প্রেয়সীর মন ভোলাতে নিজের বুকের বাঁদিকে ট্যাটু আঁকিয়েছিলেন তরুণ। সেই ট্যাটুর রঙিন ছবির মধ্যে লেখান তরুণীর নামও। কিন্তু এত কাণ্ডের পর ভুল হয়ে যায় নামের বানানে। পরে ভুল বুঝতে পারলেও করার কিছু ছিল না। ট্যাটুর ‘সাইড এফেক্ট’ নিয়ে এই চালু রসিকতাটা বাজারে আছে। উল্কির বহুবর্ণ রঙের বহুবিধ এফেক্ট বা প্রভাবও রয়েছে। তাই শরীরে ‘পারমানেন্ট’ উল্কি আঁকানোর আগে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি সম্পর্কেও জেনে নেওয়া উচিত। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যাটু আপনার দেহে মারাত্মক সব প্রভাব ফেলতে পারে। যে সৌন্দর্যের কথা ভেবে শরীরের উল্কিকে আমন্ত্রণ, উল্কির প্রভাবে তা কুৎসিত হয়ে যেতে পারে। এমনকী ক্যানসারের ঝুঁকিও রয়েছে। উল্কি-র ‘সাইড এফেক্ট’ নিয়ে তাই ভেবে দেখার সময় এসেছে।
কী সেই সব ঝুঁকি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া? প্রথমটি হচ্ছে স্কিন ইনফেকশন বা ত্বকের সংক্রমণ। উল্কি নামক দেহাঙ্কন শিল্পের পদ্ধতিই আপনার ত্বককে ক্ষতবিক্ষত করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপরের (এপিডার্মাল) এবং মাঝের (ডার্মাল) ত্বকের স্তর। এই দুই স্তরের মাঝখানেই নানা বর্ণের কালি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, বিশেষ ধরনের সুচ দিয়ে ত্বকে সূক্ষ্ম ছিদ্র বানিয়ে। রঙে সাধারণত ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই ভিন্ন ভিন্ন রঙে আপনার স্বাস্থ্যেরও ভিন্ন ভিন্ন ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে যখন সেই উল্কি করা অংশ সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসে। সূর্যালোকের অতিবেগুনী রশ্মি আপনার ত্বকের বারোটা বাজাতে পারে। হতে পারে চুলকানি, অ্যালার্জি, কেলয়েড (ত্বকের ওপরে পিণ্ডের আকার) এবং ত্বকের ক্যানসারও।
সূর্যালোকে দুই ধরনের ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মি (আলট্রাভায়োলেট রে বা ইউভি) থাকে। একটি হল ইউভিএ এবং অন্যটি ইউভিবি। দীর্ঘ তরঙ্গের ইউভিএ রশ্মিগুলি ত্বকের সবচেয়ে পুরু স্তর ডার্মিসের গভীরে প্রবেশ করে। আর স্বল্প তরঙ্গের ইউভিবি রশ্মি সাধারণত ত্বকের পৃষ্ঠের স্তরকে পোড়ায়। এই ক্ষতি থেকে বাঁচতে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা এসপিএফ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। তাই সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসার আগে উল্কিকে এসপিএফে ঢেকে রাখার নিদান দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও যত্নের ওপর বিশেষ জোর দিতে বলছেন তারা। নইলে, সাধের উল্কি আপনার জীবন বিষময় করে তুলতে পারে। ট্যাটু করার আগে দশবার ভাববার পরামর্শ দিচ্ছেন তথ্যাভিজ্ঞরা।
বিশ্বজুড়ে জনমত, জনসংখ্যা বিষয়ক প্রবণতা এবং নানা সামাজিক ইস্যু নিয়ে সমীক্ষা করে মার্কিন বেসরকারি সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, এইমুহূর্তে বিশ্বের অন্তত চল্লিশ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কের প্রত্যেকের শরীরে কমপক্ষে একটি ট্যাটু রয়েছে। আবার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করা মার্কিন বেসরকারি সংস্থা মেয়ো ক্লিনিকের সমীক্ষা বলছে, উল্কিতে ব্যবহৃত রঙের মধ্যে সর্বোচ্চ ক্ষতির নিরিখে ক্রমানুসারে রয়েছে লাল, হলুদ, নীল এবং সবুজ। উল্কি তৈরির কয়েক বছর পর চামড়ার অভ্যন্তরের কালি খানিক বিবর্ণ হলেও ত্বকের সংক্রমণ এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা অনেক বছর পর্যন্ত থাকেই। তাই ত্বকের মধ্যে এই ধরনের কালি ঢোকানো মানে, আদতে বিপদকে নিমন্ত্রণ করা।
সাবধান করছেন উল্কি বিশেষজ্ঞরাই। তারা বলছেন, উল্কি বা ট্যাটু যদিও এখন আগের চেয়ে ঢের নিরাপদ। তবে যত্রতত্র উল্কি না করিয়ে, বাছতে হবে বিশেষজ্ঞ উল্কি-শিল্পীদেরই। কারণ, বিশেষজ্ঞ ট্যাটু-শিল্পীরা আপনার ত্বকের সংবেদনশীলতা ভালভাবে পরখ করতে পারবেন। সুচকে জীবাণুমুক্ত না করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। তা ছাড়া এইচআইভি, হেপাটাইটিস সি এবং মেথিসিলিন-প্রতিরোধী স্টাফিলোকক্কাস অ্যারিয়াস (এমআরএসএ) প্রভৃতি রক্তবাহিত অসুখের শিকার হতে পারেন। ত্বকের সংক্রমণের ক্ষেত্রে উল্কি আঁকানোর পরবর্তী প্রথম দু’সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। এবং সময় নিয়ে ধাপে ধাপে ট্যাটু আঁকাতে হবে। ইতিমধ্যে অসুবিধা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সুস্থ শরীর ব্যস্ত করার কোনও মানে হয়, বলুন!