Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

বাঙালি ভুলেছে ‘নাচোলের রানিমা’ ইলা মিত্রকে

তেভাগা আন্দোলন আজ ইতিহাসের পাঠ্যবইতে স্থান পেয়েছে। অথচ ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি যে নাচোল বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে প্রতিরোধের আগুন জ্বলে ওঠে, তার কেন্দ্রে ছিলেন তৎকালীন মালদার নবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুর হাটের জমিদার মিত্র পরিবারের বধূ ইলা মিত্র। মালদা আজ মনেও রাখেনি তেভাগার এই সংগ্রামী নেত্রীকে। মালদার কালীতলায় তাঁর ভাসুরপো ইন্দ্রজিৎ মিত্রের বাড়িটিও আজ ঢাকা পড়ে গেছে বহুতলের আড়ালে। শোনা যায়, এই বাড়িতে একসময় দীর্ঘকাল আত্মগোপন করেছিলেন তিনি।

বেথুন কলেজের উজ্জ্বল ছাত্রী, আঠারোতেই অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ, অলিম্পিকের ব্যাডমিন্টন দলে প্রথম বাঙালি মেয়ে হিসাবে সুযোগ পাওয়া ইলা সেন ইলা মিত্র হয়েছিলেন ১৯৪৫-এ। তখন তাঁর বয়স কুড়ি। স্বামী রমেন্দ্রকুমার মিত্র জানতেন পতিব্রতা স্ত্রী পেতে হলে আগে ব্রতের মিলটা করাতে হয়। সহব্রতী ইলাকে নিয়ে নাচোল অঞ্চলের ভূমিহীন সাঁওতাল কৃষকদের সংগঠিত করতে চলে যান তাঁরা। সময়টা ১৯৪৯-এর ডিসেম্বর।

ইলা মিত্র, তখন বয়স মোটে ১৩।

১৯৪৬-৪৭ সালে দিনাজপুরের হাজি দানেশের নেতৃত্বে যে যুগান্তকারী তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়, জমিদার পরিবারের সন্তান হয়েও রমেন্দ্রকুমার তার শরিক ছিলেন। মালদা ডিভিশনের রাজশাহি ও দিনাজপুর জুড়ে চলতে থাকে গ্রামে গ্রামে প্রতিরোধের আখ্যান। ‘দ্য তেভাগা মুভমেন্ট’ শীর্ষক প্রামাণ্য গবেষণাগ্রন্থে গবেষক অধ্যাপক অশোক মজুমদার বলছেন, ১৯৪৬-১৯৫০ পর্যন্ত নাচোল, রাজশাহি, চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জের তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেত্রী ছিলেন ইলা মিত্র। ভূমিহীন সংগ্রামী কৃষকদের কাছে এই কমিউনিস্ট নেত্রী পরিচিত ছিলেন ‘নাচোলের রানিমা’ নামে।

ইলা মিত্র, তারিখসহ তাঁর স্বাক্ষর আজও জ্বলজ্বল করছে।

তারপর আসে সেই দিন। ১৯৫০-এর ৫ জানুয়ারি একজন ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী নাচোলের চণ্ডীপুর গ্রামে আসে এবং কোনওরকম আগাম সতর্কবার্তা ছাড়াই আন্দোলনরত কৃষকদের উপর লাঠিচার্জ আরম্ভ করে। পাল্টা প্রতিরোধে প্রায় শতাধিক কৃষকের হাতে ইন্সপেক্টর সহ পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবল মারা যান। দুই দিন পরে প্রায় দুই হাজার পুলিশের বিরাট এক হিংস্র বাহিনী নাচোলের প্রায় বারোটি গ্রাম তছনছ করে, তাদের হাতে প্রায় তিরিশজন গ্রামবাসী মারা যান। রমেন্দ্রকুমার মিত্র ও তাঁর অন্যতম সহযোগী মাতলা মাঝি সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে আসতে সমর্থ হলেও রোহনপুর স্টেশনে ধরা পড়ে যান ইলা মিত্র। তারিখটা ৭ জানুয়ারি। পুলিশি হেফাজতে অকথ্য অত্যাচারের সাতদিন পর রাজশাহি আদালতে পেশ করা হয় তাঁদের তিনজনকে। সঙ্গে আরও ১০৭ জন কৃষকের নাম জড়িয়ে পুলিশ-হত্যা সহ একাধিক মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয় তাঁদের। আরম্ভ হয় কুখ্যাত নাচোল মামলা। বাকিটা ইতিহাস।

