Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

নকশালপন্থীরা আত্মসমালোচনায় অনীহ কেন

প্রায় সব নকশালপন্থী দল চারু মজুমদারের সমালোচনা করে না, নকশালবাদী আন্দোলনে হঠকারিতার জন্যও না। ‘জয় আমাদের হবেই, কারণ চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ এই আশ্বাস যে শূন্যগর্ভ ছিল, সেটাও প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চায় না। বিপ্লবের সাফল্যের গ্যারান্টি কখনও ব্যক্তি মাও হতে পারেন না, এই বাস্তবিকতা সেই সময় কারও ভাবনায় এল না? চারু মজুমদারের মাও-প্রশস্তি প্রায় অন্ধত্বের পর্যায়ে পৌঁছেছিল। তিনি নিজেকে ১৯৬২-৬৩ সালেই চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য মনে করতেন। চিনের ভারত আক্রমণের (২০ অক্টোবর ১৯৬২) পরে অবিভক্ত সিপিআই নেতা ও নেতৃস্থানীয় কর্মীরা ভারত রক্ষা আইনে ব্যাপক হারে কারান্তরালে ছিলেন, যাদের বেশিরভাগ পার্টির আন্তঃপার্টি কলহে (সংগ্রাম লিখতে দ্বিধান্বিত হচ্ছি, কারণ আন্তঃপার্টি লড়াইয়ের নামে উপদলবাদ কায়েম হয়েছিল) চিনপন্থী ছিলেন। চিনপন্থী ছিলেন না অথচ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন অনেকে— যেমন ইলা মিত্র, দেবেন দাস, গিরিজা মুখার্জি, নরহরি কবিরাজ, সত্যেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার ও নন্দগোপাল ভট্টাচার্য। চিনপন্থীদের মধ্যে ছিলেন মুজফফর আহমদ, প্রমোদ দাশগুপ্ত, চারু মজুমদার, কানু সান্যাল প্রমুখ। জ্যোতি বসু চিনপন্থী না হলেও প্রমোদবাবু নেতৃত্বাধীন উপদলের সঙ্গী ছিলেন।

চারুবাবু সম্পর্কে জ্যোতিবাবু লিখেছেন (শ্রুতিলিখন), ‘‘একদিন জেলে প্রমোদবাবু, আমি আর চারু মজুমদার কথা বলছি। চারু মজুমদার হঠাৎ বললেন যে তিনি গর্ব বোধ করবেন যদি আমরা আমাদের পার্টিকে চীনের পার্টির অংশ বলে ঘোষণা করি আমরা চীনের চেয়ারম্যানকে আমাদের চেয়ারম্যান বলে মানি। আমি বললাম, ‘দেখুন, এই কথা বলার পরে আপনার সঙ্গে রাজনীতি আলোচনা করে লাভ নেই। এর পর এক সঙ্গে যখন জেলে আছি, সিনেমা নিয়ে, আবহাওয়া নিয়ে আলোচনা করবেন— রাজনীতি না।’ একদিকে উনি এই সব কথা বলছেন, অন্যদিকে আবার নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন।’’ [বিপ্লব দাশগুপ্ত ‘জ্যোতি বাবুর সঙ্গে’ প্রথম পর্ব, ১৯৬৭ পর্যন্ত পৃ. ৮২, এটা ১৯৮৭ সালে জ্যোতিবাবুর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল।] চারুবাবু সেই সময় শিলিগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচনে সিপিআই (এম) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে হেরে গিয়েছিলেন।

একই কথা কানু সান্যালও লিখেছেন। চিনপন্থীদের প্রাত্যহিক বৈঠকে জেলে চিন বিপ্লব বার্ষিকী (১ অক্টোবর ১৯৬৩) পালন করা হোক, প্রস্তাব করলেন চারুবাবু। কেউ সমর্থন করলেন না, এমনকি কানুবাবুকেও না। এঁরা বললেন, উগ্র জাতীয়তাবাদীরা যখন চিন-বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তখন চিন বিপ্লব বার্ষিকী পালন করলে পার্টি দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত হবে। চারুবাবু তখন প্রতিবাদী স্বরে ইংরেজিতে বলেছিলেন, আমি নিজেকে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য মনে করি।

পরে চারুবাবু আলাদা পার্টি গঠন (সিপিআই-মার্ক্সিস্ট লেনিনিস্ট) করলেও প্রকাশ্যে নিজেকে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য বলতেন, কিন্তু পার্টি গঠন করলেও চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান আজীবন বলে এসেছেন। তখন দেয়ালে দেয়ালে এটা লেখা হত ‘জয় আমাদের হবেই, কারণ চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’। অর্থাৎ পার্টির উপরতলা থেকে নীচের তলা সবাই তোতাপাখির মত চারুবাবু উদ্ভাবিত স্লোগান প্রচারে নেমে পড়েছিল। সৌরেন বসু ১৯৭০-এ গোপনে চিনে গিয়ে চিনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের সঙ্গে দেখা করে একটি সাক্ষাৎকার নেন, যাতে চৌ বলেছিলেন যে, ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ এক ভ্রান্ত ধারণা।

মাও কখনও চারুবাবুর ওই স্লোগানের সমালোচনা করেছেন, এমন তথ্য পাইনি। তাছাড়া চৌ বলার আগে দুবছর চিনের পার্টি একটি কথা বলেনি এই নিয়ে। বরং নীরব সমর্থন জানিয়েছিল। সেই সময় মাও-এর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কাল, লাগামহীন মাও-এর ব্যক্তি পূজা চলমান। পিকিং রেডিও খুললেই শোনা যেত, ‘উই বিগিন উইথ এ কোটেশন ফ্রম চেয়ারম্যান কমরেড মাও সে তুং। উই রিপিট ইট।’ চিনের পার্টি চারুবাবুর নেতৃত্বে সশস্ত্র বিপ্লবী কর্মকাণ্ডকে শুধু সমর্থন করত না, অধিকতর বিপ্লবীয়ানায় মদত দিত। নিউ চায়না নিউজ এজেন্সি ১ জুলাই ১৯৬৭ সালে Facts and Files, India’s Darjeeling District শিরোনামে প্রচার করল, “The 1000 square miles Darjeeling district is a mountainous area of great significance in nortern India. It borders on several neighbouring countries of India. Naxalbari is only 4 miles from Nepal, 30 miles from Sikkim. 14 miles from East Pakistan and 60 miles from China’s Tibet.”। যেন চিন-নেপাল-সিকিমের সীমান্তে সশস্ত্র বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ দিল্লিতে পৌঁছে যাবে আর ওই তিন স্থান হবে বিপ্লবের পশ্চাৎভূমি। বালখিল্য আর কাকে বলে? এভাবেই নকশালপন্থীদের প্রচ্ছন্ন উস্কানি দেওয়া হত চিন থেকে।

নকশালপন্থীদের মধ্যে যারা এখনও কোনও না কোনও সিপিআই (এম-এল) গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা এখনও চারুবাবুর আটটি দলিলকে (১৯৬৫-৬৭-তে লেখা) ফলিত মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান মনে করেন। তার প্রথমটিতে (২৮ জানুয়ারি ১৯৬৫-তে লেখা) লেখা হয়েছে: “মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নির্দ্দেশে এবং নিজের আভ্যন্তরীণ সংকটের সম্মুখীন হয়ে ভারতীয় ধনিক শ্রেণী গণতন্ত্রকে হত্যা করা ছাড়া অন্য কোন পথ খুঁজে পায় না। এই গ্রেপ্তারের পেছনে সাম্রাজ্যবাদের নির্দ্দেশ ছিল। কেননা মার্কিন পুলিশ চীফ ‘ম্যাকব্রাইট’ তখন দিল্লীতে ছিল এবং তার সঙ্গে আলোচনা করেই ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। গণতন্ত্রকে হত্যা করে এই সংকটের সমাধান করা যায় না এবং ভারতীয় ধনিক শ্রেণীও এই সংকটের সমাধান করতে পারবে না।” তার মানে, তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী গুলজারিলাল নন্দ মার্কিনী হুকুমে সিপিআই (এম) নেতা-কর্মীদের নির্দেশে ধরপাকড় করছিল। অথচ কোনও তথ্যনির্দেশ দেননি? সেখানে এক উদ্ভট মন্তব্য করেছিলেন। “…ধনিক শ্রেণীর এই বিরোধ একচেটিয়া পুঁজিপতির সঙ্গে জাতীয় ধনিক শ্রেণীর নয়। এই বিরোধ প্রধানত: শিল্প মালিকদের সহিত ব্যবসায়ী শ্রেণীর। অনুন্নত অর্থনীতির দেশে খাদ্যশস্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ব্যবসা পুঁজি সৃষ্টি করার পক্ষে অনিবার্য এবং এই নিয়ন্ত্রণ এই পুঁজি সৃষ্টির পক্ষে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ধনতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার আভ্যন্তরীণ বিরোধ আভ্যন্তরীণ সংকটে রূপ নেয়।” মার্ক্সের ক্যাপিটাল-পড়া (চারুবাবু অবশ্যই পড়েছিলেন, রণদিভে আমলে জেলে বন্দি তরুণ পার্টি সদস্যদের তিনি ‘অ্যান্টিডুরিং’ পড়াতেন। প্রসূন বসু তাঁর ‘খণ্ডিত জীবন’-এ লিখেছেন) কেউ এমন লিখতে পারেন? অবশ্য আটটি দলিলে কোথাও মার্ক্সের উদ্ধৃতি ছিল না।

ভারতে মাও-এর নির্দেশিত পথে নকশালপন্থী সংগ্রাম রাষ্ট্রদখল করার স্বপ্নের অলীকতা ১৯৬৯ সালে সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক সি রাজেশ্বর রাও দলের সাপ্তাহিক মুখপত্রে স্পষ্ট কথায় লিখেছিলেন। অবিভক্ত সিপিআই-এর নেতৃত্বে তেলেঙ্গানা কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম নেতা রাজেশ্বর রাও লিখেছিলেন: “…there is not a ghost of a chance for that type of a long-drawn-out armed guerrilla warfare which went on in China for 22 years to succeed in India.Here and there some type of armed resistance might go on for some time. But it cannot take you tp final victory as in China. In India, any revolution can only succeed only under the direct leadership of the proletariat with cities as the leading centre of revolution.” (C Rajeswar Rao: ‘Naxalite Movement-Origin and Harmful Consequences, New Age weekly, 29 June 1969)। ভারতে সশস্ত্র ভূমি বিপ্লবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই রাজেশ্বর রাও গভীর প্রত্যয় থেকেই বলেছিলেন নকশালপন্থী রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের আদৌ কোনও বাস্তবতা ছিল না। সিপিআই-এর তখনকার চেয়ারম্যান শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে ও রাজেশ্বর রাও থেকে ভূপেশ গুপ্ত, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, ভবানী সেন, বিশ্বনাথ মুখার্জি, গীতা মুখার্জি ও গুরুদাস দাশগুপ্ত নকশালপন্থীদের ওপর পুলিশী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সক্রিয় ও সোচ্চার ছিলেন, কিন্তু মাও-তত্ত্বের বিরোধী ছিলেন। এ নিয়ে এই লেখায় আলোচনার অবকাশ নেই।

চিন সোভিয়েত ইউনিয়নকে ‘সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী’ তকমা দেবার পরে চারু মজুমদার, কানু সান্যাল, জঙ্গল সাঁওতাল, সুনীতি কুমার ঘোষ, সত্য নারায়ণ সিং, অসিত সেন, সন্তোষ রাণা প্রমুখ শীর্ষস্থানীয় নেতা তোতাপাখির মত সোভিয়েত ইউনিয়নকে ‘সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী’ বলতে লাগলেন। সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ নাকি লেনিনের তত্ত্ব। তখন আমাদের যৌবনকাল। আমরাও ধরে নিয়েছিলাম যে এটা লেনিনের সূত্রায়ন। অনেক পরে অনুসন্ধান করে কোথাও লেনিনের এমন কোনও প্রবন্ধের হদিশ পেলাম না। লেনিনের ‘সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর’ প্রচার পুস্তিকায় প্যাম্ফলেটে (লেনিন নিজেই ‘পপুলার আউটলাইন’) নবম অধ্যায়ে লিখেছিলেন: “The leaders of the present-day, so-called, ‘Social-Democratic’ Party of Germany are justly called ‘social-imperialists,’ that is, socialists in words and imperialists in deeds…।” একটি বাক্যাংশে ‘সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ’ কি ব্যাখ্যাত বা তত্ত্বায়িত হতে পারে? লেনিনকেও রেয়াত করা যাচ্ছে না। এটা অবসেশন উইথ টেন্ডেন্সি টু ফরমিউলেট উইথাউট ইলাবোরেশন। লেনিনের এই প্রবণতা ছিল, মার্ক্স, এঙ্গেলস এমনকি রোজা লুক্সেমবার্গের লেখায় এই প্রবণতা চোখে পড়েনি।

নকশালপন্থী দলগুলির মধ্যে কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম সিপিআই (এম) লিবারেশন। বিনোদ মিশ্র সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে পার্টির চতুর্থ কংগ্রেস (১৯৮৮)-এ আত্মসমালোচনায় বলা হল, সোভিয়েত ইউনিয়নকে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ তকমা দেওয়া ভুল হয়েছিল। আরও বলা হল যে, ভারত-সোভিয়েত অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক-প্রকৌশলগত সম্পর্ক ভারতকে প্রতারিত করছে, এই ধারণাও ভ্রান্ত। শুধু মাও নয়, চারুবাবুরও মত বিরুদ্ধতা এই দুই সিদ্ধান্তে স্পষ্ট ছিল।

লিবারেশন ছাড়া প্রায় সব নকশালপন্থী দল এখনও নেহরু-ইন্দিরা আমলের ভারতের ক্ষমতাসীন শ্রেণিকে মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া বলে থাকে। মুৎসুদ্দি হলে কি গোয়া দমন দিউ মুক্তি অভিযান করত, জোটনিরপেক্ষতা আন্দোলনের পথিকৃৎ হত, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা নিত? কিন্তু নকশালদের মধ্যে যারা অতিবিপ্লবী (যাদের অধিকাংশই নিজেদের অ্যাপার্টমেন্ট বা আড্ডাস্থলে পরমত-অসহিষ্ণুতায় নিজেদের জাহির করেন) ‘পুরানো বুলির মাছি তাড়ানো’ মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া তত্ত্বই উগরে যান। এরা কিন্তু সরকারি বামেদের চেয়েও বেশি জন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
Advertisement
4 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Abhijit Sinha
Abhijit Sinha
2 years ago

What made Raju change in 1988 but not Rana or Singh? Ranadive’s explanation has other layers. Needs to be explored – beyond Bengal. Sankarda, Bihar’s (undivided) link with Andhra needs your analysis.

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »
শুভদীপ রায়চৌধুরী

শুভদীপ রায়চৌধুরীর দুটি কবিতা

অন্ধকারের তুমি,/ নরম পুঁইমাচার নিচে সবজেটে বহুরূপী/ তোমাকে আলোর কণার ভেতর গড়িয়ে যেতে দেখব বলে/ আমি এই পাগলের পৃথিবী ছেড়েছি/ টিলাপায়ে বাস করি/ নাম, সমুদ্রসম্ভব।/ পাতার ইমারত আছে, আছে/ কিছু দৈনন্দিন কাজ/ মাছ ধরার নাম করে/ বালসাভেলায় অনেকদূর যাওয়া/ যতদূর ভেসে গেলে ঢেউয়ের চুম্বন থেকে/ ছোবলটুকু আলাদা করাই যায় না

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | দ্বিতীয় পর্ব

সকালে চিড়ে নারকেল-কোরা আর গুড় খেয়ে আমি সাইকেলে চেপে ছুটিয়ে দিলাম— আট মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে যখন পৌঁছালাম— তখন গণগণে রোদ্দুর তেষ্টায় গলা কাঠ। ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে একটা বাড়ি দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়লাম যদি একটু জল খাওয়া যায়। বাড়ির বারান্দায় একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসেছিলেন— তার কাছে উদ্দিষ্ট ঠিকানার কথা প্রশ্ন করতেই তিনি উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা পাটি পেতে বসতে দিলেন। আমি আবার জল চাইলে বললেন, “দাদাঠাকুর ব্যস্ত হবেন না— ঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন।”

Read More »