Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

পেঁয়াজ হাঁটে, তাও নাকি ‘মিশরীয়দের মত’

পেঁয়াজ কেবল একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজিই নয়, আমাদের দেশে সে এক ঝাঁঝালো রাজনৈতিক ইস্যুও। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ হয়েও আক্রার সময় তাই সুদূর মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে ভারত। পিরামিডের দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তানও। তো সেই মিশরীয় পেঁয়াজের বৃত্তান্ত জানতে গিয়ে এক অদ্ভুত ধরনের পেঁয়াজের হদিশ মিলেছে। যার নাম ‘ইজিপ্সিয়ান ওয়াকিং ওনিয়ন’ বা মিশরীয় হাঁটিহাঁটি পেঁয়াজ। পেঁয়াজ হাঁটে? খুঁজে দেখতে হয় জিনিসটা।

এ পেঁয়াজ সে পেঁয়াজ না। মানে, আমাদের দেশের মত এ পেঁয়াজ গাছের গোড়ায় ফলে না, এ পেঁয়াজ ধরে গাছের আগায়। সেই পেঁয়াজ আবার আপনিই মাটিতে ঝরে পড়ে ১ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত এলাকা জুড়ে। জন্ম নেয় নতুন গাছ। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এই স্থান পরিবর্তনের কারণেই কি তার নাম ‘ওয়াকিং ওনিয়ন’? আক্ষরিক অর্থ সেই দিকেই নির্দেশ করছে।

এই ধরনের পেঁয়াজ অবশ্য অন্য অনেক দেশেই হয়। তবে এর নামের সঙ্গে ‘মিশরীয়’ শব্দটি কেন জুড়ে রয়েছে, সেটাই রহস্য। সে কথায় আসার আগে বলি, এই ধরনের পেঁয়াজকে ‘ইজিস্পিয়ান ওয়াকিং ওনিয়ন’ ছাড়াও ‘ট্রি ওনিয়ন’, ‘টপ ওনিয়ন’ এবং ‘উইন্টার ওনিয়ন’ নামেও ডাকা হয়। যদিও এর স্বাদ ও গন্ধ সাধারণ পেঁয়াজের মতই। তবে গাছের শাখায় হওয়া এই পেঁয়াজ আকারে তত বড় হয় না। ভীষণ শীত সহ্য করতে পারে। মাইনাস ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাতেও দিব্বি বহাল তবিয়তে থাকতে পারে।

বোটানিকালি অ্যালিয়াম এক্স প্রোলিফেরাম শ্রেণিভুক্ত এই পেঁয়াজকে জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণ পেঁয়াজ (অ্যালিয়াম সিপা) এবং সবুজাভ ও লম্বাটে ওয়েলস ওনিয়নের (অ্যালিয়াম ফিসটুলোসাম) মধ্যে ক্রস বা সংকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গাছের প্রতিটি ডগায় পর্বে পর্বে সাধারণ পেঁয়াজকলির মত দেখতে ফুল হয়। গুচ্ছ গুচ্ছ, সাধারণ পেঁয়াজের মত একটি ফুল নয়। সেখান থেকে আবার ডগা বের হয়ে তার শীর্ষে একই রকমের ফুলের গুচ্ছ তৈরি হয়। ফুলগুলিই ক্রমে পেঁয়াজে পরিণত হয়। পরিপক্ক হয়ে গাছেই শিকড় ছড়ায় এবং শেষমেশ ঝরে পড়ে নতুন গাছের জন্ম হয়।

Advertisement

‘ইজিপ্সিয়ান ওয়াকিং ওনিয়ন’ নামটিতে ‘ইজিপ্সিয়ান’ শব্দটি কীভাবে জুড়ে গেল? জানা যাচ্ছে, প্রাচীন মিশরীয়রা পেঁয়াজের উপাসনা করতেন। তারা বিশ্বাস করতেন, পেঁয়াজের গোল আকার এবং ঘনকীয় রিংগুলি চিরজীবনের প্রতীক। এমনকী ফারাওদের কবরগুলিতে পেঁয়াজ ব্যবহার করা হত। চতুর্থ রামেসেসের অস্থিপঞ্জর মিললে তাঁর অক্ষিকোটরে ছোট পেঁয়াজ পাওয়া গিয়েছে। মিশরীয়দের হাত ধরে এই পেঁয়াজ বাকি দুনিয়ায় পৌঁছেছে কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি। তাই ইজিপ্সিয়ান ওয়াকিং ওনিয়ন বা মিশরীয় হাঁটিহাঁটি পেঁয়াজের নামে ‘মিশরীয়’ অংশটি একটি রহস্য হিসেবে রয়ে গিয়েছে। সম্ভবত নামটি তার চলার পথকে বোঝায়।

তারা কি ‘মিশরীয়দের মত’ হাঁটে? কে জানে!

চিত্র : গুগল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 11 =

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

আমার স্মৃতিতে ঋত্বিককুমার ঘটক

দুটো‌ জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম তাঁর।‌ এক, তিনি কথা বলার সময় আত্মমগ্ন‌ থাকতেন। কারও দিকে‌ তাকিয়ে‌ কথা বলতেন না। তাকাতেন‌ হয় সুদূরে, আর নয়তো‌ চোখ বুজে‌ কথা বলতেন। আর দ্বিতীয় যা, তা হল‌ ঋত্বিকের চোখ। এত উজ্জ্বল আর‌ মরমী, এক-ই সঙ্গে জ্যোৎস্নাপ্লাবিত আর লুব্ধক নক্ষত্রের মতো দীপ্ত, তা আর কারও মধ্যে দেখিনি। সত্যজিৎ-মৃণালের মধ্যেও না, যদিও ঘটনাচক্রে ওই দু’জনের সঙ্গে আমার মোলাকাত হয়েছিল অনেক বেশি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঋত্বিক ঘটক ও বাংলাদেশ

ঋত্বিক ঘটকের জীবনের প্রথম বাইশ বছর (১৯২৫-১৯৪৭) কেটেছে মূলত পূর্ব-বাংলায়, যা এখনকার বাংলাদেশ। তাঁর জন্ম ঢাকার ২,ঋষিকেশ দাস রোডের ঝুলন বাড়িতে। ১৯৪৭, অর্থাৎ দেশভাগ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত তিনি মূলত পূর্ব-বাংলায় কাটান। আমরা দেখব, পূর্ব-বাংলা যেমন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল, সে-দেশ, সে-ভূমির প্রভাব তদনুরূপ ঋত্বিকেরও পড়েছিল তাঁর চলচ্চিত্রে।

Read More »
মণিকর্ণিকা রায়

অনুগল্প: অর্জন

অসহায় বৃদ্ধের খাওয়া হয়ে গেলে মাঝেমাঝে গল্পও করত ওঁর সাথে। আদিত্য লক্ষ্য করেছিল এই ব্যাপারটা যেন তার মনে একটা বদল আনছে— যেন রোজ তার শরীর-মন জুড়ে সঞ্চালিত হচ্ছে এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি। যেন সে সত্যিই মানুষ হয়ে উঠছে।

Read More »
মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনানন্দ দাশের সময়চেতনা: পুরাণ, প্রকৃতি ও আধুনিক নিঃসঙ্গতার নন্দনতত্ত্ব

পৌরাণিক, মনস্তাত্ত্বিক ও প্রকৃতিগত সময়চেতনা তাঁকে রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগে এক স্থায়ী ও ব্যতিক্রমী মহাকবির আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর শিল্পকর্ম আমাদের শেখায়— দ্রুত ধাবমান জীবনের বাইরে দাঁড়িয়ে ধীরে চলতে, নীরবতার গভীরে কান পাততে এবং প্রতিটি ক্ষণিকের মাঝে অনন্তের ইশারাকে খুঁজে পেতে। তাঁর সাহিত্য ভবিষ্যতের প্রতিটি সংবেদনশীল পাঠকের জন্য আধুনিকতার এক অমূল্য পাঠ হয়ে থাকবে, যা মানুষের জীবনকে শিল্প ও প্রকৃতির একাত্মতায় আবিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং প্রমাণ করে দেয়— কাব্যই চূড়ান্ত আশ্রয়, যখন সমস্ত পথ ফুরিয়ে যায়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

জীবনানন্দ: প্রয়াণদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

হেমন্তকাল ও জীবনানন্দ অভিন্ন, ওতপ্রোত ও পরস্পর পরিপূরক। তাঁর কবিতায় বারবার নানা অনুষঙ্গে, বিভঙ্গে ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে হেমন্তের বসতি যেন। ‘হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে শুধু/ শিশিরের জল’, ‘ধানক্ষেতে, মাঠে,/ জমিছে ধোঁয়াটে/ ধারালো কুয়াশা’! কুয়াশা আর শিশির, এই দুই অচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হেমন্তের, চিনিয়ে দেন তিনি। ‘চারিদিকে নুয়ে পড়ে ফলেছে ফসল/ তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল’, হেমন্তকে বাহন করে এই যে প্রকৃতির অপরূপতা মেলে ধরা, তা অন্য কোন বাঙালি কবির আছে?

Read More »