানির জুড়ি নেই।
পরিস্থিতি বদলেছে। এখন পড়ুয়ার কান ধরে টানাটানি শারীরিক হেনস্থা হিসেবে বিবেচিত এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু উন্নত বিশ্ব খাঁটি সোনা চেনে। তারা আমাদেরই যোগ, আয়ুর্বেদ এবং বিবিধ প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও উপকরণগুলিকে সাদরেই আত্মীকরণ করেছে। আর আমরা সোনার দরে তাদের উচ্ছিষ্ট ওষুধ-পথ্যাদি, তত্ত্ব-তথ্যাদি পরমাদরে গ্রহণ করেছি। অতীত, পরম্পরা ও আত্মবিস্মৃত জাতির তকমা কী আর আমরা এমনি-এমনি পেয়েছি!
তা হলে কানে কী রইল? কেন, হেডফোন!
![](https://bhalobhasa.com/wp-content/uploads/2024/12/Memories-Of-Binsar-2-300x157.jpeg)
![শুভ্র মুখোপাধ্যায়](https://bhalobhasa.com/wp-content/uploads/2021/11/subhro-Mukhopadhyay-150x150.jpg)
ভূতের একটি বাজে গল্প
দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।