Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

থর মরুভূমিতে হঠাৎ বৃষ্টি

থর মরুভূমিতে দু-রাত থাকব, সেই পরিকল্পনা সেখানে যাওয়ার আগেই করে নিয়েছিলাম। সেইমত থর মরুভুমির খুরি গ্রামে একটা ‘সুইস টেন্ট’ আগে থেকেই বুকিং সেরে রাজস্থানের জয়সলমীর থেকে দুপুরের খাবার খেয়েই রওনা হয়ে গিয়েছিলাম। ভারতের একদম পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জয়সলমীর ভারত-পাকিস্থান সীমান্তের শেষ শহর। জয়সলমীর থেকে থর মরুভূমির ভিতরে খুরি গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। রাজস্থান বেড়াতে এসে অনেকে ‘সাম’ গ্রামে রাত কাটান। সেখানে মরুভূমিতে বেশ পর্যটকের ভিড় থাকে, সে খবর আগেই নিয়েছিলাম। ভিড় এড়াতে মরুভূমির নির্জনতা উপভোগ করতেই অপেক্ষাকৃত ‘ফাঁকা’ খুরি গ্রাম আমার পছন্দ ছিল। এবারও আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী এবং মেয়ে রয়েছে। জয়সলমীর থেকে দু-দিনের প্রয়োজনীয় নিজস্ব কিছু খাবার-দাবার-পানীয় সঙ্গে নিয়ে মরুভূমির ভিতর দিয়ে রওনা দিলাম কালো পিচ রাস্তা ধরে। সময়টা অক্টোবর মাস। পুজোর ঠিক পরে। মরুভূমির গরম এড়াতে জয়সলমীর থেকে এয়ার কন্ডিশন্ড গাড়ি নিয়ে খুরি গ্রামে যাওয়ার পথে রাস্তার মরীচিকা দেখে আন্দাজ করতে পারছিলাম, বাইরে কী পরিমাণ গরম রয়েছে। মরুভূমিতে দুপুরে গরম থাকবে, সেটা তো স্বাভাবিক।

খুরি গ্রামে যাওয়ার পথে।

তবে আমরা সিনেমাতে যে ধরনের মরুভূমির ছবি দেখে অভ্যস্ত, রাজস্থানের থর মরুভূমির কিন্তু চরিত্র অনেক আলাদা। ধু ধু বালিয়াড়ি থাকলেও সবুজের রেশ বেশ দেখা যাচ্ছে। ছোট ছোট কাঁটাঝোপের জঙ্গল। বালির ওপরে হাল্কা সবুজ ঘাস, যা অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা এলাকাতে ছড়ানো। মাঝেমাঝে আমাদের গাড়ি উটের দলকে ‘ওভারটেক’ করছে। রাস্তার ধারে মাঝে মাঝে পড়ছে দু-একটা রাজস্থানী গ্রামীণ কুঁড়েঘর। লোকজন রাস্তায় প্রায় নেই বললেই চলে। আমাদের গাড়ি চলছে তো চলছেই। মাঝে তো ভয়ই পেয়ে গেলাম। খুরি গ্রামের যে কটেজ আমরা দু-রাত থাকার জন্য বুকিং করেছি ইন্টারনেটে, তার আদৌ অস্তিত্ব রয়েছে তো। শেষের দিকে তো রাস্তার ধারে কাঁটাঝোপ বাদে আর কিছুরই দেখা মিলছে না। হঠাৎ নজরে এল মরুভূমির মধ্যে মাটির নীচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এলাকা। প্রাচীরের বাইরে থেকেই নজরে পড়ছে পাশাপাশি বেশ কয়েকটা তাঁবু। প্রাচীরের সীমানা ঘেঁষে উড়ছে রংবেরঙের নানা এক রঙের পতাকা। তাহলে কি আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছি! গাড়ি থামিয়ে নেমে সেখানে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, খুরি গ্রাম সেখান থেকেও বেশ কিছুটা দূরে। আর আমরা যে তাঁবুতে রাতে থাকার জন্য বুকিং করেছি, তার অস্তিত্বও রয়েছে। কিছুটা মনকে শান্ত করে রওনা দেওয়ার পরে খুরি গ্রাম এল। একদম রাজস্থানী ঘরানার মরু গ্রাম বলতে যা বোঝায়, সেই গ্রাম সেরকমই। একটু খুঁজতেই পেয়ে গেলাম আমাদের সেই তাঁবুওয়ালা হোটেলটিকেও। সঙ্গের গাড়ি আমাদের সেখানে নামিয়ে আবার জয়সলমীর ফিরে গেল।

শয়তান সিংয়ের মোট আটটি এরকম তাঁবু রয়েছে।

তাঁবুর অফিসঘরে পৌঁছে জানতে পারলাম, আমাদের তিনজনের আসার খবর সেখানকার তাঁবু মালিকের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। সেই রাজস্থানী জাঠ সম্প্রদায়ের তাঁবু মালিকের নাম জিজ্ঞেস করতেই ভিমরি খেলাম। জানলাম, তাঁর নাম শয়তান সিং। এরকম নাম মানুষের হয়! খুরি গ্রামেই সপরিবারে থাকেন শয়তান সিং। বছরের আট মাস এই তাঁবু চালান। তাঁর তাঁবুর অতিথি অধিকাংশই বিদেশি পর্যটক। তবে সেদিনের জন্য ‘বাঙ্গাল’ থেকে কয়েকজন টুরিস্ট এসেছেন। ব্যবহারে অমায়িক এই রাজস্থানী লোকটি বেশ অতিথিপরায়ণ। তিনি নিজেই আমাদের জন্য রাখা সুইস টেন্টে লাগেজপত্র নিয়ে গিয়ে রাখলেন। আমাদের তিনজনকেই ‘ওয়েলকাম ড্রিংক’ দিয়ে স্বাগত জানালেন। আমার জন্য আলাদা পানীয়, আর আমার পরিবারের জন্য আলাদা। বুঝলাম, আতিথেয়তার কম হবে না। তাঁবুর ভিতরে ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার যোগাড়। কী নেই তাঁবুর ভিতরে! রট আয়রনের ডবল বেড খাট, সোফা সেট, বেড সাইড টেবিলে ফুলদানি, মেঝেতে পারসিয়ান কার্পেট। আমরা যেহেতু তিনজন, সে কারণে আমাদের তাঁবুতে আগে থেকেই একটা আলাদা সিঙ্গল বেড খাট পেতে রাখা হয়েছে। লাগোয়া টয়লেট। সেখানে সুদৃশ্য ওয়াশ বেসিন, বাহারি তোয়ালে, কমোড। মরুভূমিতেও টয়লেটে জলের কোনও কমতি নেই। যাইহোক, আমরা সেসব দেখতে দেখতে তাঁবুর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, নানা রঙের পাগড়ি মাথায় বড় বড় গোঁফওয়ালা লোকেরা তাদের উট নিয়ে তাঁবুর বাইরে এসে হাজির হয়েছেন। উদ্দেশ্য, টুরিস্টদের উটে চাপিয়ে মরুভূমি ঘুরিয়ে দেখানো।

রওনা হলাম মরুভূমিতে সূর্যাস্ত দেখতে।

শয়তান সিংয়ের এখানে মোট আটটি এরকম তাঁবু রয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি দখল করে রেখেছেন বিদেশি টুরিস্টরা। বাকি দুটিতে এসে উঠেছে জলপাইগুড়ি এবং হাওড়ার দুটি পরিবার।

মরুভূমিতে এসে উটে চাপব না, এটা হতে পারে না। কাজেই আমরা তিনটি উটে চেপে রওনা হলাম মরুভূমিতে সূর্যাস্ত দেখতে। হাতের ঘড়ি সময় দেখাচ্ছে সন্ধে সাড়ে সাতটা। কিন্তু আকাশের সূর্য বলছে, অস্ত যেতে তখনও ঢের দেরি। উটে চাপার সময় ফেলুদা গল্পের সেই লালমোহনবাবুকে শেখানো ‘উক্তি’ মনে রেখেছিলাম। কিছুদূর নিয়ে গিয়ে উটের মালিকের ছেলে উটকে থামিয়ে দিল। সেখানে দেখলাম আমাদের তাঁবুতে এসে ওঠা অনেক টুরিস্ট রয়েছেন। যেখানে এসে থেমেছি, সেই উঁচু বালির ঢিবির উপর থেকে নাকি ভাল সূর্যাস্ত দেখা যায়। কিন্তু হঠাৎ দেখলাম পশ্চিমের আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে। উটওয়ালা জানাল, সেদিন সূর্যাস্ত দেখা যাবে না। কারণ আকাশ বলছে জয়সলমীরে জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। দার্জিলিংয়ের টাইগার হিলে গিয়ে ভোরে সূর্য ওঠা না দেখার অভিজ্ঞতা কয়েকবার হয়েছিল। কিন্তু থর মরুভূমিতে অক্টোবর মাসে সূর্যাস্ত দেখতে পাব না সেটা ধারণা ছিল না। যেহেতু আমরা খুরি গ্রামের ওই তাঁবুতে আরও একদিন থাকব, সেটা শুনে অভিজ্ঞ উটওয়ালারা আশ্বস্ত করে আমাদের তাঁবুতে ফিরিয়ে নিয়ে এল।

স্থানীয় শিল্পীর নাচ।

এবার রাতের মরুভূমিতে রাতের অনুষ্ঠান। শয়তান সিংয়ের মুখে আগেই শুনেছিলাম, রাতে তাঁবুগুলির মাঝের জায়গাতে চারদিকে গোল হয়ে চেয়ারে বসে মাঝের জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে স্থানীয় শিল্পীরা নাচ দেখান, গান শোনান। সঙ্গে সন্ধের চা-জলখাবার দেওয়ার ব্যবস্থা সেখানেই থাকে। সঙ্গীতানুষ্ঠান শেষ হতেই রাতের খাবার সেখানেই দেওয়া হয়। থর মরুভূমিতে সন্ধে নামতেই শুরু হল রাজস্থানী-হিন্দি মিলিয়ে গান এবং সঙ্গে স্থানীয় নৃত্য। এক রাজস্থানী মহিলা নাচতে নাচতে অদ্ভুত ব্যালান্সে মাথায় বেশ কয়েকটা হাঁড়ি পরপর বসিয়ে নেচে চললেন। বসলেন, ঘুরে ঘুরে নাচলেন। ব্যালান্স করে হাঁড়ি মাথায় নিয়েই বালিতে রাখা একটি গ্লাস থেকে টাকা মুখে তুলে নিলেন। নাচ-গান চলছিল ঠিকই, কিন্তু আকাশে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। রাত ন’টা নাগাদ ঝেপে এল মুষলধারায় বৃষ্টি। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট। বালুঝড়। শয়তান সিংয়ের পরামর্শমত আমরা সবাই বেদুইনদের মত করে চোখ, নাক, মুখ কাপড়ে পেঁচিয়ে নিয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করতে লাগলাম। অবশেষে বৃষ্টি থামার পরে ‘বুফে’ সিস্টেমে খাবার সাজানো হল। ঘি দিয়ে গরম গরম বাজরার রুটি, মরুভূমির কাঁটাঝোপ ফণিমনসা গাছের তরকারির সঙ্গে মিষ্টি। ফণিমনসা গাছের তরকারি যে এতটা সুস্বাদু হতে পারে, সেটা আগে কোনও ধারণা ছিল না।

রাতের খাবারের পরে আমরা গেলাম মরুভূমিতে নাইট সাফারি করতে। রাতের মরুভূমিতে হরিণের ছড়াছড়ি। জানতাম বলিউডের ছবির শুটিং করতে এসে মরুভূমিতে কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করে কয়েকজন নায়ক-নায়িকা কী বিপাকে পড়েছিলেন! জিপগাড়ির হেডলাইটের আলো গিয়ে পড়ছে মরুভূমিতে ঘাস খেতে আসা হরিণের গায়ে। সেই আলোতে ছুটন্ত হরিণকে ধাওয়া করছে জিপগাড়ি। একটি জিপগাড়িতে আমি আর আমার মেয়ে ছাড়া কেউ নেই। মরুভূমির উঁচু-নীচু বালিয়াড়ি দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেছে আমাদের জিপগাড়ি। উদ্দেশ্য হরিণকে যতক্ষণ সম্ভব আমাদের দেখানো। গাড়ির চালক তাঁর দায়িত্ব পালনে কমতি করছেন না। কিন্তু হরিণকে তাড়া করতে যাওয়া জিপগাড়ির ঝাঁকুনিতে আমাদের দু-জনের শরীর থেকে প্রায় হাড়হাড্ডি খুলে যাওয়ার অবস্থা।