ইলা মিত্র, স্বামী রমেন্দ্রকুমার মিত্রর সঙ্গে।

রাজশাহী আদালতে ইলা মিত্র ইংরেজিতে লিখিত যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তা থেকে তাঁর ওপর চালানো জান্তব অত্যাচারের বিবরণ মেলে।

‘‘বিগত ০৭.০১.৫০ তারিখে আমি রোহনপুর থেকে গ্রেপ্তার হই এবং পরদিন আমাকে নাচোল থানা হেড কোয়ার্টারে পাঠানো হয়। কিন্তু পথে পাহারাদার পুলিশরা আমার ওপর অত্যাচার করে। নাচোলে ওরা আমাকে একটা সেলের মধ্যে রাখে। সেখানে একজন পুলিশের দারোগা আমাকে এ মর্মে ভীতি প্রদর্শন করে যে, আমি যদি হত্যাকান্ড সম্পর্কে সম্পূর্ণ স্বীকারোক্তি না করি, তাহলে ওরা আমাকে উলঙ্গ করবে।

আমার যেহেতু বলার মত কিছু ছিল না, কাজেই তারা আমার পরনের সমস্ত কাপড় চোপড় খুলে নেয় এবং সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় সেলের মধ্যে আটকে রাখে। আমাকে কোন খাবার দেওয়া হয়নি। এমনকি এক বিন্দু জলও না। ঐ সন্ধ্যায় স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য এসআইএর উপস্থিতিতে সিপাইরা এসে বন্দুকের বাট দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করতে শুরু করে। সে সময় আমার নাক দিয়ে প্রচুর রক্ত পড়তে থাকে। এরপর ওরা আমার পরনের কাপড় চোপড় ফেরত দেয়।

রাত প্রায় বারোটার সময় আমাকে বের করে সম্ভবত এসআইএর কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। অবশ্য এ ব্যাপারে আমি খুব বেশি নিশ্চিত ছিলাম না। আমাকে যে কামরায় নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে আমার স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ওরা নৃশংস ধরনের পন্থা অবলম্বন করে। আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে ওরা আমার পা দুটোকে লাঠির মধ্যে রেখে ক্রমাগতভাবে চাপ দিতে শুরু করে। ওদের ভাষায় আমার বিরুদ্ধে ‘পাকিস্তানী ইনজেকশন’ পন্থায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছিল।

এ ধরনের অত্যাচার চলার সময় ওরা রুমাল দিয়ে আমার মুখ বেঁধে রেখেছিল এবং আমার চুল ধরেও টান দিচ্ছিল। কিন্তু আমাকে দিয়ে জোরপূর্বক কিছুই বলাতে সক্ষম হয়নি। এতসব অত্যাচারের দরুণ আমার পক্ষে আর হেঁটে যওয়া সম্ভব ছিল না। সিপাইরা আমাকে ধরাধরি করে সেলে নিয়ে গেল। এবার পুলিশের সেই দারোগা সিপাহীদের ৪টা গরম ডিম আনার নির্দেশ দিয়ে বলল যে, এবার মেয়েটাকে কথা বলতেই হবে। তারপর শুরু হল নতুন ধরনের অত্যাচার। ৪/৫ জন সিপাহী মিলে জোর করে আমাকে চিত্‍ হয়ে শুতে বাধ্য করল এবং ওদের একজন আমার গোপন অঙ্গ দিয়ে একটা ডিম ভিতরে ঢুকিয়ে দিল। সে এক ভয়াবহ জ্বালা।

প্রতিটি মুহূর্ত অনুভব করলাম, আমার ভিতরটা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। ১৯৫০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে আমার জ্ঞান ফিরে এলো। একটু পরে জনাকয়েক পুলিশ সঙ্গে করে আবার সেই দারোগার আগমন ঘটে। সেলে ঢুকেই সে আমার তলপেটে বুট দিয়ে প্রচন্ড জোরে লাথি মারে। আমি দারুণ ব্যথায় কুঁকড়ে গেলাম। এরপর ওরা জোর করে আমার ডান পায়ের গোড়ালি দিয়ে একটা লোহার পেরেক ঢুকিয়ে দিল। আমি তখন অর্ধ-চৈতন্য অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছি। কোন রকম স্বীকারোক্তি না পেয়ে দারোগা তখন রাগে অগ্নিশর্মা। যাওয়ার আগে বলে গেল, আমরা আবার রাতে আসব।

তখন তুমি স্বীকারোক্তি না দিলে, একের পর এক সিপাহী তোমাকে ধর্ষণ করবে। গভীর রাতে দারোগা আর সিপাহীরা আবার এলো এবং আবারো হুমকি দিল স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য। কিন্তু আমি তখনও কিছু বলতে অস্বীকার করলাম। এবার দু জন মিলে আমাকে মেঝেতে ফেলে ধরে রাখল এবং একজন সেপাহী আমাকে রীতিমত ধর্ষণ করতে শুরু করল। অল্পক্ষণের মধ্যেই আমি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললাম…।”

ইলা মিত্র, মালদার বিস্মৃত বিপ্লবী।

মালদার বিস্মৃত বিপ্লবীদের নিয়ে একসময় কাজ করেছিলেন শিক্ষক ও সমাজকর্মী অভিজ্ঞান সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “ইলা মিত্র সরাসরি মালদার ভূমিকন্যা না হলেও তাঁর আন্দোলনের কর্মক্ষেত্র বা এরিয়া অফ অপারেশন ছিল বৃহত্তর গৌড়বঙ্গ। আজকের মালদার ভৌগোলিক সীমারেখা থেকে তা অনেক বড়।” তাই পরবর্তীকালে কথাসাহিত্যিক অভিজিৎ সেন যখন তেভাগাকে কেন্দ্র করে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘বর্গক্ষেত্র’ লেখেন, তখন ইলা মিত্রও সেই উপন্যাসের একটি চরিত্র হয়ে ওঠেন।

সাংবাদিক কল্লোল মজুমদার তাঁর একটি গবেষণামূলক প্রতিবেদনে ইলা মিত্রের মালদার সঙ্গে যোগাযোগের আর একটি অকাট্য প্রমাণ দাখিল করেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের স্নাতকোত্তর এই ছাত্রীটি খুব অল্প সময়ের জন্য শিক্ষকতা করেছিলেন মালদা শহরের বিখ্যাত স্কুল বার্লো গার্লসে। স্কুলের বেতন গ্রহণের প্রামাণ্য নথি বা অ্যাকুইটেন্স রেজিস্টারে ২.৫.৪৭-এর তারিখসহ তাঁর স্বাক্ষর আজও জ্বলজ্বল করছে।

ইলা মিত্র, মালদা মনেও রাখেনি তেভাগার এই সংগ্রামী নেত্রীকে।

৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ টিভিতে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ইলা মিত্রের ছেলে রণেন্দ্রনাথ মিত্র। মায়ের প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, জমিদারবাড়ির নববধূ ইলা অবাক হয়েছিলেন প্রজাদের নজরানায় মালদার রেশমের কাপড় পেয়ে- যেমন মসৃণ, তেমনি দৃঢ়। কবি গোলাম কুদ্দুস ‘ইলা মিত্র’ নামের বিখ্যাত দীর্ঘ কবিতায় ছোটখাটো বাঙালি মেয়ের সেই অনমনীয় দৃঢ়তাকেই বাঙালি জীবনে অমর করে রেখেছেন, সময় তাকে মুছে দিতে পারেনি- “ইলা মিত্র কৃষকের প্রাণ/ ইলা মিত্র ফুচিকের বোন/ ইলা মিত্র স্টালিননন্দিনী!”

চিত্র: লেখক/ গুগল
4.4 5 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
স্বপ্না অধিকারী
স্বপ্না অধিকারী
2 years ago

সংগ্ৰামী নেত্রী, বিপ্লবী ইলা মিত্র কে শত কোটি প্রনাম, লেখক কে অনেক ধন্যবাদ

DEBASIS ROY
DEBASIS ROY
2 years ago

অসাধারণ

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »