Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

আচার্য প্রমথনাথ বসু: ভারতে শিল্পবিকাশের ভগীরথ

আধুনিক ভারতের বিজ্ঞানের ইতিহাসে আচার্য প্রমথনাথ বসুর নাম চিরদিন সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ক’জন তাঁর নাম জানেন, আর ক’জনই বা তাঁর কীর্তির কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে থাকেন!

প্রমথনাথ বসু প্রথম ভারতীয় ভূতত্ত্ববিদ। তিনি ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এবং ব্রহ্মদেশ বা বর্তমান মায়ানমারেও বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ আবিষ্কার করেছিলেন। আজ আমরা ঝাড়খণ্ডের জামসেদপুরে যে ‘টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি’ দেখতে পাই, তা তাঁরই আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। মধ্যপ্রদেশের ভিলাই, ওড়িশার রৌরকেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের কারখানাগুলিতে আজ যে কাঁচামাল আমদানি হয়, তাও তাঁর আবিষ্কৃত লৌহের আকরগুলি থেকেই প্রাপ্ত। সেদিনের ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ যা বর্তমানের ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে পরিচিত, তারও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম অধ্যক্ষ এবং পরিদর্শক ছিলেন প্রমথনাথ।

প্রমথনাথ বসুর (P N Bose) জন্ম ১৮৫৫ সালের ২২ মে, বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার গৈপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম তারাপ্রসন্ন বসু এবং মাতার নাম শশীমুখী দেবী। তারাপ্রসন্ন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জলপুলিশের ইন্সপেক্টর ছিলেন। তারাপ্রসন্নের পিতা অর্থাৎ প্রমথনাথের পিতামহের নাম ছিল নবকৃষ্ণ বসু। নবকৃষ্ণ ছিলেন নদীয়ার রাজধানী কৃষ্ণনগরের একজন বিখ্যাত মোক্তার।

প্রমথনাথ ৯ বছর বয়স পর্যন্ত খাঁটুরার বঙ্গ বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করেন। তারপর তিনি পিতামহ নবকৃষ্ণের কাছে কৃষ্ণনগরে গিয়ে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৮৭১ সালে তিনি এন্ট্রান্স পরীক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এবার ভর্তি হলেন কৃষ্ণনগর কলেজে। এখানেও তিনি ভাল ফল করলেন। ১৮৭৩ সালে এফ এ পরীক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করে তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজে পড়ার সময়ে গিলক্রাইস্ট স্কলারশিপ এগজামিনেশনে সারা ভারতের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে প্রমথনাথ ১৮৭৪ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেত যান। ১৮৭৮ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এসসি এবং ১৮৭৯ সালে রয়াল স্কুল অব মাইনস-এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৮০ সালের ১৩ মে বিলেতে থাকার সময়েই প্রমথনাথ জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেন্ডেন্ট পদে যোগ দেন। তারপর ১৮৮০ সালে ৩০ জুলাই তিনি দেশে ফিরে আসেন।

যৌবনে প্রমথনাথ বসু।

বিলেতে অবস্থানকালে একসময় প্রমথনাথের দারুণ অর্থসংকটও দেখা দিয়েছিল। কারণ, তখন তাঁর গিলক্রাইস্ট স্কলারশিপ শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং তখন তিনি চাকরিও পাননি। তাই বাধ্য হয়ে তিনি বক্তৃতা দিয়ে, প্রবন্ধ লিখে এবং ছাত্র পড়িয়ে পয়সা উপার্জন করতে শুরু করেন। বিলেতে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্ররা পরীক্ষায় যাতে বিশেষ সফলতা লাভ করতে পারেন, তার জন্য সেখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিসরের দু-একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। এরই একটিতে প্রমথনাথ অধ্যাপনা করতে শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এরকম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছুদিনের জন্য প্রমথনাথের ছাত্র ছিলেন।

বিলেত থেকে ফিরে আসার পর কলকাতার শিক্ষিত সমাজ তাঁকে গ্রহণ করলেও, তাঁর নিজের গ্রাম গৈপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষেরা তাঁকে গ্রহণ করলেন না। কারণ, তাঁদের সংস্কার অনুযায়ী সেকালে সমুদ্রযাত্রা ছিল ধর্মত্যাগের অনুরূপ। তাঁরা প্রমথনাথকে প্রায়শ্চিত্ত করতে বললেন। কিন্তু প্রমথনাথ প্রায়শ্চিত্ত করতে সম্মত হলেন না। এইভাবে তাঁর নিজের গ্রাম, তাঁর নিজের সমাজ তাঁকে দীর্ঘদিনের জন্য দূরে ঠেলে দিল।

১৮৮২ সালের ২৪ জুলাই প্রমথনাথ কমলাদেবীকে বিবাহ করেন। কমলাদেবী ছিলেন বিখ্যাত সিভিলিয়ান এবং ঔপন্যাসিক রমেশচন্দ্র দত্তের প্রথমা কন্যা। এই বিবাহ অনুষ্ঠানে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও উপস্থিত ছিলেন। আর এই অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনাটি রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে সুন্দরভাবে ব্যক্ত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘‘রমেশ দত্ত মহাশয়ের জ্যেষ্ঠা কন্যার বিবাহসভার দ্বারের কাছে বঙ্কিমবাবু দাঁড়াইয়া ছিলেন; রমেশবাবু বঙ্কিমবাবুর গলায় মালা পরাইতে উদ্যত হইয়াছেন এমন সময়ে আমি সেখানে উপস্থিত হইলাম। বঙ্কিমবাবু তাড়াতাড়ি সে-মালা আমার গলায় দিয়া বলিলেন, ‘এ-মালা ইহারই প্রাপ্য। রমেশ, তুমি সন্ধ্যাসংগীত পড়িয়াছ?’ তিনি বলিলেন, ‘না’। তখন বঙ্কিমবাবু সন্ধ্যাসংগীতের গান কবিতা সম্বন্ধে যে-মত ব্যক্ত করিলেন তাহাতে আমি পুরস্কৃত হইয়াছিলাম।’’

প্রমথনাথ তাঁর কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন দুর্গম পাহাড়-পর্বতে, হিংস্র বন্যজন্তুতে পরিপূর্ণ গভীর অরণ্যে। তাঁর একমাত্র স্বপ্ন ছিল খনিজ সম্পদের সন্ধান এবং সেই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশকে সমৃদ্ধ করে তোলা। তাঁর আবিষ্কৃত খনিজের তালিকাও সুদীর্ঘ। নর্মদা নদী উপত্যকার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত নিমাত্তর এবং কাওয়াতের মাঝখানের খনিজ, মধ্য ভারতের রাইপুরের কাছের লিগনাইট কয়লা, রাইপুর জেলার পশ্চিম অংশে ধল্লী ও রাজহরা পর্বতে লৌহ ও অন্যান্য খনিজ, রাইপুর এবং বালাঘাট জেলায় আগ্নেয় শিলা, জব্বলপুর জেলায় ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাঙ্গানিজ ঘটিত লোহা, রানিগঞ্জ এবং বরাকরে অভ্র— এ সবই প্রমথনাথের আবিষ্কার। এ ছাড়াও তিনি দার্জিলিংয়ের লিমু ও রামথী নদীর মধ্যবর্তী স্থানে কয়লা, সিকিমে তামা, ব্রহ্মদেশ বা মায়ানমারের ট্যাভয় ও মারগুই জেলায় গ্র‌্যানাইট, আসামের উম-রিলেং নদীতীর এবং খাসিয়া ও জইন্তিয়া পাহাড়ে তেল ও কয়লা, ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার গোরুমহিষানী অঞ্চলে লৌহখনি, ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ জেলায় দস্তা ঘটিত খনিজ এবং বড়গুন্ডাতে স্বর্ণ ঘটিত ও তাম্র ঘটিত খনিজ প্রভৃতি আবিষ্কার করেন।

প্রমথনাথ বসুর জন্ম ১৮৫৫ সালের ২২ মে, উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার গৈপুর গ্রামে।

১৮৮৭ সালে প্রমথনাথ জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ডেপুটি সুপারিনটেন্ডেন্টের পদও অলংকৃত করেন। ১৯০১ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের ভূতত্ত্ব বিভাগে অধ্যাপনা করতেও শুরু করেন। তারপর এল ১৯০৩ সাল। এই বছরেই প্রমথনাথের জীবনের গতিপথ অন্যদিকে ঘুরে গেল। প্রমথনাথের দশ বছরের জুনিয়র স্যার টমাস হেনরি হল্যান্ডকে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর করা হল। এতে তাঁর আত্মসম্মানে প্রচণ্ড আঘাত লাগল। প্রতিবাদে ১৯০৩ সালে প্রমথনাথ উনপঞ্চাশ বছর বয়সে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া থেকে পদত্যাগ করলেন।

১৯০৬ সালে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হল। এই প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রমথনাথ। শুধু তাই নয়, এর প্রথম অধ্যক্ষও ছিলেন তিনি। ১৯০৮ সালের শেষের দিকে তিনি সাময়িক কালের জন্য অধ্যক্ষের পদ ত্যাগ করেন। ১৯০৯ সালে আবার তিনি এই প্রতিষ্ঠানের ‘রেকটর’ নির্বাচিত হন। ১৯০৯ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি এই পদে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯২০ সালে তিনি স্বেচ্ছায় এই পদটি ছেড়ে দেন। কিন্তু তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি তাঁকে কিছুতেই ছেড়ে দিতে চায়নি। ১৯২১ সালে আবার তিনি এর ‘ভিজিটর’ নির্বাচিত হন।

প্রমথনাথ বসুর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি ১৯০৩-০৪ সালে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার গোরুমহিষানী অঞ্চলে লৌহখনি আবিষ্কার এবং মুম্বইয়ের বিখ্যাত শিল্পপতি জামসেদজি নাসেরওয়ানজি টাটার সুযোগ্য পুত্র, ডোরাবজি টাটাকে ডেকে এনে টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি স্থাপনে রাজি করানো। প্রমথনাথের ডাকে সাড়া দিয়ে শুধু ডোরাবজি টাটাই আসেননি, তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন সি পি পেরিন, সি এম ওয়েল্ড এবং সাকলাতওয়ালা। ১৯০৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সাকচী গ্রামে এই কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে এই অঞ্চলটির নাম হয় জামসেদপুর। এটিই ভারতের প্রথম লোহা এবং ইস্পাতের কারখানা। তাই প্রমথনাথ বসুকে ভারতে শিল্পবিকাশের ভগীরথ বলা চলে।

প্রমথনাথ বসু শুধু একজন ভূতত্ত্ববিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত লেখকও। তাঁর লেখা গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘A History of Hindu Civilization during British Rule’, ‘Epochs of Civilization’, ‘Civilization Through The Ages’, ‘The Illusions of New India’, ‘Swaraj— Cultural and Political’ প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

১৯৩৪ সালের ২৭ এপ্রিল। প্রমথনাথ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন। পিছনে পড়ে রইল তাঁর সারা জীবনের অসংখ্য কীর্তি। তাঁর মৃত্যুতে বন্ধু কর্নেল সিং অশ্রুভরা চোখে উচ্চারণ করলেন– ‘‘A great ‘Sadhu’ has passed away.’’

চিত্র: গুগল
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »