Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ভারতের ‘নেস্ট ম্যান’: ভালবাসা দিয়ে বেঁধেছেন ২.৫ লক্ষ পাখির বাসা

পাখিদের বাসা বেঁধে দেওয়ার কাজ যখন শুরু করেছিলেন, তখন জুটেছিল উপহাস। কিন্তু দীর্ঘ দু’দশক পর সেই ব্যক্তিই হয়ে উঠেছেন ভারতের ‘নেস্ট ম্যান’। পাখি বাঁচানোর লক্ষ্যে দিল্লির অশোক বিহারের বাসিন্দা রাকেশ খাত্রী এখনও পর্যন্ত তৈরি করে ফেলেছেন প্রায় আড়াই লক্ষেরও বেশি বাসা। সেই সঙ্গে লক্ষাধিক মানুষকে শিখিয়েছেন বাসা তৈরি করতে। তাঁদের জলবায়ু পরিবর্তন এবং ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহার সম্পর্কেও শিক্ষা দিয়ে থাকেন তিনি।

রাকেশ খাত্রী।

কীভাবে পাখির নীড় বানানো শুরু করলেন তিনি? রাকেশ খাত্রীর বয়ান তুলে দেওয়া যাক। ‘‘পুরোনো দিল্লিতে থাকতাম আমরা। তখন ঘুলঘুলিতে, শীতকালে পাখার উপর পাখি বাসা বাঁধত। আমরা অনেক পাখির জন্ম, বড় হওয়া ও উড়ে যাওয়া দেখেছি। পাখিদের যত্ন করা, তাদের দিকে নজর রাখার কাজ আমাদের দিয়েছিলেন বড়রা। পরে আমরা দিল্লির অশোক বিহারে চলে আসি। এখানে দেখি পাখিদের কাকলি একদমই নেই। কারণ মানুষের বাড়িতে আর ঘুলঘুলি নেই। বড় গাছ নেই। পক্ষীরা কোথায় বাসা বাঁধবে এই চিন্তা আমার মাথার মধ্যে ঘুরতে শুরু করে। সেই সময় আমি নারকেলের মালা দিয়ে বাসা তৈরি করা শুরু করি। সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে দিই এই অসহায় যে পাখিরা এতে বাসা বাঁধবে। কিন্তু আমি এই কাজে ব্যর্থ হই। কিছুদিন পরে গিয়ে দেখি নারকেলের মালা শুকিয়ে গিয়েছে। কোনও পাখি আসেনি। লোকজন আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছিল। সবাই বলছিল পাখি নিজেই বাসা বাঁধে, তোমার বাসায় কেন আসবে সে? কিন্তু আমি জানতাম একদিন আমার চেষ্টা সফল হবেই।’’

ভারতের ‘নেস্ট ম্যান’।

হাল ছাড়তে নারাজ রাকেশ কীভাবে পাখিদের জন্য উপযোগী বাসা তৈরি করা যায় তা নিয়ে পরীক্ষা চালাতে থাকেন। অবশেষে বাঁশের কঞ্চি, পাটের সুতো এবং ভুষি দিয়ে প্রায় ২০টির মত বাসা তৈরি করেন আর সেগুলোকে অশোক বিহার ও তাঁর আশেপাশের এলাকায় ঝুলিয়ে দেন। কিছুদিন পর গিয়ে দেখেন ৪টিতে চড়াই পাখি বাসা বেঁধেছে। যা তাঁকে নতুন করে উৎসাহ দেয়।

নিজের এই ‘অদ্ভুত’ কাজের জন্য রাকেশ খাত্রী বিশ্বের সেরা পাঁচটি পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে সর্বাধিক সংখ্যক হাতে তৈরি বাসা এবং কর্মশালার জন্য লিমকা বুক অফ রেকর্ডস, চড়ুই সংরক্ষণের অন্যতম সেরা পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য হাউস অফ কমন্স, লন্ডন থেকে পাওয়া ইন্টারন্যাশনাল গ্রিন অ্যাপল অ্যাওয়ার্ডস এবং অন্যান্য বেশ কিছু পুরস্কার।

নাম উঠেছে ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডসেও।

পাখিদের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার টানে কয়েক লক্ষ কৃত্রিম পাখির বাসা বেঁধেছেন তিনি। পেয়েছেন স্বীকৃতিও। তাঁর অন্যান্য স্বীকৃতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ১২টি ভাষায় ১,১২,০০০ শিক্ষার্থীকে নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর থিয়েটারের জন্য লিমকা বুক অফ রেকর্ডস, ওয়াশিংটন ডিসি কর্তৃক ঘোষিত ‘আর্থ ডে স্টার’ উপাধি আর ২০২২ সালে ICSC বোর্ডের চতুর্থ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে তাঁর নামের একটি বিশেষ অধ্যায়। শিশুদেরকে তিনি নানা নয়া শৈলী শিখিয়েছেন, একই সঙ্গে নিজেদের ঐতিহ্যকেও রক্ষা করতে শিখিয়েছেন। তাঁর এই কাজের স্বীকৃতি হিসাবে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। পাট এবং টেট্রা প্যাক দিয়ে ১,২৫,০০০ বাসা তৈরির জন্য তাঁর নাম উঠেছে ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডসেও।

চড়ুই সংরক্ষণের অন্যতম সেরা পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য পেয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল গ্রিন অ্যাপল অ্যাওয়ার্ডস।

চলমান মহামারী পর্বে তিনি অনেক ওয়েবিনারের আয়োজন করেছেন, যেখানে তিনি শিখিয়েছেন কীভাবে পাট, প্লাস্টিক, ঘাস, কাঠ ইত্যাদি ব্যবহার করে বাসা তৈরি করতে হয়। নিজের এই কাজ প্রসঙ্গে ৬০ বছর বয়সি রাকেশ খাত্রীর বক্তব্য, ‘‘কাউকে একটি বাড়ি দিতে পারার মত অনুভূতি সম্ভবত ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমি চাই এই পৃথিবীতে পাখির কলতান থাকুক। তাই আমৃত্যু এই কাজ করে যেতে চাই।’’

চিত্র: গুগল
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »