পেঁয়াজ কেবল একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজিই নয়, আমাদের দেশে সে এক ঝাঁঝালো রাজনৈতিক ইস্যুও। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ হয়েও আক্রার সময় তাই সুদূর মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে ভারত। পিরামিডের দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তানও। তো সেই মিশরীয় পেঁয়াজের বৃত্তান্ত জানতে গিয়ে এক অদ্ভুত ধরনের পেঁয়াজের হদিশ মিলেছে। যার নাম ‘ইজিপ্সিয়ান ওয়াকিং ওনিয়ন’ বা মিশরীয় হাঁটিহাঁটি পেঁয়াজ। পেঁয়াজ হাঁটে? খুঁজে দেখতে হয় জিনিসটা।
এ পেঁয়াজ সে পেঁয়াজ না। মানে, আমাদের দেশের মত এ পেঁয়াজ গাছের গোড়ায় ফলে না, এ পেঁয়াজ ধরে গাছের আগায়। সেই পেঁয়াজ আবার আপনিই মাটিতে ঝরে পড়ে ১ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত এলাকা জুড়ে। জন্ম নেয় নতুন গাছ। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এই স্থান পরিবর্তনের কারণেই কি তার নাম ‘ওয়াকিং ওনিয়ন’? আক্ষরিক অর্থ সেই দিকেই নির্দেশ করছে।
এই ধরনের পেঁয়াজ অবশ্য অন্য অনেক দেশেই হয়। তবে এর নামের সঙ্গে ‘মিশরীয়’ শব্দটি কেন জুড়ে রয়েছে, সেটাই রহস্য। সে কথায় আসার আগে বলি, এই ধরনের পেঁয়াজকে ‘ইজিস্পিয়ান ওয়াকিং ওনিয়ন’ ছাড়াও ‘ট্রি ওনিয়ন’, ‘টপ ওনিয়ন’ এবং ‘উইন্টার ওনিয়ন’ নামেও ডাকা হয়। যদিও এর স্বাদ ও গন্ধ সাধারণ পেঁয়াজের মতই। তবে গাছের শাখায় হওয়া এই পেঁয়াজ আকারে তত বড় হয় না। ভীষণ শীত সহ্য করতে পারে। মাইনাস ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাতেও দিব্বি বহাল তবিয়তে থাকতে পারে।
বোটানিকালি অ্যালিয়াম এক্স প্রোলিফেরাম শ্রেণিভুক্ত এই পেঁয়াজকে জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণ পেঁয়াজ (অ্যালিয়াম সিপা) এবং সবুজাভ ও লম্বাটে ওয়েলস ওনিয়নের (অ্যালিয়াম ফিসটুলোসাম) মধ্যে ক্রস বা সংকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গাছের প্রতিটি ডগায় পর্বে পর্বে সাধারণ পেঁয়াজকলির মত দেখতে ফুল হয়। গুচ্ছ গুচ্ছ, সাধারণ পেঁয়াজের মত একটি ফুল নয়। সেখান থেকে আবার ডগা বের হয়ে তার শীর্ষে একই রকমের ফুলের গুচ্ছ তৈরি হয়। ফুলগুলিই ক্রমে পেঁয়াজে পরিণত হয়। পরিপক্ক হয়ে গাছেই শিকড় ছড়ায় এবং শেষমেশ ঝরে পড়ে নতুন গাছের জন্ম হয়।
‘ইজিপ্সিয়ান ওয়াকিং ওনিয়ন’ নামটিতে ‘ইজিপ্সিয়ান’ শব্দটি কীভাবে জুড়ে গেল? জানা যাচ্ছে, প্রাচীন মিশরীয়রা পেঁয়াজের উপাসনা করতেন। তারা বিশ্বাস করতেন, পেঁয়াজের গোল আকার এবং ঘনকীয় রিংগুলি চিরজীবনের প্রতীক। এমনকী ফারাওদের কবরগুলিতে পেঁয়াজ ব্যবহার করা হত। চতুর্থ রামেসেসের অস্থিপঞ্জর মিললে তাঁর অক্ষিকোটরে ছোট পেঁয়াজ পাওয়া গিয়েছে। মিশরীয়দের হাত ধরে এই পেঁয়াজ বাকি দুনিয়ায় পৌঁছেছে কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি। তাই ইজিপ্সিয়ান ওয়াকিং ওনিয়ন বা মিশরীয় হাঁটিহাঁটি পেঁয়াজের নামে ‘মিশরীয়’ অংশটি একটি রহস্য হিসেবে রয়ে গিয়েছে। সম্ভবত নামটি তার চলার পথকে বোঝায়।
তারা কি ‘মিশরীয়দের মত’ হাঁটে? কে জানে!