সে রাতে মরুভূমির তাঁবুতে ভাল ঘুমিয়ে সকালে উঠে দেখলাম, গত রাতের অতিথিরা সবাই জয়সলমীরে ফিরে গিয়েছেন। মরুভূমিকে ভালভাবে উপভোগ করব বলে দু’রাত সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দুপুরে আড্ডা মেরে কাটালাম স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে। তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে খোঁজ নিলাম নিছকই কৌতূহলে। বিকেলে টেন্টে এসে হাজির হল চারজনের এক সুইডিস পরিবার। বাবা-মা-মেয়ে-জামাই। যথেষ্ট আন্তরিক তাঁরা। বিকালে আবার উটে চড়ে সূর্যাস্ত দেখে এসে জমিয়ে আড্ডা মারলাম সুইডিস পরিবারের সঙ্গে। সুইডিস মেয়েটি আবার আমার মেয়ের বয়সী। কাজেই ভাব জমতে সময় লাগল না। রাতে আবার স্থানীয় শিল্পীদের নাচ-গান। সেদিন সুইডিস পরিবারটিকে সঙ্গে নিয়ে যে রাজস্থানী মহিলা নাচ দেখাতে এসেছিলেন, তাঁর সঙ্গে নাচলাম আমরা সবাই। সুইডিস পরিবারের সঙ্গে ছবিও তুললাম। মরুভূমির তাঁবুর বাইরে বসে হুইস্কি খেলাম সুইডিশ পরিবারের কর্তাব্যক্তিটির সঙ্গে। নানা কথা গল্প করছিলেন ভদ্রলোক।

পরের দিন সকালে জয়সলমীরে নিজের জিপে চাপিয়ে আমাদের তিনজনকে পৌঁছে দিয়ে গেলেন শয়তান সিং নিজেই। তাঁবু থেকে বের হওয়ার আগে সেই সকালেই শয়তান সিং একটা পানীয় হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। আমাকে দিয়েছিলেন ফ্রিজের চিল্ড বিয়ারের দুটো বোতল। শয়তান সিংয়ের সঙ্গে এখনও মাঝেমাঝে দিওয়ালি বা নিউ ইয়ারে টেলিফোনে কথা হয়। তিনি মনে রেখেছেন আমাকে এবং আমার পরিবারের অন্যদেরও।

চিত্র: লেখক
1 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
সুমিত সাহা
সুমিত সাহা
2 years ago

খুব ভাল লাগলো প্রিতমদা আপবার এই ভ্রমন কাহিনী

Recent Posts

নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »
দীপক সাহা

বন্দুকের মুখে দাঁড়িয়ে ইতিহাসকে লেন্সবন্দি করেছেন সাইদা খানম

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে উপমহাদেশের বিখ্যাত প্রায় সকল ব্যক্তিত্ব— ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ইন্দিরা গান্ধী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী, বেগম সুফিয়া কামাল, মৈত্রেয়ী দেবী, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আশাপূর্ণা দেবী, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়— কার ছবি তোলেননি! সেই সঙ্গে রানি এলিজাবেথ, মাদার টেরেসা, মার্শাল টিটো, অড্রে হেপবার্নের মতো বিখ্যাত মানুষদের ছবিও তুলেছেন। এই বিশাল তালিকায় আরও তিনটি নাম যুক্ত করে না দিলে অন্যায় হবে। চন্দ্রবিজয়ী নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিনস, মাইকেল কলিন্সের ছবিও তুলেছেন তিনি।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

মামলায় জয়ী হয়ে থোড় কুঁচি দিয়ে কালীর আরাধনা করেন জমিদার-গিন্নি

দেবী কালিকার খড়ের মেড় দেখে মজুমদার গিন্নি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, মামলার রায় যদি তাঁদের পক্ষে যায় তাহলে কলাগাছের থোড় কুঁচো দিয়ে হলেও জগজ্জননী মা মহাকালীর পুজো করা হবে, আর যদি মামলার রায় তাঁদের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে ওই খড়ের মেড় দামোদরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। যদিও সেদিন দুপুরের মধ্যেই আদালত থেকে মজুমদার জমিদার পক্ষের জয়লাভের খবর পৌঁছেছিল থলিয়ার মজুমদার বাড়িতে। মজুমদার-গিন্নিও অক্ষরে অক্ষরে তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। মামলায় জয়লাভের খবর পাওয়া মাত্রই জমিদার-গিন্নির নির্দেশে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দীপাবলি উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায়।

Read More »